leadT1ad

হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া গালফস্ট্রিম জি-১০০ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, উচ্চগতিসহ আরও যে সুবিধা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয়েছিল, সেটি গালফস্ট্রিম জি-১০০ সিরিজের একটি প্রাইভেট জেট। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কী কী সুবিধা থাকে?

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৩১
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহারের সময় বিমানের কেবিনের ভেতরে বসানো হয় পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সরঞ্জাম। সংগৃহীত ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয়েছিল, সেটি গালফস্ট্রিম জি-১০০ সিরিজের একটি প্রাইভেট জেট। এটি মূলত একটি সুপার-লাইট ‘মিডসাইজ’ বিজনেস জেট, যা বেসামরিক ও করপোরেট ভ্রমণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী এর কেবিন সম্পূর্ণ পুনর্বিন্যাস করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বা মেডিকেল ট্রান্সপোর্ট কনফিগারেশনে ব্যবহার করা যায়।

এই ধরনের রূপান্তরের মাধ্যমে কেবিনকে একটি ‘ফ্লাইং আইসিইউ’তে পরিণত করা সম্ভব হয়। গুরুতর আহত বা সংকটাপন্ন রোগীকে দ্রুত ও নিরাপদে এক দেশ থেকে আরেক দেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই প্রাইভেট জেট ব্যবহার করা হয়।

গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গালফস্ট্রিম জি–১০০ একটি উচ্চগতির উড়োজাহাজ হওয়ায় দীর্ঘ দূরত্ব অল্প সময়ে অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া যায়। আন্তর্জাতিক মেডিকেল ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এই সময় সাশ্রয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ, চিকিৎসার বিলম্ব অনেক সময় রোগীর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সেই দিক থেকে এই জেটের গতি ও সক্ষমতা জীবনরক্ষাকারী হয়ে উঠতে পারে।

ভেতরেই আইসিইউ

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহারের সময় বিমানের কেবিনের ভেতরে বসানো হয় পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সরঞ্জাম। রোগীকে স্থির ও নিরাপদভাবে শুইয়ে রাখার জন্য থাকে বিশেষ স্ট্রেচার। শ্বাসপ্রশ্বাসের সহায়তার জন্য থাকে ভেন্টিলেটর। হৃদস্পন্দনসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সূচক পর্যবেক্ষণের জন্য থাকে মনিটর। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা এবং জরুরি ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও রাখা হয়। এর ফলে পুরো ফ্লাইটজুড়ে রোগী চিকিৎসকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকেন এবং আকাশপথেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।

শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

এই ধরনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটে সাধারণত রোগীর সঙ্গে থাকেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা প্যারামেডিক। ফ্লাইট চলাকালীন রোগীর শারীরিক অবস্থায় কোনো পরিবর্তন হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসাগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে। সাধারণ বাণিজ্যিক বিমানে যা সম্ভব নয়, এখানে তা করা যায় কারণ পুরো ফ্লাইটটাই রোগীকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়।

আরও যেসব সুবিধা

গালফস্ট্রিম জি–১০০-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর ফ্লাইটের স্থিতিশীলতা। তুলনামূলকভাবে কম কম্পন ও কম ঝাঁকুনির কারণে গুরুতর আহত, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী বা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীর জন্য এটি বেশি নিরাপদ। দীর্ঘ সময় আকাশে থাকলেও রোগীর শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না, যা চিকিৎসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

গালফস্ট্রিম জি-১০০। সংগৃহীত ছবি
গালফস্ট্রিম জি-১০০। সংগৃহীত ছবি

এই জেটের আরেকটি বড় সুবিধা হলো, তুলনামূলকভাবে ছোট রানওয়েতেও অবতরণ করতে পারে। ফলে প্রয়োজনে বিকল্প বিমানবন্দর ব্যবহার করা যায় এবং রোগী পরিবহনে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়ানো সম্ভব হয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ধরনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইট পুরোপুরি মেডিকেল প্রটোকল অনুযায়ী পরিচালিত হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে উড্ডয়নের সময় নির্ধারণ করা হয়, গ্রাউন্ড অ্যাম্বুলেন্স থেকে সরাসরি বিমানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা থাকে এবং গন্তব্য হাসপাতালের সঙ্গে আগেই সমন্বয় করা হয়। সেখানে কোনো নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক সময়সূচি বা ট্রানজিট ঝামেলা নেই। কারণ, সবকিছুই পরিচালিত হয় রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনকে সামনে রেখে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত