কীভাবে নির্বাচিত হয় মিস ইউনিভার্স, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বারবার বিতর্ক কেন
স্ট্রিম ডেস্ক

হিরার মুকুট, আলো ঝলমলে মঞ্চ, লক্ষ কোটি দর্শকের চোখ টেলিভিশনের পর্দায়—আর সেই মঞ্চের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের দেশের নাম আর পতাকা গায়ে জড়িয়ে একজন নারী। ‘মিস ইউনিভার্স’ এই দুটি শব্দ শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমনই ঐশ্বর্যমণ্ডিত দৃশ্য।
মিস ইউনিভার্স কেবল প্রতিযোগিতা নয়; কারও জন্য স্বপ্ন, একটি বিশ্বমঞ্চ, যেখানে সৌন্দর্য, মেধা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে সেরার সেরা হওয়ার লড়াই চলে। কিন্তু এই আলোর ঝলকানির পেছনেও রয়েছে এক জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কীভাবে কয়েক ডজন প্রতিযোগীর মধ্য থেকে মাত্র একজনকে বেছে নেওয়া হয় এই সম্মানজনক মুকুটের জন্য?
আবার, এই চাকচিক্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা তীব্র বিতর্ক। নারীবাদী আন্দোলন থেকে শুরু করে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ—সবখানেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাকে দাঁড় করানো হয়েছে আসামির কাঠগড়ায়।
কেন এই আয়োজনগুলো একদিকে যেমন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, তেমনই অন্যদিকে নারীদেহকে পণ্য বানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত? এই দ্বৈত সত্তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আসল রহস্য।
মুকুট পরার দীর্ঘ পথ: বাছাই প্রক্রিয়া
মিস ইউনিভার্স হওয়ার যাত্রা কোনো সরল দৌড় প্রতিযোগিতা নয়। দীর্ঘ ও বহুমুখী পথ, যার প্রতি ধাপে রয়েছে কঠিন পরীক্ষা। এই প্রক্রিয়াকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম ধাপ: জাতীয় পর্যায়
বিশ্বমঞ্চে পা রাখার আগে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে প্রথমে নিজ দেশের সেরা হিসেবে নির্বাচিত হতে হয়। ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’-এর মতো জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোই হলো সেই প্রথম দরজা। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য কিছু মৌলিক যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। যেমন, প্রতিযোগীকে অবশ্যই সেই দেশের নাগরিক হতে হয় ও নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে থাকতে হয়।
তবে সম্প্রতি এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত শুধু অবিবাহিত, সন্তানহীন ও নির্দিষ্ট বয়সের নারীরাই অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, এমনকি সন্তানবতী নারীদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বয়সের ঊর্ধ্বসীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনকে প্রতিযোগিতার আধুনিকীকরণের এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীই পান সেই আরাধ্য টিকিট, যা তাকে নিয়ে যায় মিস ইউনিভার্সের মূল পর্বে।
দ্বিতীয় ধাপ: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও প্রাথমিক পর্ব
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিজয়ী সমবেত হন আয়োজক দেশে। চূড়ান্ত পর্বের প্রায় এক সপ্তাহ আগে শুরু হয় প্রতিযোগিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—প্রাথমিক পর্ব বা প্রিলিমিনারি কম্পিটিশন। এই পর্বের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়, কারা চূড়ান্ত পর্বে বা সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই পর্বে সাঁতার পোশাক বা অ্যাক্টিভওয়্যার রাউন্ড, সান্ধ্য পোশাক বা ইভনিং গাউন রাউন্ড ও ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়।
সাঁতার পোশাকের পর্বে প্রতিযোগীর শারীরিক সুস্থতা ও আত্মবিশ্বাসকে মূল্যায়ন করা হয়। সান্ধ্য পোশাক পর্বে তার রুচি, কমনীয়তা ও ব্যক্তিত্বকে বিচার করা হয়। আর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে তার শিক্ষা, লক্ষ্য, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভাবনা ও বুদ্ধিমত্তাকে যাচাই করা হয়। এই পর্বেই বিচারকরা বুঝতে চেষ্টা করেন, কে পারবেন আগামী এক বছরের জন্য মিস ইউনিভার্সের মতো প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হতে।
চূড়ান্ত ধাপ: সেরার সেরা হওয়ার লড়াই
টেলিভিশনে আমরা যে জমকালো আয়োজন দেখি, তাই হলো চূড়ান্ত পর্ব। প্রাথমিক পর্বের ফলাফলের ভিত্তিতে শীর্ষ ২০ বা ১৬ জন সেমিফাইনালিস্টের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর শুরু হয় আসল লড়াই। সেমিফাইনালিস্টদের আবারও সাঁতার পোশাক ও সান্ধ্য পোশাক পর্বে অংশ নিতে হয়। এই পর্বের স্কোরের ওপর ভিত্তি করে প্রতিযোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয় শীর্ষ ১০ বা ৫-এ।
এরপর আসে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে কঠিন পর্যায়—প্রশ্নোত্তর পর্ব। শীর্ষ প্রতিযোগীদের সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাদা আলাদা প্রশ্ন করা হয়। এখানে বিচারকরা দেখেন, প্রতিযোগী কতটা স্পষ্ট, যুক্তিসঙ্গত ও শান্তভাবে চাপের মুখে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারছেন। সবশেষে, শীর্ষ ৩ জন প্রতিযোগীকে একটি অভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। এই সমস্ত ধাপে সামগ্রিক স্কোরের ভিত্তিতেই একজনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ও তার মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় সেরার মুকুট।
আলোর পেছনের অন্ধকার: বিতর্ক কেন?
এত আয়োজন, এত চাকচিক্যের পরেও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলো কেন বিশ্বজুড়ে বারবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়? এর পেছনে রয়েছে গভীর সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক কারণ।
নারীদেহের পণ্যকরণ
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে পুরোনো ও শক্তিশালী অভিযোগ হল, এসব প্রতিযোগিতা নারীদেহকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে। নারীবাদী সমালোচকদের মতে, সাঁতার পোশাকের মতো রাউন্ডগুলো নারীকে পণ্যে পরিণত করে। যেখানে তার শরীর, গড়ন ও বাহ্যিক সৌন্দর্যকেই মূল্যায়নের প্রধান মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়। যা সৌন্দর্যের সংকীর্ণ, কৃত্রিম ও প্রায়শই অবাস্তব এক মানদণ্ড তৈরি করে। এই মানদণ্ড পূরণ করতে গিয়ে সাধারণ নারীরা আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভোগেন।
প্রতিযোগিতাগুলো নারীকে তার মেধা বা ব্যক্তিত্বের চেয়ে তার শারীরিক আকর্ষণের ভিত্তিতে বিচার করতে শেখায় বলেও অভিযোগ ওঠে।
সৌন্দর্যের নির্দিষ্ট ছাঁচ ও বর্ণবাদ
ঐতিহাসিকভাবে, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলোর বিজয়ীদের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা প্রায়শই সৌন্দর্যের নির্দিষ্ট পশ্চিমা বা ইউরোসেন্ট্রিক ছাঁচের প্রতিফলন—লম্বা, অত্যন্ত কৃশকায় ও ফর্সা ত্বকের অধিকারী। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে এবং বিভিন্ন বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর নারীরা বিজয়ী হচ্ছেন। তবুও সমালোচকরা মনে করেন, এই প্রতিযোগিতাগুলো বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে এখনো পরোক্ষভাবে নির্দিষ্ট ধরনের সৌন্দর্যকেই আদর্শ হিসেবে তুলে ধরে।
‘উদ্দেশ্যবাদী সৌন্দর্য’—এক দ্বিচারিতা
সমালোচনার মুখে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলো নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলার চেষ্টা করেছে। এখন তারা নিজেদের ‘বিউটি উইথ এ পারপাস’ বা ‘কনফিডেনশিয়ালি বিউটিফুল’-এর মতো স্লোগান দিয়ে ব্র্যান্ডিং করে। তারা দাবি করে, এটি কেবল সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা নয়, বরং এমন একজন মুখপাত্র খুঁজে বের করার প্ল্যাটফর্ম, যিনি বিশ্বজুড়ে সামাজিক ও মানবিক কাজে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সমালোচকদের প্রশ্ন—যদি মানবিক কাজই মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে তার জন্য সাঁতার পোশাক পরে হাঁটার প্রয়োজন কেন? তাদের মতে, এই ‘উদ্দেশ্য’র ধারণা মূলত প্রতিযোগিতার বাণিজ্যিক ও দৈহিক দিক আড়াল করার কৌশল মাত্র।
বাণিজ্যিকীকরণ ও ভূ-রাজনীতি
মিস ইউনিভার্সের মতো প্রতিযোগিতাগুলো এখন আর কেবল সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়; এগুলো বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। টেলিভিশন স্বত্ব, স্পনসরশিপ ও বিজ্ঞাপনের এক বিশাল জগৎ একে ঘিরে আবর্তিত হয়। ফলে অনেক সময়ই অভিযোগ ওঠে, প্রতিযোগীর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বা তার দেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও ফলাফলে প্রভাব ফেলে।
প্রচলিত ‘স্যাশ ফ্যাক্টর’ কথা অনুসারে, আমেরিকা, ভেনেজুয়েলা, ফিলিপাইন বা ভারতের মতো দেশগুলোতে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিশাল বাজার রয়েছে বলে এসব দেশের প্রতিযোগীরা প্রায়শই বিশেষ সুবিধা পান।
মিস ইউনিভার্স বা এই ধরনের প্রতিযোগিতাগুলো এক অদ্ভুত দোটানার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে অজস্র নারীর জন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন, নিজেকে উপস্থাপন ও বিশ্বমঞ্চে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার এক বিশাল সুযোগ তৈরি করে। অন্যদিকে, নারীদেহকে পণ্য বানানো, সৌন্দর্যের কৃত্রিম মানদণ্ড তৈরি ও বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিলের অভিযোগে অভিযুক্ত।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের নিয়মকানুন বদলে ফেলে এই প্রতিযোগিতাগুলো প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা কি বিতর্কের মূল জায়গাগুলোকে সত্যিই স্পর্শ করতে পারছে, নাকি কেবল খোলস বদলানোর এক লোক দেখানো প্রচেষ্টা—সেই প্রশ্ন হয়তো থেকে যাবে।

হিরার মুকুট, আলো ঝলমলে মঞ্চ, লক্ষ কোটি দর্শকের চোখ টেলিভিশনের পর্দায়—আর সেই মঞ্চের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের দেশের নাম আর পতাকা গায়ে জড়িয়ে একজন নারী। ‘মিস ইউনিভার্স’ এই দুটি শব্দ শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমনই ঐশ্বর্যমণ্ডিত দৃশ্য।
মিস ইউনিভার্স কেবল প্রতিযোগিতা নয়; কারও জন্য স্বপ্ন, একটি বিশ্বমঞ্চ, যেখানে সৌন্দর্য, মেধা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে সেরার সেরা হওয়ার লড়াই চলে। কিন্তু এই আলোর ঝলকানির পেছনেও রয়েছে এক জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কীভাবে কয়েক ডজন প্রতিযোগীর মধ্য থেকে মাত্র একজনকে বেছে নেওয়া হয় এই সম্মানজনক মুকুটের জন্য?
আবার, এই চাকচিক্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা তীব্র বিতর্ক। নারীবাদী আন্দোলন থেকে শুরু করে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ—সবখানেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাকে দাঁড় করানো হয়েছে আসামির কাঠগড়ায়।
কেন এই আয়োজনগুলো একদিকে যেমন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, তেমনই অন্যদিকে নারীদেহকে পণ্য বানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত? এই দ্বৈত সত্তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আসল রহস্য।
মুকুট পরার দীর্ঘ পথ: বাছাই প্রক্রিয়া
মিস ইউনিভার্স হওয়ার যাত্রা কোনো সরল দৌড় প্রতিযোগিতা নয়। দীর্ঘ ও বহুমুখী পথ, যার প্রতি ধাপে রয়েছে কঠিন পরীক্ষা। এই প্রক্রিয়াকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম ধাপ: জাতীয় পর্যায়
বিশ্বমঞ্চে পা রাখার আগে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে প্রথমে নিজ দেশের সেরা হিসেবে নির্বাচিত হতে হয়। ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’-এর মতো জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোই হলো সেই প্রথম দরজা। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য কিছু মৌলিক যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। যেমন, প্রতিযোগীকে অবশ্যই সেই দেশের নাগরিক হতে হয় ও নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে থাকতে হয়।
তবে সম্প্রতি এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত শুধু অবিবাহিত, সন্তানহীন ও নির্দিষ্ট বয়সের নারীরাই অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, এমনকি সন্তানবতী নারীদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বয়সের ঊর্ধ্বসীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনকে প্রতিযোগিতার আধুনিকীকরণের এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীই পান সেই আরাধ্য টিকিট, যা তাকে নিয়ে যায় মিস ইউনিভার্সের মূল পর্বে।
দ্বিতীয় ধাপ: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও প্রাথমিক পর্ব
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিজয়ী সমবেত হন আয়োজক দেশে। চূড়ান্ত পর্বের প্রায় এক সপ্তাহ আগে শুরু হয় প্রতিযোগিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—প্রাথমিক পর্ব বা প্রিলিমিনারি কম্পিটিশন। এই পর্বের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়, কারা চূড়ান্ত পর্বে বা সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই পর্বে সাঁতার পোশাক বা অ্যাক্টিভওয়্যার রাউন্ড, সান্ধ্য পোশাক বা ইভনিং গাউন রাউন্ড ও ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়।
সাঁতার পোশাকের পর্বে প্রতিযোগীর শারীরিক সুস্থতা ও আত্মবিশ্বাসকে মূল্যায়ন করা হয়। সান্ধ্য পোশাক পর্বে তার রুচি, কমনীয়তা ও ব্যক্তিত্বকে বিচার করা হয়। আর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে তার শিক্ষা, লক্ষ্য, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভাবনা ও বুদ্ধিমত্তাকে যাচাই করা হয়। এই পর্বেই বিচারকরা বুঝতে চেষ্টা করেন, কে পারবেন আগামী এক বছরের জন্য মিস ইউনিভার্সের মতো প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হতে।
চূড়ান্ত ধাপ: সেরার সেরা হওয়ার লড়াই
টেলিভিশনে আমরা যে জমকালো আয়োজন দেখি, তাই হলো চূড়ান্ত পর্ব। প্রাথমিক পর্বের ফলাফলের ভিত্তিতে শীর্ষ ২০ বা ১৬ জন সেমিফাইনালিস্টের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর শুরু হয় আসল লড়াই। সেমিফাইনালিস্টদের আবারও সাঁতার পোশাক ও সান্ধ্য পোশাক পর্বে অংশ নিতে হয়। এই পর্বের স্কোরের ওপর ভিত্তি করে প্রতিযোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয় শীর্ষ ১০ বা ৫-এ।
এরপর আসে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে কঠিন পর্যায়—প্রশ্নোত্তর পর্ব। শীর্ষ প্রতিযোগীদের সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাদা আলাদা প্রশ্ন করা হয়। এখানে বিচারকরা দেখেন, প্রতিযোগী কতটা স্পষ্ট, যুক্তিসঙ্গত ও শান্তভাবে চাপের মুখে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারছেন। সবশেষে, শীর্ষ ৩ জন প্রতিযোগীকে একটি অভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। এই সমস্ত ধাপে সামগ্রিক স্কোরের ভিত্তিতেই একজনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ও তার মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় সেরার মুকুট।
আলোর পেছনের অন্ধকার: বিতর্ক কেন?
এত আয়োজন, এত চাকচিক্যের পরেও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলো কেন বিশ্বজুড়ে বারবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়? এর পেছনে রয়েছে গভীর সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক কারণ।
নারীদেহের পণ্যকরণ
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে পুরোনো ও শক্তিশালী অভিযোগ হল, এসব প্রতিযোগিতা নারীদেহকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে। নারীবাদী সমালোচকদের মতে, সাঁতার পোশাকের মতো রাউন্ডগুলো নারীকে পণ্যে পরিণত করে। যেখানে তার শরীর, গড়ন ও বাহ্যিক সৌন্দর্যকেই মূল্যায়নের প্রধান মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়। যা সৌন্দর্যের সংকীর্ণ, কৃত্রিম ও প্রায়শই অবাস্তব এক মানদণ্ড তৈরি করে। এই মানদণ্ড পূরণ করতে গিয়ে সাধারণ নারীরা আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভোগেন।
প্রতিযোগিতাগুলো নারীকে তার মেধা বা ব্যক্তিত্বের চেয়ে তার শারীরিক আকর্ষণের ভিত্তিতে বিচার করতে শেখায় বলেও অভিযোগ ওঠে।
সৌন্দর্যের নির্দিষ্ট ছাঁচ ও বর্ণবাদ
ঐতিহাসিকভাবে, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলোর বিজয়ীদের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা প্রায়শই সৌন্দর্যের নির্দিষ্ট পশ্চিমা বা ইউরোসেন্ট্রিক ছাঁচের প্রতিফলন—লম্বা, অত্যন্ত কৃশকায় ও ফর্সা ত্বকের অধিকারী। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে এবং বিভিন্ন বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর নারীরা বিজয়ী হচ্ছেন। তবুও সমালোচকরা মনে করেন, এই প্রতিযোগিতাগুলো বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে এখনো পরোক্ষভাবে নির্দিষ্ট ধরনের সৌন্দর্যকেই আদর্শ হিসেবে তুলে ধরে।
‘উদ্দেশ্যবাদী সৌন্দর্য’—এক দ্বিচারিতা
সমালোচনার মুখে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলো নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলার চেষ্টা করেছে। এখন তারা নিজেদের ‘বিউটি উইথ এ পারপাস’ বা ‘কনফিডেনশিয়ালি বিউটিফুল’-এর মতো স্লোগান দিয়ে ব্র্যান্ডিং করে। তারা দাবি করে, এটি কেবল সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা নয়, বরং এমন একজন মুখপাত্র খুঁজে বের করার প্ল্যাটফর্ম, যিনি বিশ্বজুড়ে সামাজিক ও মানবিক কাজে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সমালোচকদের প্রশ্ন—যদি মানবিক কাজই মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে তার জন্য সাঁতার পোশাক পরে হাঁটার প্রয়োজন কেন? তাদের মতে, এই ‘উদ্দেশ্য’র ধারণা মূলত প্রতিযোগিতার বাণিজ্যিক ও দৈহিক দিক আড়াল করার কৌশল মাত্র।
বাণিজ্যিকীকরণ ও ভূ-রাজনীতি
মিস ইউনিভার্সের মতো প্রতিযোগিতাগুলো এখন আর কেবল সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়; এগুলো বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। টেলিভিশন স্বত্ব, স্পনসরশিপ ও বিজ্ঞাপনের এক বিশাল জগৎ একে ঘিরে আবর্তিত হয়। ফলে অনেক সময়ই অভিযোগ ওঠে, প্রতিযোগীর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বা তার দেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও ফলাফলে প্রভাব ফেলে।
প্রচলিত ‘স্যাশ ফ্যাক্টর’ কথা অনুসারে, আমেরিকা, ভেনেজুয়েলা, ফিলিপাইন বা ভারতের মতো দেশগুলোতে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিশাল বাজার রয়েছে বলে এসব দেশের প্রতিযোগীরা প্রায়শই বিশেষ সুবিধা পান।
মিস ইউনিভার্স বা এই ধরনের প্রতিযোগিতাগুলো এক অদ্ভুত দোটানার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে অজস্র নারীর জন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন, নিজেকে উপস্থাপন ও বিশ্বমঞ্চে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার এক বিশাল সুযোগ তৈরি করে। অন্যদিকে, নারীদেহকে পণ্য বানানো, সৌন্দর্যের কৃত্রিম মানদণ্ড তৈরি ও বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিলের অভিযোগে অভিযুক্ত।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের নিয়মকানুন বদলে ফেলে এই প্রতিযোগিতাগুলো প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা কি বিতর্কের মূল জায়গাগুলোকে সত্যিই স্পর্শ করতে পারছে, নাকি কেবল খোলস বদলানোর এক লোক দেখানো প্রচেষ্টা—সেই প্রশ্ন হয়তো থেকে যাবে।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্থির দামের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ, ডিম ও ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের দাম প্রায়শই ওঠানামা করে। ২৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত এক বৈঠকের পর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেবল প্রশাসন
৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনীতির দিকে তাকালে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, এখানে একক শক্তিতে পথচলা প্রায় অসম্ভব। ক্ষমতার মঞ্চে টিকে থাকতে হলে কিংবা নির্বাচনে জিততে হলে, এমনকি রাজপথেও সঙ্গী প্রয়োজন। এই সঙ্গী খোঁজার প্রক্রিয়া হলো জোটের রাজনীতি।
১ দিন আগে
জেফ্রি এপস্টেইন নথি প্রকাশের চাপে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বহুদিনের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিলটিতে সই করা তার রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতাকেই প্রকাশ করছে। ওয়াশিংটনে এখন গুঞ্জন—ট্রাম্পের লৌহবর্মে কি প্রথমবারের মতো স্পষ্ট ফাটল দেখা দিল?
২ দিন আগে
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর বিতর্কিত অভিজ্ঞতার পর মানুষের মনে নতুন আশার আলো—এবার কি ফেরত আসবে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে নির্বাচনের মাঠে দাঁড়ানো হাজারো কর্মকর্তার কর্মতৎপরতায়। প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং টিম ও রিটার্নিং অফিসারদের নিরপেক্ষতা থেকেই নির্ধারিত হবে গণতন্ত্রের পরবর্তী অধ্যায়।
৩ দিন আগে