ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর
সালেহ ফুয়াদ
এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। এদিকে, আজ শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকায় আসছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সরকারের উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও আলোচনায় অংশ নেবেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে।
গত তিন দশকে পাকিস্তানের কোনো উপপ্রধানমন্ত্রী এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে কাজ করবেন ইসহাক দার ও জাম কামাল খান। তবে তাদের আলোচনায় দুই দেশের ভেতর অমীমাংসিত ও আলোচিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক ছিল শীতল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক বাড়ানোর জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।
দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক বোঝাপড়া বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এবার দুই দিনের সফরে আসছেন দেশটির প্রভাবশালী নেতা ইসহাক দার।
অমীমাংসিত বিষয়গুলো কি গুরুত্ব পাবে?
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, সফরের দ্বিতীয় দিন ইসহাক দারের সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আই উইল নট কনফার্ম দিস টু ইউ নাও। পরশু দিন (২৪ আগস্ট) আমি মিটিংটা করবো, এটুকুই আপনাকে আমি বলতে পারি। এরচেয়ে বেশি কিছু আসলে বলা সম্ভব না।’
গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ, সম্পদ ভাগাভাগি, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোসহ বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, এসব বিষয়ের মীমাংসা হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
এর আগে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে মিসরের রাজধানী কায়রোর একটি হোটেলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস জানায়, ওই বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মীমাংসা করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিষয়গুলো বারবার আসছে। আসুন, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে সেই বিষয়গুলোর ফয়সালা করি।’
জবাবে শাহবাজ শরিফ বলেন, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত বিষয়গুলো মীমাংসা করেছে, কিন্তু যদি অন্যান্য অমীমাংসিত সমস্যা থাকে, তবে সেগুলো দেখতে পেলে তিনি খুশি হবেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষয়গুলো চিরতরে সুরাহা করে ফেলা ভালো হবে।
বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে একমত হন তাঁরা। দুই নেতা চিনি শিল্প ও ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ইসহাক দারকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ
কায়রোর ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। লুৎফে সিদ্দিকী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারকে ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পরে ২৭ ও ২৮ এপ্রিল ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের তারিখ চূড়ান্ত হয়।
এরই মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনার পর ২৪ এপ্রিল ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন গণমাধ্যমকে জানায় ইসহাক দারের সফরটি স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি বার্তা দিয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশন বলেছে, ‘অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ২৭-২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করতে পারছেন না। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সফরের নতুন তারিখ পরে চূড়ান্ত করা হবে।’
কয়েকটি অমীমাংসিত ইস্যু
১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ, সম্পদ ভাগাভাগি, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোসহ বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে।
তবে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব দেওয়ায় এটিকে আর সমস্যা মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ। এটিকে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্ব-উদ্যোগী হয়ে সমাধান করা হিসেবে দেখছেন। তবে তাঁর মতে, পাকিস্তানের দিক থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক বিভিন্ন সময় উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। তবে এই সম্পর্ক টেকসই না হওয়ার কারণ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান না করাকে দায়ী মনে করেন আলতাফ পারভেজ। এর মধ্যে দুটি ইস্যুকে তিনি জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া এবং সম্পদ ভাগাভাগি করা ছাড়া সম্পর্ক টেকসই হবে না।
তিনি বলেন, ‘দুইটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পাকিস্তান বরাবর দুইটাকেই এড়িয়ে গেছে। পারভেজ মোশাররফের আমলে একবার দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু এটা মোটেও যথেষ্ট নয়। পাকিস্তান যে হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করেছিল সেখানেও এসব উল্লেখ আছে। শুধু ক্ষমা না, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারও আছে। এটা পাকিস্তান করেনি। ফলে এটা একটা বাধা হয়ে আছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টেকসই না হওয়ার দ্বিতীয় বড় কারণ দায়-দেনার ভাগ না নেওয়া। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যেমন দায় আছে তেমনি পাওনাও আছে। বৈদেশিক ঋণের কতটুকু বাংলাদেশ মেটাবে, কতটুকু পাকিস্তান মেটাবে ও সম্পদের কতটুকু কে পাবে এটা তো অবশ্যই একটা গুরুতর বিষয়।’
এই বিষয়গুলো আলোচনায় এলেই পাকিস্তানের বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলেন, তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে বিনিয়োগ করে তারা যে সম্পদ হারিয়েছেন তার কী হবে। আলোচনা করে এটিরও ফয়সালা হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এই দুটি বিষয়কেই এড়িয়ে গিয়ে দুই দেশ বিভিন্ন সময় সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্পর্ক জোরা লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একবছর আগে আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পর দুই দেশের মধ্যেই সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে এই সম্পর্কও টেকসই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আলতাফ পারভেজ।
স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘মূল ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে অন্য দিক দিয়ে এগোতে চাইলে মূল ইস্যু এক সময় সামনে চলে আসবেই। যিনি আসছেন এবার, তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্তরের নেতা। ওই দেশের সরকারে ইসহাক দার বেশ প্রভাবশালী। ফলে আমার মতে, এই দুইটা বিষয়ে ফয়সালা করেই বাকি বিষয়গুলো সমাধান করা উচিৎ।’
টেকসই সম্পর্কের জন্য যা জরুরি
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ও পর্যটনের দারুণ সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ককে কার্যকর করতেও দেশ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মধ্য এশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের যে বাজার রয়েছে এর জন্যও দুই দেশের সুসম্পর্ক দরকার। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই অমীমাংসিত বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে। এর ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনমত সব সময়ই বিভক্ত থেকে গেছে। এক সরকারের আমলের সম্পর্ক পরের সরকার এলে বদলে যায়।
অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করেই সম্পর্ক টেকসই করার উদ্যোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন আলতাফ পারভেজ। নয়তো সাময়িক বাণিজ্যবৃদ্ধি ও সম্পর্ক নিয়ে হইচইয়ে টেকসই হবে না। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার এই দুই বিষয়ে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
পাকিস্তান এই বিষয়গুলো স্থগিত রেখেই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশটির রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। এমনকি তারা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। ফলে সেনাবাহিনী বিব্রতবোধ করতে পারে এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নজির খুব কম দেশটিতে। এ কারণে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটা পাকিস্তান সব সময়ই এড়িয়ে যায়। তবে চাইলে দেশটি বাংলাদেশের দেনা-পাওনার বিষয়ে সহজেই সমাধানে আসতে পারে।
এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। এদিকে, আজ শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকায় আসছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সরকারের উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও আলোচনায় অংশ নেবেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে।
গত তিন দশকে পাকিস্তানের কোনো উপপ্রধানমন্ত্রী এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে কাজ করবেন ইসহাক দার ও জাম কামাল খান। তবে তাদের আলোচনায় দুই দেশের ভেতর অমীমাংসিত ও আলোচিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক ছিল শীতল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক বাড়ানোর জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।
দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক বোঝাপড়া বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এবার দুই দিনের সফরে আসছেন দেশটির প্রভাবশালী নেতা ইসহাক দার।
অমীমাংসিত বিষয়গুলো কি গুরুত্ব পাবে?
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, সফরের দ্বিতীয় দিন ইসহাক দারের সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আই উইল নট কনফার্ম দিস টু ইউ নাও। পরশু দিন (২৪ আগস্ট) আমি মিটিংটা করবো, এটুকুই আপনাকে আমি বলতে পারি। এরচেয়ে বেশি কিছু আসলে বলা সম্ভব না।’
গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ, সম্পদ ভাগাভাগি, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোসহ বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, এসব বিষয়ের মীমাংসা হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
এর আগে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে মিসরের রাজধানী কায়রোর একটি হোটেলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস জানায়, ওই বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মীমাংসা করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিষয়গুলো বারবার আসছে। আসুন, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে সেই বিষয়গুলোর ফয়সালা করি।’
জবাবে শাহবাজ শরিফ বলেন, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত বিষয়গুলো মীমাংসা করেছে, কিন্তু যদি অন্যান্য অমীমাংসিত সমস্যা থাকে, তবে সেগুলো দেখতে পেলে তিনি খুশি হবেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষয়গুলো চিরতরে সুরাহা করে ফেলা ভালো হবে।
বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে একমত হন তাঁরা। দুই নেতা চিনি শিল্প ও ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ইসহাক দারকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ
কায়রোর ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। লুৎফে সিদ্দিকী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারকে ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পরে ২৭ ও ২৮ এপ্রিল ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের তারিখ চূড়ান্ত হয়।
এরই মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনার পর ২৪ এপ্রিল ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন গণমাধ্যমকে জানায় ইসহাক দারের সফরটি স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি বার্তা দিয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশন বলেছে, ‘অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ২৭-২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করতে পারছেন না। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সফরের নতুন তারিখ পরে চূড়ান্ত করা হবে।’
কয়েকটি অমীমাংসিত ইস্যু
১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ, সম্পদ ভাগাভাগি, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোসহ বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে।
তবে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব দেওয়ায় এটিকে আর সমস্যা মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ। এটিকে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্ব-উদ্যোগী হয়ে সমাধান করা হিসেবে দেখছেন। তবে তাঁর মতে, পাকিস্তানের দিক থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক বিভিন্ন সময় উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। তবে এই সম্পর্ক টেকসই না হওয়ার কারণ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান না করাকে দায়ী মনে করেন আলতাফ পারভেজ। এর মধ্যে দুটি ইস্যুকে তিনি জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া এবং সম্পদ ভাগাভাগি করা ছাড়া সম্পর্ক টেকসই হবে না।
তিনি বলেন, ‘দুইটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পাকিস্তান বরাবর দুইটাকেই এড়িয়ে গেছে। পারভেজ মোশাররফের আমলে একবার দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু এটা মোটেও যথেষ্ট নয়। পাকিস্তান যে হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করেছিল সেখানেও এসব উল্লেখ আছে। শুধু ক্ষমা না, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারও আছে। এটা পাকিস্তান করেনি। ফলে এটা একটা বাধা হয়ে আছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টেকসই না হওয়ার দ্বিতীয় বড় কারণ দায়-দেনার ভাগ না নেওয়া। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যেমন দায় আছে তেমনি পাওনাও আছে। বৈদেশিক ঋণের কতটুকু বাংলাদেশ মেটাবে, কতটুকু পাকিস্তান মেটাবে ও সম্পদের কতটুকু কে পাবে এটা তো অবশ্যই একটা গুরুতর বিষয়।’
এই বিষয়গুলো আলোচনায় এলেই পাকিস্তানের বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলেন, তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে বিনিয়োগ করে তারা যে সম্পদ হারিয়েছেন তার কী হবে। আলোচনা করে এটিরও ফয়সালা হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এই দুটি বিষয়কেই এড়িয়ে গিয়ে দুই দেশ বিভিন্ন সময় সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্পর্ক জোরা লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একবছর আগে আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পর দুই দেশের মধ্যেই সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে এই সম্পর্কও টেকসই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আলতাফ পারভেজ।
স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘মূল ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে অন্য দিক দিয়ে এগোতে চাইলে মূল ইস্যু এক সময় সামনে চলে আসবেই। যিনি আসছেন এবার, তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্তরের নেতা। ওই দেশের সরকারে ইসহাক দার বেশ প্রভাবশালী। ফলে আমার মতে, এই দুইটা বিষয়ে ফয়সালা করেই বাকি বিষয়গুলো সমাধান করা উচিৎ।’
টেকসই সম্পর্কের জন্য যা জরুরি
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ও পর্যটনের দারুণ সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ককে কার্যকর করতেও দেশ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মধ্য এশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের যে বাজার রয়েছে এর জন্যও দুই দেশের সুসম্পর্ক দরকার। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই অমীমাংসিত বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে। এর ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনমত সব সময়ই বিভক্ত থেকে গেছে। এক সরকারের আমলের সম্পর্ক পরের সরকার এলে বদলে যায়।
অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করেই সম্পর্ক টেকসই করার উদ্যোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন আলতাফ পারভেজ। নয়তো সাময়িক বাণিজ্যবৃদ্ধি ও সম্পর্ক নিয়ে হইচইয়ে টেকসই হবে না। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার এই দুই বিষয়ে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
পাকিস্তান এই বিষয়গুলো স্থগিত রেখেই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশটির রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। এমনকি তারা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। ফলে সেনাবাহিনী বিব্রতবোধ করতে পারে এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নজির খুব কম দেশটিতে। এ কারণে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটা পাকিস্তান সব সময়ই এড়িয়ে যায়। তবে চাইলে দেশটি বাংলাদেশের দেনা-পাওনার বিষয়ে সহজেই সমাধানে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজেই চীনের কাজ সহজ করে দিচ্ছে। এশিয়াকে অভ্যন্তরীণভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং নিজেদের মধ্যে নতুন সমঝোতার ভিত্তি খুঁজতে বাধ্য করছে।
২ দিন আগেগত ৫ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হলো গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তির ৬ষ্ঠ বৈঠক। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে এই সম্মেলন। অথচ মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে শুরু করে মাউন্ট এভারেস্ট—প্লাস্টিক দূষণ পৌঁছে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলে।
২ দিন আগেসম্প্রতি বিনা অনুমতিতে রাষ্ট্রের ‘সংবেদনশীল’ তথ্য প্রকাশের অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল অমি দাশকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের ওয়াকিটকি বক্তব্য প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
৩ দিন আগেসাম্প্রতিক প্রবণতায় এর উত্তর পাওয়া যাবে। তালেবানের সঙ্গে গোপন আলোচনা থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আড়ালে চলা সমঝোতা—সব জায়গাতেই এই ছোট্ট উপসাগরীয় দেশটি বিশ্বে মধ্যস্থতার অন্যতম নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে উঠছে। এর পেছনে রয়েছে তাদের বিপুল অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও কৌশলগত অস্পষ্ট অবস্থান।
৩ দিন আগে