আজ বিশ্ব শান্তি দিবস। দিনটি পালিত হয় স্লোগান, কবুতর আর বক্তৃতায় ভরপুর এক উৎসব হিসেবে। অথচ পৃথিবী জুড়ে চলছে যুদ্ধ, দখল, অস্ত্র ব্যবসা আর উদ্বাস্তু মানুষের হাহাকার। শান্তির নাম এখন বিজ্ঞাপন, শান্তির আকাঙ্ক্ষা এখন বসে থাকে অস্ত্র কেনার বাজেটের পাশে। রাজনীতি মেলে পলিটিক্সের সাথে ঠিকই, কিন্তু শান্তি মেলে না শান্তির সাথে। এই বৈপরীত্য নিয়েই এই লেখা।
সৈকত আমীন
কবি তারাপদ রায় বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে তাঁর বিখ্যাত ‘আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে’ কবিতাটি হয়তো ওপরের লেখাটার মতোই হতো।
রাজনীতির পলিটিক্স
আজ বিশ্ব শান্তি দিবস। কাগজের ক্যালেন্ডার খুললেই দেখা যাবে, তারিখটা লাল কালিতে চিহ্নিত। সরকারি-বেসরকারি অফিসে পোস্টার, স্কুলে-বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার, আর টেলিভিশনে প্যাকেজ অনুষ্ঠান। বক্তারা মঞ্চে উঠে বলবেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অশান্তি, আমাদের অস্ত্র হলো শান্তি।’ তারপর হাততালি। আর পরের দিনই শিরোনামে আসবে—‘অস্ত্র কিনতে নতুন ঋণ নিচ্ছে অমুক সরকার।’
শান্তি দিবস পালনের এই রীতি একেবারে ধ্রুপদী। গ্রীনরুমে মিনারেল ওয়াটার, চায়ের সাথে বিস্কুট, মঞ্চে কবুতর ছাড়ার অভিনয়। তবে কবুতরগুলো আজকাল বেশি টাকায় ভাড়া নিতে হয়, কারণ শহরের আসল কবুতরগুলো ছাদে ছাদে প্লাস্টিক গিলে পেট ব্যথায় খুবই অশান্তিতে আছে। তবু কবুতরের সাথে ছবি তোলা জরুরি। কারণ শান্তি দিবসে কবুতরের সাথে ছবি না থাকলে নাকি শান্তিও থাকে না।
প্রতি বছর দেখা যায়, শান্তি দিবসে ভাষণ দেন যারা, তারাই জাতীয় বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেন প্রতিরক্ষা খাতে। তাঁদের যুক্তি, শান্তি বজায় রাখতে হলে আগে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়। যেমন ধরুন, শান্তির পাহারাদার রাখতে হলে ট্যাঙ্ক চাই, মিসাইল চাই, ড্রোন চাই। শান্তির পক্ষে লড়তে গেলে যুদ্ধের খরচ লাগে। এই যুক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, জাতিসংঘ ভবনের দেয়ালেও প্রতিধ্বনিত হয়—‘শান্তি চাই, তবে সাবমেরিন ছাড়া শান্তি হয় না।’
এখন শান্তি দিবসও একটি বাজার। বিশেষ টি-শার্ট বিক্রি হয়, যেখানে থাকে সাদা পায়রার ছবি। ব্যানার বানায় এনজিও, যাদের বাজেটে থাকে শান্তি প্রকল্প, কিন্তু খরচ হয় অফিসের এসি আর বিদেশ সফরে। টকশোতে বিশেষজ্ঞরা আসেন, যারা গত সপ্তাহে জলবায়ু নিয়ে কথা বলেছিলেন, আগামী সপ্তাহে অর্থনীতি নিয়ে করবেন। বিষয় পাল্টায়, তবে স্যুট পাল্টায় না।
শান্তির কনফারেন্সে কফি খেতে খেতে সবাই একমত হন যে, শান্তি খুব দরকার। তবে যখন আলোচনায় আসে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, সুদান, তখন মাইক্রোফোন হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। আলো নিভে যায়। অনুষ্ঠান শেষ হয় মিষ্টি খেয়ে আর সেলফি তুলে।
শান্তি দিবসে অনেক দেশে প্যারেড হয়। ট্যাঙ্কে ফুল বাঁধা হয়, সেনারা হাসিমুখে হাত নাড়েন। শিশুরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ায়—‘No War, Only Peace’। কিন্তু তিন রাস্তা দূরেই সেই শিশুরা বোমা-শেল এড়িয়ে স্কুলে যায়।
এখন প্রশ্ন হলো, রাজনীতি কোথায়, পলিটিক্স কোথায়? আসলে রাজনীতি হলো পাঠ্যবইয়ে, যেখানে শেখানো হয়—জনগণের জন্য কাজ করা। আর পলিটিক্স হলো রিয়েল লাইফের, যেখানে শান্তির নাম করে অস্ত্র ব্যবসায় কমিশন নিতে শেখা লাগে। রাজনীতি মিলবে পলিটিক্সের সাথে ঠিকই, কারণ দুটোই শব্দকোষে পাশাপাশি দাঁড়ানো। কিন্তু শান্তি মেলেনি শান্তির সাথে। কারণ শান্তি এখন আর এক কথার অর্থে নেই, শান্তি এখন কোটেশনের মধ্যে লেখা এক বিজ্ঞাপন।
আগে শান্তি মানে ছিল যুদ্ধবিহীন অবস্থা। এখন শান্তি মানে হলো—‘যুদ্ধ চলছে, তবে আমরা তার নাম দিচ্ছি শান্তি মিশন।’ আগে শান্তি মানে ছিল ঘরে নিরাপদে ঘুমানো। এখন শান্তি মানে হলো—‘বোমার শব্দে ঘুম ভাঙলেও আমরা বলব, নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।’
কাকে শান্তি দেবে ‘শান্তি’?
আজ যদি প্রশ্ন তোলা হয় শান্তি দিবস কাদের জন্য? উত্তর মিলবে না। কারণ, গাজায় যে শিশু, তাঁর কাছে শান্তি দিবস মানে খালি পেটে একটা দুধের বোতল পাওয়া। ইউক্রেনের শহরে শান্তি দিবস মানে আশ্রয়কেন্দ্রের গাদাগাদি। সুদানের ক্যাম্পে শান্তি দিবস মানে একবেলা খাবারের অনিশ্চয়তা।
তাহলে শান্তি দিবস আসলে কার জন্য? সম্ভবত তাদের জন্য, যারা এয়ারকন্ডিশন্ড কনফারেন্স হলে বসে শান্তির নীল বই প্রকাশ করেন। আর যারা ক্ষুধা, বোমা, উদ্বাস্তু শিবিরে বাঁচতে শেখে, তাদের কাছে শান্তি দিবস এক প্রকার বিদ্রূপ।
শান্তি দিবস শেষ হলে রাত নামে। টেলিভিশনের নিউজে আসে—নতুন সংঘাত শুরু হলো সীমান্তে। ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করে #PrayForPeace। পরদিন অফিসে গিয়ে কেউ বলে, ‘কাল শান্তি দিবসে দারুণ গান শুনলাম।’ আর কেউ ট্যাক্সির ভেতর বোমার শব্দ শুনে ভাবে, ‘এবার পালাব কোথায়?’
কবি তারাপদ রায় বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে তাঁর বিখ্যাত ‘আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে’ কবিতাটি হয়তো ওপরের লেখাটার মতোই হতো।
রাজনীতির পলিটিক্স
আজ বিশ্ব শান্তি দিবস। কাগজের ক্যালেন্ডার খুললেই দেখা যাবে, তারিখটা লাল কালিতে চিহ্নিত। সরকারি-বেসরকারি অফিসে পোস্টার, স্কুলে-বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার, আর টেলিভিশনে প্যাকেজ অনুষ্ঠান। বক্তারা মঞ্চে উঠে বলবেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অশান্তি, আমাদের অস্ত্র হলো শান্তি।’ তারপর হাততালি। আর পরের দিনই শিরোনামে আসবে—‘অস্ত্র কিনতে নতুন ঋণ নিচ্ছে অমুক সরকার।’
শান্তি দিবস পালনের এই রীতি একেবারে ধ্রুপদী। গ্রীনরুমে মিনারেল ওয়াটার, চায়ের সাথে বিস্কুট, মঞ্চে কবুতর ছাড়ার অভিনয়। তবে কবুতরগুলো আজকাল বেশি টাকায় ভাড়া নিতে হয়, কারণ শহরের আসল কবুতরগুলো ছাদে ছাদে প্লাস্টিক গিলে পেট ব্যথায় খুবই অশান্তিতে আছে। তবু কবুতরের সাথে ছবি তোলা জরুরি। কারণ শান্তি দিবসে কবুতরের সাথে ছবি না থাকলে নাকি শান্তিও থাকে না।
প্রতি বছর দেখা যায়, শান্তি দিবসে ভাষণ দেন যারা, তারাই জাতীয় বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেন প্রতিরক্ষা খাতে। তাঁদের যুক্তি, শান্তি বজায় রাখতে হলে আগে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়। যেমন ধরুন, শান্তির পাহারাদার রাখতে হলে ট্যাঙ্ক চাই, মিসাইল চাই, ড্রোন চাই। শান্তির পক্ষে লড়তে গেলে যুদ্ধের খরচ লাগে। এই যুক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, জাতিসংঘ ভবনের দেয়ালেও প্রতিধ্বনিত হয়—‘শান্তি চাই, তবে সাবমেরিন ছাড়া শান্তি হয় না।’
এখন শান্তি দিবসও একটি বাজার। বিশেষ টি-শার্ট বিক্রি হয়, যেখানে থাকে সাদা পায়রার ছবি। ব্যানার বানায় এনজিও, যাদের বাজেটে থাকে শান্তি প্রকল্প, কিন্তু খরচ হয় অফিসের এসি আর বিদেশ সফরে। টকশোতে বিশেষজ্ঞরা আসেন, যারা গত সপ্তাহে জলবায়ু নিয়ে কথা বলেছিলেন, আগামী সপ্তাহে অর্থনীতি নিয়ে করবেন। বিষয় পাল্টায়, তবে স্যুট পাল্টায় না।
শান্তির কনফারেন্সে কফি খেতে খেতে সবাই একমত হন যে, শান্তি খুব দরকার। তবে যখন আলোচনায় আসে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, সুদান, তখন মাইক্রোফোন হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। আলো নিভে যায়। অনুষ্ঠান শেষ হয় মিষ্টি খেয়ে আর সেলফি তুলে।
শান্তি দিবসে অনেক দেশে প্যারেড হয়। ট্যাঙ্কে ফুল বাঁধা হয়, সেনারা হাসিমুখে হাত নাড়েন। শিশুরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ায়—‘No War, Only Peace’। কিন্তু তিন রাস্তা দূরেই সেই শিশুরা বোমা-শেল এড়িয়ে স্কুলে যায়।
এখন প্রশ্ন হলো, রাজনীতি কোথায়, পলিটিক্স কোথায়? আসলে রাজনীতি হলো পাঠ্যবইয়ে, যেখানে শেখানো হয়—জনগণের জন্য কাজ করা। আর পলিটিক্স হলো রিয়েল লাইফের, যেখানে শান্তির নাম করে অস্ত্র ব্যবসায় কমিশন নিতে শেখা লাগে। রাজনীতি মিলবে পলিটিক্সের সাথে ঠিকই, কারণ দুটোই শব্দকোষে পাশাপাশি দাঁড়ানো। কিন্তু শান্তি মেলেনি শান্তির সাথে। কারণ শান্তি এখন আর এক কথার অর্থে নেই, শান্তি এখন কোটেশনের মধ্যে লেখা এক বিজ্ঞাপন।
আগে শান্তি মানে ছিল যুদ্ধবিহীন অবস্থা। এখন শান্তি মানে হলো—‘যুদ্ধ চলছে, তবে আমরা তার নাম দিচ্ছি শান্তি মিশন।’ আগে শান্তি মানে ছিল ঘরে নিরাপদে ঘুমানো। এখন শান্তি মানে হলো—‘বোমার শব্দে ঘুম ভাঙলেও আমরা বলব, নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।’
কাকে শান্তি দেবে ‘শান্তি’?
আজ যদি প্রশ্ন তোলা হয় শান্তি দিবস কাদের জন্য? উত্তর মিলবে না। কারণ, গাজায় যে শিশু, তাঁর কাছে শান্তি দিবস মানে খালি পেটে একটা দুধের বোতল পাওয়া। ইউক্রেনের শহরে শান্তি দিবস মানে আশ্রয়কেন্দ্রের গাদাগাদি। সুদানের ক্যাম্পে শান্তি দিবস মানে একবেলা খাবারের অনিশ্চয়তা।
তাহলে শান্তি দিবস আসলে কার জন্য? সম্ভবত তাদের জন্য, যারা এয়ারকন্ডিশন্ড কনফারেন্স হলে বসে শান্তির নীল বই প্রকাশ করেন। আর যারা ক্ষুধা, বোমা, উদ্বাস্তু শিবিরে বাঁচতে শেখে, তাদের কাছে শান্তি দিবস এক প্রকার বিদ্রূপ।
শান্তি দিবস শেষ হলে রাত নামে। টেলিভিশনের নিউজে আসে—নতুন সংঘাত শুরু হলো সীমান্তে। ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করে #PrayForPeace। পরদিন অফিসে গিয়ে কেউ বলে, ‘কাল শান্তি দিবসে দারুণ গান শুনলাম।’ আর কেউ ট্যাক্সির ভেতর বোমার শব্দ শুনে ভাবে, ‘এবার পালাব কোথায়?’
কফি আবিষ্কার নিয়ে যে গল্পটি এখন বলা হবে, সেটি একজন সুফি সাধকের। বলা হয়ে থাকে, গোতুল আকবর নুরুদ্দিন আবু আল হাসান আল শাদিলি নামের এক সুফি–দরবেশ এতটাই নিষ্কলঙ্ক ছিলেন যে, তাঁর প্রার্থনার কারণে কেউ কেউ আরোগ্য লাভ করতেন।
৮ ঘণ্টা আগেবাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিভিন্ন অঙ্গ ও অনুষঙ্গের মধ্যে কুমারী পূজা অন্যতম। এ পূজায় সাধারণত অরজঃস্বলা কুমারী কন্যাকে সাক্ষাৎ দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। মৃন্ময়ী প্রতিমার পাশাপাশি চিন্ময়ী কুমারীর মধ্যে দেবীর দর্শন এই পূজার একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
১ দিন আগেবাংলায় একদম আদিকাল থেকে দুর্গাপূজার চল ছিল, এমন কিন্তু নয়। শোনা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে দিনাজপুর অথবা মালদার জমিদারেরা বাংলায় দুর্গাপূজার সূচনা করেন। কিন্তু এ-ও শোনা যায়, মোঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকেই নাকি বাংলায় খুব ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হতো।
২ দিন আগেরাষ্ট্রে শৃঙ্খলা আনতে চাইলে প্রথমে শাসন মসনদের নাম ও কাজের দায়িত্ব সঠিক হতে হবে। এই নীতির নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘ঝেংমিং’। যার বাংলা দাঁড়ায় ‘নামের যথার্থতা’। অর্থাৎ রাজা যেন সত্যিই রাজার মতো আচরণ করেন, পিতা যেন পিতার মতো দায়িত্ব নেন।
২ দিন আগে