পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, চুক্তিটির মাধ্যমে লাভ-ক্ষতির মুখোমুখি হবে কোন কোন দেশ? সুমন সুবহান-এর এক্সপ্লেইনারে জানা যাচ্ছে সম্ভাব্য উত্তর।
সুমন সুবহান
১৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ২০২৫ তারিখে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলের হামলার পর ন্যাটো জোটের আদলে মুসলিম সামরিক জোটের চলমান আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ যেন অবশ্যম্ভাবী ছিল।
রিয়াদের আল-ইয়ামামাহ প্রাসাদের রাজদরবারে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই চুক্তি বছরের পর বছর ধরে চলা আলোচনার ফল। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার একটি পদক্ষেপ।’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর আলিঙ্গন করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যাঁকে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সেদিন সৌদি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান, লালগালিচা এবং রাজকীয় প্রটোকলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দুইদেশের প্রায় আট দশকের পুরোনো মিত্রতার ইতিহাসে এটিকে মাইলফলক হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। কেননা উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে গভীর সামরিক সহযোগিতা বিদ্যমান থাকলেও এই চুক্তি তাদের দীর্ঘদিনের অনানুষ্ঠানিক সামরিক সহযোগিতাকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তাদের পুরনো সম্পর্কের ভিত্তি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো :
ধর্মীয় ও আদর্শগত সম্পর্ক : উভয় দেশই নিজেদের মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দেখে। ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর রক্ষক হিসেবে সৌদি আরব তাই পাকিস্তানের কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা : সৌদি আরব পাকিস্তানকে দীর্ঘকাল ধরে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে, যা পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বিনিময়ে পাকিস্তান সৌদি আরবের সামরিক সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা করে।
সামরিক সক্ষমতা : পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং তাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনী। সৌদি আরব তাদের এই সামরিক দক্ষতাকে নিজেদের নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ : সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং ইয়েমেনে চলমান সংঘাতের পাশাপাশি ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম সৌদি আরবের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সৌদি আরবের জন্য একটি কৌশলগত মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর জিসিসিভুক্ত (গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল) দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের ফল এই চুক্তি।
পাকিস্তান-সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, যদি কোনো একটি দেশের ওপর সামরিক হামলা হয়, তবে সেটিকে উভয় দেশের ওপরই আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে এই পদক্ষেপটি হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি।
আগেই বলেছি, এটি প্রকৃতপক্ষে দুই দেশের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতিফলন। ইরান ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের থেকে আসা হুমকির পাশাপাশি ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন একটি শক্তিশালী মিত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল।
পাকিস্তানের বিশাল ও প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী এবং পারমাণবিক সক্ষমতা সৌদি আরবের কৌশলগত সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এই চুক্তিটি শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই প্রভাবিত করবে না, বরং এর প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়েও দেখা যাবে।
সৌদি আরব-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ইসরায়েল একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখবে। তারা আশঙ্কা করতে পারে যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রযুক্তি কোনোভাবে সৌদি আরবের হাতে গেলে তা মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেবে। আর তাই ইসরায়েল তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই চুক্তির ওপর সতর্ক নজর রাখবে। বিশেষ করে কাতারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিকে ইসরায়েল ও সৌদি আরব যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করবে, সেটিই স্বাভাবিক। চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করেছে।
ইসরায়েলের মূল্যায়ন: কাতারে ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিটিকে ইসরায়েল কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাতের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উত্তেজনা ইসরায়েলের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সম্ভাব্য মূল্যায়ন হতে পারে :
ক. নিরাপত্তা উদ্বেগ: ইসরায়েল এই চুক্তিকে তার নিরাপত্তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে দেখবে। পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় ইসরায়েল আশঙ্কা করবে যে, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের সামরিক প্রযুক্তি বা পারমাণবিক জ্ঞান কোনোভাবে সৌদি আরবের হাতে চলে যেতে পারে -- যদিও চুক্তিতে সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্রের কথা উল্লেখ নেই।
খ. আঞ্চলিক জোটের পরিবর্তন: ইসরায়েল সম্প্রতি আব্রাহাম অ্যাকর্ডস চুক্তির মাধ্যমে কিছু আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। এই চুক্তি সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী মুসলিম সামরিক জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়, যা ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
গ. কৌশলগত সংকেত: ইসরায়েল এই চুক্তির সময়কে একটি স্পষ্ট সংকেত হিসেবে দেখছে। কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলার ঠিক পরই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় যে সৌদি আরব আঞ্চলিক অস্থিরতা এবং তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন। এটি ইসরায়েলকে এই বার্তা দেয় যে তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় প্রতিক্রিয়া আসছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক আঞ্চলিক পরিস্থিতি সৌদি আরবের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আর তাই এই চুক্তি সৌদি আরবের জন্য কিছু কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনতে পারে। যেমন :
ক. নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: সৌদি আরবের জন্য সবচেয়ে বড় লাভ হলো তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হামলা, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী মিত্র প্রয়োজন। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ হিসেবে পাকিস্তান সৌদি আরবকে একটি শক্তিশালী সামরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দেবে।
খ. সামরিক আধুনিকীকরণ ও প্রশিক্ষণ: সৌদি আরব নিজেদের সামরিক বাহিনীকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করতে চাইছে। পাকিস্তান বহু বছর ধরে সৌদি সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এই চুক্তির মাধ্যমে সেই সহযোগিতা আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও শক্তিশালী হবে।
গ. আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি: এই চুক্তি সৌদি আরবের আঞ্চলিক নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি মুসলিম বিশ্বের সামনে সৌদি আরবকে একটি নিরাপত্তা প্রদানকারী শক্তি হিসেবে তুলে ধরবে, যা তাদের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও মজবুত করবে।
ঘ. পারমাণবিক সক্ষমতা: যদিও সরাসরি পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তির অংশ নয়, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই চুক্তির ফলে সৌদি আরব ভবিষ্যতে পাকিস্তানের কাছ থেকে পারমাণবিক প্রযুক্তি বা সহায়তা পাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আগেও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে, তবে সৌদি আরবও একই পথে হাঁটবে। এই চুক্তি সেই লক্ষ্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক শত্রুতা এবং চলমান কাশ্মীর ইস্যুর কারণে ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো এই চুক্তিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক ভালো হয়েছে, তবুও এই চুক্তিটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিকে ভারত একাধিক স্তরে একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখবে এবং বেশ গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করবে। ভারতের সম্ভাব্য মূল্যায়ন হতে পারে এরকম :
ক. নিরাপত্তা উদ্বেগ: ভারত এই চুক্তিকে সরাসরি তার নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখবে। একটি সামরিক সংঘর্ষের সময় সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিক সামরিক সমর্থন পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। যদিও সৌদি আরবের সেনাবাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবে -- এমন সম্ভাবনা কম।
খ. কূটনৈতিক চাপ: এই চুক্তি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ভারতকে কূটনৈতিক চাপের মুখে ফেলবে। মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের প্রভাব অনেক। যদি সৌদি আরব প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি হতে পারে, যা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
গ. আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য: এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে। সৌদি আরব, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা এবং ভারতের সঙ্গে এই দেশগুলোর সম্পর্কের জটিলতার মধ্যে এই চুক্তি একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ঘ. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সৌদি আরব ও ভারত উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কী হবে তা নিয়ে ভারতের কৌশলবিদরা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করবেন।
এই চুক্তি থেকে পাকিস্তান একাধিক কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে পারে, যা তাদেরকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী করবে। যেমন :
ক. সামরিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: পাকিস্তান বহু বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। সৌদি আরবের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিশ্চিত করবে যে, পাকিস্তান ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পেতে থাকবে। সৌদি আরব সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য বা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে পারে।
খ. পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষা: এই চুক্তি পাকিস্তানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার দেবে, বিশেষ করে আঞ্চলিক চাপের মুখে। সৌদি আরবকে পাশে পাওয়ায় পাকিস্তান তার পারমাণবিক সক্ষমতাকে আরও সুরক্ষিত মনে করতে পারে।
গ. আন্তর্জাতিক সমর্থন: এই চুক্তি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে একটি শক্তিশালী অবস্থান দেবে। সৌদি আরবকে পাশে পাওয়ায় পাকিস্তান তার আন্তর্জাতিক নীতিকে আরও দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে।
ঘ. সামরিক আধুনিকীকরণ: সৌদি আরবের বিশাল তেল সম্পদ ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য রয়েছে। চুক্তিটির মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ করতে পারে। আর তা ভারতের সামরিক সক্ষমতার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ঙ. কূটনৈতিক সুবিধা: এই চুক্তি পাকিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করবে। সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পাকিস্তানকে অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতেও সহায়তা করবে। যা দেশটির জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই লাভজনক।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো এই চুক্তিকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে। এই সম্পর্ক তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। এমনকি সৌদি আরবের পদক্ষেপ অন্যান্য আরব দেশগুলোকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে অনুরূপ চুক্তির দিকে আগ্রহী করতে পারে :
আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। ইরান, ইয়েমেন ও ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের কারণে অনেক আরব দেশই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তানের মতো একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করা হলে তা তাদের সামরিক সক্ষমতা ও প্রতিরোধক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে।
চীনের প্রভাব বৃদ্ধি: চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়াতে চাইছে। চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পাকিস্তান এই অঞ্চলে একটি শক্তিশালী সামরিক অংশীদার হিসেবে কাজ করতে পারে। অন্যান্য আরব দেশগুলোও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রকল্পের অংশীদার।
বহুমুখী জোট প্রয়োজন: অতীতে অনেক আরব দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর তারা বুঝতে পারছে যে একটি একক শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বিপজ্জনক হতে পারে। সৌদি-পাকিস্তান চুক্তি একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে যে, পশ্চিমা জোটের বাইরেও শক্তিশালী সামরিক সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব।
প্রতিরোধ ক্ষমতা: এই চুক্তি কেবল সামরিক সহযোগিতা নয়, বরং একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। কোনো দেশের ওপর আক্রমণ করলে তার সামরিকভাবে শক্তিশালী মিত্রের পক্ষ থেকে কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে, এমন বার্তা আঞ্চলিক প্রতিপক্ষদের কাছে পৌঁছে যাবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে মিশ্র চোখে দেখবে। একদিকে, সৌদি আরব তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না যে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সামরিক জ্ঞান এমন কোনো দেশের কাছে যাক, যা ভবিষ্যতে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্কের ওপর সতর্ক নজর রাখবে।
এই চুক্তি ভারতকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করবে এবং তাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ক. নিরাপত্তা হুমকি : ভারত তার প্রধান প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের মুখোমুখি হচ্ছে। যদিও সরাসরি সামরিক সংঘাতে সৌদি আরবের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। তবে আর্থিক, সামরিক সরঞ্জাম বা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তাদের সমর্থন পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে।
খ. কূটনৈতিক চাপ : এই চুক্তি আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতকে কূটনৈতিক চাপের মুখে ফেলবে। মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের প্রভাব অনেক। চুক্তি কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করতে পারে।
গ. আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য : এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে। ভারত সম্প্রতি সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করলেও এই চুক্তি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেবে।
এই চুক্তি ইসরায়েলের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েল এটিকে তার আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে দেখবে।
ক. পারমাণবিক ঝুঁকি: ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা। চুক্তিতে সরাসরি পারমাণবিক সহায়তার কথা উল্লেখ না থাকলেও ইসরায়েল আশঙ্কা করবে যে এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের সামরিক প্রযুক্তি বা পারমাণবিক জ্ঞান সৌদি আরবের হাতে চলে যেতে পারে।
খ. আঞ্চলিক প্রতিরোধ: এই চুক্তি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নতুন সামরিক জোটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ হিসেবে সৌদি আরব পাকিস্তানের সামরিক সমর্থনের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, তেমনি ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে।
গ. আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের উপর প্রভাব: ইসরায়েল সম্প্রতি কিছু আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ সেই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে অনেক আরব দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য এতদিন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই চুক্তি দেখিয়েছে যে, পশ্চিমা জোটের বাইরেও শক্তিশালী সামরিক সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব, যা তাদের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। সার্বিকভাবে সৌদি আরবের এই পদক্ষেপের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের একক প্রভাব কমতে পারে।
লেখক: সামরিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
১৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ২০২৫ তারিখে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলের হামলার পর ন্যাটো জোটের আদলে মুসলিম সামরিক জোটের চলমান আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ যেন অবশ্যম্ভাবী ছিল।
রিয়াদের আল-ইয়ামামাহ প্রাসাদের রাজদরবারে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই চুক্তি বছরের পর বছর ধরে চলা আলোচনার ফল। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার একটি পদক্ষেপ।’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর আলিঙ্গন করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যাঁকে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সেদিন সৌদি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান, লালগালিচা এবং রাজকীয় প্রটোকলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দুইদেশের প্রায় আট দশকের পুরোনো মিত্রতার ইতিহাসে এটিকে মাইলফলক হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। কেননা উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে গভীর সামরিক সহযোগিতা বিদ্যমান থাকলেও এই চুক্তি তাদের দীর্ঘদিনের অনানুষ্ঠানিক সামরিক সহযোগিতাকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তাদের পুরনো সম্পর্কের ভিত্তি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো :
ধর্মীয় ও আদর্শগত সম্পর্ক : উভয় দেশই নিজেদের মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দেখে। ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর রক্ষক হিসেবে সৌদি আরব তাই পাকিস্তানের কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা : সৌদি আরব পাকিস্তানকে দীর্ঘকাল ধরে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে, যা পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বিনিময়ে পাকিস্তান সৌদি আরবের সামরিক সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা করে।
সামরিক সক্ষমতা : পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং তাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনী। সৌদি আরব তাদের এই সামরিক দক্ষতাকে নিজেদের নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ : সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং ইয়েমেনে চলমান সংঘাতের পাশাপাশি ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম সৌদি আরবের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সৌদি আরবের জন্য একটি কৌশলগত মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর জিসিসিভুক্ত (গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল) দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের ফল এই চুক্তি।
পাকিস্তান-সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, যদি কোনো একটি দেশের ওপর সামরিক হামলা হয়, তবে সেটিকে উভয় দেশের ওপরই আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে এই পদক্ষেপটি হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি।
আগেই বলেছি, এটি প্রকৃতপক্ষে দুই দেশের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতিফলন। ইরান ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের থেকে আসা হুমকির পাশাপাশি ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন একটি শক্তিশালী মিত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল।
পাকিস্তানের বিশাল ও প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী এবং পারমাণবিক সক্ষমতা সৌদি আরবের কৌশলগত সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এই চুক্তিটি শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই প্রভাবিত করবে না, বরং এর প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়েও দেখা যাবে।
সৌদি আরব-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ইসরায়েল একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখবে। তারা আশঙ্কা করতে পারে যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রযুক্তি কোনোভাবে সৌদি আরবের হাতে গেলে তা মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেবে। আর তাই ইসরায়েল তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই চুক্তির ওপর সতর্ক নজর রাখবে। বিশেষ করে কাতারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিকে ইসরায়েল ও সৌদি আরব যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করবে, সেটিই স্বাভাবিক। চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করেছে।
ইসরায়েলের মূল্যায়ন: কাতারে ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিটিকে ইসরায়েল কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাতের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উত্তেজনা ইসরায়েলের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সম্ভাব্য মূল্যায়ন হতে পারে :
ক. নিরাপত্তা উদ্বেগ: ইসরায়েল এই চুক্তিকে তার নিরাপত্তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে দেখবে। পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় ইসরায়েল আশঙ্কা করবে যে, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের সামরিক প্রযুক্তি বা পারমাণবিক জ্ঞান কোনোভাবে সৌদি আরবের হাতে চলে যেতে পারে -- যদিও চুক্তিতে সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্রের কথা উল্লেখ নেই।
খ. আঞ্চলিক জোটের পরিবর্তন: ইসরায়েল সম্প্রতি আব্রাহাম অ্যাকর্ডস চুক্তির মাধ্যমে কিছু আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। এই চুক্তি সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী মুসলিম সামরিক জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়, যা ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
গ. কৌশলগত সংকেত: ইসরায়েল এই চুক্তির সময়কে একটি স্পষ্ট সংকেত হিসেবে দেখছে। কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলার ঠিক পরই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় যে সৌদি আরব আঞ্চলিক অস্থিরতা এবং তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন। এটি ইসরায়েলকে এই বার্তা দেয় যে তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় প্রতিক্রিয়া আসছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক আঞ্চলিক পরিস্থিতি সৌদি আরবের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আর তাই এই চুক্তি সৌদি আরবের জন্য কিছু কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনতে পারে। যেমন :
ক. নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: সৌদি আরবের জন্য সবচেয়ে বড় লাভ হলো তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হামলা, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী মিত্র প্রয়োজন। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ হিসেবে পাকিস্তান সৌদি আরবকে একটি শক্তিশালী সামরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দেবে।
খ. সামরিক আধুনিকীকরণ ও প্রশিক্ষণ: সৌদি আরব নিজেদের সামরিক বাহিনীকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করতে চাইছে। পাকিস্তান বহু বছর ধরে সৌদি সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এই চুক্তির মাধ্যমে সেই সহযোগিতা আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও শক্তিশালী হবে।
গ. আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি: এই চুক্তি সৌদি আরবের আঞ্চলিক নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি মুসলিম বিশ্বের সামনে সৌদি আরবকে একটি নিরাপত্তা প্রদানকারী শক্তি হিসেবে তুলে ধরবে, যা তাদের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও মজবুত করবে।
ঘ. পারমাণবিক সক্ষমতা: যদিও সরাসরি পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তির অংশ নয়, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই চুক্তির ফলে সৌদি আরব ভবিষ্যতে পাকিস্তানের কাছ থেকে পারমাণবিক প্রযুক্তি বা সহায়তা পাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আগেও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে, তবে সৌদি আরবও একই পথে হাঁটবে। এই চুক্তি সেই লক্ষ্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক শত্রুতা এবং চলমান কাশ্মীর ইস্যুর কারণে ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো এই চুক্তিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক ভালো হয়েছে, তবুও এই চুক্তিটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিকে ভারত একাধিক স্তরে একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখবে এবং বেশ গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করবে। ভারতের সম্ভাব্য মূল্যায়ন হতে পারে এরকম :
ক. নিরাপত্তা উদ্বেগ: ভারত এই চুক্তিকে সরাসরি তার নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখবে। একটি সামরিক সংঘর্ষের সময় সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিক সামরিক সমর্থন পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। যদিও সৌদি আরবের সেনাবাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবে -- এমন সম্ভাবনা কম।
খ. কূটনৈতিক চাপ: এই চুক্তি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ভারতকে কূটনৈতিক চাপের মুখে ফেলবে। মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের প্রভাব অনেক। যদি সৌদি আরব প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি হতে পারে, যা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
গ. আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য: এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে। সৌদি আরব, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা এবং ভারতের সঙ্গে এই দেশগুলোর সম্পর্কের জটিলতার মধ্যে এই চুক্তি একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ঘ. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সৌদি আরব ও ভারত উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কী হবে তা নিয়ে ভারতের কৌশলবিদরা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করবেন।
এই চুক্তি থেকে পাকিস্তান একাধিক কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে পারে, যা তাদেরকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী করবে। যেমন :
ক. সামরিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: পাকিস্তান বহু বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। সৌদি আরবের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিশ্চিত করবে যে, পাকিস্তান ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পেতে থাকবে। সৌদি আরব সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য বা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে পারে।
খ. পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষা: এই চুক্তি পাকিস্তানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার দেবে, বিশেষ করে আঞ্চলিক চাপের মুখে। সৌদি আরবকে পাশে পাওয়ায় পাকিস্তান তার পারমাণবিক সক্ষমতাকে আরও সুরক্ষিত মনে করতে পারে।
গ. আন্তর্জাতিক সমর্থন: এই চুক্তি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে একটি শক্তিশালী অবস্থান দেবে। সৌদি আরবকে পাশে পাওয়ায় পাকিস্তান তার আন্তর্জাতিক নীতিকে আরও দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে।
ঘ. সামরিক আধুনিকীকরণ: সৌদি আরবের বিশাল তেল সম্পদ ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য রয়েছে। চুক্তিটির মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ করতে পারে। আর তা ভারতের সামরিক সক্ষমতার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ঙ. কূটনৈতিক সুবিধা: এই চুক্তি পাকিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করবে। সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পাকিস্তানকে অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতেও সহায়তা করবে। যা দেশটির জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই লাভজনক।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো এই চুক্তিকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে। এই সম্পর্ক তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। এমনকি সৌদি আরবের পদক্ষেপ অন্যান্য আরব দেশগুলোকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে অনুরূপ চুক্তির দিকে আগ্রহী করতে পারে :
আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। ইরান, ইয়েমেন ও ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের কারণে অনেক আরব দেশই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তানের মতো একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করা হলে তা তাদের সামরিক সক্ষমতা ও প্রতিরোধক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে।
চীনের প্রভাব বৃদ্ধি: চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়াতে চাইছে। চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পাকিস্তান এই অঞ্চলে একটি শক্তিশালী সামরিক অংশীদার হিসেবে কাজ করতে পারে। অন্যান্য আরব দেশগুলোও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রকল্পের অংশীদার।
বহুমুখী জোট প্রয়োজন: অতীতে অনেক আরব দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর তারা বুঝতে পারছে যে একটি একক শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বিপজ্জনক হতে পারে। সৌদি-পাকিস্তান চুক্তি একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে যে, পশ্চিমা জোটের বাইরেও শক্তিশালী সামরিক সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব।
প্রতিরোধ ক্ষমতা: এই চুক্তি কেবল সামরিক সহযোগিতা নয়, বরং একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। কোনো দেশের ওপর আক্রমণ করলে তার সামরিকভাবে শক্তিশালী মিত্রের পক্ষ থেকে কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে, এমন বার্তা আঞ্চলিক প্রতিপক্ষদের কাছে পৌঁছে যাবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে মিশ্র চোখে দেখবে। একদিকে, সৌদি আরব তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না যে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সামরিক জ্ঞান এমন কোনো দেশের কাছে যাক, যা ভবিষ্যতে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্কের ওপর সতর্ক নজর রাখবে।
এই চুক্তি ভারতকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করবে এবং তাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ক. নিরাপত্তা হুমকি : ভারত তার প্রধান প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের মুখোমুখি হচ্ছে। যদিও সরাসরি সামরিক সংঘাতে সৌদি আরবের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। তবে আর্থিক, সামরিক সরঞ্জাম বা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তাদের সমর্থন পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে।
খ. কূটনৈতিক চাপ : এই চুক্তি আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতকে কূটনৈতিক চাপের মুখে ফেলবে। মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের প্রভাব অনেক। চুক্তি কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করতে পারে।
গ. আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য : এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে। ভারত সম্প্রতি সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করলেও এই চুক্তি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেবে।
এই চুক্তি ইসরায়েলের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েল এটিকে তার আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে দেখবে।
ক. পারমাণবিক ঝুঁকি: ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা। চুক্তিতে সরাসরি পারমাণবিক সহায়তার কথা উল্লেখ না থাকলেও ইসরায়েল আশঙ্কা করবে যে এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের সামরিক প্রযুক্তি বা পারমাণবিক জ্ঞান সৌদি আরবের হাতে চলে যেতে পারে।
খ. আঞ্চলিক প্রতিরোধ: এই চুক্তি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নতুন সামরিক জোটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ হিসেবে সৌদি আরব পাকিস্তানের সামরিক সমর্থনের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, তেমনি ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে।
গ. আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের উপর প্রভাব: ইসরায়েল সম্প্রতি কিছু আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ সেই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে অনেক আরব দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য এতদিন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই চুক্তি দেখিয়েছে যে, পশ্চিমা জোটের বাইরেও শক্তিশালী সামরিক সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব, যা তাদের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। সার্বিকভাবে সৌদি আরবের এই পদক্ষেপের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের একক প্রভাব কমতে পারে।
লেখক: সামরিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
‘বিদেশি সংস্থার এজেন্ট’ শব্দটি শুনলেই জেমস বন্ড সদৃশ কোট-টাই পরা চরিত্রের কথাই মনে পড়ে। থ্রিলার কিংবা এস্পিওনাজ (স্পাই) সিনেমার চরিত্রের নায়কদের কথা মনে পড়ে।
৩১ মিনিট আগেকাতারে ইসরায়েলের এই আক্রমণের পর মুসলিম দেশগুলো ন্যাটোর আদলে একটি সামরিক জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে। এই উদ্যোগের পেছনে প্রধানত ইরান ও মিশর নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে দোহাতে হামাস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্ব ইসরায়েলকে একটি অস্থিতিশীল সামরিক
১ দিন আগেগত ১৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শিরোনামে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। এটি যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ ডানপন্থী সমাবেশ। বিক্ষোভের আয়োজক ছিলেন, ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী মনোভাবের জন্য পরিচিত অ্যাকটিভিস্ট টমি রবিনসন।
২ দিন আগেপাহাড় ও উপত্যকায় বোনা এই দুর্গম উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশটি শতাব্দী ধরে সংঘাতের এক ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এর কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ও জটিল ইতিহাস প্রদেশটিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির এক কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
৩ দিন আগে