ইংল্যান্ডের ম্যাগনা কার্টা থেকে শুরু করে নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রিডম চার্টার, স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তি ও চিলির কনসারটাসিওন—প্রতিটিই নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তবে এই চুক্তিগুলো যেমন ঐকমত্যের নজির স্থাপন করেছে, তেমনি বিভেদ ও আপত্তির ইতিহাসও কম নয়।
স্ট্রিম ডেস্ক

জাতীয় চুক্তি বা সনদের ধারণা ইতিহাসে নতুন নয়, বরং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে এগুলো সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কখনো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, কখনো স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণে, আবার কখনো গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শান্তি প্রতিষ্ঠায় এসব দলিল মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে।
ইংল্যান্ডের ম্যাগনা কার্টা থেকে শুরু করে নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রিডম চার্টার, স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তি ও চিলির কনসারটাসিওন—প্রতিটিই নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তবে এই চুক্তিগুলো যেমন ঐকমত্যের নজির স্থাপন করেছে, তেমনি বিভেদ ও আপত্তির ইতিহাসও কম নয়।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ‘জুলাই সনদ’ তেমনই একটি দলিল। এই সনদকে ঘিরে যত আলোচনা ও বিতর্ক, তা ইতিহাসের এই আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্তগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। বিশেষ করে, ম্যাগনা কার্টা যেমন রাজার ক্ষমতাকে আইনের অধীন এনেছিল, জুলাই সনদও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। নেপালের উদাহরণ আমাদের দেখায়, বহু পক্ষীয় সংঘাতের পরও দীর্ঘ সময় ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে ঐকমত্য অর্জন সম্ভব। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো জুলাই সনদের বর্তমান অবস্থান এবং এর ভবিষ্যৎ পথচলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
ম্যাগনা কার্টা, ইংল্যান্ড (১২১৫)
ম্যাগনা কার্টাকে প্রায়শই আধুনিক সাংবিধানিক আইনের ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। ইংল্যান্ডের রাজা জন ও তাঁর বিদ্রোহী ব্যারনদের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি শান্তিচুক্তি হলো সুবিখ্যাত এই ম্যাগনা কার্টা। রাজার সীমাহীন ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অভিজাত শ্রেণির প্রতিরোধের ফল ছিল ম্যাগনা কার্টা। ম্যাগনা কার্টা সনদের মূলনীতি ছিল: রাজা আইনের ঊর্ধ্বে নন। এর মাধ্যমে রাজার কর আরোপের ক্ষমতা সীমিত করা হয় এবং ‘ডিউ প্রসেস অফ ল’ বা বিনা বিচারে কাউকে শাস্তি না দেওয়ার বিধান প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাংলাদেশের জুলাই সনদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন ক্ষমতা সীমিত করা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা। উভয় সনদই শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। তবে ম্যাগনা কার্টা ছিল অভিজাত শ্রেণির চাপিয়ে দেওয়া, আর জুলাই সনদ হলো গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট জনতার আকাঙ্ক্ষার দলিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রিডম চার্টার (১৯৫৫)
‘ফ্রিডম চার্টার’ হলো দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের আদর্শিক ও নৈতিক দলিল। ফ্রিডম চার্টার ছিল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) ও সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর তৈরি করা একটি ভিশন ডকুমেন্ট। ফ্রিডম চার্টারের মূল কথা ছিল ‘জনগণই শাসন করবে’, যার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠিত হবে। এই সনদের নীতিগুলোই ১৯৯৬ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন সংবিধান প্রণয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।
ফ্রিডম চার্টার ছিল নতুন রাষ্ট্রের ‘স্বপ্ন দলিল’, জুলাই সনদও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নতুন রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে। ফ্রিডম চার্টারকে সংবিধানের ভিত্তি দিতে বহু বছর সময় লেগেছিল। অন্যদিকে এনসিপির জুলাই সনদকে ‘সংবিধান আদেশ’ জারির দাবি এই নৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে দ্রুত আইনগতভাবে আবশ্যিক রূপে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টারই প্রতিফলন।

স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তি (১৯৭৭)
১৯৭৫ সালে একনায়ক ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর গণতান্ত্রিক উত্তরণের কঠিন সময় পার করছিল স্পেন। শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জন্য ওই সময় স্পেনে মোনক্লোয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে প্রধান রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক সংস্কার (মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মজুরি ব্যবস্থা) ও রাজনৈতিক অধিকার (সংবাদপত্রের স্বাধীনতা) প্রতিষ্ঠা করে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
মোনক্লোয়া চুক্তির সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, জাতীয় স্বার্থে আদর্শগত বিভেদ ভুলে আপস করা। দলগুলো নিখুঁত সংবিধানের জন্য অপেক্ষা না করে, প্রথমে দেশ পরিচালনায় স্থিতিশীলতা ও ঐকমত্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। জুলাই সনদের ক্ষেত্রে দলগুলো স্থিতিশীলতা বা নির্বাচনের চেয়েও ‘নিখুঁত’ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত করতে চাইছে।

চিলির কনসারটাসিওন (১৯৮৮)
চিলির স্বৈরশাসক পিনোশের পতন নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মধ্য-বামপন্থী ১৭টি রাজনৈতিক দল মিলে ‘কনসারটাসিওন’ নামক একটি জোট গঠন করে। এটি কেবল নির্বাচনী জোট ছিল না, বরং ছিল সামরিক শাসনের অবসানের পর দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক নীতির ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ। এই জোট টানা ২০ বছর চিলির শাসন ক্ষমতায় ছিল এবং স্থিতিশীলভাবে দেশ পরিচালনা করে।
চিলির ‘কনসারটাসিওন’ সফল হয়েছিল কারণ তাদের ঐক্য ছিল একটি অভিন্ন শত্রুর (স্বৈরশাসক) বিরুদ্ধে। একবার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা। জুলাই সনদের সংকট এই দ্বিতীয় ধাপের চ্যালেঞ্জ। অভিন্ন শত্রু বিদায় নেওয়ার পর, বিজয়ী মিত্রদের মধ্যেই এখন ক্ষমতা বণ্টন ও ভবিষ্যৎ পদ্ধতির নিশ্চয়তা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া ও সংবিধান (২০০৭-২০১৫)
নেপালের মাওবাদী বিদ্রোহ ও রাজতন্ত্রের অবসানের পর নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরির জন্য দেশটির শান্তি প্রক্রিয়া ছিল এক জটিল প্রয়াস। ২০০৭ সালের অন্তর্বর্তী সংবিধান এবং পরবর্তী কালে ২০১৫ সালের চূড়ান্ত সংবিধান ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মাওবাদী ও আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একাধিক চুক্তির ফল। নেপালে ঐকমত্যের কেন্দ্রে ছিল—রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা।
রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি টেনে একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তি প্রতিষ্ঠা করার উদাহরণ হচ্ছে নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া। গৃহযুদ্ধের পুনরাবৃত্তির ভয়ে নেপালে দলগুলো বহুবার পিছিয়ে এসেও শেষ পর্যন্ত একমত হয়েছিল।

জুলাই আন্দোলনের অংশীদার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ নিয়ে এখনো কঠোর অবস্থানে। তারা হয়তো মনে করছে, ঐকমত্যের অভাব বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি করবে না। নেপালের প্রক্রিয়া আমাদের দেখায়, বহু পক্ষীয় সংঘাত শেষেও ঐকমত্য সম্ভব, কিন্তু তার জন্য দীর্ঘ সময় ও অসংখ্যবার সমঝোতার প্রয়োজন।
বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঐতিহাসিক সনদগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিটিই কঠিন পরিস্থিতিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। জুলাই সনদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে যে বিতর্ক, তা চিলির কনসারটাসিওন বা স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তির মতো দৃষ্টান্তগুলোর চ্যালেঞ্জ মনে করিয়ে দেয়। জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আপস ও সমঝোতার মাধ্যমে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা এখন সবচেয়ে জরুরি। ইতিহাসের এই শিক্ষাগুলো থেকে জুলাই সনদ একটি সত্যিকারের গণমুখী ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তার পথ খুঁজে পাবে বলে আশা করা যায়।

জাতীয় চুক্তি বা সনদের ধারণা ইতিহাসে নতুন নয়, বরং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে এগুলো সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কখনো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, কখনো স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণে, আবার কখনো গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শান্তি প্রতিষ্ঠায় এসব দলিল মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে।
ইংল্যান্ডের ম্যাগনা কার্টা থেকে শুরু করে নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রিডম চার্টার, স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তি ও চিলির কনসারটাসিওন—প্রতিটিই নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তবে এই চুক্তিগুলো যেমন ঐকমত্যের নজির স্থাপন করেছে, তেমনি বিভেদ ও আপত্তির ইতিহাসও কম নয়।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ‘জুলাই সনদ’ তেমনই একটি দলিল। এই সনদকে ঘিরে যত আলোচনা ও বিতর্ক, তা ইতিহাসের এই আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্তগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। বিশেষ করে, ম্যাগনা কার্টা যেমন রাজার ক্ষমতাকে আইনের অধীন এনেছিল, জুলাই সনদও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। নেপালের উদাহরণ আমাদের দেখায়, বহু পক্ষীয় সংঘাতের পরও দীর্ঘ সময় ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে ঐকমত্য অর্জন সম্ভব। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো জুলাই সনদের বর্তমান অবস্থান এবং এর ভবিষ্যৎ পথচলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
ম্যাগনা কার্টা, ইংল্যান্ড (১২১৫)
ম্যাগনা কার্টাকে প্রায়শই আধুনিক সাংবিধানিক আইনের ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। ইংল্যান্ডের রাজা জন ও তাঁর বিদ্রোহী ব্যারনদের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি শান্তিচুক্তি হলো সুবিখ্যাত এই ম্যাগনা কার্টা। রাজার সীমাহীন ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অভিজাত শ্রেণির প্রতিরোধের ফল ছিল ম্যাগনা কার্টা। ম্যাগনা কার্টা সনদের মূলনীতি ছিল: রাজা আইনের ঊর্ধ্বে নন। এর মাধ্যমে রাজার কর আরোপের ক্ষমতা সীমিত করা হয় এবং ‘ডিউ প্রসেস অফ ল’ বা বিনা বিচারে কাউকে শাস্তি না দেওয়ার বিধান প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাংলাদেশের জুলাই সনদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন ক্ষমতা সীমিত করা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা। উভয় সনদই শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। তবে ম্যাগনা কার্টা ছিল অভিজাত শ্রেণির চাপিয়ে দেওয়া, আর জুলাই সনদ হলো গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট জনতার আকাঙ্ক্ষার দলিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রিডম চার্টার (১৯৫৫)
‘ফ্রিডম চার্টার’ হলো দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের আদর্শিক ও নৈতিক দলিল। ফ্রিডম চার্টার ছিল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) ও সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর তৈরি করা একটি ভিশন ডকুমেন্ট। ফ্রিডম চার্টারের মূল কথা ছিল ‘জনগণই শাসন করবে’, যার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠিত হবে। এই সনদের নীতিগুলোই ১৯৯৬ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন সংবিধান প্রণয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।
ফ্রিডম চার্টার ছিল নতুন রাষ্ট্রের ‘স্বপ্ন দলিল’, জুলাই সনদও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নতুন রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে। ফ্রিডম চার্টারকে সংবিধানের ভিত্তি দিতে বহু বছর সময় লেগেছিল। অন্যদিকে এনসিপির জুলাই সনদকে ‘সংবিধান আদেশ’ জারির দাবি এই নৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে দ্রুত আইনগতভাবে আবশ্যিক রূপে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টারই প্রতিফলন।

স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তি (১৯৭৭)
১৯৭৫ সালে একনায়ক ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর গণতান্ত্রিক উত্তরণের কঠিন সময় পার করছিল স্পেন। শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জন্য ওই সময় স্পেনে মোনক্লোয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে প্রধান রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক সংস্কার (মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মজুরি ব্যবস্থা) ও রাজনৈতিক অধিকার (সংবাদপত্রের স্বাধীনতা) প্রতিষ্ঠা করে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
মোনক্লোয়া চুক্তির সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, জাতীয় স্বার্থে আদর্শগত বিভেদ ভুলে আপস করা। দলগুলো নিখুঁত সংবিধানের জন্য অপেক্ষা না করে, প্রথমে দেশ পরিচালনায় স্থিতিশীলতা ও ঐকমত্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। জুলাই সনদের ক্ষেত্রে দলগুলো স্থিতিশীলতা বা নির্বাচনের চেয়েও ‘নিখুঁত’ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত করতে চাইছে।

চিলির কনসারটাসিওন (১৯৮৮)
চিলির স্বৈরশাসক পিনোশের পতন নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মধ্য-বামপন্থী ১৭টি রাজনৈতিক দল মিলে ‘কনসারটাসিওন’ নামক একটি জোট গঠন করে। এটি কেবল নির্বাচনী জোট ছিল না, বরং ছিল সামরিক শাসনের অবসানের পর দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক নীতির ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ। এই জোট টানা ২০ বছর চিলির শাসন ক্ষমতায় ছিল এবং স্থিতিশীলভাবে দেশ পরিচালনা করে।
চিলির ‘কনসারটাসিওন’ সফল হয়েছিল কারণ তাদের ঐক্য ছিল একটি অভিন্ন শত্রুর (স্বৈরশাসক) বিরুদ্ধে। একবার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা। জুলাই সনদের সংকট এই দ্বিতীয় ধাপের চ্যালেঞ্জ। অভিন্ন শত্রু বিদায় নেওয়ার পর, বিজয়ী মিত্রদের মধ্যেই এখন ক্ষমতা বণ্টন ও ভবিষ্যৎ পদ্ধতির নিশ্চয়তা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া ও সংবিধান (২০০৭-২০১৫)
নেপালের মাওবাদী বিদ্রোহ ও রাজতন্ত্রের অবসানের পর নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরির জন্য দেশটির শান্তি প্রক্রিয়া ছিল এক জটিল প্রয়াস। ২০০৭ সালের অন্তর্বর্তী সংবিধান এবং পরবর্তী কালে ২০১৫ সালের চূড়ান্ত সংবিধান ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মাওবাদী ও আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একাধিক চুক্তির ফল। নেপালে ঐকমত্যের কেন্দ্রে ছিল—রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা।
রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি টেনে একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তি প্রতিষ্ঠা করার উদাহরণ হচ্ছে নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া। গৃহযুদ্ধের পুনরাবৃত্তির ভয়ে নেপালে দলগুলো বহুবার পিছিয়ে এসেও শেষ পর্যন্ত একমত হয়েছিল।

জুলাই আন্দোলনের অংশীদার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ নিয়ে এখনো কঠোর অবস্থানে। তারা হয়তো মনে করছে, ঐকমত্যের অভাব বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি করবে না। নেপালের প্রক্রিয়া আমাদের দেখায়, বহু পক্ষীয় সংঘাত শেষেও ঐকমত্য সম্ভব, কিন্তু তার জন্য দীর্ঘ সময় ও অসংখ্যবার সমঝোতার প্রয়োজন।
বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঐতিহাসিক সনদগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিটিই কঠিন পরিস্থিতিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। জুলাই সনদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে যে বিতর্ক, তা চিলির কনসারটাসিওন বা স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তির মতো দৃষ্টান্তগুলোর চ্যালেঞ্জ মনে করিয়ে দেয়। জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আপস ও সমঝোতার মাধ্যমে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা এখন সবচেয়ে জরুরি। ইতিহাসের এই শিক্ষাগুলো থেকে জুলাই সনদ একটি সত্যিকারের গণমুখী ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তার পথ খুঁজে পাবে বলে আশা করা যায়।

ইসরায়েল গাজাকে নিরাপত্তা সমস্যা হিসেবে দেখছে, আর ফিলিস্তিনিরা একে দেখছে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির মেরুকরণ যতদিন না কমবে, ততদিন যেকোনো যুদ্ধবিরতিই হবে ক্ষণস্থায়ী।
৫ ঘণ্টা আগে
ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শুধু বিনোদন নয়—মত প্রকাশ, পরিচয় নির্মাণ ও বিশ্বসংযোগেরও প্রধান মাধ্যম। এমন এক সময়ে অস্ট্রেলিয়া ১৬ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার ঐতিহাসিক আইন পাস করেছে।
১১ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে। এটি বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অধ্যাদেশের ফলে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠিত হয়। এতে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সরাসরি প্রধান বিচারপতির অধীনে আসে।
১ দিন আগে
ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারছেন কিনা, কোনো কারচুপি হচ্ছে কিনা কিংবা নির্বাচনী কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা—এসব বিষয় তদারকি করে প্রতিবেদন দেওয়াই তাদের কাজ।
২ দিন আগে