কিছু বই এমন ভবিষ্যৎ দেখিয়েছে, যা আজকের বাস্তবতায় আমাদের অবাক করে দেয়। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন রিডার’স ডাইজেস্ট এমন ১০টি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইটিও আছে। চলুন দেখি, সেই দশটি বই এবং তার লেখকদের আশ্চর্যজনক ভবিষ্যদ্বাণী!
স্ট্রিম ডেস্ক
ধরুন, আপনি একজন লেখক। বসবাস করছেন গত শতাব্দীর প্রথম দিকের পৃথিবীতে। তখন ইন্টারনেট ছিল না, স্মার্টফোন ছিল না, ভিডিও কল বা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) কল্পনাতেও আসত না। তারপরও আপনি এমন একটা গল্প লিখে ফেললেন যেখানে সবাই নিজের ঘরে বসেই কাজ করে। বাইরে বের হওয়া বা সরাসরি কারও সঙ্গে দেখা করার ঘটনা খুবই বিরল। গল্পের চরিত্রেরা শুধু ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। বন্ধুত্ব বা বন্ধুদের দল তৈরি করা—সবকিছুই হয় ভার্চুয়ালি মেশিনের মাধ্যমে। এই কথা শুনলে সেই সময়ের মানুষ নিশ্চয়ই আপনাকে পাগল ভাবত, তাই না?
কিন্তু এমনই হয়েছে অনেক লেখকের ক্ষেত্রে। তাঁরা যা কল্পনা করেছিলেন, আজ সেটাই বাস্তব হয়ে উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন রিডার’স ডাইজেস্ট এমনই ১০টি বইয়ের তালিকা তৈরি করেছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই তালিকায় বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইটির নামও আছে।
১৯৯৩ সালে ‘প্যারাবল অব দ্য সোয়ার’ এবং ১৯৯৮ সালে ‘প্যারাবল অব দ্য ট্যালেন্টস’ বইতে অক্টাভিয়া ই. বাটলার ভবিষ্যতের এমন এক আমেরিকার কথা কল্পনা করেছিলেন, যেখানে এক পপুলিস্ট কর্তৃত্ববাদী (পপুলিস্ট ডেমোগগ) নেতা ক্ষমতায় উঠে আসেন। বইয়ে জলবায়ু পরিবর্তন আর সামাজিক বৈষম্যের কথাও আছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, সেখানে এক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী স্লোগান দেন ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’।
যদিও রোনাল্ড রেগান ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘লেটস মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ স্লোগান প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। এই স্লোগানকেই কাটছাঁট করে পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে এটি তাঁর মূল স্লোগান বানান। বইয়ে যা বলা হয়েছিল ঠিক তাই হয়েছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়েছে, বরফ গলেছে ও সমুদ্রপৃষ্ঠও বেড়েছে। আর সামাজিক বৈষম্যও বেড়েছে।
জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ বইয়ে কল্পনা করা হয়েছিল এক ভয়ংকর ভবিষ্যতের। সেখানে ছিল ‘বিগ ব্রাদার’ নামের শক্তিমান শাসক, যিনি সবার ওপর নজর রাখেন। ‘টেলিস্ক্রিন’ দিয়ে মানুষকে সব সময় নজরদারি করা হয়। এমনকি কেউ মনে মনে সরকারের বিরুদ্ধে ভাবলেও সেটি ধরা পড়ে যেত।
‘ভার্সিফিকেটর’ নামে এক মেশিন ছিল। এটা নিজে থেকেই গল্প, গান আর কবিতা তৈরি করতে পারত। লেখক বা শিল্পীর দরকার হতো না।
২০০১ সালে আমেরিকার ‘প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট’ চালুর পর সরকারি নজরদারি ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। ই-মেইল, ফোনকল আর ওয়েব সার্ফিং সরকারি নজরের আওতায় আসে। শুধু অপরাধ নয়, সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত তথ্য খতিয়ে দেখা হয়।
আজকের সিসি ক্যামেরা, ফেস রিকগনিশন, স্মার্টওয়াচ বা স্মার্টফোন আসলে টেলিস্ক্রিনের মতোই। এগুলো আমাদের মুখের ভাব, হৃদস্পন্দন, গতিবিধি সব ট্র্যাক করে। আর ভার্সিফিকেটরের ভবিষ্যৎবাণী আজ এআই মিউজিক জেনারেটরের মাধ্যমে বাস্তব হয়ে গেছে। এআই এখন গান, গল্প, এমনকি সংবাদ পর্যন্ত লিখে ফেলছে।
১৯০৯ সালে লেখা এই ছোটগল্পে লেখক এমন এক ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছিলেন, যেখানে মানুষ শুধু নিজের ঘরে বসেই দিন কাটায়। কাজকর্মও করে ঘরে বসে। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে। সেই মানুষগুলোর বন্ধুত্ব বা গ্রুপ সবকিছুই ছিল ভার্চুয়াল। ধীরে ধীরে তারা ঘরের বাইরে যাওয়া বা সরাসরি কারও সঙ্গে দেখা করতে ভয় পেতে শুরু করে।
ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া আসার আগে কেউ ভাবত না যে, এই গল্প ভবিষ্যদ্বাণীমূলক। কিন্তু এখন আমরা জুম মিটিং করি, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করি। অনলাইনে ঘরে বসেই অনেক কাজ করে ফেলা যায়। তখন লেখক যা দুঃস্বপ্ন মনে করেছিলেন, আজ সেটাই আমাদের বাস্তবতা।
এইচ জি ওয়েলসের ১৮৯৯ সালে লেখা সায়েন্স ফিকশন বই ‘হোয়েন দ্য স্লিপার ওয়েকস’ বইটিতে একজন মানুষ ঘুমের ওষুধ খেয়ে কোমায় চলে যান। অনেক বছর পর ২১০০ সালে তিনি জেগে ওঠেন। তখন তিনি অনেক টাকার মালিক হয়ে যান। সেই ভবিষ্যতের দুনিয়ায় যুদ্ধের জন্য আকাশে ওড়া বিমানসহ অনেক আধুনিক জিনিস দেখা যায়।
এই লেখার চার বছর পর ১৯০৩ সালে রাইট ভাইরা প্রথম মানুষচালিত উড়োজাহাজ উড়িয়েছিলেন। আর ১৯১১ সালে প্রথমবার যুদ্ধের কাজে উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়।
রে ব্র্যাডবেরির ১৯৫৩ সালের বই ‘ফারেনহাইট ৪৫১’-এ এমন এক ভবিষ্যতের কথা বলা হয়েছে, যেখানে মানুষ বই পড়া ভুলে গেছে। সবাই ঘরের দেয়ালের সমান বিরাট বিরাট টেলিভিশনের পর্দায় মগ্ন। সেই স্ক্রিনে চলা অনুষ্ঠানে মানুষ নিজেই অংশ নিচ্ছে, যা একদম আজকের দিনের রিয়েলিটি শোর মতো।
প্রথম রিয়েলিটি শো ‘অ্যান আমেরিকান ফ্যামিলি’ আসে ১৯৭৩ সালে। সেখানে এক পরিবারের বাস্তব জীবনের গল্প দেখানো হয়। এরপর যত দিন গেছে রিয়েলিটি শো জনপ্রিয় হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তখন ব্র্যাডবেরি যা কল্পনা করেছিলেন তা এখন অনেকটাই সত্যি হয়ে গেছে।
১৮৯৮ সালে মরগান রবার্টসনের লেখা ‘দ্যা রেক অব দ্যা টাইটান’ বইয়ে এক বিশাল যাত্রীবাহী জাহাজ ‘টাইটান’-এর কথা বলা হয়। বইতে বলা হয়েছিল, এটি কখনোই ডুববে না। কিন্তু এপ্রিল মাসে সেটি বরফের চূড়ায় ধাক্কা খেয়ে আটলান্টিকে ডুবে যায়। জাহাজে লাইফবোট ছিল কম। তাই অনেক মানুষ মারা যায়।
এই কাহিনি অবিশ্বাস্যভাবে মিলে যায় ১৯১২ সালের টাইটানিক দুর্ঘটনার সঙ্গে। সেটিকেও বলা হয়েছিল ‘আনসিংকেবল’, মানে জাহাজটি ডুববে না। সেটিও এপ্রিলেই আইসবার্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়। কাকতালীয় হলেও, রবার্টসনের লেখা বইটি যেন অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছিল এই ভয়াবহ ঘটনার।
সারাহ পিন্সকারের লেখা এই বইটা ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্প এমন এক সময়ের কথা বলেছে, যেখানে সন্ত্রাস আর ভয়ানক মহামারির কারণে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ। সবাই বেশিরভাগ সময় বাসায় বসেই কাজ করে এবং বাইরে গেলে সুরক্ষার বন্দোবস্ত নেয়।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে অনেক মানুষ বাসা থেকে কাজ করতে থাকে। বাইরে গেলে মাস্ক পরে এবং দূরত্ব বজায় রাখে। বড় জমায়েত এড়িয়ে চলে সবাই। আর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটে।
১৯৫০-এর দশকের শুরুতে প্রকাশিত এই কল্পবিজ্ঞান সিরিজে অদ্ভুত এক ধারণাকে তুলে ধরা হয়, যাকে বলা হয়েছিল ‘সাইকোহিস্ট্রি’। এতে বলা হয়েছিল, মানুষের আচরণ আর সমাজের বর্তমান প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।
আজকের দিনে আমরা ঠিক এই কাজটাই করি। অতীতের তথ্য ব্যবহার করে হিসাব করি, ভবিষ্যতের ঝুঁকি মূল্যায়ন করি, আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে নানা কিছু অনুমান করার চেষ্টা করি। একসময় যা ছিল শুধু কল্পনা, এখন তা বাস্তব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠেছে।
১৯০৫ সালের এই বইতে রোকেয়া একটি ইউটোপিয়ান সমাজকে কল্পনা করেছিলেন। সেই সমাজে পুরুষেরা ঘরে থাকে। আর নারীরা বাইরে কাজ করে। নারীরাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করে। সহিংসতা, যুদ্ধ বা অশান্তির মতো ঝামেলা না থাকায় নারীরা ফুরসত পায় নতুন নতুন আবিষ্কারের। উড়ন্ত গাড়ি, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, শ্রম ছাড়াই চাষ—এসব ছিল সেই ‘লেডিল্যান্ড’-এ। আর তাঁরা সৌরশক্তি দিয়েও কাজ চালাত।
সূর্যের শক্তি মানুষ অনেক আগেই কাজে লাগাতে শিখেছে। তবে আধুনিক সৌরবিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্র প্রথম বানানো হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৮ সালে সৌরশক্তিতে চলা প্রথম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়। আর এখন ঘরবাড়ি, খামার, অফিসে সৌরপ্যানেল খুবই সাধারণ ব্যাপার। রোকেয়ার স্বপ্নের একটুকু সত্যি হয়েছে।
ধরুন, আপনি একজন লেখক। বসবাস করছেন গত শতাব্দীর প্রথম দিকের পৃথিবীতে। তখন ইন্টারনেট ছিল না, স্মার্টফোন ছিল না, ভিডিও কল বা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) কল্পনাতেও আসত না। তারপরও আপনি এমন একটা গল্প লিখে ফেললেন যেখানে সবাই নিজের ঘরে বসেই কাজ করে। বাইরে বের হওয়া বা সরাসরি কারও সঙ্গে দেখা করার ঘটনা খুবই বিরল। গল্পের চরিত্রেরা শুধু ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। বন্ধুত্ব বা বন্ধুদের দল তৈরি করা—সবকিছুই হয় ভার্চুয়ালি মেশিনের মাধ্যমে। এই কথা শুনলে সেই সময়ের মানুষ নিশ্চয়ই আপনাকে পাগল ভাবত, তাই না?
কিন্তু এমনই হয়েছে অনেক লেখকের ক্ষেত্রে। তাঁরা যা কল্পনা করেছিলেন, আজ সেটাই বাস্তব হয়ে উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন রিডার’স ডাইজেস্ট এমনই ১০টি বইয়ের তালিকা তৈরি করেছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই তালিকায় বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইটির নামও আছে।
১৯৯৩ সালে ‘প্যারাবল অব দ্য সোয়ার’ এবং ১৯৯৮ সালে ‘প্যারাবল অব দ্য ট্যালেন্টস’ বইতে অক্টাভিয়া ই. বাটলার ভবিষ্যতের এমন এক আমেরিকার কথা কল্পনা করেছিলেন, যেখানে এক পপুলিস্ট কর্তৃত্ববাদী (পপুলিস্ট ডেমোগগ) নেতা ক্ষমতায় উঠে আসেন। বইয়ে জলবায়ু পরিবর্তন আর সামাজিক বৈষম্যের কথাও আছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, সেখানে এক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী স্লোগান দেন ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’।
যদিও রোনাল্ড রেগান ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘লেটস মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ স্লোগান প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। এই স্লোগানকেই কাটছাঁট করে পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে এটি তাঁর মূল স্লোগান বানান। বইয়ে যা বলা হয়েছিল ঠিক তাই হয়েছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়েছে, বরফ গলেছে ও সমুদ্রপৃষ্ঠও বেড়েছে। আর সামাজিক বৈষম্যও বেড়েছে।
জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ বইয়ে কল্পনা করা হয়েছিল এক ভয়ংকর ভবিষ্যতের। সেখানে ছিল ‘বিগ ব্রাদার’ নামের শক্তিমান শাসক, যিনি সবার ওপর নজর রাখেন। ‘টেলিস্ক্রিন’ দিয়ে মানুষকে সব সময় নজরদারি করা হয়। এমনকি কেউ মনে মনে সরকারের বিরুদ্ধে ভাবলেও সেটি ধরা পড়ে যেত।
‘ভার্সিফিকেটর’ নামে এক মেশিন ছিল। এটা নিজে থেকেই গল্প, গান আর কবিতা তৈরি করতে পারত। লেখক বা শিল্পীর দরকার হতো না।
২০০১ সালে আমেরিকার ‘প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট’ চালুর পর সরকারি নজরদারি ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। ই-মেইল, ফোনকল আর ওয়েব সার্ফিং সরকারি নজরের আওতায় আসে। শুধু অপরাধ নয়, সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত তথ্য খতিয়ে দেখা হয়।
আজকের সিসি ক্যামেরা, ফেস রিকগনিশন, স্মার্টওয়াচ বা স্মার্টফোন আসলে টেলিস্ক্রিনের মতোই। এগুলো আমাদের মুখের ভাব, হৃদস্পন্দন, গতিবিধি সব ট্র্যাক করে। আর ভার্সিফিকেটরের ভবিষ্যৎবাণী আজ এআই মিউজিক জেনারেটরের মাধ্যমে বাস্তব হয়ে গেছে। এআই এখন গান, গল্প, এমনকি সংবাদ পর্যন্ত লিখে ফেলছে।
১৯০৯ সালে লেখা এই ছোটগল্পে লেখক এমন এক ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছিলেন, যেখানে মানুষ শুধু নিজের ঘরে বসেই দিন কাটায়। কাজকর্মও করে ঘরে বসে। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে। সেই মানুষগুলোর বন্ধুত্ব বা গ্রুপ সবকিছুই ছিল ভার্চুয়াল। ধীরে ধীরে তারা ঘরের বাইরে যাওয়া বা সরাসরি কারও সঙ্গে দেখা করতে ভয় পেতে শুরু করে।
ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া আসার আগে কেউ ভাবত না যে, এই গল্প ভবিষ্যদ্বাণীমূলক। কিন্তু এখন আমরা জুম মিটিং করি, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করি। অনলাইনে ঘরে বসেই অনেক কাজ করে ফেলা যায়। তখন লেখক যা দুঃস্বপ্ন মনে করেছিলেন, আজ সেটাই আমাদের বাস্তবতা।
এইচ জি ওয়েলসের ১৮৯৯ সালে লেখা সায়েন্স ফিকশন বই ‘হোয়েন দ্য স্লিপার ওয়েকস’ বইটিতে একজন মানুষ ঘুমের ওষুধ খেয়ে কোমায় চলে যান। অনেক বছর পর ২১০০ সালে তিনি জেগে ওঠেন। তখন তিনি অনেক টাকার মালিক হয়ে যান। সেই ভবিষ্যতের দুনিয়ায় যুদ্ধের জন্য আকাশে ওড়া বিমানসহ অনেক আধুনিক জিনিস দেখা যায়।
এই লেখার চার বছর পর ১৯০৩ সালে রাইট ভাইরা প্রথম মানুষচালিত উড়োজাহাজ উড়িয়েছিলেন। আর ১৯১১ সালে প্রথমবার যুদ্ধের কাজে উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়।
রে ব্র্যাডবেরির ১৯৫৩ সালের বই ‘ফারেনহাইট ৪৫১’-এ এমন এক ভবিষ্যতের কথা বলা হয়েছে, যেখানে মানুষ বই পড়া ভুলে গেছে। সবাই ঘরের দেয়ালের সমান বিরাট বিরাট টেলিভিশনের পর্দায় মগ্ন। সেই স্ক্রিনে চলা অনুষ্ঠানে মানুষ নিজেই অংশ নিচ্ছে, যা একদম আজকের দিনের রিয়েলিটি শোর মতো।
প্রথম রিয়েলিটি শো ‘অ্যান আমেরিকান ফ্যামিলি’ আসে ১৯৭৩ সালে। সেখানে এক পরিবারের বাস্তব জীবনের গল্প দেখানো হয়। এরপর যত দিন গেছে রিয়েলিটি শো জনপ্রিয় হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তখন ব্র্যাডবেরি যা কল্পনা করেছিলেন তা এখন অনেকটাই সত্যি হয়ে গেছে।
১৮৯৮ সালে মরগান রবার্টসনের লেখা ‘দ্যা রেক অব দ্যা টাইটান’ বইয়ে এক বিশাল যাত্রীবাহী জাহাজ ‘টাইটান’-এর কথা বলা হয়। বইতে বলা হয়েছিল, এটি কখনোই ডুববে না। কিন্তু এপ্রিল মাসে সেটি বরফের চূড়ায় ধাক্কা খেয়ে আটলান্টিকে ডুবে যায়। জাহাজে লাইফবোট ছিল কম। তাই অনেক মানুষ মারা যায়।
এই কাহিনি অবিশ্বাস্যভাবে মিলে যায় ১৯১২ সালের টাইটানিক দুর্ঘটনার সঙ্গে। সেটিকেও বলা হয়েছিল ‘আনসিংকেবল’, মানে জাহাজটি ডুববে না। সেটিও এপ্রিলেই আইসবার্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়। কাকতালীয় হলেও, রবার্টসনের লেখা বইটি যেন অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছিল এই ভয়াবহ ঘটনার।
সারাহ পিন্সকারের লেখা এই বইটা ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্প এমন এক সময়ের কথা বলেছে, যেখানে সন্ত্রাস আর ভয়ানক মহামারির কারণে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ। সবাই বেশিরভাগ সময় বাসায় বসেই কাজ করে এবং বাইরে গেলে সুরক্ষার বন্দোবস্ত নেয়।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে অনেক মানুষ বাসা থেকে কাজ করতে থাকে। বাইরে গেলে মাস্ক পরে এবং দূরত্ব বজায় রাখে। বড় জমায়েত এড়িয়ে চলে সবাই। আর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটে।
১৯৫০-এর দশকের শুরুতে প্রকাশিত এই কল্পবিজ্ঞান সিরিজে অদ্ভুত এক ধারণাকে তুলে ধরা হয়, যাকে বলা হয়েছিল ‘সাইকোহিস্ট্রি’। এতে বলা হয়েছিল, মানুষের আচরণ আর সমাজের বর্তমান প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।
আজকের দিনে আমরা ঠিক এই কাজটাই করি। অতীতের তথ্য ব্যবহার করে হিসাব করি, ভবিষ্যতের ঝুঁকি মূল্যায়ন করি, আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে নানা কিছু অনুমান করার চেষ্টা করি। একসময় যা ছিল শুধু কল্পনা, এখন তা বাস্তব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠেছে।
১৯০৫ সালের এই বইতে রোকেয়া একটি ইউটোপিয়ান সমাজকে কল্পনা করেছিলেন। সেই সমাজে পুরুষেরা ঘরে থাকে। আর নারীরা বাইরে কাজ করে। নারীরাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করে। সহিংসতা, যুদ্ধ বা অশান্তির মতো ঝামেলা না থাকায় নারীরা ফুরসত পায় নতুন নতুন আবিষ্কারের। উড়ন্ত গাড়ি, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, শ্রম ছাড়াই চাষ—এসব ছিল সেই ‘লেডিল্যান্ড’-এ। আর তাঁরা সৌরশক্তি দিয়েও কাজ চালাত।
সূর্যের শক্তি মানুষ অনেক আগেই কাজে লাগাতে শিখেছে। তবে আধুনিক সৌরবিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্র প্রথম বানানো হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৮ সালে সৌরশক্তিতে চলা প্রথম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়। আর এখন ঘরবাড়ি, খামার, অফিসে সৌরপ্যানেল খুবই সাধারণ ব্যাপার। রোকেয়ার স্বপ্নের একটুকু সত্যি হয়েছে।
জয়া না বিপাশা– কে বেশি সুন্দর? দুই দিন ধরে ফেসবুকীয় বাহাসের শীর্ষে এই প্রশ্ন। শুনে মনে হতে পারে সালটা ২০০৪। যেখানে সদ্য গোঁফ-গজানো দুই কিশোর সিডির দোকানের বাইরে এই তর্কে-বিতর্কে মশগুল।
১ দিন আগে১৯৫০ সাল। মাত্র ২১ বছর বয়স তখন কিশোর কুমারের। বছর চারেক আগেই আভাস কুমার গাঙ্গুলী নাম পাল্টে হয়েছেন ‘কিশোর কুমার’। গায়ক হিসেবে তেমন পরিচিত নন তখনও। তাঁর দাদা অশোক কুমার সে সময় হিন্দি সিনেমার আইকনিক অভিনেতা। অশোকের ছোট ভাই হিসেবেই মানুষ তাঁকে চেনে।
১ দিন আগেআজকের ঢাকা, কলকাতা বা লন্ডনে বাস ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। এক সময় একসঙ্গে এতজন নিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করবে, তা হয়তো কেউ চিন্তাও করে নি। কিন্তু ধীরে ধীরে এই চিন্তাটা মানুষ করেছে। কে প্রথম ভাবল সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার কথা?
১ দিন আগেআজ আলিয়সের এসি কাফেতে নীরবতার আড়ালে কথা হচ্ছে শুধু আমাদের দুজনে। মান্নান শোনাচ্ছেন তাঁর সদ্য এক প্রেমে পড়ার গল্প।
২ দিন আগে