ইলন মাস্ক এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধনকুবেরদের একজন। গতকাল ছিল তাঁর জন্মদিন। বিখ্যাত ইংরেজি ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’–এর তথ্যমতে, বর্তমানে মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ৪০৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু কে এই ইলন মাস্ক? কেনইবা এত সম্পদের মালিকানা তাঁর হাতে? কারও মতে, ইলন এক ‘লাগামহীন ঘোড়া’। কেউ তাঁকে বলেছেন, উচ্চাভিলাষী উদ্যোক্তা। কেউ আবার মনে করেন, চলতি শতকের সবচেয়ে বড় স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। নিয়মিত বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা আর প্রায়ই নতুন উদ্ভাবন দিয়ে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেওয়া ইলন মাস্ক নিজের কাছে আসলে কী? এখন পৃথিবীর যেকোনো শহরেই মানুষের চায়ের কাপে ইলন যেন থাকছেনই!
সৈকত আমীন
ইলন মাস্কের জীবনের গল্পটা শুরু হয়েছিল আফ্রিকার প্রিটোরিয়া শহরে। সেখানে ১৯৭১ সালের ২৮ জুন জন্ম নেন ইলন মাস্ক। বাবা এরল মাস্ক ছিলেন একজন দক্ষ ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মায়ের নাম মে মাস্ক। কানাডা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমানো এই নারী পেশায় ছিলেন পুষ্টিবিদ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মডেলিংও করতেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে ইলন সবার বড়।
ইলনের শৈশব খুব একটা সুখের ছিল না। ইঞ্জিনিয়ার বাবার কড়া শাসন, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, স্কুলের সহপাঠীদের মাধ্যমে হেনস্তা, ভাইবোনদের সঙ্গে দূরত্ব—সব মিলিয়ে শৈশবে একাকিত্ব হয়ে উঠেছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। রাতের পর রাত ইলন পড়ে থাকতেন বইয়ের ঘরে। ইলনের মায়ের দাবি, একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি নাকি বাসার লাইব্রেরির সব বই-ই পড়ে ফেলেছিলেন।
ইলনের পেশাজীবনের ভিত গড়ে উঠছিল শৈশবেই। কোডিং দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর কম্পিউটারবিদ্যার হাতেখড়ি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই বানিয়ে ফেলেছিলেন ‘ব্লাস্টার’ নামের একটি ভিডিও গেম।
১৭ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে মায়ের দেশ কানাডায় চলে যান ইলন। সেখান থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা আর অর্থনীতিতে সাফল্যের সঙ্গে ডিগ্রি নেন। স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি শুরু করেও মাত্র দুই দিনেই ছেড়ে দেন নতুন কিছু করার আশায়।
১৯৯৫ সালে ‘জিপ–২’ নামের অনলাইন সিটি গাইড দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয় তাঁর। গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেই অনলাইন গাইড। পরে চড়া দামে ওই স্টার্ট-আপ কিনে নেয় প্রযুক্তি সংস্থা কমপ্যাড। এরপর ১৯৯৮ সালে পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে ইলন গড়ে তোলেন ‘এক্স ডটকম’ নামের এক অনলাইন ব্যাংক, অচিরেই যা হয়ে উঠল সারা বিশ্বে ‘পেপাল’ নামে পরিচিত অনলাইনে লেনদেনের বিশ্বস্ত দরজা। ২০০২ সালের অক্টোবরে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সেই প্রতিষ্ঠান কিনে নেয় প্রযুক্তি জায়ান্ট ‘ই-বে’।
আমরা তেলের দুনিয়ায় ব্যাটারির বিদ্রোহ এনেছি। হয়তো একদিন এই বিদ্রোহেই বাতাস আবার পরিষ্কার হবে। ইলন মাস্ক
নিত্যনতুন উদ্যোগ তৈরি করা এবং সেসব বিক্রি করে বেশ ভালোই চলছিল ইলনের। স্বল্প সময়েই তিনি বনে যান কোটিপতি। কিন্তু তাঁর মাথায় তখন চলছিল অন্য কিছু, মানুষকে পৃথিবীর বাইরে পাঠানোর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পুঁজি করেই ২০০২ সালে ইলন গড়ে তুললেন ‘স্পেসএক্স’, যা তখনকার দিনের বিবেচনায় ছিল ‘প্রায় অবাস্তব’ এক প্রকল্প।
স্পেসএক্সের আগেও বহু প্রতিষ্ঠান পৃথিবী থেকে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সফলও হয়েছে। তবে রকেট উড়বে, মহাকাশ থেকে সেই রকেট আবার মাটিতে নেমে আসবে মানুষ পৌঁছে দিতে—মহাকাশযাত্রার ব্যয় কমাতে ইলনের আগে এমন ভাবনা থেকে কেউই প্রতিষ্ঠান গড়ার ঝুঁকি নেননি।
তবে ইলনের আগের দুই উদ্যোগের মতো স্পেসএক্সের উদ্যোগের সফলতা সঙ্গে সঙ্গে আসেনি। এর সফলতার জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু বছর। আক্ষরিক অর্থেই পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়।
স্পেসএক্সের প্রথম কয়েকটা রকেট উৎক্ষেপণ একের পর এক ব্যর্থ হয়। ততদিনে ইলনের হাতে থাকা টাকা প্রায় শেষ। প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম। কিন্তু ইলন থামলেন না। অবশেষে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো সফলভাবে মহাকাশে পাড়ি দেয় স্পেসএক্সের রকেট ‘ফ্যালকন–১’। এর সাত বছর পর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি পৌঁছে যান ইলন।
মালবাহী রকেট ‘ফ্যালকন–৯’ উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে গিয়ে সফলভাবে আবার অবতরণ করে পৃথিবীতে। মানুষের মহাকাশ যাত্রায় এই ঘটনা ছিল এক অভূতপূর্ব মাইলফলক। কারণ, মহাকাশে পাঠানোর জন্য বারবার নতুন করে রকেট তৈরি করা ছিল যথেষ্ট সময় এবং মোটা অঙ্কের পয়সা খরচের ব্যাপার। স্পেসএক্সের প্রযুক্তির বদৌলতে এক রকেটই বারবার মহাকাশে যাতায়াত করতে পারবে মানুষ নিয়ে।
এতে বেঁচে যাবে সময়, কমে আসবে খরচ। পাশাপাশি ভারী যান নির্মাণের দূষণও কমে আসবে।
স্পেসএক্সের পাশাপাশি পৃথিবীজুড়ে সাড়া ফেলেছে ইলনের আরও তিন উদ্যোগ—স্টারলিংক, নিওরোলিংক আর টেসলা।
স্টারলিংক হলো এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তারবিহীন এক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। স্পেসএক্স থেকে চালু হওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ছয় হাজারের বেশি ছোট স্যাটেলাইট পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। ২০১৯ সালে প্রথম উৎক্ষেপণ আর ২০২৫ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট সক্রিয় স্যাটেলাইটের প্রায় ৬০ শতাংশই এখন স্টারলিংকের। ৩০ লাখের বেশি প্রান্তিক মানুষ এখন মরুভূমি, জঙ্গল, এমনকি সমুদ্রের মাঝখানে বসেও ইন্টারনেট পাচ্ছে স্টারলিংকের কল্যাণে। ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষও।
আকাশ ও মহাকাশের পাশাপাশি স্থলপথেও ইলন রাজত্ব গেড়েছেন ব্যাটারিচালিত গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলার মাধ্যমে। টেসলা মানে শুধু গাড়ি নয়, এ এক নতুন যুগের যাত্রা। একসময় সবাই ভাবত, ব্যাটারিচালিত গাড়ি হচ্ছে খেলনার মতো, বেশি দূর যাবে না, দামেও টিকবে না। ইলন মাস্ক ভেঙে দিলেন সে ধারণা।
২০০৩ সালে শুরু হওয়া এই কোম্পানি প্রথম দেখিয়েছে ব্যাটারি দিয়েও স্পোর্টস কার দৌড়াতে পারে। মজার বিষয় হলো, শুরুতে টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না ইলন মাস্ক। পরে এ কোম্পানির বড় শেয়ার কিনে তিনি হয়ে ওঠেন টেসলার প্রধান মুখ।
টেসলা প্রথমে বানাল ছোট স্পোর্টস গাড়ি রোডস্টার, বাজারে এল ২০০৮ সালে। তারপর একে একে এল বড় আর দামি গাড়ি মডেল এস, এসইউভি মডেল এক্স, আর উন্নত বিশ্বের সবার হাতের নাগালে রাখা মডেল থ্রি এবং মডেল ওয়াই।
২০২৪ সালে টেসলা এক বছরে প্রায় ২০ লাখ গাড়ি বিক্রি করেছে। আর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে চার্জ দেওয়ার স্টেশন। এক সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, ‘আমরা তেলের দুনিয়ায় ব্যাটারির বিদ্রোহ এনেছি। হয়তো একদিন এই বিদ্রোহেই বাতাস আবার পরিষ্কার হবে।’
টেসলা শুধু গাড়ি বানিয়ে থেমে যায়নি। বাড়ির জন্য বানিয়েছে ‘পাওয়ারওয়াল’। সোলার রুফ দিয়ে তৈরি ছাদের টালির সোলার প্যানেল! যাতে সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ ধরে রাখা এবং গ্যাস ও তেল ছাড়াই সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
ইলন মাস্কের আরেক উদ্ভাবন নিওরোলিংক। ২০১৬ সালে ইলন এই কোম্পানি শুরু করেন মানুষের মস্তিষ্ক আর কম্পিউটারের মধ্যে সরাসরি সংযোগ তৈরি করতে। যুক্তরাষ্ট্রে নিওরোলিংক মানুষের ওপর পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। চিপ বসিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের হাত-পা সচল করাসহ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার সাহসী স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এক দল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর গবেষক মিলিয়ে মানুষের মাথায় বসাচ্ছেন ছোট্ট ইলেকট্রোড। অনেকে ভয় পান, কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন, হয়তো একদিন স্মৃতিও ডাউনলোড হবে! নিওরোলিংক তাই বিজ্ঞান আর পাগলামির মাঝামাঝি এক রঙিন অধ্যায়ও বটে।
তবে ইলন মাস্ক মানে শুধু উদ্ভাবনই নয়, বিতর্কও। স্পেসএক্সে কর্মীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করছে, কেউ কেউ দুর্ঘটনায় হাত হারাচ্ছে—এমন অভিযোগ নতুন নয়। এই ২০২৫ সালের জানুয়ারিতেও শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে জরিমানা হয়েছে টেসলার, হয়েছে তদন্তও।
২০২২ সালে অনেকটা হুট করেই ইলন মাস্ক কিনে ফেললেন টুইটার। গণহারে ছাঁটাই করলেন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদেরও। ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই ঘোষণা দিয়ে বদলে ফেলা হলো টুইটারের নাম, নীতিও বদলে গেল। ইলন মাস্ক তাঁর পুরোনো উদ্যোগের নাম ‘এক্স’কে নতুন করে ব্র্যাডিং করলেন। টুইটারের নাম দিলেন এক্স।
রাজনীতি নিয়েও ইলনের অবস্থান গোলমেলে। একসময় সরব ছিলেন জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা নিয়ে। এখন শিল্পপতি রিপাবলিকানদের বড় দাতা তিনিই। টুইটার থেকে ব্যান হওয়া ট্রাম্পকে ফিরিয়ে আনলেন এক্সে। অংশ নিলেন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায়।
ট্রাম্পের জয়ের পর তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন মার্কিন প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন কমিশনের প্রধান হিসেবে। চলতি বছরের মাঝামাঝি এসে সেই ট্রাম্পের সঙ্গেই বাঁধল তাঁর তুমুল বাকযুদ্ধ! একপর্যায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি আনলেন যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ।
শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ সময় নতুন দল তৈরির ঘোষণাও দেন তিনি। অবশ্য পরে ১২ জুন আবার মাফও চেয়েছেন ট্রাম্পের কাছে। এক্সে ইলন মাস্ক লিখেছিলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে আমি যেসব পোস্ট করেছিলাম, সেগুলোর জন্য আমি অনুতপ্ত।’
বহুত চর্চিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওপেন-এআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন ইলন মাস্ক। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে নতুন করে বানালেন গ্রক এআই।
শুধু ইলনের উদ্ভাবন নয়, তাঁর প্রেমিকজীবনও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বেশ কয়েকবার।
প্রথম স্ত্রী জাস্টিনের সঙ্গে ছয়টি সন্তানগ্রহণ, অভিনেত্রী টালুলাহ রাইলিকে দুবার বিয়ে এবং দুবারই বিচ্ছেদ, গায়িকা গ্রাইমসের সঙ্গে দুই সন্তান, নিওরোলিংকের এক কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন প্রণয়ে যমজ সন্তানগ্রহণ—সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল অব্দি ১৪ সন্তানের জনক হয়েছেন তিনি।
ইলন মাস্ক চান তাঁর সন্তানেরা একসঙ্গে, এক ক্যাম্পাসের মতো জায়গায় থাকুক। যেখানে তাঁদের মায়েদের সঙ্গে থাকবেন ইলন নিজেও।
তো বহু বর্ণিল এই ইলন মাস্ককে নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিন্তু বিতর্কের চেয়ে বেশি আছে তাঁর দুচোখ ভরা স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার সাহসও আছে ইলনের। সবচেয়ে বড় কথা, সব হারানোর পরেও আছে আবার শুরু করার ধৈর্য। কেউ বলেন, তিনি উন্মাদ ধনকুবের, কেউ বলেন, নিখুঁত স্বপ্নদ্রষ্টা।
কে বলতে পারে, ইলন মাস্কের চোখ দিয়ে স্বপ্ন দেখেই হয়তো একদিন মঙ্গলগ্রহে বসে চা খাবে মানুষ। যদি তেমনটা নাও হয়, তবু মানুষের মুখে কথার খই ফুটবে তাঁর কাজকর্ম আর বিতর্ক নিয়ে। মঙ্গলগ্রহে নাইবা হোক, পৃথিবীর যেকোনো শহরেই মানুষের চায়ের কাপে ইলন যেন থাকছেনই
ইলন মাস্কের জীবনের গল্পটা শুরু হয়েছিল আফ্রিকার প্রিটোরিয়া শহরে। সেখানে ১৯৭১ সালের ২৮ জুন জন্ম নেন ইলন মাস্ক। বাবা এরল মাস্ক ছিলেন একজন দক্ষ ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মায়ের নাম মে মাস্ক। কানাডা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমানো এই নারী পেশায় ছিলেন পুষ্টিবিদ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মডেলিংও করতেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে ইলন সবার বড়।
ইলনের শৈশব খুব একটা সুখের ছিল না। ইঞ্জিনিয়ার বাবার কড়া শাসন, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, স্কুলের সহপাঠীদের মাধ্যমে হেনস্তা, ভাইবোনদের সঙ্গে দূরত্ব—সব মিলিয়ে শৈশবে একাকিত্ব হয়ে উঠেছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। রাতের পর রাত ইলন পড়ে থাকতেন বইয়ের ঘরে। ইলনের মায়ের দাবি, একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি নাকি বাসার লাইব্রেরির সব বই-ই পড়ে ফেলেছিলেন।
ইলনের পেশাজীবনের ভিত গড়ে উঠছিল শৈশবেই। কোডিং দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর কম্পিউটারবিদ্যার হাতেখড়ি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই বানিয়ে ফেলেছিলেন ‘ব্লাস্টার’ নামের একটি ভিডিও গেম।
১৭ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে মায়ের দেশ কানাডায় চলে যান ইলন। সেখান থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা আর অর্থনীতিতে সাফল্যের সঙ্গে ডিগ্রি নেন। স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি শুরু করেও মাত্র দুই দিনেই ছেড়ে দেন নতুন কিছু করার আশায়।
১৯৯৫ সালে ‘জিপ–২’ নামের অনলাইন সিটি গাইড দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয় তাঁর। গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেই অনলাইন গাইড। পরে চড়া দামে ওই স্টার্ট-আপ কিনে নেয় প্রযুক্তি সংস্থা কমপ্যাড। এরপর ১৯৯৮ সালে পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে ইলন গড়ে তোলেন ‘এক্স ডটকম’ নামের এক অনলাইন ব্যাংক, অচিরেই যা হয়ে উঠল সারা বিশ্বে ‘পেপাল’ নামে পরিচিত অনলাইনে লেনদেনের বিশ্বস্ত দরজা। ২০০২ সালের অক্টোবরে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সেই প্রতিষ্ঠান কিনে নেয় প্রযুক্তি জায়ান্ট ‘ই-বে’।
আমরা তেলের দুনিয়ায় ব্যাটারির বিদ্রোহ এনেছি। হয়তো একদিন এই বিদ্রোহেই বাতাস আবার পরিষ্কার হবে। ইলন মাস্ক
নিত্যনতুন উদ্যোগ তৈরি করা এবং সেসব বিক্রি করে বেশ ভালোই চলছিল ইলনের। স্বল্প সময়েই তিনি বনে যান কোটিপতি। কিন্তু তাঁর মাথায় তখন চলছিল অন্য কিছু, মানুষকে পৃথিবীর বাইরে পাঠানোর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পুঁজি করেই ২০০২ সালে ইলন গড়ে তুললেন ‘স্পেসএক্স’, যা তখনকার দিনের বিবেচনায় ছিল ‘প্রায় অবাস্তব’ এক প্রকল্প।
স্পেসএক্সের আগেও বহু প্রতিষ্ঠান পৃথিবী থেকে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সফলও হয়েছে। তবে রকেট উড়বে, মহাকাশ থেকে সেই রকেট আবার মাটিতে নেমে আসবে মানুষ পৌঁছে দিতে—মহাকাশযাত্রার ব্যয় কমাতে ইলনের আগে এমন ভাবনা থেকে কেউই প্রতিষ্ঠান গড়ার ঝুঁকি নেননি।
তবে ইলনের আগের দুই উদ্যোগের মতো স্পেসএক্সের উদ্যোগের সফলতা সঙ্গে সঙ্গে আসেনি। এর সফলতার জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু বছর। আক্ষরিক অর্থেই পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়।
স্পেসএক্সের প্রথম কয়েকটা রকেট উৎক্ষেপণ একের পর এক ব্যর্থ হয়। ততদিনে ইলনের হাতে থাকা টাকা প্রায় শেষ। প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম। কিন্তু ইলন থামলেন না। অবশেষে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো সফলভাবে মহাকাশে পাড়ি দেয় স্পেসএক্সের রকেট ‘ফ্যালকন–১’। এর সাত বছর পর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি পৌঁছে যান ইলন।
মালবাহী রকেট ‘ফ্যালকন–৯’ উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে গিয়ে সফলভাবে আবার অবতরণ করে পৃথিবীতে। মানুষের মহাকাশ যাত্রায় এই ঘটনা ছিল এক অভূতপূর্ব মাইলফলক। কারণ, মহাকাশে পাঠানোর জন্য বারবার নতুন করে রকেট তৈরি করা ছিল যথেষ্ট সময় এবং মোটা অঙ্কের পয়সা খরচের ব্যাপার। স্পেসএক্সের প্রযুক্তির বদৌলতে এক রকেটই বারবার মহাকাশে যাতায়াত করতে পারবে মানুষ নিয়ে।
এতে বেঁচে যাবে সময়, কমে আসবে খরচ। পাশাপাশি ভারী যান নির্মাণের দূষণও কমে আসবে।
স্পেসএক্সের পাশাপাশি পৃথিবীজুড়ে সাড়া ফেলেছে ইলনের আরও তিন উদ্যোগ—স্টারলিংক, নিওরোলিংক আর টেসলা।
স্টারলিংক হলো এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তারবিহীন এক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। স্পেসএক্স থেকে চালু হওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ছয় হাজারের বেশি ছোট স্যাটেলাইট পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। ২০১৯ সালে প্রথম উৎক্ষেপণ আর ২০২৫ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট সক্রিয় স্যাটেলাইটের প্রায় ৬০ শতাংশই এখন স্টারলিংকের। ৩০ লাখের বেশি প্রান্তিক মানুষ এখন মরুভূমি, জঙ্গল, এমনকি সমুদ্রের মাঝখানে বসেও ইন্টারনেট পাচ্ছে স্টারলিংকের কল্যাণে। ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষও।
আকাশ ও মহাকাশের পাশাপাশি স্থলপথেও ইলন রাজত্ব গেড়েছেন ব্যাটারিচালিত গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলার মাধ্যমে। টেসলা মানে শুধু গাড়ি নয়, এ এক নতুন যুগের যাত্রা। একসময় সবাই ভাবত, ব্যাটারিচালিত গাড়ি হচ্ছে খেলনার মতো, বেশি দূর যাবে না, দামেও টিকবে না। ইলন মাস্ক ভেঙে দিলেন সে ধারণা।
২০০৩ সালে শুরু হওয়া এই কোম্পানি প্রথম দেখিয়েছে ব্যাটারি দিয়েও স্পোর্টস কার দৌড়াতে পারে। মজার বিষয় হলো, শুরুতে টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না ইলন মাস্ক। পরে এ কোম্পানির বড় শেয়ার কিনে তিনি হয়ে ওঠেন টেসলার প্রধান মুখ।
টেসলা প্রথমে বানাল ছোট স্পোর্টস গাড়ি রোডস্টার, বাজারে এল ২০০৮ সালে। তারপর একে একে এল বড় আর দামি গাড়ি মডেল এস, এসইউভি মডেল এক্স, আর উন্নত বিশ্বের সবার হাতের নাগালে রাখা মডেল থ্রি এবং মডেল ওয়াই।
২০২৪ সালে টেসলা এক বছরে প্রায় ২০ লাখ গাড়ি বিক্রি করেছে। আর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে চার্জ দেওয়ার স্টেশন। এক সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, ‘আমরা তেলের দুনিয়ায় ব্যাটারির বিদ্রোহ এনেছি। হয়তো একদিন এই বিদ্রোহেই বাতাস আবার পরিষ্কার হবে।’
টেসলা শুধু গাড়ি বানিয়ে থেমে যায়নি। বাড়ির জন্য বানিয়েছে ‘পাওয়ারওয়াল’। সোলার রুফ দিয়ে তৈরি ছাদের টালির সোলার প্যানেল! যাতে সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ ধরে রাখা এবং গ্যাস ও তেল ছাড়াই সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
ইলন মাস্কের আরেক উদ্ভাবন নিওরোলিংক। ২০১৬ সালে ইলন এই কোম্পানি শুরু করেন মানুষের মস্তিষ্ক আর কম্পিউটারের মধ্যে সরাসরি সংযোগ তৈরি করতে। যুক্তরাষ্ট্রে নিওরোলিংক মানুষের ওপর পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। চিপ বসিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের হাত-পা সচল করাসহ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার সাহসী স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এক দল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর গবেষক মিলিয়ে মানুষের মাথায় বসাচ্ছেন ছোট্ট ইলেকট্রোড। অনেকে ভয় পান, কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন, হয়তো একদিন স্মৃতিও ডাউনলোড হবে! নিওরোলিংক তাই বিজ্ঞান আর পাগলামির মাঝামাঝি এক রঙিন অধ্যায়ও বটে।
তবে ইলন মাস্ক মানে শুধু উদ্ভাবনই নয়, বিতর্কও। স্পেসএক্সে কর্মীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করছে, কেউ কেউ দুর্ঘটনায় হাত হারাচ্ছে—এমন অভিযোগ নতুন নয়। এই ২০২৫ সালের জানুয়ারিতেও শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে জরিমানা হয়েছে টেসলার, হয়েছে তদন্তও।
২০২২ সালে অনেকটা হুট করেই ইলন মাস্ক কিনে ফেললেন টুইটার। গণহারে ছাঁটাই করলেন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদেরও। ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই ঘোষণা দিয়ে বদলে ফেলা হলো টুইটারের নাম, নীতিও বদলে গেল। ইলন মাস্ক তাঁর পুরোনো উদ্যোগের নাম ‘এক্স’কে নতুন করে ব্র্যাডিং করলেন। টুইটারের নাম দিলেন এক্স।
রাজনীতি নিয়েও ইলনের অবস্থান গোলমেলে। একসময় সরব ছিলেন জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা নিয়ে। এখন শিল্পপতি রিপাবলিকানদের বড় দাতা তিনিই। টুইটার থেকে ব্যান হওয়া ট্রাম্পকে ফিরিয়ে আনলেন এক্সে। অংশ নিলেন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায়।
ট্রাম্পের জয়ের পর তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন মার্কিন প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন কমিশনের প্রধান হিসেবে। চলতি বছরের মাঝামাঝি এসে সেই ট্রাম্পের সঙ্গেই বাঁধল তাঁর তুমুল বাকযুদ্ধ! একপর্যায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি আনলেন যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ।
শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ সময় নতুন দল তৈরির ঘোষণাও দেন তিনি। অবশ্য পরে ১২ জুন আবার মাফও চেয়েছেন ট্রাম্পের কাছে। এক্সে ইলন মাস্ক লিখেছিলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে আমি যেসব পোস্ট করেছিলাম, সেগুলোর জন্য আমি অনুতপ্ত।’
বহুত চর্চিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওপেন-এআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন ইলন মাস্ক। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে নতুন করে বানালেন গ্রক এআই।
শুধু ইলনের উদ্ভাবন নয়, তাঁর প্রেমিকজীবনও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বেশ কয়েকবার।
প্রথম স্ত্রী জাস্টিনের সঙ্গে ছয়টি সন্তানগ্রহণ, অভিনেত্রী টালুলাহ রাইলিকে দুবার বিয়ে এবং দুবারই বিচ্ছেদ, গায়িকা গ্রাইমসের সঙ্গে দুই সন্তান, নিওরোলিংকের এক কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন প্রণয়ে যমজ সন্তানগ্রহণ—সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল অব্দি ১৪ সন্তানের জনক হয়েছেন তিনি।
ইলন মাস্ক চান তাঁর সন্তানেরা একসঙ্গে, এক ক্যাম্পাসের মতো জায়গায় থাকুক। যেখানে তাঁদের মায়েদের সঙ্গে থাকবেন ইলন নিজেও।
তো বহু বর্ণিল এই ইলন মাস্ককে নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিন্তু বিতর্কের চেয়ে বেশি আছে তাঁর দুচোখ ভরা স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার সাহসও আছে ইলনের। সবচেয়ে বড় কথা, সব হারানোর পরেও আছে আবার শুরু করার ধৈর্য। কেউ বলেন, তিনি উন্মাদ ধনকুবের, কেউ বলেন, নিখুঁত স্বপ্নদ্রষ্টা।
কে বলতে পারে, ইলন মাস্কের চোখ দিয়ে স্বপ্ন দেখেই হয়তো একদিন মঙ্গলগ্রহে বসে চা খাবে মানুষ। যদি তেমনটা নাও হয়, তবু মানুষের মুখে কথার খই ফুটবে তাঁর কাজকর্ম আর বিতর্ক নিয়ে। মঙ্গলগ্রহে নাইবা হোক, পৃথিবীর যেকোনো শহরেই মানুষের চায়ের কাপে ইলন যেন থাকছেনই
সবকিছুরই একটা পটভূমি থাকে। ৯৯৯ নম্বর চালুর পেছনেও ছিল এক করুণ ও জরুরি বাস্তবতা। ১৯৩৫ সালের এক সন্ধ্যায় লন্ডনের উইমপোল স্ট্রিটে ভয়াবহ আগুন লাগে। সেখানে ছিল বিখ্যাত চিকিৎসক ডা. ফিলিপ ফ্র্যাংকলিনের চেম্বার। আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনাস্থলে পুড়ে মারা যান পাঁচজন।
৭ ঘণ্টা আগেব্রিটিশদের বিরদ্ধে ওই লড়াইয়ের ফলাফলের চেয়ে ‘লড়াই’ করার হিম্মতই পরে হয়ে উঠেছিল ভারতবর্ষে শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা।
৯ ঘণ্টা আগেএ কালের অনেক তরুণের মতো ছফাও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দাঁড় করিয়েছিলেন কাঠগড়ায়। জাতীয়তাবাদের প্রতীকসমূহের দিকে ছুড়ে দিয়েছিলেন সমালোচনামূলক ভাষ্য। জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মতাদর্শ—সব কিছুকেই তিনি পাঠযোগ্য করে তুলেছেন।
১৩ ঘণ্টা আগেযেখানেই যেতেন, সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন ক্যামেরাটা। ছাদে দাঁড়িয়ে বিশেষজ্ঞ ফটোগ্রাফারের মতো ছবি তোলার বিষয় আর দৃশ্য নির্বাচন করতেন। কখনো মানুষের মুখ, কখনো রাস্তা, বাড়িঘর, উৎসব বা প্রকৃতি। সবই ধরা পড়ত তাঁর ক্যামেরার ফ্রেমে।
২ দিন আগে