leadT1ad

প্রথমবারের মতো রাকসুর নেতৃত্বে ছাত্রশিবির, কেমন ছিল আগের নির্বাচনগুলোর ফলাফল

অনন্ত রায়হান
অনন্ত রায়হান
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৪১
স্ট্রিম গ্রাফিক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৩ পদের ২০টিতেই জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত রাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়ী হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক ও আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মার।

বিগত রাকসু নির্বাচনগুলোর ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবারেই প্রথম রাকসুতে নেতৃত্বে এল ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন’ এবং রাকসু মিলিয়ে ছাত্র সংসদের ভোট হয়েছে মোট ১৭ বার। এর মধ্যে ১০টি নির্বাচন হয়েছে স্বাধীনতার আগে, আর স্বাধীনতার পর সাতটি—১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-৭৪, ১৯৭৪-৭৫, ১৯৮০-৮১, ১৯৮৮-৮৯ ও ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষ ও এবারে ২০২৫ সালে।

এবারের নির্বাচন বাদে স্বাধীনতার পর রাকসুর নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রলীগ জয়ী হয়েছে দুবার, ছাত্র মৈত্রীও দুবার, ছাত্র ইউনিয়ন একবার এবং ছাত্রদল একবার। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয় পেয়েছে জাসদ ছাত্রলীগ তিনবার, ছাত্রলীগ দুবার এবং ছাত্র ইউনিয়ন একবার।

ফল ঘোষণার সময় সালাউদ্দিন আম্মার (বাঁয়ে), মোস্তাকুর রহমান (মাঝে)  ও এস এম সালমান সাব্বির (ডানে) বিজয় চিহ্ন দেখান।
ফল ঘোষণার সময় সালাউদ্দিন আম্মার (বাঁয়ে), মোস্তাকুর রহমান (মাঝে) ও এস এম সালমান সাব্বির (ডানে) বিজয় চিহ্ন দেখান।

রাকসু যেভাবে শুরু হলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই। বর্তমান ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কাজ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি প্রথম ওঠে ১৯৫৬ সালে তৎকালীন উপাচার্য ইতরাত হোসেন জুবেরীর কাছে। পরে ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের হস্তক্ষেপে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয় এবং ওই বছরই অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নির্বাচন। সেই নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন মনিরুজ্জামান মিয়া, আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হন আব্দুর রাজ্জাক খান।

প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নাম ছিল ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন’। ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে এই নামেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) অভিষেক অনুষ্ঠান (১৯৭১-৭২)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) অভিষেক অনুষ্ঠান (১৯৭১-৭২)

স্বাধীনতার আগে রাকসুর ভিপি ও জিএস

১৯৫৬-৫৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ভিপি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মো. মনিরুজ্জামান মিয়া। জিএস পদে দায়িত্ব পালন করেন মো. আব্দুর রাজ্জাক খান। পরের বছর ১৯৫৭-৫৮ সালে ভিপি হয়েছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী এবং জিএস হয়েছিলেন মো. আব্দুর রাজ্জাক খান।

১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর ভিপি ছিলেন শেখ মো. রুস্তম আলী। জিএস ছিলেন মো. বজলুর করিম। এর পরের শিক্ষাবর্ষে (১৯৬৩-৬৪) ভিপির দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ মাজহারুল হক ও জিএসের দায়িত্বে ছিলেন মো. আব্দুর রউফ। ১৯৬৪-৬৫ সালে ভিপি হন আব্দুর রাজ্জাক এবং জিএস হন বায়েজীদ আহম্মদ।

১৯৭২ সালের রাকসুর নির্বাচিত প্যানেল।।ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
১৯৭২ সালের রাকসুর নির্বাচিত প্যানেল।।ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

১৯৬৫-৬৬ সালে শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগ মনোনীত। আর জিএস ছিলেন সরদার আমজাদ হোসেন। ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন বায়েজীদ আহম্মদ, জিএস হন আব্দুস সাত্তার।

১৯৬৭-৬৮ সালে এ এফ এম জামিরুল ইসলাম ভিপি এবং মো. আব্দুর রহমান জিএস হিসেবে রাকসুর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮-৬৯ রাকসুর সালে ভিপি ছিলেন মো. আব্দুর রহমান। আর জিএস ছিলেন জালাল উদ্দিন সেলিম। ১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষে মীর শওকত আলী ভিপি ও আব্দুস সামাদ জিএস পদে ছিলেন।

রাকসু নির্বাচন ১৯৮৯। রাজশাহী বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের রোকেয়া হলের সামনে ছ‌বি-সাঈদ কাজল
রাকসু নির্বাচন ১৯৮৯। রাজশাহী বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের রোকেয়া হলের সামনে ছ‌বি-সাঈদ কাজল

স্বাধীন বাংলাদেশে রাকসুর ভিপি-জিএস

স্বাধীনতার পর রাকসুর প্রথম নেতৃত্ব গঠিত হয় ১৯৭২-৭৩ শিক্ষাবর্ষে। সে সময় ভিপি ছিলেন মো. হায়দার আলী এবং জিএস আহমেদ হোসেন। পরের শিক্ষাবর্ষে, অর্থাৎ ১৯৭৩-৭৪ সালে নেতৃত্বে আসেন নুরুল ইসলাম ঠান্টু (ভিপি) ও শামসুল হক টুকু (জিএস)। ১৯৭৪-৭৫ শিক্ষাবর্ষে দায়িত্ব পান ফজলুর রহমান পটল (ভিপি) ও রফিকুল ইসলাম (জিএস)।

এরপর ছয় বছরের বিরতির পর ১৯৮০-৮১ সালে রাকসু আবারও পুনর্গঠিত হয়। সে সময় ভিপি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ফজলে হোসেন বাদশা। আর জিএস ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

এর পরের মেয়াদে ১৯৮৮-৮৯ সালে রাকসুর ভিপি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর রাগীব আহসান মুন্না। আর জিএস রুহুল কুদ্দুস বাবু। রাগীব আহসান মুন্না সিপিবির রাজনীতিতে যুক্ত।

এরপর ১৯৮৯-৯০ রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বর্তমানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। সেই নির্বাচনে জিএস নির্বাচিত হন রুহুল কুদ্দুস বাবু।

পত্রিকায় ১৯৮৮-৮৯ সালে রাকসুর খবর
পত্রিকায় ১৯৮৮-৮৯ সালে রাকসুর খবর

২০২৫ সালের রাকসু

এবারের ২০২৫ সালের রাকসু নির্বাচনে ২৩ পদের ২০টিতেই জয় লাভ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এই রাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের শেখ নূর উদ্দীন আবীর পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট। তাঁদের ভোটের ব্যবধান ৯ হাজার ২৯০।

সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়ী হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক ও আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মার। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ৫৩৭। এ পদে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৯ ভোট। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ৫ হাজার ৮০৮।

অন্যদিকে ৬ হাজার ৯৭১ ভোট নিয়ে সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সালমান সাব্বির। প্রধান তিনটি পদের মধ্যে এই পদে তুলনামূলক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। সালমানের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪১ ভোট। তাঁদের ভোটের ব্যবধান ১ হাজার ৩০।

এ ছাড়া ১৬টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৪টিতেই জিতেছে সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট। ক্রীড়া ও সম্পাদক পদটি জিতেছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের নার্গিস খাতুন। এর বাইরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত