রংপুরের পীরগঞ্জ
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পৈতৃক বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। এরপরই সেখানের রাজনীতিতে থিতু হওয়ার পরিকল্পনায় স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। আর এতে বলি হয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী কয়েকজন নাবালকও। জমি নিতে তাঁদের চাকরিসহ নানা প্রলোভন দেওয়ার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছিল চাপও। আর এই জমি বাগিয়ে নেওয়ার পর সরকারি টাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘শখের বাগান’ এবং দেখভাল করেছে সরকারি সংস্থা। বিস্তারিত পড়ুন স্ট্রিমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
স্ট্রিম অনুসন্ধানী দল
নাবালক হারুণ চন্দ্র দাস আর রতিন চন্দ্র দাসের বেশি জমি ছিল না। বাবার রেখে যাওয়া ১০ শতাংশের কম জমিতে দুই ভাইয়ের কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়তো করা যেত। কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি। ‘শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে/ বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে”,’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’র ভুস্বামীর মতো তাঁদের জমিটুকু কিনে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছেলে ও মেয়ে।
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়া তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন। আর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড শহরে।
২০০২ সালের কথা। হারুণ-রতিন দুজনেরই বয়স তখন দশের আশপাশে। তাঁদের বাবা সুধীর চন্দ্র দাস তত দিনে মারা গেছেন। উত্তরাধিকারসূত্রে এক জায়গায় ৫৯ শতাংশ জমির মালিক পাঁচজন। এর একটি অংশের মালিক ওই দুই নাবালক। তাতে নজর পড়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের। ওই বছরের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনা এবং তাঁর দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদের নামে জমি রেজিস্ট্রি হয়। দলিলে তখন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম ‘সায়মা হোসেন’ লেখা ছিল।
আর ওই দুই নাবালকের হয়ে দলিলে সই করেন তাঁদের মা রাধিকা বালা দাস। জমি কেনায় মধ্যস্থতা করেন শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার নাতি পরিচয় দেওয়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা শহিদুল ইসলাম পিন্টু।
জমির দলিলটি স্ট্রিমের হাতে এসেছে। রংপুরের পীরগঞ্জে জমির দলিলের দাগ ধরে সরেজমিনে দেখা যায়, শেখ হাসিনা ও তাঁর দুই সন্তানের মালিকানাধীন জমিটি পীরগঞ্জ শহরের অদূরেই উজিরপুর গ্রামের মাঝিপাড়ায়। ঢাকা-রংপুর হাইওয়ের পাশের এ জমিতে ‘শখের বাগান’ করেছেন শেখ হাসিনা। আর সেই বাগানও গড়ে তোলা হয় সরকারি টাকায়। ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও এত দিন সরকারি সংস্থা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বুড়িরহাট আঞ্চলিক কেন্দ্র বাগানটির দেখভাল করেছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত বাগান তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইনবোর্ডও সেখানে ছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
গুগল ম্যাপে ২০২১ সালের নভেম্বরে তোলা ছবিতে দেখা যায়, বাগানের সামনের দিকে পাশাপাশি দুটি সাইনবোর্ড। যার একটিতে লেখা ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত’। আরেকটিতে মুজিববর্ষের স্লোগানসহ একই কথা লেখা। দুটি সাইনবোর্ডের নিচেই লেখা আছে, ‘আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বুড়িরহাট, রংপুর।’
দলিল বিশ্লেষণ ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাধিকার সূত্রে সাতজন ছিলেন ওই ৫৯ শতাংশ জমির মালিক। যাঁদের মধ্যে হারুণ চন্দ্র ও রতিন চন্দ্র ছাড়াও আরও একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তার নাম পবিত্র চন্দ্র দাস। পবিত্রের পক্ষে তখন দলিলে সই করেছিলেন তার মা শেফালী রাণী।
হিন্দু সম্পত্তি আইনে, বাবার মৃত্যুর পর নাবালকের অভিভাবক হিসেবে দলিলে সই করতে পারেন মা। এই দলিলের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
এই তিন নাবালকের বাইরে জমিটির আরও চার বিক্রেতা রয়েছেন। দলিল অনুসারে তাঁরা হলেন, উপেন্দ্রনাথ, রাধাচরণ দাস, অধির ও অর্জুন। শেখ হাসিনা ২০০২ সালে যখন জমিটি কিনেছিলেন, তখন পুরো জমির দাম ধরা হয়েছিল ৭৫ হাজার টাকা।
জমি বিক্রির কারণ হিসেবে দলিলে সাংসারিক খরচ ও নাবালকদের ভরণপোষণসহ লেখাপড়ার খরচ জোগানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দলিলে এ-ও লিপিবদ্ধ আছে, ওই জমির পাশে খরিদসূত্রে ক্রেতাদের (শেখ হাসিনা ও তাঁর দুই ছেলেমেয়ে) আরও জমি রয়েছে। আরও লেখা হয়েছিল, এই ৫৯ শতাংশ জমি বিক্রির জন্য তাঁদের সাতজনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। দলিলের এ লেখার সূত্র ধরে স্ট্রিম আরও দুটি দলিল খুঁজে পেয়েছে। দলিল দুটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই দুটি জমি ওই ৫৯ শতাংশের দুই পাশে। জমিগুলো একটি হচ্ছে ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আরেকটি ২৩ শতাংশ। এই দুই দলিল রেজিস্ট্রি হয় ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০২ সালের জানুয়ারিতে দুই পাশের প্রায় ৬৯ শতাংশ জমি কেনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পিন্টু তৃতীয় জমি হিসেবে মাঝখানের ৫৯ শতাংশ জমি বিক্রির জন্য চাপ দিতে থাকেন। এজন্য বিক্রেতাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরিসহ নানা প্রলোভনও দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে ছয় মাস পর একপর্যায়ে জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য হন তাঁরা। এই তিন দলিলের পুরো জমিটা নিয়েই করা হয়েছে ‘শখের আমবাগান’।
শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পৈতৃক বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার (বর্তমানে পৌরসভা) ফতেহপুরে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও পীরগঞ্জ আসন থেকে লড়েন তিনি। পরের দুইবার জয়লাভ করলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মণ্ডলের কাছে হেরে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
২০০১ সালে নির্বাচনে হারার পর পীরগঞ্জের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। উত্তরাধিকার সূত্রে পীরগঞ্জে তাঁর স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সম্পত্তি ছিল। তখন নিজের ও ছেলেমেয়ের নামে সম্পত্তি কেনার পরিকল্পনা করেন শেখ হাসিনা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়াজেদ মিয়ার নাতি বলে পরিচয় দেওয়া শহিদুল ইসলাম পিন্টু শেখ হাসিনার হয়ে এই জমি কেনায় মধ্যস্থতা করেন।
তিনটি দলিল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট ১২৮ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে ২২ জনের কাছ থেকে। আর শেখ হাসিনার সঙ্গে তিন জমিরই ক্রেতা তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ ও মেয়ে সায়মা হোসেন। বিক্রেতাদের ২২ জনই একই বংশের উত্তরাধিকার হিসেবে এসব জমির মালিক ছিলেন। উল্লেখ্য, যাঁরা জমি বিক্রি করেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই-ই দরিদ্র।
বিক্রেতারা বলছেন, তখন জমি বিক্রি করা ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। প্রলোভন আর ভয়; সবশেষে জোর করে তাঁদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে জমিগুলো।
প্রথম দফায় দুই দলিলে কেনা জমির এক মালিক ছিলেন শ্রীবাস চন্দ্র দাস। তাঁর সঙ্গে কথা হয় স্ট্রিমের। শ্রীবাসের ভাষ্য, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হারের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে তাঁদের ওপর। তখন শেখ হাসিনার ভোটের খরচের উদ্বৃত্ত টাকার কিছু অংশের বিনিময়ে তাঁদের জমি ছেড়ে দিতে বলেন পিন্টু।
শ্রীবাসের বড় ভাই শ্রীধরের সঙ্গেও স্ট্রিমের কথা হয়। তিনিও বিক্রেতাদের একজন। তিনি বলেন, ‘পিন্টু প্রথমে আমাদের এই জমিতে কারখানা তৈরি হবে বলে জানায়। এ সময় সে যাঁদের কাছ থেকে জমি কেনা হবে, তাঁদের সন্তানদের ওই কারখানায় চাকরি দেওয়া হবে বলে জানায়। কিন্তু জমি বিক্রির পর পিন্টু আর কারখানা বানায়নি, চাকরিও দেয়নি।’
শ্রীধরের অভিযোগ, বিক্রেতাদের কয়েকজন শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করতে রাজি ছিলেন না। তখন পিন্টু শেখ হাসিনার ক্ষমতার কথা বলে তাঁদের ভয় দেখান। জমি দখলের হুমকিও দেন। আর এসব কারণে নিজেদের একমাত্র স্থাবর সম্বল শেষমেস বিক্রি করতে বাধ্য হন সনাতন ধর্মালম্বী এই দরিদ্র মানুষেরা।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকা ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় শেখ হাসিনার স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৩ বিঘা। তবে সেখানে ছেলেমেয়ের সঙ্গে যৌথ মালিকানার কথা উল্লেখ নেই।
‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে এভাবে জমি কেনা শুধু অনৈতিক নয়, বরং অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। স্ট্রিমকে এই আইনজ্ঞ বলেন, ‘এভাবে জমি কেনা আসলে জোরপূর্বক জবরদখলের মতোই। বিক্রেতারা যদি এখন অভিযোগ করে, তাঁদের কাছ থেকে জোর করে জমি কেনা হয়েছে; তাহলে এটা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জমি কেনা হয়, তাহলে বিষয়টা হবে প্রতারণা। এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী চাইলে আদালতে মামলা করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ওই সময় শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং পরবর্তীকালে টানা ১৬ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ কারণে দেশের সাধারণ মানুষের তাঁর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সুযোগ হয়নি। এখন চাইলে তাঁরা আইনি প্রতিকার পেতেই পারেন।’
‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে এভাবে জমি কেনা শুধু অনৈতিক নয়, বরং অন্যায়’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান
২০০২ সালের সেই নাবালক হারুণ চন্দ্র দাস আর রতিন চন্দ্র দাসের বয়স এখন ত্রিশের কোঠায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজের বসতভিটা হারিয়ে তাঁরা এখন অন্যের জমিতে বাস করছেন। এঁদের মধ্যে রতিন চন্দ্র দাস এখন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী। হারুন চন্দ্র দাস ভাসমান দিনমজুর। আর পবিত্র চন্দ্র দাসের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বাকি বিক্রেতাদের কেউ কেউ এখনও পূর্বপুরুষদের পেশা মাছ ধরায় যুক্ত আছেন। উল্লেখ্য, মাঝিপাড়া এবং তাঁদের বর্তমান বসতির মাঝখানে রয়েছে একটি বিস্তীর্ণ বিল। যা বড় বিল নামে পরিচিত। এই বিলে মাছ ধরে তাঁরা এখন জীবিকা নির্বাহ করেন। বিক্রেতাদের কেউ কেউ বিলের পাড়ে খাস জমিতে ঘর তুলেছেন।
পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। এই সড়কের দক্ষিণ দিকে মোটরসাইকেলে রওনা দিলে একটু পরেই দেখা যাবে বড় বিল ব্রিজ। যাত্রার মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছানো যায় পীরগঞ্জ পৌরসভার ওয়ার্ড উজিরপুরে। এ ওয়ার্ডের মাঝিপাড়ায় মহাসড়কের পাশেই শেখ হাসিনার ‘শখের আমবাগান’।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝিপাড়ার এই এলাকার বাসিন্দারা কয়েক পুরুষ ধরে মৎস্যজীবী। যে জমিগুলো শেখ হাসিনা কিনেছেন, তা ছিল মূলত একই বংশের তিন শরিকের উত্তরসূরীদের।
শেখ হাসিনার ‘শখের বাগানে’ দেখা মেলে সারিবদ্ধ আম গাছের। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং গুগল আর্থের স্যাটেলাইট ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, বাগানটির চারপাশে পাকা প্রাচীর ছিল। ৫ আগস্টের পরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাইনবোর্ড ও প্রাচীর দুটোই ভাঙা পড়ে। এ বাগানে বারি-৪ জাতের প্রায় ১৫০টি গাছ রয়েছে। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাইনবোর্ড অনুযায়ী, এগুলো রোপন করা হয় ২০১৩ সালে। বিক্রেতাদের একজন জানিয়েছেন, শুরুর দিকে কয়েক বছর এখানে সবজি চাষ করা হতো। পরে আমের বাগান করা হয়।
এসব জমি শেখ হাসিনা পরিবারের ব্যক্তিগত হলেও সেখানে তিনি ‘শখের আমবাগান’ তৈরি করেছেন সরকারি টাকায়। রংপুরের বুড়িরহাট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ‘ওপরের নির্দেশে’ শুধু এই বাগান করেইনি, দীর্ঘদিন বাগানের পরিচর্যা ও দেখভালও করেছে। তাই স্থানীয়দের কথা, শেখ হাসিনা আসলে ‘কইয়ের তেলে কই ভেজেছেন’।
বুড়িরহাট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাসিরুল ফরিদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘গাছ, ফলের পরিচর্যা এবং মৌসুমী কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজনীয় দেখভাল করত আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।’ এ সময় তিনি এ বাগানের পরিচর্যা ও দেখভালের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে সরাসরি নির্দেশনা গিয়েছিলেন বলেও জানান। সাধারণ নাগরিকেরা কেউ এ ধরনের সেবা পেতে পারে না উল্লেখ করে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুধু পরামর্শ ও পরিকল্পনা দিতে পারি।’
বাগানের পেছনে সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হলেও এখান থেকে সরকারের কোনো আয় হতো না জানিয়ে নাসিরুল ফরিদ বলেন, ‘আমের মৌসুমে বাগানটির মালিকপক্ষই ব্যবসায়ীদের কাছে এটি লিজ দিত। তাই এ বাগানের পেছনে গবেষণা কেন্দ্রের ব্যয় থাকলেও এখান থেকে আয় করার সুযোগ আমাদের ছিল না।’
তবে ৫ আগস্টের পর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র শেখ হাসিনার ‘শখের বাগান’টি আর তদারকি করছে না বলে নিশ্চিত করেছেন এই বৈজ্ঞানিক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর শহিদুল ইসলাম পিন্টু ঢাকা-রংপুর হাইওয়ের পাশে একটি জ্বালানি তেলের স্টেশন তৈরি করেছেন। ওই সময় তিনি ২৭টি পিকআপ গাড়িও কেনেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। এরপর পিন্টু পীরগঞ্জে চারতলা দালান নির্মাণ শুরু করেন এবং গ্রীন ভয়েস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি এনজিও খুলে বসেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পিন্টু আত্মগোপনে চলে যান। গত ১৬ জুন পীরগঞ্জের জামতলার পেট্রোল পাম্প অফিস থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখন আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম শফিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে গ্রেপ্তার পরবর্তী ব্রিফিংয়ে জানান, পিন্টু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর পিএস নয়ন মিয়ার বড় বোনের জামাই।
সে সময় ওসি বলেছিলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, লাইসেন্সবিহীন পেট্রোল পাম্প ও ইটভাটা পরিচালনার মাধ্যমে শত কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’
নাবালক হারুণ চন্দ্র দাস আর রতিন চন্দ্র দাসের বেশি জমি ছিল না। বাবার রেখে যাওয়া ১০ শতাংশের কম জমিতে দুই ভাইয়ের কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়তো করা যেত। কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি। ‘শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে/ বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে”,’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’র ভুস্বামীর মতো তাঁদের জমিটুকু কিনে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছেলে ও মেয়ে।
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়া তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন। আর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড শহরে।
২০০২ সালের কথা। হারুণ-রতিন দুজনেরই বয়স তখন দশের আশপাশে। তাঁদের বাবা সুধীর চন্দ্র দাস তত দিনে মারা গেছেন। উত্তরাধিকারসূত্রে এক জায়গায় ৫৯ শতাংশ জমির মালিক পাঁচজন। এর একটি অংশের মালিক ওই দুই নাবালক। তাতে নজর পড়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের। ওই বছরের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনা এবং তাঁর দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদের নামে জমি রেজিস্ট্রি হয়। দলিলে তখন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম ‘সায়মা হোসেন’ লেখা ছিল।
আর ওই দুই নাবালকের হয়ে দলিলে সই করেন তাঁদের মা রাধিকা বালা দাস। জমি কেনায় মধ্যস্থতা করেন শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার নাতি পরিচয় দেওয়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা শহিদুল ইসলাম পিন্টু।
জমির দলিলটি স্ট্রিমের হাতে এসেছে। রংপুরের পীরগঞ্জে জমির দলিলের দাগ ধরে সরেজমিনে দেখা যায়, শেখ হাসিনা ও তাঁর দুই সন্তানের মালিকানাধীন জমিটি পীরগঞ্জ শহরের অদূরেই উজিরপুর গ্রামের মাঝিপাড়ায়। ঢাকা-রংপুর হাইওয়ের পাশের এ জমিতে ‘শখের বাগান’ করেছেন শেখ হাসিনা। আর সেই বাগানও গড়ে তোলা হয় সরকারি টাকায়। ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও এত দিন সরকারি সংস্থা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বুড়িরহাট আঞ্চলিক কেন্দ্র বাগানটির দেখভাল করেছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত বাগান তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইনবোর্ডও সেখানে ছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
গুগল ম্যাপে ২০২১ সালের নভেম্বরে তোলা ছবিতে দেখা যায়, বাগানের সামনের দিকে পাশাপাশি দুটি সাইনবোর্ড। যার একটিতে লেখা ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত’। আরেকটিতে মুজিববর্ষের স্লোগানসহ একই কথা লেখা। দুটি সাইনবোর্ডের নিচেই লেখা আছে, ‘আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বুড়িরহাট, রংপুর।’
দলিল বিশ্লেষণ ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাধিকার সূত্রে সাতজন ছিলেন ওই ৫৯ শতাংশ জমির মালিক। যাঁদের মধ্যে হারুণ চন্দ্র ও রতিন চন্দ্র ছাড়াও আরও একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তার নাম পবিত্র চন্দ্র দাস। পবিত্রের পক্ষে তখন দলিলে সই করেছিলেন তার মা শেফালী রাণী।
হিন্দু সম্পত্তি আইনে, বাবার মৃত্যুর পর নাবালকের অভিভাবক হিসেবে দলিলে সই করতে পারেন মা। এই দলিলের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
এই তিন নাবালকের বাইরে জমিটির আরও চার বিক্রেতা রয়েছেন। দলিল অনুসারে তাঁরা হলেন, উপেন্দ্রনাথ, রাধাচরণ দাস, অধির ও অর্জুন। শেখ হাসিনা ২০০২ সালে যখন জমিটি কিনেছিলেন, তখন পুরো জমির দাম ধরা হয়েছিল ৭৫ হাজার টাকা।
জমি বিক্রির কারণ হিসেবে দলিলে সাংসারিক খরচ ও নাবালকদের ভরণপোষণসহ লেখাপড়ার খরচ জোগানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দলিলে এ-ও লিপিবদ্ধ আছে, ওই জমির পাশে খরিদসূত্রে ক্রেতাদের (শেখ হাসিনা ও তাঁর দুই ছেলেমেয়ে) আরও জমি রয়েছে। আরও লেখা হয়েছিল, এই ৫৯ শতাংশ জমি বিক্রির জন্য তাঁদের সাতজনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। দলিলের এ লেখার সূত্র ধরে স্ট্রিম আরও দুটি দলিল খুঁজে পেয়েছে। দলিল দুটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই দুটি জমি ওই ৫৯ শতাংশের দুই পাশে। জমিগুলো একটি হচ্ছে ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আরেকটি ২৩ শতাংশ। এই দুই দলিল রেজিস্ট্রি হয় ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০২ সালের জানুয়ারিতে দুই পাশের প্রায় ৬৯ শতাংশ জমি কেনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পিন্টু তৃতীয় জমি হিসেবে মাঝখানের ৫৯ শতাংশ জমি বিক্রির জন্য চাপ দিতে থাকেন। এজন্য বিক্রেতাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরিসহ নানা প্রলোভনও দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে ছয় মাস পর একপর্যায়ে জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য হন তাঁরা। এই তিন দলিলের পুরো জমিটা নিয়েই করা হয়েছে ‘শখের আমবাগান’।
শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পৈতৃক বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার (বর্তমানে পৌরসভা) ফতেহপুরে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও পীরগঞ্জ আসন থেকে লড়েন তিনি। পরের দুইবার জয়লাভ করলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মণ্ডলের কাছে হেরে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
২০০১ সালে নির্বাচনে হারার পর পীরগঞ্জের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। উত্তরাধিকার সূত্রে পীরগঞ্জে তাঁর স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সম্পত্তি ছিল। তখন নিজের ও ছেলেমেয়ের নামে সম্পত্তি কেনার পরিকল্পনা করেন শেখ হাসিনা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়াজেদ মিয়ার নাতি বলে পরিচয় দেওয়া শহিদুল ইসলাম পিন্টু শেখ হাসিনার হয়ে এই জমি কেনায় মধ্যস্থতা করেন।
তিনটি দলিল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট ১২৮ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে ২২ জনের কাছ থেকে। আর শেখ হাসিনার সঙ্গে তিন জমিরই ক্রেতা তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ ও মেয়ে সায়মা হোসেন। বিক্রেতাদের ২২ জনই একই বংশের উত্তরাধিকার হিসেবে এসব জমির মালিক ছিলেন। উল্লেখ্য, যাঁরা জমি বিক্রি করেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই-ই দরিদ্র।
বিক্রেতারা বলছেন, তখন জমি বিক্রি করা ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। প্রলোভন আর ভয়; সবশেষে জোর করে তাঁদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে জমিগুলো।
প্রথম দফায় দুই দলিলে কেনা জমির এক মালিক ছিলেন শ্রীবাস চন্দ্র দাস। তাঁর সঙ্গে কথা হয় স্ট্রিমের। শ্রীবাসের ভাষ্য, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হারের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে তাঁদের ওপর। তখন শেখ হাসিনার ভোটের খরচের উদ্বৃত্ত টাকার কিছু অংশের বিনিময়ে তাঁদের জমি ছেড়ে দিতে বলেন পিন্টু।
শ্রীবাসের বড় ভাই শ্রীধরের সঙ্গেও স্ট্রিমের কথা হয়। তিনিও বিক্রেতাদের একজন। তিনি বলেন, ‘পিন্টু প্রথমে আমাদের এই জমিতে কারখানা তৈরি হবে বলে জানায়। এ সময় সে যাঁদের কাছ থেকে জমি কেনা হবে, তাঁদের সন্তানদের ওই কারখানায় চাকরি দেওয়া হবে বলে জানায়। কিন্তু জমি বিক্রির পর পিন্টু আর কারখানা বানায়নি, চাকরিও দেয়নি।’
শ্রীধরের অভিযোগ, বিক্রেতাদের কয়েকজন শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করতে রাজি ছিলেন না। তখন পিন্টু শেখ হাসিনার ক্ষমতার কথা বলে তাঁদের ভয় দেখান। জমি দখলের হুমকিও দেন। আর এসব কারণে নিজেদের একমাত্র স্থাবর সম্বল শেষমেস বিক্রি করতে বাধ্য হন সনাতন ধর্মালম্বী এই দরিদ্র মানুষেরা।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকা ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় শেখ হাসিনার স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৩ বিঘা। তবে সেখানে ছেলেমেয়ের সঙ্গে যৌথ মালিকানার কথা উল্লেখ নেই।
‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে এভাবে জমি কেনা শুধু অনৈতিক নয়, বরং অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। স্ট্রিমকে এই আইনজ্ঞ বলেন, ‘এভাবে জমি কেনা আসলে জোরপূর্বক জবরদখলের মতোই। বিক্রেতারা যদি এখন অভিযোগ করে, তাঁদের কাছ থেকে জোর করে জমি কেনা হয়েছে; তাহলে এটা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জমি কেনা হয়, তাহলে বিষয়টা হবে প্রতারণা। এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী চাইলে আদালতে মামলা করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ওই সময় শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং পরবর্তীকালে টানা ১৬ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ কারণে দেশের সাধারণ মানুষের তাঁর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সুযোগ হয়নি। এখন চাইলে তাঁরা আইনি প্রতিকার পেতেই পারেন।’
‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে এভাবে জমি কেনা শুধু অনৈতিক নয়, বরং অন্যায়’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান
২০০২ সালের সেই নাবালক হারুণ চন্দ্র দাস আর রতিন চন্দ্র দাসের বয়স এখন ত্রিশের কোঠায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজের বসতভিটা হারিয়ে তাঁরা এখন অন্যের জমিতে বাস করছেন। এঁদের মধ্যে রতিন চন্দ্র দাস এখন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী। হারুন চন্দ্র দাস ভাসমান দিনমজুর। আর পবিত্র চন্দ্র দাসের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বাকি বিক্রেতাদের কেউ কেউ এখনও পূর্বপুরুষদের পেশা মাছ ধরায় যুক্ত আছেন। উল্লেখ্য, মাঝিপাড়া এবং তাঁদের বর্তমান বসতির মাঝখানে রয়েছে একটি বিস্তীর্ণ বিল। যা বড় বিল নামে পরিচিত। এই বিলে মাছ ধরে তাঁরা এখন জীবিকা নির্বাহ করেন। বিক্রেতাদের কেউ কেউ বিলের পাড়ে খাস জমিতে ঘর তুলেছেন।
পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। এই সড়কের দক্ষিণ দিকে মোটরসাইকেলে রওনা দিলে একটু পরেই দেখা যাবে বড় বিল ব্রিজ। যাত্রার মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছানো যায় পীরগঞ্জ পৌরসভার ওয়ার্ড উজিরপুরে। এ ওয়ার্ডের মাঝিপাড়ায় মহাসড়কের পাশেই শেখ হাসিনার ‘শখের আমবাগান’।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝিপাড়ার এই এলাকার বাসিন্দারা কয়েক পুরুষ ধরে মৎস্যজীবী। যে জমিগুলো শেখ হাসিনা কিনেছেন, তা ছিল মূলত একই বংশের তিন শরিকের উত্তরসূরীদের।
শেখ হাসিনার ‘শখের বাগানে’ দেখা মেলে সারিবদ্ধ আম গাছের। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং গুগল আর্থের স্যাটেলাইট ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, বাগানটির চারপাশে পাকা প্রাচীর ছিল। ৫ আগস্টের পরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাইনবোর্ড ও প্রাচীর দুটোই ভাঙা পড়ে। এ বাগানে বারি-৪ জাতের প্রায় ১৫০টি গাছ রয়েছে। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাইনবোর্ড অনুযায়ী, এগুলো রোপন করা হয় ২০১৩ সালে। বিক্রেতাদের একজন জানিয়েছেন, শুরুর দিকে কয়েক বছর এখানে সবজি চাষ করা হতো। পরে আমের বাগান করা হয়।
এসব জমি শেখ হাসিনা পরিবারের ব্যক্তিগত হলেও সেখানে তিনি ‘শখের আমবাগান’ তৈরি করেছেন সরকারি টাকায়। রংপুরের বুড়িরহাট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ‘ওপরের নির্দেশে’ শুধু এই বাগান করেইনি, দীর্ঘদিন বাগানের পরিচর্যা ও দেখভালও করেছে। তাই স্থানীয়দের কথা, শেখ হাসিনা আসলে ‘কইয়ের তেলে কই ভেজেছেন’।
বুড়িরহাট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাসিরুল ফরিদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘গাছ, ফলের পরিচর্যা এবং মৌসুমী কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজনীয় দেখভাল করত আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।’ এ সময় তিনি এ বাগানের পরিচর্যা ও দেখভালের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে সরাসরি নির্দেশনা গিয়েছিলেন বলেও জানান। সাধারণ নাগরিকেরা কেউ এ ধরনের সেবা পেতে পারে না উল্লেখ করে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুধু পরামর্শ ও পরিকল্পনা দিতে পারি।’
বাগানের পেছনে সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হলেও এখান থেকে সরকারের কোনো আয় হতো না জানিয়ে নাসিরুল ফরিদ বলেন, ‘আমের মৌসুমে বাগানটির মালিকপক্ষই ব্যবসায়ীদের কাছে এটি লিজ দিত। তাই এ বাগানের পেছনে গবেষণা কেন্দ্রের ব্যয় থাকলেও এখান থেকে আয় করার সুযোগ আমাদের ছিল না।’
তবে ৫ আগস্টের পর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র শেখ হাসিনার ‘শখের বাগান’টি আর তদারকি করছে না বলে নিশ্চিত করেছেন এই বৈজ্ঞানিক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর শহিদুল ইসলাম পিন্টু ঢাকা-রংপুর হাইওয়ের পাশে একটি জ্বালানি তেলের স্টেশন তৈরি করেছেন। ওই সময় তিনি ২৭টি পিকআপ গাড়িও কেনেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। এরপর পিন্টু পীরগঞ্জে চারতলা দালান নির্মাণ শুরু করেন এবং গ্রীন ভয়েস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি এনজিও খুলে বসেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পিন্টু আত্মগোপনে চলে যান। গত ১৬ জুন পীরগঞ্জের জামতলার পেট্রোল পাম্প অফিস থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখন আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম শফিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে গ্রেপ্তার পরবর্তী ব্রিফিংয়ে জানান, পিন্টু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর পিএস নয়ন মিয়ার বড় বোনের জামাই।
সে সময় ওসি বলেছিলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, লাইসেন্সবিহীন পেট্রোল পাম্প ও ইটভাটা পরিচালনার মাধ্যমে শত কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ভূমিধস বিজয় হয়েছে’ বলা হলেও প্রকৃত চিত্র এমন নয়। বরং জয়ীদের প্রায় অর্ধেকই সরাসরি শিবির করেন না। সদ্য শেষ হওয়া ডাকসু নির্বাচনে ১৫টি পদে শিবিরের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে এসেছেন। আর এর বাইরে ১৩টি পদে
১ দিন আগে‘আসসালামু আলাইকুম, আমি যুদ্ধে আছি। কোনো সমস্যা নেই। আব্বা-আম্মা, আমার জন্য দোয়া কোরো। সবাই আমার সঙ্গে আছে, চিন্তা কোরো না।’ পরিবারের জন্য পাঠানো ভিডিওতে এই ছিল নিহত হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়ার শেষ বার্তা। ইতালি নেওয়ার কথা বলে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে (২০) রাশিয়ায় পাচার করা হয়। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ‘যুদ্
২ দিন আগেতাহলে ভারতের কী করণীয়? প্রমাণভিত্তিক কূটনীতি, সহযোগিতার হাত বাড়ানো এবং সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা। অযাচিত হস্তক্ষেপের পরিবর্তে বিশ্বাসযোগ্য সহযোগিতা তৈরি করাই হবে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখার একমাত্র পথ।
২ দিন আগেআফ্রিকা ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। এখানে রয়েছে উঁচু পাহাড়, বিস্তীর্ণ মরুভূমি, ধ্বংসপ্রায় মিসরীয় মন্দির, বাইজান্টাইন যুগের মঠসহ আরও অনেক কিছু। দুদিন আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মিসরের সিনাই পর্বত নিয়ে। এরপর থেকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে আসে জায়গাটি
৫ দিন আগে