সম্প্রতি তামিলনাড়ুর করুরে থালাপতি বিজয়ের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে প্রায় ৪০ জন ভক্তের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় দক্ষিণ ভারতে তারকাখ্যাতি ও রাজনৈতিক সমাবেশের বিস্ফোরক শক্তি আবারও আলোচনায় এসেছে। দক্ষিণে চলচ্চিত্র তারকারা শুধু কী করে এমন প্রবল সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠলেন?
জাভেদ হুসেন
ভারতে সিনেমা ও রাজনীতির সম্পর্ক উত্তর ও দক্ষিণে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইতিহাস, সামাজিক কাঠামো আর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রভাব এখানে স্পষ্ট। এই প্রভাবই নির্ধারণ করে যে একজন তারকা তার জনপ্রিয়তাকে কতটা রাজনৈতিক ক্ষমতায় রূপান্তর করতে পারে। উত্তর ভারতের বলিউড তারকারা ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু তাদের সরাসরি এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি করার ক্ষমতা সীমিত। বিপরীতে, দক্ষিণ ভারতের সিনেমা এমন তারকা তৈরি করেছে, যাঁরা শুধু জনপ্রিয়ই নন; বরং রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও জনসমর্থন তৈরি করতে পারেন। এই পার্থক্য বোঝার জন্য প্রয়োজন দক্ষিণ ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পরিচয়, সামাজিক কাঠামো এবং সিনেমার ভূমিকার দিকে তাকাতে হবে।
ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
উত্তর ভারতের রাজনীতি, বিশেষ করে হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চলে, দীর্ঘদিন ধরে বর্ণপ্রথা, ধর্মীয় পরিচয় এবং স্থানীয় রাজনৈতিক বংশপরম্পরার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। নির্বাচনী সাফল্য প্রায়ই ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার চেয়ে সামাজিক কাঠামো ও যোগাযোগের দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশের রাজনীতির দিকে দেখা যাক। সেখানে ঐতিহ্যগতভাবে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখে বর্ণগত জোট, ধর্মীয় সমঝোতা এবং বংশপরম্পরাভিত্তিক রাজনৈতিক কাঠামো। এই সব কিছুর সাপেক্ষে, একজন ফিল্মি সুপারস্টারের জনপ্রিয়তা একটি বাড়তি উপাদানমাত্র। এর সঙ্গে যদি ধর্ম আর বর্ণের সামাজিক কাঠামো যুক্ত না হয় তাহলে যত বড় সুপারস্টার হোক, রাজনৈতিকভাবে কোনো ফায়দা হবে না। ১৯৮০-এর দশকে অমিতাভ বচ্চনের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ কোনো কাজে আসেনি। অসাধারণ জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তিনি নির্বাচনী সাফল্য পাননি। শেষ পর্যন্ত সেই পথই তিনি ছেড়ে এসেছেন।
বিপরীতে, দক্ষিণ ভারত—বিশেষ করে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক—এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করেছে যেখানে সিনেমা এবং সামাজিক পরিচয় গভীরভাবে সংযুক্ত। এর মূল ভিত্তি ১৯৫০-৬০-এর দশকের দ্রাবিড় আন্দোলন। এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক। সেখানে মূখ্য ছিল আঞ্চলিক পরিচয়, ভাষাগত মর্যাদাবোধ, সামাজিক ন্যায্যতা এবং উত্তর ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছিল। উত্তর ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই বার্তাগুলো পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল দক্ষিণি সিনেমা। সি এন অন্নাদুরাই এবং পরে এম জি রামচন্দ্রন (এমজিআর) বুঝেছিলেন যে সিনেমা জনসাধারণের রাজনৈতিক চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। নৈতিকতা, ন্যায় ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক যে পর্দার নায়ক, তিনিই আবির্ভূত হন একজন আধ্যাত্মিক ও নৈতিক নেতা হিসেবে। সিনেমার দর্শকের কাছে নায়কের জনপ্রিয়তা রূপান্তরিত হয় রাজনৈতিক আনুগত্যে।
সাংস্কৃতিক পরিচয় ও সিনেমা ফ্যানডম
দক্ষিণ ভারতে সিনেমা কেবল বিনোদন নয়। সিনেমা সেখানে সামাজিক এবং কিছুটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তারকারা এখানে প্রায় দেবতার মতো সম্মানিত হন। তারকাদের ফ্যান ক্লাবগুলো অত্যন্ত সংগঠিত নাগরিক নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে। এগুলো নায়ক-নায়িকাদের জন্মদিন বা সিনেমা মুক্তি উদ্যাপন করে। সেই সঙ্গে করে চ্যারিটি, সামাজিক সেবা। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সংগঠনেও তাঁরা সক্রিয় থাকেন। এই ক্লাবগুলো মাঠ পর্যায়ে নাগরিক কাঠামো হিসেবে কাজ করে। দক্ষিণে সাধারণ জনসভা, নির্বাচনী প্রচারণা এবং সামাজিক আন্দোলন প্রায়ই এই ফ্যান নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে। এই মোবিলাইজেশনের আকার অভূতপূর্ব। ফ্যান ক্লাবগুলোর ব্যবস্থাপনায় তীব্র গরম, দীর্ঘ যাত্রা আর ক্লান্তি সহ্য করে জনসভায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যোগ দিতে পারেন। এই ভক্তি প্রায় ধর্মীয় উন্মাদনার পর্যায়ে পৌঁছায়। থালাপতির সভায় করুরের ট্র্যাজেডি বা রজনীকান্তের রাজনৈতিক ঘোষণা ঘিরে জনসাধারণের উত্তেজনায় দেখা যায় এই আনুগত্য কতটা প্রবল।
ছোট শহরের উদীয়মান তরুণদের জন্য ফ্যান ক্লাবের সদস্য হওয়া মানে সামাজিক পরিচয়ের জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করে। এই ফ্যান ক্লাবগুলো রাজনৈতিক দীক্ষার কাজও করে।
উত্তর ভারতের ফ্যানডমের তূলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন দক্ষিণের সিনেমা জগত। উত্তর ভারতে সিনেমা জগত মূলত ভোগবাদী। বলিউড তারকাদের জনপ্রিয়তা থাকলেও তা সাধারণত সংগঠিত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় রূপান্তরিত হয় না। ফান্ডরাইজার, মিডিয়া প্রচারণা বা সেলিব্রিটি প্রমোশন উত্তরের তারকারা ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখানে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক মোবিলাইজেশনের জন্য দরকারি ঘনিষ্ঠ স্থানীয় নেটওয়ার্ক সাধারণত তৈরি হয় না।
রাজনৈতিক বৈধতার বাহন
দক্ষিণী সিনেমা গল্পের সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শ মেলাতে ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষ। সেই চলচ্চিত্রে নায়করা সামাজিক ন্যায়ের প্রতিনিধি। দশকের পর দশক ধরে এই বিষয়টি সিনেমার নৈতিকতা আর রাজনৈতিক বৈধতার মধ্যে সীমানা মুছে দিয়েছে।
এমজিআর পর্দায় নিজের চরিত্রগুলো দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করত। আর সর্বোপরি সেই নায়ক একজন তামিল। যখন তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন, জনগণ স্বাভাবিকভাবেই পর্দার নায়ক আর বাস্তব নেতাকে এক করে দেখা শুরু করল। একইভাবে, এন টি রামা রাও (এনটিআর) অন্ধ্রপ্রদেশে দেবতা ও ন্যায়পরায়ণ চরিত্রের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বৈধতা দেন। ১৯৮২ সালে তিনি তেলুগু দেশম পার্টি প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের চ্যালেঞ্জ করলেন।
বলিউডে সিনেমার চরিত্র সাধারণত সরাসরি রাজনৈতিক বৈধতা দিতে পারে না। নায়কেরা প্রশংসিত হয়। তাঁরা জনমত প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু সেই ভক্তিকে রাজনৈতিক ক্ষমতায় রূপান্তর করার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক হাতিয়ার সেখানে শক্তিশালী নয়। এখানে সামাজিক মোবিলাইজেশন মূলত বর্ণ বা ধর্মীয় নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল। এই পার্থক্য থেকে বোঝা যায় কেন উত্তর ভারতের তারকা ফান্ডরাইজারের মুখ্য অতিথি হতে পারেন, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের তারকা রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব নিতে বা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অনুরোধও পান।
ভক্তদের মনস্তত্ত্ব: দক্ষিণ বনাম উত্তর
দক্ষিণে ভক্তরা তাদের তারকার সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত, প্রায় পবিত্র সংযোগ অনুভব করেন। এমজিআর বা এনটিআরের জনসভা প্রায় ধর্মীয় উন্মাদনার মতো হয়ে ওঠে। ফ্যানরা শুধু সিনেমা দেখেন না। তাঁরা তারকার আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রকে বাস্তব জীবনে খুঁজে পান।
দক্ষিণের ভক্তি শক্তিশালী হওয়ার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। ১৯৫০-৬০-এর দশকের দ্রাবিড় আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও সামাজিক সংস্কার যেমন নারী ও দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন, নাগরিক সচেতনতা এবং আঞ্চলিক গর্ব উদ্দীপিত করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে সিনেমা হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এজেন্সির প্রতীক। সিনেমা দেখা মানে কেবল বিনোদন নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। নায়ক তাঁর নৈতিকতা, সাহস ও ন্যায়ের আদর্শের মাধ্যমে দর্শককে অনুপ্রাণিত করতেন। ভক্তরা শুধু কল্পনায় নায়ককে ভালোবাসতেন না; তাঁরা নায়ককে বাস্তব জীবনের নৈতিক মানদণ্ড ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করতেন।
উত্তর ভারতে সিনেমা সাধারণত রাজনৈতিক সচেতনতার সঙ্গে দূরে। হিরোরা দর্শককে বিনোদন দিতেন, কিন্তু কার্যকর নাগরিক আদর্শ বা রাজনৈতিক উদ্যোগের অবতার হিসেবে আবির্ভূত হতেন না। এখানকার সিনেমা সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণের প্রেরণা দেয় না।
তাই দক্ষিণ ভারতের ভক্তি কেবল আবেগের নয়; এটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়। এই শক্তি ফ্যানডমকে জনসমাগম, রাজনৈতিক সমর্থন এবং সামাজিক কর্মে রূপান্তরিত করে। উত্তরে ভক্তি থাকে ব্যক্তিগত এবং প্রদর্শনমূলক; রাজনৈতিক বা সামাজিক শক্তিতে তা পরিণত হয় খুব সীমিতভাবে।
দক্ষিণ ভারতের ভক্তি ও রাজনীতিতে আঞ্চলিক পরিচয় ও ভাষার ভূমিকা
ভারতে পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন হলো ভাষা। এই প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় দক্ষিণ ভারতে। ১৯৪০ ও ৫০-এর দশকে তামিলনাড়ুতে গড়ে ওঠা দ্রাবিড় আন্দোলন তামিল ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল উত্তর ভারতের শাসক এলিটদের আধিপত্য এবং হিন্দি ভাষা প্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা। আন্দোলনে তামিল জাত্যাভিমান, সামাজিক ন্যায় ও ব্রাহ্মণবাদের বিরুদ্ধে সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছিল। ভাষা হয়ে ওঠে রাজনৈতিক হাতিয়ার। আন্দোলনের বুঝেছিলেন যে সিনেমা শুধু বিনোদন নয়। সিনেমা সমষ্টিগত পরিচয় গড়ে তোলার, সামাজিক মূল্যবোধ পৌঁছে দেওয়ার এবং জনসমাগম সংগঠিত করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এ কারণে সিনেমার নায়কেরা এমন একটি বৈধতা পেয়েছিলেন, যা কোনো প্রচলিত রাজনৈতিক প্রচারণা তৈরি করতে পারত না। দক্ষিণি সিনেমা বলিউডের মতো শুধুই বিনোদন না থেকে হয়ে উঠল সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি ও রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম।
পর্দায় নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক কাহিনি দেখা তামিল দর্শকদের জন্য একটি স্বীকৃতি। এম জি রামচন্দ্রন (এমজিআর) এবং সিভাজি গানেশান শুধু অভিনয়ের জন্যই প্রশংসিত হননি, তাঁরা হয়ে ওঠেন তামিল পরিচয় আর নৈতিক আদর্শের অবতার। উদাহরণস্বরূপ, এমজিআর প্রায়ই এমন চরিত্রে অভিনয় করতেন, যারা দরিদ্রদের পক্ষে দাঁড়াত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করত এবং ধারণ করত তামিল জাত্যাভিমান। তাঁর পর্দার ব্যক্তিত্ত্ব সহজেই রাজনৈতিক বৈধতায় রূপান্তরিত হয় যখন তিনি নিজের রাজনৈতিক দল এআইএডিএমকে প্রতিষ্ঠা করেন। এমজিআরকে ভোট দেওয়া তামিল জনসাধারণের জন্য রাজনৈতিক পছন্দ অতিক্রম করে হয়ে ওঠে নিজের ভাষা ও সাংস্কৃতিক গর্বের প্রতিফলন।
অন্ধ্রপ্রদেশেও একই ধরনের ধারা দেখা যায় এন টি রামা রাও (এনটিআর)-এর ক্ষেত্রে। তিনি পর্দায় রাম, কৃষ্ণের মতো দেবতা এবং ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে অভিনয় করে আঞ্চলিক গর্ব ও নৈতিক কল্পনাকে আকৃষ্ট করতেন। ১৯৮২ সালে তিনি তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) প্রতিষ্ঠা করেন। টিডিপিকে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতা ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির একটি ঘোষণা করেন। সিনেমার ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি তাঁর জনসমর্থন শক্তিশালী করেছিল। তিনি দক্ষতার সঙ্গে সিনেমা ও ভাষাকে রাজনৈতিক মোবিলাইজেশনের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
তূলনায়, উত্তর ভারতের ভাষাগত প্রেক্ষাপট বেশি বৈচিত্র্যময়। বলিউডে হিন্দি প্রাধান্য পেলেও এই অঞ্চলে ভোজপুরি, রাজস্থানি, আওধি, ব্রজ, পাঞ্জাবি ইত্যাদির মতো অনেক ভাষা ও উপভাষা রয়েছে। তাই হিন্দি চলচ্চিত্র দক্ষিণের মতো আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক পরিচয় বা রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম নয়। হিন্দি চলচ্চিত্র ঐতিহাসিকভাবে প্যান-ইন্ডিয়ান বৃহৎ বাজারের জন্য তৈরি হয়। কিন্তু তা সাধারণত স্পষ্ট আঞ্চলিক রাজনৈতিক বার্তা এড়িয়ে চলে। ফলে উত্তর ভারতের তারকারা যতই জনপ্রিয় হন না কেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ ভারতীয় তারকার মতো সামষ্টিক আঞ্চলিক পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেন না।
দক্ষিণে ভাষা ও সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি সিনেমার ভক্তদেরকে রাজনৈতিক সক্রিয়তার শক্তিশালী সুযোগ করে দেয়। যেসব তারকা দর্শকের ভাষা ও ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে, ফ্যান ক্লাবগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রচারণার আয়োজন করে। তামিল ও তেলুগু সিনেমা কেবল বিনোদন দেয় না। এই সিনেমা সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়কে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রূপান্তরিত করে।
দক্ষিণ ভারতে ভাষার রাজনীতি খুবই শক্তিশালী। এই উর্বর ভূমিতে তারকারা সিনেমার আইডল থেকে সহজেই রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিকশিত হন। তাঁদের জনপ্রিয়তা আঞ্চলিক পরিচয়ের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। সিনেমাতে তারকাদের সাফল্য ভাষাগত গর্ব ও সমষ্টিগত ক্ষমতার স্বীকৃতি হয়ে ওঠে। উত্তর ভারতে এই রকম শক্তিশালী ভাষাগত-রাজনৈতিক কাঠামো নেই। এখানে তারকারা দক্ষিণ ভারতের মতো নিজেদের জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক বৈধতায় রূপান্তরিত করতে পারেন না সহজে।
ভারতে সিনেমা ও রাজনীতির সম্পর্ক উত্তর ও দক্ষিণে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইতিহাস, সামাজিক কাঠামো আর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রভাব এখানে স্পষ্ট। এই প্রভাবই নির্ধারণ করে যে একজন তারকা তার জনপ্রিয়তাকে কতটা রাজনৈতিক ক্ষমতায় রূপান্তর করতে পারে। উত্তর ভারতের বলিউড তারকারা ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু তাদের সরাসরি এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি করার ক্ষমতা সীমিত। বিপরীতে, দক্ষিণ ভারতের সিনেমা এমন তারকা তৈরি করেছে, যাঁরা শুধু জনপ্রিয়ই নন; বরং রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও জনসমর্থন তৈরি করতে পারেন। এই পার্থক্য বোঝার জন্য প্রয়োজন দক্ষিণ ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পরিচয়, সামাজিক কাঠামো এবং সিনেমার ভূমিকার দিকে তাকাতে হবে।
ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
উত্তর ভারতের রাজনীতি, বিশেষ করে হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চলে, দীর্ঘদিন ধরে বর্ণপ্রথা, ধর্মীয় পরিচয় এবং স্থানীয় রাজনৈতিক বংশপরম্পরার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। নির্বাচনী সাফল্য প্রায়ই ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার চেয়ে সামাজিক কাঠামো ও যোগাযোগের দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশের রাজনীতির দিকে দেখা যাক। সেখানে ঐতিহ্যগতভাবে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখে বর্ণগত জোট, ধর্মীয় সমঝোতা এবং বংশপরম্পরাভিত্তিক রাজনৈতিক কাঠামো। এই সব কিছুর সাপেক্ষে, একজন ফিল্মি সুপারস্টারের জনপ্রিয়তা একটি বাড়তি উপাদানমাত্র। এর সঙ্গে যদি ধর্ম আর বর্ণের সামাজিক কাঠামো যুক্ত না হয় তাহলে যত বড় সুপারস্টার হোক, রাজনৈতিকভাবে কোনো ফায়দা হবে না। ১৯৮০-এর দশকে অমিতাভ বচ্চনের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ কোনো কাজে আসেনি। অসাধারণ জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তিনি নির্বাচনী সাফল্য পাননি। শেষ পর্যন্ত সেই পথই তিনি ছেড়ে এসেছেন।
বিপরীতে, দক্ষিণ ভারত—বিশেষ করে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক—এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করেছে যেখানে সিনেমা এবং সামাজিক পরিচয় গভীরভাবে সংযুক্ত। এর মূল ভিত্তি ১৯৫০-৬০-এর দশকের দ্রাবিড় আন্দোলন। এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক। সেখানে মূখ্য ছিল আঞ্চলিক পরিচয়, ভাষাগত মর্যাদাবোধ, সামাজিক ন্যায্যতা এবং উত্তর ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছিল। উত্তর ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই বার্তাগুলো পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল দক্ষিণি সিনেমা। সি এন অন্নাদুরাই এবং পরে এম জি রামচন্দ্রন (এমজিআর) বুঝেছিলেন যে সিনেমা জনসাধারণের রাজনৈতিক চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। নৈতিকতা, ন্যায় ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক যে পর্দার নায়ক, তিনিই আবির্ভূত হন একজন আধ্যাত্মিক ও নৈতিক নেতা হিসেবে। সিনেমার দর্শকের কাছে নায়কের জনপ্রিয়তা রূপান্তরিত হয় রাজনৈতিক আনুগত্যে।
সাংস্কৃতিক পরিচয় ও সিনেমা ফ্যানডম
দক্ষিণ ভারতে সিনেমা কেবল বিনোদন নয়। সিনেমা সেখানে সামাজিক এবং কিছুটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তারকারা এখানে প্রায় দেবতার মতো সম্মানিত হন। তারকাদের ফ্যান ক্লাবগুলো অত্যন্ত সংগঠিত নাগরিক নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে। এগুলো নায়ক-নায়িকাদের জন্মদিন বা সিনেমা মুক্তি উদ্যাপন করে। সেই সঙ্গে করে চ্যারিটি, সামাজিক সেবা। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সংগঠনেও তাঁরা সক্রিয় থাকেন। এই ক্লাবগুলো মাঠ পর্যায়ে নাগরিক কাঠামো হিসেবে কাজ করে। দক্ষিণে সাধারণ জনসভা, নির্বাচনী প্রচারণা এবং সামাজিক আন্দোলন প্রায়ই এই ফ্যান নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে। এই মোবিলাইজেশনের আকার অভূতপূর্ব। ফ্যান ক্লাবগুলোর ব্যবস্থাপনায় তীব্র গরম, দীর্ঘ যাত্রা আর ক্লান্তি সহ্য করে জনসভায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যোগ দিতে পারেন। এই ভক্তি প্রায় ধর্মীয় উন্মাদনার পর্যায়ে পৌঁছায়। থালাপতির সভায় করুরের ট্র্যাজেডি বা রজনীকান্তের রাজনৈতিক ঘোষণা ঘিরে জনসাধারণের উত্তেজনায় দেখা যায় এই আনুগত্য কতটা প্রবল।
ছোট শহরের উদীয়মান তরুণদের জন্য ফ্যান ক্লাবের সদস্য হওয়া মানে সামাজিক পরিচয়ের জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করে। এই ফ্যান ক্লাবগুলো রাজনৈতিক দীক্ষার কাজও করে।
উত্তর ভারতের ফ্যানডমের তূলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন দক্ষিণের সিনেমা জগত। উত্তর ভারতে সিনেমা জগত মূলত ভোগবাদী। বলিউড তারকাদের জনপ্রিয়তা থাকলেও তা সাধারণত সংগঠিত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় রূপান্তরিত হয় না। ফান্ডরাইজার, মিডিয়া প্রচারণা বা সেলিব্রিটি প্রমোশন উত্তরের তারকারা ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখানে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক মোবিলাইজেশনের জন্য দরকারি ঘনিষ্ঠ স্থানীয় নেটওয়ার্ক সাধারণত তৈরি হয় না।
রাজনৈতিক বৈধতার বাহন
দক্ষিণী সিনেমা গল্পের সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শ মেলাতে ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষ। সেই চলচ্চিত্রে নায়করা সামাজিক ন্যায়ের প্রতিনিধি। দশকের পর দশক ধরে এই বিষয়টি সিনেমার নৈতিকতা আর রাজনৈতিক বৈধতার মধ্যে সীমানা মুছে দিয়েছে।
এমজিআর পর্দায় নিজের চরিত্রগুলো দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করত। আর সর্বোপরি সেই নায়ক একজন তামিল। যখন তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন, জনগণ স্বাভাবিকভাবেই পর্দার নায়ক আর বাস্তব নেতাকে এক করে দেখা শুরু করল। একইভাবে, এন টি রামা রাও (এনটিআর) অন্ধ্রপ্রদেশে দেবতা ও ন্যায়পরায়ণ চরিত্রের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বৈধতা দেন। ১৯৮২ সালে তিনি তেলুগু দেশম পার্টি প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের চ্যালেঞ্জ করলেন।
বলিউডে সিনেমার চরিত্র সাধারণত সরাসরি রাজনৈতিক বৈধতা দিতে পারে না। নায়কেরা প্রশংসিত হয়। তাঁরা জনমত প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু সেই ভক্তিকে রাজনৈতিক ক্ষমতায় রূপান্তর করার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক হাতিয়ার সেখানে শক্তিশালী নয়। এখানে সামাজিক মোবিলাইজেশন মূলত বর্ণ বা ধর্মীয় নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল। এই পার্থক্য থেকে বোঝা যায় কেন উত্তর ভারতের তারকা ফান্ডরাইজারের মুখ্য অতিথি হতে পারেন, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের তারকা রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব নিতে বা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অনুরোধও পান।
ভক্তদের মনস্তত্ত্ব: দক্ষিণ বনাম উত্তর
দক্ষিণে ভক্তরা তাদের তারকার সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত, প্রায় পবিত্র সংযোগ অনুভব করেন। এমজিআর বা এনটিআরের জনসভা প্রায় ধর্মীয় উন্মাদনার মতো হয়ে ওঠে। ফ্যানরা শুধু সিনেমা দেখেন না। তাঁরা তারকার আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রকে বাস্তব জীবনে খুঁজে পান।
দক্ষিণের ভক্তি শক্তিশালী হওয়ার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। ১৯৫০-৬০-এর দশকের দ্রাবিড় আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও সামাজিক সংস্কার যেমন নারী ও দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন, নাগরিক সচেতনতা এবং আঞ্চলিক গর্ব উদ্দীপিত করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে সিনেমা হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এজেন্সির প্রতীক। সিনেমা দেখা মানে কেবল বিনোদন নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। নায়ক তাঁর নৈতিকতা, সাহস ও ন্যায়ের আদর্শের মাধ্যমে দর্শককে অনুপ্রাণিত করতেন। ভক্তরা শুধু কল্পনায় নায়ককে ভালোবাসতেন না; তাঁরা নায়ককে বাস্তব জীবনের নৈতিক মানদণ্ড ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করতেন।
উত্তর ভারতে সিনেমা সাধারণত রাজনৈতিক সচেতনতার সঙ্গে দূরে। হিরোরা দর্শককে বিনোদন দিতেন, কিন্তু কার্যকর নাগরিক আদর্শ বা রাজনৈতিক উদ্যোগের অবতার হিসেবে আবির্ভূত হতেন না। এখানকার সিনেমা সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণের প্রেরণা দেয় না।
তাই দক্ষিণ ভারতের ভক্তি কেবল আবেগের নয়; এটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়। এই শক্তি ফ্যানডমকে জনসমাগম, রাজনৈতিক সমর্থন এবং সামাজিক কর্মে রূপান্তরিত করে। উত্তরে ভক্তি থাকে ব্যক্তিগত এবং প্রদর্শনমূলক; রাজনৈতিক বা সামাজিক শক্তিতে তা পরিণত হয় খুব সীমিতভাবে।
দক্ষিণ ভারতের ভক্তি ও রাজনীতিতে আঞ্চলিক পরিচয় ও ভাষার ভূমিকা
ভারতে পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন হলো ভাষা। এই প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় দক্ষিণ ভারতে। ১৯৪০ ও ৫০-এর দশকে তামিলনাড়ুতে গড়ে ওঠা দ্রাবিড় আন্দোলন তামিল ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল উত্তর ভারতের শাসক এলিটদের আধিপত্য এবং হিন্দি ভাষা প্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা। আন্দোলনে তামিল জাত্যাভিমান, সামাজিক ন্যায় ও ব্রাহ্মণবাদের বিরুদ্ধে সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছিল। ভাষা হয়ে ওঠে রাজনৈতিক হাতিয়ার। আন্দোলনের বুঝেছিলেন যে সিনেমা শুধু বিনোদন নয়। সিনেমা সমষ্টিগত পরিচয় গড়ে তোলার, সামাজিক মূল্যবোধ পৌঁছে দেওয়ার এবং জনসমাগম সংগঠিত করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এ কারণে সিনেমার নায়কেরা এমন একটি বৈধতা পেয়েছিলেন, যা কোনো প্রচলিত রাজনৈতিক প্রচারণা তৈরি করতে পারত না। দক্ষিণি সিনেমা বলিউডের মতো শুধুই বিনোদন না থেকে হয়ে উঠল সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি ও রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম।
পর্দায় নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক কাহিনি দেখা তামিল দর্শকদের জন্য একটি স্বীকৃতি। এম জি রামচন্দ্রন (এমজিআর) এবং সিভাজি গানেশান শুধু অভিনয়ের জন্যই প্রশংসিত হননি, তাঁরা হয়ে ওঠেন তামিল পরিচয় আর নৈতিক আদর্শের অবতার। উদাহরণস্বরূপ, এমজিআর প্রায়ই এমন চরিত্রে অভিনয় করতেন, যারা দরিদ্রদের পক্ষে দাঁড়াত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করত এবং ধারণ করত তামিল জাত্যাভিমান। তাঁর পর্দার ব্যক্তিত্ত্ব সহজেই রাজনৈতিক বৈধতায় রূপান্তরিত হয় যখন তিনি নিজের রাজনৈতিক দল এআইএডিএমকে প্রতিষ্ঠা করেন। এমজিআরকে ভোট দেওয়া তামিল জনসাধারণের জন্য রাজনৈতিক পছন্দ অতিক্রম করে হয়ে ওঠে নিজের ভাষা ও সাংস্কৃতিক গর্বের প্রতিফলন।
অন্ধ্রপ্রদেশেও একই ধরনের ধারা দেখা যায় এন টি রামা রাও (এনটিআর)-এর ক্ষেত্রে। তিনি পর্দায় রাম, কৃষ্ণের মতো দেবতা এবং ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে অভিনয় করে আঞ্চলিক গর্ব ও নৈতিক কল্পনাকে আকৃষ্ট করতেন। ১৯৮২ সালে তিনি তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) প্রতিষ্ঠা করেন। টিডিপিকে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতা ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির একটি ঘোষণা করেন। সিনেমার ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি তাঁর জনসমর্থন শক্তিশালী করেছিল। তিনি দক্ষতার সঙ্গে সিনেমা ও ভাষাকে রাজনৈতিক মোবিলাইজেশনের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
তূলনায়, উত্তর ভারতের ভাষাগত প্রেক্ষাপট বেশি বৈচিত্র্যময়। বলিউডে হিন্দি প্রাধান্য পেলেও এই অঞ্চলে ভোজপুরি, রাজস্থানি, আওধি, ব্রজ, পাঞ্জাবি ইত্যাদির মতো অনেক ভাষা ও উপভাষা রয়েছে। তাই হিন্দি চলচ্চিত্র দক্ষিণের মতো আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক পরিচয় বা রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম নয়। হিন্দি চলচ্চিত্র ঐতিহাসিকভাবে প্যান-ইন্ডিয়ান বৃহৎ বাজারের জন্য তৈরি হয়। কিন্তু তা সাধারণত স্পষ্ট আঞ্চলিক রাজনৈতিক বার্তা এড়িয়ে চলে। ফলে উত্তর ভারতের তারকারা যতই জনপ্রিয় হন না কেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ ভারতীয় তারকার মতো সামষ্টিক আঞ্চলিক পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেন না।
দক্ষিণে ভাষা ও সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি সিনেমার ভক্তদেরকে রাজনৈতিক সক্রিয়তার শক্তিশালী সুযোগ করে দেয়। যেসব তারকা দর্শকের ভাষা ও ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে, ফ্যান ক্লাবগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রচারণার আয়োজন করে। তামিল ও তেলুগু সিনেমা কেবল বিনোদন দেয় না। এই সিনেমা সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়কে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রূপান্তরিত করে।
দক্ষিণ ভারতে ভাষার রাজনীতি খুবই শক্তিশালী। এই উর্বর ভূমিতে তারকারা সিনেমার আইডল থেকে সহজেই রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিকশিত হন। তাঁদের জনপ্রিয়তা আঞ্চলিক পরিচয়ের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। সিনেমাতে তারকাদের সাফল্য ভাষাগত গর্ব ও সমষ্টিগত ক্ষমতার স্বীকৃতি হয়ে ওঠে। উত্তর ভারতে এই রকম শক্তিশালী ভাষাগত-রাজনৈতিক কাঠামো নেই। এখানে তারকারা দক্ষিণ ভারতের মতো নিজেদের জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক বৈধতায় রূপান্তরিত করতে পারেন না সহজে।
সমাবেশে হঠাৎ ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে অন্তত ৪০ জন মারা যান। নিহতদের ১০ জন শিশু ও ১৭ জন নারী। এতে আহত হন আরও প্রায় ৮০ জন।
১৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ‘তথ্য অধিকার আইন’ কার্যকর হওয়ার পনেরো বছর পেরিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হিসেবে তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই অধিকার কি বাস্তবে নাগরিকের জীবনে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনতে পেরেছে?
১ দিন আগেবিশ্বজুড়ে মেধাবী তরুণদের অন্যতম এক স্বপ্নের নাম আমেরিকার এইচ-ওয়ান-বি ভিসা। এর মাধ্যমে তাঁরা আমেরিকায় গিয়ে বৈধভাবে বসবাস ও পড়াশোনা বা গবেষণার কাজ এগিয়ে নিতে পারেন। যুগে যুগে এই প্রথা মেধাবী তরুণ বা উদ্যোক্তাদের যেমন সাহায্য করছে, তেমনি আমেরিকাও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছে বলে এত দিন ধারণা ছিল। এর জন্য
১ দিন আগেবাংলাদেশের খ্যাতনামা আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ২৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন যে তিনি গাজা মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দেবেন। এ লক্ষ্যে তিনি ইতিমধ্যেই ইতালির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
১ দিন আগে