একই দিনে রেজিস্ট্রি হয়েছে একাধিক দলিল
টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার নামে ১৬ শতাংশ এবং ছোট ডুমুরিয়া এলাকায় তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ৩ একর ২২ শতাংশ ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে ২ একর ২০ শতাংশ জমি রয়েছে। হিন্দুপ্রধান এলাকার এসব জমির ১৭ বিক্রেতার সবাই-ই সনাতন ধর্মাবলম্বী।
স্ট্রিম অনুসন্ধানী দল
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বিভিন্ন জন বিশেষত দরিদ্র হিন্দুদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং দুজনের সন্তানেরা। ১৯৮৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কেনা এমন জমির ১৮টি দলিল হাতে এসেছে স্ট্রিমের। এর মধ্যে শেখ রেহানা, তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে ১৫টি দলিলে এক তাড়াইল বাজার এলাকাতেই রয়েছে ১৪ একর ৮৪ শতাংশ জমি।
এর বাইরে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার নামে ১৬ শতাংশ এবং ছোট ডুমুরিয়া এলাকায় তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ৩ একর ২২ শতাংশ ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে ২ একর ২০ শতাংশ জমি রয়েছে। হিন্দুপ্রধান এলাকার এসব জমির ১৭ বিক্রেতার সবাই-ই সনাতন ধর্মাবলম্বী। লুকোচুরি ছিল ক্রেতার পরিচয় প্রকাশেও, রেজিস্ট্রির আগে অধিকাংশ বিক্রেতাই জানতেন না তাঁদের জমি যাঁরা কিনছেন, তাঁরা শেখ পরিবারের সদস্য। আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো, এসব জমি কেনার ক্ষেত্রে একই দিনে রেজিস্ট্রি হয়েছে একাধিক দলিল।
পরিচয় প্রকাশে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার তাড়াইল গ্রামে পৈত্রিক বসতভিটা ছিল বিজয়কৃষ্ণ রায় বৈরাগীর। ২০০৫ সালে আর্থিক সংকটের কারণে তিনি বসতভিটার পাশে বাবার রেখে যাওয়া জমির একাংশ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
ওই সময় বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস নামে একজন জমি বিক্রি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে বাজারমূল্য নির্ধারণ করে বিজয়কৃষ্ণকে জমির টাকা বুঝিয়ে দেন। বলা হয়, নির্ধারিত দিনে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমির দলিলে সই করতে হবে। ওই বছরের ২৯ মে দলিলে সই করতে গিয়ে বিজয়কৃষ্ণ দেখেন তাঁর জমির ক্রেতা শেখ রেহানা, যিনি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের চতুর্থ সন্তান।
বিজয়কৃষ্ণের জমি কেনার তিন মাস পর ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রী বিউটি রানী বৈরাগীর ৭ শতক জমিও কিনে নেন শেখ রেহানা। দলিলে জমি বিক্রির কারণ হিসেবে বলা হয়, মহাজনের দেনা পরিশোধের জন্য নগদ টাকার বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় জমি বিক্রি করা হচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই শেখ রেহানা রেজিস্ট্রির সময় উপস্থিত ছিলেন না।
বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগী স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার বা আমার পরিবারের সঙ্গে শেখ রেহানার কখনো দেখা হয়নি। ওই সময় (২০০৫ সালে) টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রির পরিকল্পনা করছিলাম। ভেবেছিলাম, পাড়া-প্রতিবেশী বা আশপাশের কারও কাছে জমি বেচব না। বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস বলেছিল, তিনি জমি বেচে দেবেন। তবে ক্রেতা কে, কীভাবে জমি কেনা হবে, কিছুই জানায়নি। কিন্তু জমির পুরো টাকা রেজিস্ট্রির আগেই দিয়েছিল।’
বিক্রেতাদের কয়েকজন জানান, জমি বিক্রির আগমুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা কেউই জানতেন না যে শেখ পরিবারই তাঁদের জমি কিনছে। কেন এভাবে জমি কেনা হয়েছে তা-ও জানাতে পারেননি তাঁরা।
একই দিনে রেজিস্ট্রি হয়েছে একাধিক দলিল
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেখ রেহানার কেনা ৫ একর ৫৪ শতাংশ জমির ১২টি দলিলই রেজিস্ট্রি হয়েছে ২০০৫ সালের ২৯ মে থেকে ২৪ অক্টোবর, এই পাঁচ মাসে। এর মধ্যে বিজয়কৃষ্ণের জমি যেদিন রেজিস্ট্রি হয় ওই দিনই, অর্থ্যাৎ ২০০৫ সালের ২৯ মে টুঙ্গিপাড়ার কানাই নগর গ্রামের গোপাল চন্দ্র রায়, বীরেন্দ্র নাথ রায় ও সুভাষ চন্দ্র রায়ের ১৮ শতক জমি শেখ রেহানার নামে রেজিস্ট্রি হয়। তাড়াইলের ১০১ নম্বর সালুখা মৌজার এ জমির দাম দেখানো হয় ৩৫ হাজার টাকা।
একই দিন ৩০ হাজার টাকায় সালুখার রঞ্জিত কুমার রায়ের ১৫ শতক জমি শেখ রেহানার নামে রেজিস্ট্রি হয়। আর প্রফুল্ল কুমার রায় বৈরাগীর কাছ থেকে ১০১ নম্বর সালুখা মৌজায় ৪২ শতাংশ জমি কেনা হয় ৮০ হাজার টাকায়। একইভাবে ১৯ জুন দুটি এবং ২৪ অক্টোবর আরও দুটি জমির রেজিস্ট্রি হয় তাঁর নামে। এ ছাড়া ১৯৮৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর একই দিনে রেজিস্ট্রি হয় রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, সায়মা ওয়াজেদ ও সজীব ওয়াজেদের জমি। যদিও দলিলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নাম রেজওয়ান লেখা হয়েছে।
সরেজমিন টুঙ্গিপাড়া
গত ৮ ও ৯ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, সালুখা, তাড়াইল, কানাই নগর ও ডুমুরিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমিগুলোই বেশির ভাগই ফসলি। বাকিটা মাছের ঘের।
যাঁরা এসব জমি বিক্রি করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধ করতেই মূলত তাঁরা জমিগুলো বিক্রি করেছিলেন।
জমি বিক্রেতাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখন বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগীর। তাড়াইল গ্রাম থেকে কানাইনগরে যাওয়ার পথে পড়ে তাঁর বাড়ি। সেখানে যেতে হলে উঁচু পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৪ ফুট নামতে হবে। এরপর দুটি বড় ডোবা পাড়ি দিতে হয়। ডোবায় কলাগাছ দিয়ে তৈরি ভাসমান কলাগাছের সাঁকো পেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে মিনিট দুয়েক এগোলে বিজয়কৃষ্ণের বাড়ি।
৬৩ বছরের বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগী স্ট্রিমকে জানান, একসময় তিনি মুদি দোকান চালাতেন। ঋণের চাপ ও অর্থ সংকটে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তিনি কাজ করেন পাটগাতি বীজ ভাণ্ডারে। স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী স্ত্রী, পুত্রবধূ ও এক নাতিকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন জীর্ণ একটি টিনের ঘরে।
একসময় তিনি মুদি দোকান চালাতেন। ঋণের চাপ ও অর্থ সংকটে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তিনি কাজ করেন পাটগাতি বীজ ভাণ্ডারে। স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী স্ত্রী, পুত্রবধূ ও এক নাতিকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন জীর্ণ একটি টিনের ঘরে। বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগী
আরেক জমি বিক্রেতা তাড়াইল গ্রামের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র রায় (৫৭) স্ট্রিমকে বলেন, ‘১৯৭৪ সালে তাঁরা তিন ভাই সালুখা মৌজায় ১৮ শতক জমি কিনেছিলেন। পরে জমির পাশে উঁচু রাস্তা তৈরি হলে স্থানটি ডোবায় পরিণত হয়। কিছুদিন পর আশেপাশের জমির মালিক ভব সিন্ধু গাইন সেখানে মাছের ঘের করলে তাঁদের অংশও এর মধ্যে চলে যায়। ডোবা জমির সুবিধা ভোগ করতে না পেরে তাঁরা এটি বিক্রির পরিকল্পনা করেন। পরে বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় জমিটি কিনে নেন শেখ রেহানা। তবে তাঁরা তিন ভাই রেজিস্ট্রির হওয়ার আগে জানতে পারেননি, জমিটি কিনছেন শেখ রেহানা।
যে মাছের ঘেরের ভেতরের জমি বিক্রি করেছেন রায় পরিবারের তিন ভাই, সে ঘেরের মালিকানা এখনো রয়েছে ভব সিন্ধু গাইনের কাছে। একসময় ঠিকাদারির কাজ করা ও বর্তমানে মৎস্যজীবী এই ভব সিন্ধু গাইন আবার তাড়াইল গ্রামে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারের জমি কেনা অন্তত ৫টি দলিলে সাক্ষী হিসেবে রয়েছে তাঁর নাম।
তিনিও শেখ রেহানা ও সায়মা ওয়াজেদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ২০০৫ সালের জুনে ভব সিন্ধু গাইনের কাছ থেকে ১০১ নম্বর সালুখা মৌজায় ১ একর ২১ শতাংশ জমি শেখ রেহানা কেনেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। জায়গাটি পরে ‘শেখ হাসিনার মাছের ঘের’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
পাঁচ দলিলের সাক্ষী ভব সিন্ধু
গোপালগঞ্জের তাড়াইল গ্রামে ভব সিন্ধু গাইনের বাড়ি। গত ৮ ও ৯ আগস্ট তিনবার বাড়িতে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ সদরে এনসিপির সমাবেশ কেন্দ্র করে সহিংসতা ও স্থানীয় পাঁচ তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় ভব সিন্ধুকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এজন্য ভব সিন্ধু বাড়িতে থাকছেন না।
তবে টুঙ্গিপাড়া থেকে ফেরার পর ভব সিন্ধু গাইনের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। স্ট্রিমকে তিনি জানান, শেখ রেহানা তাঁর জমি কিনছেন, এটা তিনি জানতেন। টাকার প্রয়োজনেই তিনি জমি বিক্রির কথা ভাবছিলেন। বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস বিষয়টা জানার পর শেখ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর জমি কেনার ব্যবস্থা করেন।
তিনি আরও জানান, শেখ পরিবারের কেয়ারটেকার বৈকুণ্ঠ নাথই আশপাশের কেউ জমি বিক্রির আগ্রহ দেখালে সেটা শেখ পরিবারকে জানাতেন এবং জমিগুলো কিনিয়ে রাখতেন।
কে এই বৈকুণ্ঠনাথ
১৯৭২ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় থেকে শেখ মুজিব পরিবারের স্থানীয় সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করতেন বৈকুণ্ঠ নাথ।
জমি বিক্রেতা ও স্থানীয়রা জানান, এলাকায় কেউ জমি বিক্রির পরিকল্পনা করছে কি না, বৈকুণ্ঠ নাথ সে সবের খোঁজ রাখতেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতেন তিনি। পরের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রেতাকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কাজও করতেন। তবে জমি বেচাকেনার আলোচনার সময় ক্রেতার আসল পরিচয় গোপন রাখা হতো। আলোচনা চূড়ান্ত হলে বিক্রেতাদের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিলে সই করতে বলা হতো।
শেখ পরিবারের জমির তত্ত্বাবধায়ক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস। স্থানীয়রা জানান, বৈকুণ্ঠ নাথের মৃত্যুর পর গোপালগঞ্জে শেখ পরিবারের সম্পদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর বিলুপ্ত হওয়া জাতীয় সংসদের খুলনা-২ আসনের সদস্য ছিলেন জুয়েল। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই তিনি পলাতক।
কেন এভাবে জমি কেনা
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, বিক্রেতারাও জানে না এ সব জমির ক্রেতা কে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের এভাবে জমি কেনা এই ইঙ্গিত দেয় যে তাঁর সম্পত্তির লোভ ছিল। তিনি এই জমি কেনার মাধ্যমে একটা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এটি মূলত মানুষের মধ্যে থাকা সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা দেখার বিষয়, তাঁর ট্যাক্স ফাইল বা অন্যান্য সরকারি নথিপত্রে এ সব সম্পত্তির তথ্য আছে কি না।’
তথ্য গোপনে ‘সিদ্ধহস্ত’ শেখ পরিবার
গোপালগঞ্জের তাড়াইল বাজারে শেখ পরিবারের এই সম্পত্তি ছাড়াও দেশে-বিদেশে থাকা তাঁদের আরও সম্পত্তি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীর পূর্বাচলে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা গোপনে প্লট নিয়েছেন। সম্প্রতি শেখ পরিবারসহ ছয়জনের নামে সেই ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট হলে এ তথ্য জনসম্মুখে আসে।
মজার বিষয় হলো, শেখ রেহানা এই প্লট নিতে নিজেকে ও দুই সন্তানকে অসহায় উল্লেখ করেছিলেন। নিজেদের একাধিক প্লট-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও রাজউকে দেওয়া হলফনামায় নিজেদের ‘ভাসমান ও গরিব’ বলে পরিচয় দেন শেখ রেহানা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। গত ২৮ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রাজউকের তিন কর্মকর্তা ওই হলফনামা দেন।
এর বাইরে চলতি বছর গাজীপুরে খোঁজ পাওয়া গেছে শেখ পরিবারের দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নামে চারটি বিলাসবহুল বাগানবাড়ি, ডুপ্লেক্স ভবন, শানবাঁধানো ঘাট ও পুকুর। এই চার বাগানবাড়ির একটির নাম টিউলিপ’স টেরিটরি, যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে। বলা দরকার, টিউলিপ সিদ্দিক গত কয়েক মাস ধরে বিদেশি অনেকগুলো গণমাধ্যমের কাছে দাবি করে আসছিলেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকই নন। তবে এ সপ্তাহেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক এখনো যে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী, তা বেরিয়ে এসেছে।
শেখ পরিবারের সদস্যরা এভাবে নানান স্থানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন দেশ শাসন করেছেন, তখন তাঁর এবং পরিবারের এসব সম্পত্তির কথা তিনি একরকম গোপনই রেখেছিলেন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বিভিন্ন জন বিশেষত দরিদ্র হিন্দুদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং দুজনের সন্তানেরা। ১৯৮৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কেনা এমন জমির ১৮টি দলিল হাতে এসেছে স্ট্রিমের। এর মধ্যে শেখ রেহানা, তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে ১৫টি দলিলে এক তাড়াইল বাজার এলাকাতেই রয়েছে ১৪ একর ৮৪ শতাংশ জমি।
এর বাইরে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার নামে ১৬ শতাংশ এবং ছোট ডুমুরিয়া এলাকায় তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ৩ একর ২২ শতাংশ ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে ২ একর ২০ শতাংশ জমি রয়েছে। হিন্দুপ্রধান এলাকার এসব জমির ১৭ বিক্রেতার সবাই-ই সনাতন ধর্মাবলম্বী। লুকোচুরি ছিল ক্রেতার পরিচয় প্রকাশেও, রেজিস্ট্রির আগে অধিকাংশ বিক্রেতাই জানতেন না তাঁদের জমি যাঁরা কিনছেন, তাঁরা শেখ পরিবারের সদস্য। আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো, এসব জমি কেনার ক্ষেত্রে একই দিনে রেজিস্ট্রি হয়েছে একাধিক দলিল।
পরিচয় প্রকাশে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার তাড়াইল গ্রামে পৈত্রিক বসতভিটা ছিল বিজয়কৃষ্ণ রায় বৈরাগীর। ২০০৫ সালে আর্থিক সংকটের কারণে তিনি বসতভিটার পাশে বাবার রেখে যাওয়া জমির একাংশ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
ওই সময় বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস নামে একজন জমি বিক্রি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে বাজারমূল্য নির্ধারণ করে বিজয়কৃষ্ণকে জমির টাকা বুঝিয়ে দেন। বলা হয়, নির্ধারিত দিনে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমির দলিলে সই করতে হবে। ওই বছরের ২৯ মে দলিলে সই করতে গিয়ে বিজয়কৃষ্ণ দেখেন তাঁর জমির ক্রেতা শেখ রেহানা, যিনি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের চতুর্থ সন্তান।
বিজয়কৃষ্ণের জমি কেনার তিন মাস পর ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রী বিউটি রানী বৈরাগীর ৭ শতক জমিও কিনে নেন শেখ রেহানা। দলিলে জমি বিক্রির কারণ হিসেবে বলা হয়, মহাজনের দেনা পরিশোধের জন্য নগদ টাকার বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় জমি বিক্রি করা হচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই শেখ রেহানা রেজিস্ট্রির সময় উপস্থিত ছিলেন না।
বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগী স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার বা আমার পরিবারের সঙ্গে শেখ রেহানার কখনো দেখা হয়নি। ওই সময় (২০০৫ সালে) টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রির পরিকল্পনা করছিলাম। ভেবেছিলাম, পাড়া-প্রতিবেশী বা আশপাশের কারও কাছে জমি বেচব না। বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস বলেছিল, তিনি জমি বেচে দেবেন। তবে ক্রেতা কে, কীভাবে জমি কেনা হবে, কিছুই জানায়নি। কিন্তু জমির পুরো টাকা রেজিস্ট্রির আগেই দিয়েছিল।’
বিক্রেতাদের কয়েকজন জানান, জমি বিক্রির আগমুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা কেউই জানতেন না যে শেখ পরিবারই তাঁদের জমি কিনছে। কেন এভাবে জমি কেনা হয়েছে তা-ও জানাতে পারেননি তাঁরা।
একই দিনে রেজিস্ট্রি হয়েছে একাধিক দলিল
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেখ রেহানার কেনা ৫ একর ৫৪ শতাংশ জমির ১২টি দলিলই রেজিস্ট্রি হয়েছে ২০০৫ সালের ২৯ মে থেকে ২৪ অক্টোবর, এই পাঁচ মাসে। এর মধ্যে বিজয়কৃষ্ণের জমি যেদিন রেজিস্ট্রি হয় ওই দিনই, অর্থ্যাৎ ২০০৫ সালের ২৯ মে টুঙ্গিপাড়ার কানাই নগর গ্রামের গোপাল চন্দ্র রায়, বীরেন্দ্র নাথ রায় ও সুভাষ চন্দ্র রায়ের ১৮ শতক জমি শেখ রেহানার নামে রেজিস্ট্রি হয়। তাড়াইলের ১০১ নম্বর সালুখা মৌজার এ জমির দাম দেখানো হয় ৩৫ হাজার টাকা।
একই দিন ৩০ হাজার টাকায় সালুখার রঞ্জিত কুমার রায়ের ১৫ শতক জমি শেখ রেহানার নামে রেজিস্ট্রি হয়। আর প্রফুল্ল কুমার রায় বৈরাগীর কাছ থেকে ১০১ নম্বর সালুখা মৌজায় ৪২ শতাংশ জমি কেনা হয় ৮০ হাজার টাকায়। একইভাবে ১৯ জুন দুটি এবং ২৪ অক্টোবর আরও দুটি জমির রেজিস্ট্রি হয় তাঁর নামে। এ ছাড়া ১৯৮৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর একই দিনে রেজিস্ট্রি হয় রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, সায়মা ওয়াজেদ ও সজীব ওয়াজেদের জমি। যদিও দলিলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নাম রেজওয়ান লেখা হয়েছে।
সরেজমিন টুঙ্গিপাড়া
গত ৮ ও ৯ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, সালুখা, তাড়াইল, কানাই নগর ও ডুমুরিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমিগুলোই বেশির ভাগই ফসলি। বাকিটা মাছের ঘের।
যাঁরা এসব জমি বিক্রি করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধ করতেই মূলত তাঁরা জমিগুলো বিক্রি করেছিলেন।
জমি বিক্রেতাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখন বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগীর। তাড়াইল গ্রাম থেকে কানাইনগরে যাওয়ার পথে পড়ে তাঁর বাড়ি। সেখানে যেতে হলে উঁচু পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৪ ফুট নামতে হবে। এরপর দুটি বড় ডোবা পাড়ি দিতে হয়। ডোবায় কলাগাছ দিয়ে তৈরি ভাসমান কলাগাছের সাঁকো পেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে মিনিট দুয়েক এগোলে বিজয়কৃষ্ণের বাড়ি।
৬৩ বছরের বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগী স্ট্রিমকে জানান, একসময় তিনি মুদি দোকান চালাতেন। ঋণের চাপ ও অর্থ সংকটে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তিনি কাজ করেন পাটগাতি বীজ ভাণ্ডারে। স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী স্ত্রী, পুত্রবধূ ও এক নাতিকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন জীর্ণ একটি টিনের ঘরে।
একসময় তিনি মুদি দোকান চালাতেন। ঋণের চাপ ও অর্থ সংকটে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তিনি কাজ করেন পাটগাতি বীজ ভাণ্ডারে। স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী স্ত্রী, পুত্রবধূ ও এক নাতিকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন জীর্ণ একটি টিনের ঘরে। বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগী
আরেক জমি বিক্রেতা তাড়াইল গ্রামের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র রায় (৫৭) স্ট্রিমকে বলেন, ‘১৯৭৪ সালে তাঁরা তিন ভাই সালুখা মৌজায় ১৮ শতক জমি কিনেছিলেন। পরে জমির পাশে উঁচু রাস্তা তৈরি হলে স্থানটি ডোবায় পরিণত হয়। কিছুদিন পর আশেপাশের জমির মালিক ভব সিন্ধু গাইন সেখানে মাছের ঘের করলে তাঁদের অংশও এর মধ্যে চলে যায়। ডোবা জমির সুবিধা ভোগ করতে না পেরে তাঁরা এটি বিক্রির পরিকল্পনা করেন। পরে বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় জমিটি কিনে নেন শেখ রেহানা। তবে তাঁরা তিন ভাই রেজিস্ট্রির হওয়ার আগে জানতে পারেননি, জমিটি কিনছেন শেখ রেহানা।
যে মাছের ঘেরের ভেতরের জমি বিক্রি করেছেন রায় পরিবারের তিন ভাই, সে ঘেরের মালিকানা এখনো রয়েছে ভব সিন্ধু গাইনের কাছে। একসময় ঠিকাদারির কাজ করা ও বর্তমানে মৎস্যজীবী এই ভব সিন্ধু গাইন আবার তাড়াইল গ্রামে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারের জমি কেনা অন্তত ৫টি দলিলে সাক্ষী হিসেবে রয়েছে তাঁর নাম।
তিনিও শেখ রেহানা ও সায়মা ওয়াজেদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ২০০৫ সালের জুনে ভব সিন্ধু গাইনের কাছ থেকে ১০১ নম্বর সালুখা মৌজায় ১ একর ২১ শতাংশ জমি শেখ রেহানা কেনেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। জায়গাটি পরে ‘শেখ হাসিনার মাছের ঘের’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
পাঁচ দলিলের সাক্ষী ভব সিন্ধু
গোপালগঞ্জের তাড়াইল গ্রামে ভব সিন্ধু গাইনের বাড়ি। গত ৮ ও ৯ আগস্ট তিনবার বাড়িতে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ সদরে এনসিপির সমাবেশ কেন্দ্র করে সহিংসতা ও স্থানীয় পাঁচ তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় ভব সিন্ধুকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এজন্য ভব সিন্ধু বাড়িতে থাকছেন না।
তবে টুঙ্গিপাড়া থেকে ফেরার পর ভব সিন্ধু গাইনের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। স্ট্রিমকে তিনি জানান, শেখ রেহানা তাঁর জমি কিনছেন, এটা তিনি জানতেন। টাকার প্রয়োজনেই তিনি জমি বিক্রির কথা ভাবছিলেন। বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস বিষয়টা জানার পর শেখ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর জমি কেনার ব্যবস্থা করেন।
তিনি আরও জানান, শেখ পরিবারের কেয়ারটেকার বৈকুণ্ঠ নাথই আশপাশের কেউ জমি বিক্রির আগ্রহ দেখালে সেটা শেখ পরিবারকে জানাতেন এবং জমিগুলো কিনিয়ে রাখতেন।
কে এই বৈকুণ্ঠনাথ
১৯৭২ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় থেকে শেখ মুজিব পরিবারের স্থানীয় সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করতেন বৈকুণ্ঠ নাথ।
জমি বিক্রেতা ও স্থানীয়রা জানান, এলাকায় কেউ জমি বিক্রির পরিকল্পনা করছে কি না, বৈকুণ্ঠ নাথ সে সবের খোঁজ রাখতেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতেন তিনি। পরের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রেতাকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কাজও করতেন। তবে জমি বেচাকেনার আলোচনার সময় ক্রেতার আসল পরিচয় গোপন রাখা হতো। আলোচনা চূড়ান্ত হলে বিক্রেতাদের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিলে সই করতে বলা হতো।
শেখ পরিবারের জমির তত্ত্বাবধায়ক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান বৈকুণ্ঠ নাথ বিশ্বাস। স্থানীয়রা জানান, বৈকুণ্ঠ নাথের মৃত্যুর পর গোপালগঞ্জে শেখ পরিবারের সম্পদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর বিলুপ্ত হওয়া জাতীয় সংসদের খুলনা-২ আসনের সদস্য ছিলেন জুয়েল। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই তিনি পলাতক।
কেন এভাবে জমি কেনা
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, বিক্রেতারাও জানে না এ সব জমির ক্রেতা কে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের এভাবে জমি কেনা এই ইঙ্গিত দেয় যে তাঁর সম্পত্তির লোভ ছিল। তিনি এই জমি কেনার মাধ্যমে একটা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এটি মূলত মানুষের মধ্যে থাকা সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা দেখার বিষয়, তাঁর ট্যাক্স ফাইল বা অন্যান্য সরকারি নথিপত্রে এ সব সম্পত্তির তথ্য আছে কি না।’
তথ্য গোপনে ‘সিদ্ধহস্ত’ শেখ পরিবার
গোপালগঞ্জের তাড়াইল বাজারে শেখ পরিবারের এই সম্পত্তি ছাড়াও দেশে-বিদেশে থাকা তাঁদের আরও সম্পত্তি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীর পূর্বাচলে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা গোপনে প্লট নিয়েছেন। সম্প্রতি শেখ পরিবারসহ ছয়জনের নামে সেই ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট হলে এ তথ্য জনসম্মুখে আসে।
মজার বিষয় হলো, শেখ রেহানা এই প্লট নিতে নিজেকে ও দুই সন্তানকে অসহায় উল্লেখ করেছিলেন। নিজেদের একাধিক প্লট-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও রাজউকে দেওয়া হলফনামায় নিজেদের ‘ভাসমান ও গরিব’ বলে পরিচয় দেন শেখ রেহানা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। গত ২৮ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রাজউকের তিন কর্মকর্তা ওই হলফনামা দেন।
এর বাইরে চলতি বছর গাজীপুরে খোঁজ পাওয়া গেছে শেখ পরিবারের দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নামে চারটি বিলাসবহুল বাগানবাড়ি, ডুপ্লেক্স ভবন, শানবাঁধানো ঘাট ও পুকুর। এই চার বাগানবাড়ির একটির নাম টিউলিপ’স টেরিটরি, যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে। বলা দরকার, টিউলিপ সিদ্দিক গত কয়েক মাস ধরে বিদেশি অনেকগুলো গণমাধ্যমের কাছে দাবি করে আসছিলেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকই নন। তবে এ সপ্তাহেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক এখনো যে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী, তা বেরিয়ে এসেছে।
শেখ পরিবারের সদস্যরা এভাবে নানান স্থানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন দেশ শাসন করেছেন, তখন তাঁর এবং পরিবারের এসব সম্পত্তির কথা তিনি একরকম গোপনই রেখেছিলেন।
সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত চার উপজেলায় রোগীর সেবার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দিলেও চালক নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় তেলের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও গা করেনি তারা। এখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো একেবারে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনার ‘শখের বাগানে’ দেখা মেলে সারিবদ্ধ আম গাছের। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং গুগল আর্থের স্যাটেলাইট ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, বাগানটির চারপাশে পাকা প্রাচীর ছিল। ৫ আগস্টের পরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাইনবোর্ড ও প্রাচীর দুটোই ভাঙা পড়ে। এ বাগানে বারি-৪ জাতের প্রায় ১৫০টি গাছ রয়েছে।
৩ দিন আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ভূমিধস বিজয় হয়েছে’ বলা হলেও প্রকৃত চিত্র এমন নয়। বরং জয়ীদের প্রায় অর্ধেকই সরাসরি শিবির করেন না। সদ্য শেষ হওয়া ডাকসু নির্বাচনে ১৫টি পদে শিবিরের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে এসেছেন। আর এর বাইরে ১৩টি পদে
৩ দিন আগে‘আসসালামু আলাইকুম, আমি যুদ্ধে আছি। কোনো সমস্যা নেই। আব্বা-আম্মা, আমার জন্য দোয়া কোরো। সবাই আমার সঙ্গে আছে, চিন্তা কোরো না।’ পরিবারের জন্য পাঠানো ভিডিওতে এই ছিল নিহত হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়ার শেষ বার্তা। ইতালি নেওয়ার কথা বলে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে (২০) রাশিয়ায় পাচার করা হয়। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ‘যুদ্
৪ দিন আগে