leadT1ad

ইসরায়েলি ৭ জিম্মিকে হস্তান্তর করেছে হামাস, ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তির প্রস্তুতি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
জিম্মিদের মুক্তির খবরে ইসরায়েলিদের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স

গাজায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ৭ ইসরায়েলি জিম্মিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের (আইসিআরসি) কাছে হস্তান্তর করেছে হামাস। এদের সঙ্গে আরও ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলও প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে—যাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে দেশটির কারাগারে আটক ছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিচুক্তির অগ্রগতিকে ‘বিশ্বের জন্য ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আজ সকালে ইসরায়েলে পৌঁছাবেন এবং ইসরায়েলি সংসদে ভাষণ দেওয়ার পর মিশরের শার্ম আল-শেখে অনুষ্ঠেয় ‘শান্তি সম্মেলনে’ যোগ দেবেন।

গাজায় রেডক্রসের গাড়ি। বিবিসি বলছে, নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ধারণা করা হচ্ছে এই গাড়িতে ইসরায়েলি বন্দি থাকতে পারেন।
গাজায় রেডক্রসের গাড়ি। বিবিসি বলছে, নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ধারণা করা হচ্ছে এই গাড়িতে ইসরায়েলি বন্দি থাকতে পারেন।

ফিলিস্তিনিদের মুক্তির প্রস্তুতি

চুক্তির আওতায় মুক্তি পাচ্ছেন প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন গাজা উপত্যকার বাসিন্দা। আরও ২৫০ জন দীর্ঘ মেয়াদি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। এদের মধ্যে ১৩৫ জনকে গাজায় বা বিদেশে পাঠানো হবে, ১০০ জনকে পশ্চিম তীরে এবং ১৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে পূর্ব জেরুজালেমে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস জানিয়েছে, জিম্মি ও বন্দিদের হস্তান্তর তদারকিতে তারা কাজ শুরু করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রেড ক্রসের গাড়িগুলো ইতিমধ্যে উত্তর গাজার একটি নির্দিষ্ট স্থানের পথে রয়েছে, যেখানে হামাসের কাছ থেকে আরও কয়েকজন ইসরায়েলি নাগরিক হস্তান্তরের কথা।

ইসরায়েলি কারাগারে পৌঁছেছে রেডক্রসের বাস
ইসরায়েলি কারাগারে পৌঁছেছে রেডক্রসের বাস

একই সময় পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর কাছে অবস্থিত ইসরায়েলি সামরিক কারাগার ‘ওফার’-এর বাইরে রেড ক্রসের বাস পৌঁছেছে। সেখান থেকে ১০৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করা হবে। আর নেগেভের কেৎজিয়েত কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন আরও ১৪২ জন, যাদের কেউ গাজায় ফিরে যাবেন, কেউ যাবেন নির্বাসনে।

ইসরায়েলের কারা মুক্তি পাচ্ছেন

হামাসের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, আজ যেসব ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি পাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এলকানা বোহবট, মাতান আংগ্রেস্ট, আবিনাতান অর, ইয়োসেফ-হাইম ওহানা, আলন ওহেল, ইভিয়াতার দাভিদ, গাই গিলবোয়া-দালাল, রম ব্রাসলাভস্কি এবং যমজ ভাই গালি ও জিভ বারম্যান।

এছাড়া আছেন এইতান মোর, সেগেভ কালফন, ম্যাকসিম হারকিন, এইতান হর্ন, বার কুপারস্টেইন, ওমরি মিরান, এবং দুই ভাই ডেভিড ও আরিয়েল কুনিও। ইসরায়েলি সেনা নিমরোদ কোহেন ও মাতান জানগাউকারও মুক্তির তালিকায় রয়েছেন।

হামাসের বক্তব্য: ‘চুক্তি মেনে চলব’

হামাসের সশস্ত্র শাখা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘যতক্ষণ দখলদার রাষ্ট্র (ইসরায়েল) চুক্তি ও সময়সূচি মেনে চলবে, আমরাও তা মেনে চলব।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের জনগণের স্থিতিশীলতা ও প্রতিরোধযোদ্ধাদের দৃঢ়তার ফলেই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে। শত্রু তার সামরিক চাপ ও গোয়েন্দা শক্তি দিয়েও বন্দিদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে, আর এখন তারা বিনিময়ের মাধ্যমেই তাদের ফেরত নিচ্ছে, যেমনটা আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম।’

ট্রাম্পকে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ আজ ট্রাম্পকে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব অনার’ দেওয়ার ঘোষণা দেবেন।

হারজগ বলেছেন, ‘ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের অবিচল সমর্থন, আব্রাহাম অ্যাকর্ড, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকার জন্য তাঁকে এই সম্মান জানানো হচ্ছে।’

অনিশ্চয়তা কাটেনি

তেল আভিভের ‘হোস্টেজেস স্কয়ারে’ রাতভর অবস্থান নিয়েছেন জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা ও সমর্থকেরা। সেখানে এখনো মিশে আছে স্বস্তি ও আশঙ্কা—মুক্তি প্রক্রিয়া সত্যিই সম্পন্ন হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

পাশাপাশি, পশ্চিম তীর ও গাজার নানা স্থানে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয়জনদের ফেরার জন্য। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের সামনে ইতিমধ্যে ভিড় করছেন হাজারো মানুষ, যেখানে মুক্ত বন্দিদের পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক এবং জাদালিয়ার সহ-সম্পাদক মুইন রাব্বানি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আজকের বিনিময় শান্তির সূচনা নাকি শেষ অধ্যায়—তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ তাঁর মতে, ‘ইসরায়েল হয়তো বন্দিদের ফেরত পাওয়ার পর আবারও সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে, অথবা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় ব্যর্থ হলে চুক্তি ভেঙে যেতে পারে।’

গাজায় রেডক্রসের গাড়ি। ছবি: আনাদোলু
গাজায় রেডক্রসের গাড়ি। ছবি: আনাদোলু

তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভাবনা আছে যে এই চুক্তি টিকবে এবং তা হয়তো লেবাননের যুদ্ধবিরতির মতো এক অসম পরিস্থিতি তৈরি করবে; যেখানে ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধ থামায়, কিন্তু ইসরায়েল গুলি চালানো বন্ধ করে না।’

দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজা আজও ধ্বংসস্তূপে পরিণত। তবে এই বন্দিবিনিময় ও যুদ্ধবিরতি যদি স্থায়ী হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি হবে এক নতুন সূচনা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত