সৈকত আমীন

তেত্রিশ বছর। একটি ক্যাম্পাসের জন্য কত লম্বা সময়! শেষবার যখন জাকসু নির্বাচন হয়েছিল, তখন এমন অনেক প্রাণী এই পৃথিবীতে ছিল, যারা এখন বিলুপ্ত; কিংবা এমন অনেক মেরুদণ্ডওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, যারাও আজ বিলুপ্ত।
তেত্রিশ বছর লম্বা সময়। তখন জন্ম নেওয়া যেকোনো শিশু এত দিনে এমফিল-পিএইচডি করে নামের আগে ড-এ ডট লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হয়ে যেতে পারত। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পেল কেবল প্রতিশ্রুতির মালা, নাম যার—জাকসু নির্বাচন।
১৯৯২ সালের পর থেকে ছাত্র সংসদ ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল গণতন্ত্রের জাদুঘরে। জাকসু হয়ে গিয়েছিল হারানো দিনের পুরোনো স্মৃতি, পুরোনো অ্যালবামের হলুদ হয়ে যাওয়া ছবির মতো। মাঝেমধ্যে অবশ্য ক্ষমতাসীনেরা ‘শীঘ্রই নির্বাচন হবে’ বলে গালগপ্প আর গুজব ছড়াতেন। তখন প্রশাসন অতি অবশই টেবিলে ফাইল চাপা দিত। আর শিক্ষকেরাও আরামসে চা-সিগারেট টেনে দার্শনিক আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। একসময় সবাই ধরে নিল, জাকসু নির্বাচনের অস্তিত্ব ঠিক তেমনই, যেমন অস্তিত্ব আছে রূপকথার পক্ষীরাজের।
কিন্তু ২০২৫ সালে সত্যিই দেখা গেল নির্বাচনের হাঁকডাক। ২৯ জুন বের হলো তফসিল। ছাত্রদের বলা হলো, ‘জাকসু আসছে, জাকসু আসছে, সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ প্যানেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।‘
ক্যাম্পাসে বসে কেউ ভাবল, আসছে নতুন সূর্যোদয় আসছে, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান…। কেউ আবার হাসতে হাসতে বলল, 'এই সূর্যের আলো আসছে জেনারেটরের তেল থেকে।‘
জাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলো এমনভাবে, যেন দুর্যোগের গ্রামে চেয়ারম্যানের করা ত্রাণের তালিকা। ১১ হাজার ৯১৯ জন ভোটার। এ তালিকায় কারও নাম বাদ পড়ল, হৃদয়ে নাম লেখার মতো করে কারও নাম লেখা হলো দুইবার। আর তখন প্রশাসন বলল, ‘ভুল তো হতেই পারে।‘ কিন্তু ছাত্ররা কি ছাড়ে! তারা বলল, ‘ভুল না, বাংলা ভাষায় এর নাম স্বজনপ্রীতি।‘
১১ সেপ্টেম্বর। ভোটের দিন। সকালে লম্বা লাইন, অবশেষে সত্যি সত্যিই নির্বাচন হচ্ছে! ছাত্ররা ভোট দিল, কিন্তু বিকেলের আগেই শুরু হলো আসল নাটক। এক কেন্দ্রে বাক্স ফাঁকা, অন্য কেন্দ্রে একজন ভোটার দাঁড়িয়ে আছে আরেকজনের প্রক্সি দিতে। বাইরে রাজনৈতিক নেতাদের পদচারণা, যেন পুরো নির্বাচনটা তাদেরই নাট্যমঞ্চ। যেন সবুজ ক্যাম্পাসের `গণতন্ত্র‘কে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সেলফি তুলতে এসেছেন সবাই!
এই নাটক দেখে কমিশনের সদস্যরা একে একে পদত্যাগ করতে শুরু করলেন। তাঁরা বললেন, অভিযোগ শুনানি ছাড়া ভোট গণনা চলতে পারে না। এটা নির্বাচন না, কারচুপির উৎসব।
কিন্তু মজার ব্যাপার, কমিশনাররা পদত্যাগ করলেও ভোট গণনা চলল অবিরাম। কারণ, গুরু বলে গিয়েছেন ‘শো মাস্ট গো অন’।
এরপর গণনার নাটক শেষ হলো ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায়। সিনেট হলে ঘোষণা করা হলো ফলাফল। প্রধান কমিশনার দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমরা সফল হয়েছি।‘ দেখুন, সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট ২৫ পদের ২১টি দখল করতে পেরেছে।
যাঁরা ত্রিশ-তিন বছর অপেক্ষা করেছিলেন, তারা পেলেন এক চরম কৌতুক। ছাত্ররা ভোট দিলো গণতন্ত্রের আশায়, কিন্তু পেল টান টান তামাশার সার্কাস। শিবির জিতল, প্রশাসনও কি জিতল? ছাত্ররা শুধু দাঁড়িয়ে থাকলো মাঠে—যেন কোনো নাটকের এক্সট্রা চরিত্র তারা।
জাকসুর এই নির্বাচন আমাদের মনে করিয়ে দিল পাড়া-মহল্লার টুর্নামেন্টের কথা। যেখানে অনেক দল অংশ নিলেও শেষপর্যন্ত কমিটির দলই জেতে। কিংবা মনে করিয়ে দিল সেই জুয়ার টেবিলের কথা, যেখানে ভাগ্যের চাকা ঘোরে, কিন্তু শেষপর্যন্ত জেতে ক্যাসিনোমালিক নিজেই!

তেত্রিশ বছর। একটি ক্যাম্পাসের জন্য কত লম্বা সময়! শেষবার যখন জাকসু নির্বাচন হয়েছিল, তখন এমন অনেক প্রাণী এই পৃথিবীতে ছিল, যারা এখন বিলুপ্ত; কিংবা এমন অনেক মেরুদণ্ডওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, যারাও আজ বিলুপ্ত।
তেত্রিশ বছর লম্বা সময়। তখন জন্ম নেওয়া যেকোনো শিশু এত দিনে এমফিল-পিএইচডি করে নামের আগে ড-এ ডট লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হয়ে যেতে পারত। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পেল কেবল প্রতিশ্রুতির মালা, নাম যার—জাকসু নির্বাচন।
১৯৯২ সালের পর থেকে ছাত্র সংসদ ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল গণতন্ত্রের জাদুঘরে। জাকসু হয়ে গিয়েছিল হারানো দিনের পুরোনো স্মৃতি, পুরোনো অ্যালবামের হলুদ হয়ে যাওয়া ছবির মতো। মাঝেমধ্যে অবশ্য ক্ষমতাসীনেরা ‘শীঘ্রই নির্বাচন হবে’ বলে গালগপ্প আর গুজব ছড়াতেন। তখন প্রশাসন অতি অবশই টেবিলে ফাইল চাপা দিত। আর শিক্ষকেরাও আরামসে চা-সিগারেট টেনে দার্শনিক আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। একসময় সবাই ধরে নিল, জাকসু নির্বাচনের অস্তিত্ব ঠিক তেমনই, যেমন অস্তিত্ব আছে রূপকথার পক্ষীরাজের।
কিন্তু ২০২৫ সালে সত্যিই দেখা গেল নির্বাচনের হাঁকডাক। ২৯ জুন বের হলো তফসিল। ছাত্রদের বলা হলো, ‘জাকসু আসছে, জাকসু আসছে, সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ প্যানেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।‘
ক্যাম্পাসে বসে কেউ ভাবল, আসছে নতুন সূর্যোদয় আসছে, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান…। কেউ আবার হাসতে হাসতে বলল, 'এই সূর্যের আলো আসছে জেনারেটরের তেল থেকে।‘
জাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলো এমনভাবে, যেন দুর্যোগের গ্রামে চেয়ারম্যানের করা ত্রাণের তালিকা। ১১ হাজার ৯১৯ জন ভোটার। এ তালিকায় কারও নাম বাদ পড়ল, হৃদয়ে নাম লেখার মতো করে কারও নাম লেখা হলো দুইবার। আর তখন প্রশাসন বলল, ‘ভুল তো হতেই পারে।‘ কিন্তু ছাত্ররা কি ছাড়ে! তারা বলল, ‘ভুল না, বাংলা ভাষায় এর নাম স্বজনপ্রীতি।‘
১১ সেপ্টেম্বর। ভোটের দিন। সকালে লম্বা লাইন, অবশেষে সত্যি সত্যিই নির্বাচন হচ্ছে! ছাত্ররা ভোট দিল, কিন্তু বিকেলের আগেই শুরু হলো আসল নাটক। এক কেন্দ্রে বাক্স ফাঁকা, অন্য কেন্দ্রে একজন ভোটার দাঁড়িয়ে আছে আরেকজনের প্রক্সি দিতে। বাইরে রাজনৈতিক নেতাদের পদচারণা, যেন পুরো নির্বাচনটা তাদেরই নাট্যমঞ্চ। যেন সবুজ ক্যাম্পাসের `গণতন্ত্র‘কে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সেলফি তুলতে এসেছেন সবাই!
এই নাটক দেখে কমিশনের সদস্যরা একে একে পদত্যাগ করতে শুরু করলেন। তাঁরা বললেন, অভিযোগ শুনানি ছাড়া ভোট গণনা চলতে পারে না। এটা নির্বাচন না, কারচুপির উৎসব।
কিন্তু মজার ব্যাপার, কমিশনাররা পদত্যাগ করলেও ভোট গণনা চলল অবিরাম। কারণ, গুরু বলে গিয়েছেন ‘শো মাস্ট গো অন’।
এরপর গণনার নাটক শেষ হলো ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায়। সিনেট হলে ঘোষণা করা হলো ফলাফল। প্রধান কমিশনার দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমরা সফল হয়েছি।‘ দেখুন, সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট ২৫ পদের ২১টি দখল করতে পেরেছে।
যাঁরা ত্রিশ-তিন বছর অপেক্ষা করেছিলেন, তারা পেলেন এক চরম কৌতুক। ছাত্ররা ভোট দিলো গণতন্ত্রের আশায়, কিন্তু পেল টান টান তামাশার সার্কাস। শিবির জিতল, প্রশাসনও কি জিতল? ছাত্ররা শুধু দাঁড়িয়ে থাকলো মাঠে—যেন কোনো নাটকের এক্সট্রা চরিত্র তারা।
জাকসুর এই নির্বাচন আমাদের মনে করিয়ে দিল পাড়া-মহল্লার টুর্নামেন্টের কথা। যেখানে অনেক দল অংশ নিলেও শেষপর্যন্ত কমিটির দলই জেতে। কিংবা মনে করিয়ে দিল সেই জুয়ার টেবিলের কথা, যেখানে ভাগ্যের চাকা ঘোরে, কিন্তু শেষপর্যন্ত জেতে ক্যাসিনোমালিক নিজেই!

বিকেলবেলার এক পশলা বৃষ্টি, হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকাতেই ইউটিউবের প্লে-লিস্টে বেজে উঠল নব্বই দশকের জনপ্রিয় কোনো গান। ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার বুকের ভেতর কেমন যেন একটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কারো চোখে জমা হয় অশ্রুবিন্দু, কিন্তু ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে মৃদু হাসি।
১ ঘণ্টা আগে
সাধারণত পথশিশুরা মানুষের কাছে হাত পাতে, সাহায্য চায়। কিন্তু সেদিন তাঁরা ছিল দাতা। সারা দিন তাঁরা যাত্রীদের জুতা পলিশ করল, হাঁকডাক করে লোক জড়ো করল, সবাইকে বাংলাদেশের মানুষের দুঃখের কথা বলল। দিনশেষে তাঁদের ছোট ছোট হাতে জমেছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ।
১১ ঘণ্টা আগে
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর একাধিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি। মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা অথবা তাঁদের যাতে নিশ্চিতভাবে ধরা যায় এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্য দিলে ১৪ মণ আমন চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত।
১ দিন আগে
আজ ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতিবছর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতি সচেতনতার প্রসার, মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার অঙ্গীকারে দিবসটি পালিত হয়।
১ দিন আগে