থামছে না হরিণশিকারিদের দৌরাত্ম্য
বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের অভিযান এবং পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও থামানো যাচ্ছে না হরিণশিকারিদের তৎপরতা। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নেতা এবং প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় বিস্তৃত হচ্ছে এই চক্র। অবস্থা এমন যে, শিকার করা হরিণের মাংস স্থানীয়ভাবে বিক্রি করার সাথে হোম ডেলিভারিও চালু করেছেন অনেকে। সুন্দরবনের হরিণশিকারিদের আদ্যোপান্ত পড়ুন বাগেরহাটের মামুন আহমেদের প্রতিবেদনে।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে বছরের জুন থেকে আগস্ট—তিন মাস সুন্দরবনে জেলে, বাওয়ালীসহ পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থামছে না হরিণশিকারিদের তৎপরতা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গড়ে উঠেছে একাধিক হরিণশিকারি চক্র। তাঁদের শিকার করা হরিণের মাংস স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছেন, এমনকি বাড়ি বাড়ি হোম ডেলিভারিও চালু করেছেন।
বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের অভিযান এবং পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও থামানো যাচ্ছে না এই অবৈধ কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতে হরিণ শিকার রুখতে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কমিটি গঠনসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।
এরই মধ্যে গত ৬ মাসে সুন্দরবনসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে হরিণের ৬০০ কেজি মাংস, ৮টি চামড়া ও ২০০টি ফাঁদসহ ২০ জন হরিণশিকারিকে আটক করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যেরা। এ ছাড়া গত ১ মাসে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ২ হাজার ৬১৫টি হরিণ শিকারের ফাঁদ। এ সময় হরিণ ও বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নানা অপরাধে ১২ জন চোরা শিকারিকে আটক ও ১২টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে হরিণের মাংসসহ আটক করা হয় পাঁচজনকে।
বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন শিকারি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা এতটা বেপরোয়া যে বন বিভাগকেও তোয়াক্কা করে না। বলতে গেলে ভয়ে বনরক্ষীরা তাদের থেকে দূরত্ব রেখে চলেন। মোহাম্মদ নূর আলম শেখ, প্রধান সমন্বয়ক, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা
মোংলার চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছালাম শেখ (ছদ্মনাম) একজন হরিণশিকারি ও জেলে। তিনি বলেন, সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় জেলে-বাওয়ালিদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে হরিণশিকারিরা। সুন্দরবনে মাছ ধরার পারমিট নিয়ে প্রবেশ করা জেলে বা বাওয়ালিরা সুযোগ পেলে হরিণ শিকার করেন। এই চক্রটিকে বলা হয় সুযোগ সন্ধানী, যাঁরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ বা মধু সংগ্রহের জন্য কিন্তু সুযোগ পেলে হরিণও শিকার করেন।
এ ছাড়া একাধিক বড় চক্র রয়েছে, যারা সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নিয়মিত হরিণ শিকার করে থাকে। তারাই প্রকৃত হরিণশিকারি। তারা হরিণ শিকার করে বিক্রি করে, এমনকি চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া ঈদ, কোরবানিসহ বিশেষ দিন উপলক্ষে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে হরিণের মাংসের চাহিদা বাড়ে, তখন স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনের লোকজনও হরিণের মাংস খায়।
মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাসিন্দা সলেমান শেখ (ছদ্মনাম) নিয়মিত হরিণশিকারি। হরিণ শিকারের জন্য বিভিন্ন সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যাঁরা নিয়মিত হরিণশিকারি, তাঁরা সব সময় পাঁচ-ছয়জনের একটি দলে যুক্ত হয়ে শিকার করে থাকি। এর মধ্যে একটি গ্রুপের কাজ থাকে বন থেকে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে পৌঁছে দেওয়া, আর অপর দলের কাজ ক্রেতাদের কাছে শিকার করা মাংস পৌঁছে দেওয়া।’
স্থানীয় প্রভাবশালী ও নেতারা কী ধরনের সহযোগিতা করে—এমন প্রশ্নের জবাবে সলেমান শেখ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আমরা হরিণ শিকার করে থাকি, এটা সম্পূর্ণ ঠিক না। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা আমাদের কাছ থেকে ফ্রি হরিণের মাংস নিয়ে যান। এর বিনিময়ে হরিণ শিকার করে এলাকায় এলে তাঁদের ভয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী আমাদের কিছু বলতে সাহস পান না, শুধু এই সুবিধাটুকু তাঁদের কাছ থেকে আমরা পেয়ে থাকি।’
হরিণের মাংসের ক্রেতা ও দাম সম্পর্কে সলেমান শেখ জানান, সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হরিণের মাংস বেশি কিনে থাকে। সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা হলে তাদের কাছ থেকে চাহিদা ভেদে ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে দাম নির্ভর করে, ক্রেতা একসঙ্গে কত কেজি মাংস নিচ্ছেন তার ওপর।
হরিণের মাংসের ক্রেতা যদি সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হন এবং একসঙ্গে ৫ কেজি মাংস নিলে তাঁর কাছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা প্রতি কেজি নেওয়া হয়। আর ক্রেতার বাড়ি অন্য এলাকায় হলে, পথের দূরত্ব বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বনসংলগ্ন এলাকা থেকে বাগেরহাট কিংবা খুলনা পৌঁছে দিলে দূরত্ব অনুযায়ী ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে শর্ত একটাই থাকে, ক্রেতাকে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচ কেজি মাংস নিতে হবে। তবে কম নিলে সেটাও দিয়ে থাকে, এ জন্য কেজিপ্রতি দাম বেশি দিতে হয়। তবে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে আসার পর ধরা পড়ার সম্ভবনা বেশি থাকলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করা হয় মাংস।
হরিণশিকারিদের সঙ্গে মাংস ক্রেতাদের যোগাযোগের কৌশল সম্পর্কে সলেমান শেখ বলেন, ‘আমরা অপরিচিত কারও কাছে মাংস বিক্রি করি না। যাঁরা কিনতে আসেন, তাঁরা আমাদের মতো কারও না কারও সঙ্গে পরিচিত হতে হয়।’
তবে হরিণের মাংসের নামে অনেক সময় শূকর বা কুকুরের মাংস বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে এটা ঘটে ঠিকই। যেমন আমরা হরিণ শিকারের জন্য সুন্দরবনের যখন ফাঁদ পাতি, তখন বেশ বড় এলাকাজুড়ে পাততে হয়। অনেক সময় ওই ফাঁদে বন্য শূকরও ধরা পরে। তখন আমাদের অনেকেই হরিণের সঙ্গে শূকরও জবাই করে মাংস মিশিয়ে বেচে। এ ছাড়া অনেক নতুন ক্রেতা আছেন, যারা বনসংলগ্ন এলাকায় প্রতারকদের খপ্পরে পড়েন, তাঁরা কম দামের প্রলোভনে পড়ে কুকুরের মাংস কিনে থাকেন। তবে হরিণের মাংসের ক্রেতারাও সচেতন হয়ে গেছেন, তাঁরা এখন হরিণের চামড়ার একটি অংশসহ মাংস কিনতে চান।’
সুন্দরবনে পর্যটন স্পটসহ অনেক স্থানেই হরহামেশাই দেখা মেলে হরিণের। মানুষের শব্দ পেলেই ঘন বনে লুকিয়ে পরে লাজুক প্রকৃতির প্রাণীটি। পূর্ব সুন্দরবনে সব থেকে বেশি হরিণ শিকার করা হয় দুবলার চর, বঙ্গবন্ধুর চর, কবরখালী, মানিকখালী, কালামিয়ার ভারানী, মক্তোর ট্যাগ, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, তালপট্টি, কচিখালি, দুবলা চান্দেরশ্বর, বগি, চরখালি এলাকায়।
এসব এলাকায় হরিণের চলাচলের পথে নাইলনের সুতা ফাঁদ, স্প্রিং বসানো ফাঁদ, কলার সঙ্গে বড়শি ঝুলিয়ে, চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে ও গুলি করে হরিণ শিকার করা হয়। এর মধ্যে শিকারিদের বেশি পছন্দ নাইলনের সুতার ফাঁদ ও স্প্রিং বসানো ফাঁদ। ওই সব এলাকায় শিকারিরা এক রাতে ফাঁদ পেতে আসেন, পরের রাতে গিয়ে আবার ফাঁদ দেখে আসেন।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে হরিণশিকারিরাও সুন্দরবনে তৎপরতা বাড়িয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। হরিণশিকারিদের ধরতে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তাসহ বনরক্ষীরা তৎপর রয়েছেন। রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ
সুন্দরবনসংলগ্ন প্রায় সব এলাকায় কম-বেশি হরিণের মাংস পাওয়া যায়। অনেক গ্রামে গরু-ছাগলের মাংসের তুলনায় হরিণের মাংস কম দামে পাওয়া যায়। গ্রামগুলোর মধ্যে আছে মোংলা উপজেলার চিলা, জয়মনি, বৈদ্যমারী, কাটাখাল কুল, বাঁশতলা, কাটাখালী; মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা, গুলিশাখালী ও সন্ন্যাসী; শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর, তাফালবাড়ী, সোনাতলা, পানিরঘাট, রাজাপুর, রসুলপুর, চালিতাবুনিয়া এবং রামপাল উপজেলার বেশকিছু গ্রামে গোপনে হরিণের মাংস বিক্রি হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০২৩ সালে সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা নিয়ে একটি জরিপ প্রকাশ করে। এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজারটি। সেই হিসেবে ১৯ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৬০৪টি।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর বনভূমির জন্য মাত্র একজন বনকর্মী রয়েছেন। তবে পূর্ব বন বিভাগের পদ শূন্য রয়েছে ১০০টি। এ ছাড়া বিভাগের আউটসোর্স কর্মীদের দেওয়া যায় না অস্ত্র। এই বাস্তবতায়ও ঈদে ছুটি না নিয়ে অভিযান চালিয়েছেন বন-কর্মীরা। এ ছাড়া পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বনরক্ষীরা ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’ পদ্ধতিতে বনের ভেতরে হেঁটে টহল দিচ্ছেন, এতে গোপনে পাতা ফাঁদ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া ড্রোন ব্যবহার করে অবৈধ নৌযান শনাক্ত ও জব্দের নজরদারিও চলছে।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে হরিণশিকারিরাও সুন্দরবনে তৎপরতা বাড়িয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। হরিণশিকারিদের ধরতে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তাসহ বনরক্ষীরা তৎপর রয়েছেন। এরই মধ্যে সুন্দরবনে হরিণ শিকারের ফাঁদ পেলে জেলে ও মৌয়ালদের তা উদ্ধার করে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ সব ফাঁদ জমা দিলে প্রতি কেজি ফাঁদের জন্য দুই হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধারে সহযোগিতা করায় ৮ জনকে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সুন্দরবনসংলগ্ন চরদুয়ানি ও জ্ঞানপাড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ১০ সদস্যের দুটি কমিটি গঠন করা হবে। তাঁরা বন বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন, কোথায় হরিণশিকারিরা অবস্থান করছেন, তা চিহ্নিত করাসহ সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপতৎপরতা রোধে কাজ করবেন। কমিটির সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। সেই সঙ্গে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে-বাওয়ালিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট বিতারণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম তো রয়েছে।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘শুধু শিকারি নয়, যারা হরিণের মাংস খান, এমন ভোক্তাদেরও চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। শিকার বন্ধ করা গেলে হরিণ বাড়বে, আর হরিণ বাড়লে বাঘও টিকবে।’
‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলা সভাপতি মোহাম্মদ নূর আলম শেখ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, হরিণ শিকারে বন বিভাগের অসাধু ব্যক্তিদের হাত রয়েছে। তা না হলে হরিণ শিকার এত বাড়তে পারে না। এ ছাড়া বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন শিকারি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা এতটা বেপরোয়া যে বন বিভাগকেও তোয়াক্কা করে না। বলতে গেলে ভয়ে বনরক্ষীরা তাদের থেকে দূরত্ব রেখে চলেন।’
হরিণ শিকার প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ-কর্মী নূর আলম শেখ বলেন, ‘শিকারিরা সবাই সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা। এদের প্রতিরোধ করতে হলে বনসংলগ্ন গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। অসাধু বনরক্ষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় হরিণ নিধন চলতেই থাকবে।’
বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে বছরের জুন থেকে আগস্ট—তিন মাস সুন্দরবনে জেলে, বাওয়ালীসহ পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থামছে না হরিণশিকারিদের তৎপরতা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গড়ে উঠেছে একাধিক হরিণশিকারি চক্র। তাঁদের শিকার করা হরিণের মাংস স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছেন, এমনকি বাড়ি বাড়ি হোম ডেলিভারিও চালু করেছেন।
বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের অভিযান এবং পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও থামানো যাচ্ছে না এই অবৈধ কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতে হরিণ শিকার রুখতে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কমিটি গঠনসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।
এরই মধ্যে গত ৬ মাসে সুন্দরবনসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে হরিণের ৬০০ কেজি মাংস, ৮টি চামড়া ও ২০০টি ফাঁদসহ ২০ জন হরিণশিকারিকে আটক করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যেরা। এ ছাড়া গত ১ মাসে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ২ হাজার ৬১৫টি হরিণ শিকারের ফাঁদ। এ সময় হরিণ ও বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নানা অপরাধে ১২ জন চোরা শিকারিকে আটক ও ১২টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে হরিণের মাংসসহ আটক করা হয় পাঁচজনকে।
বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন শিকারি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা এতটা বেপরোয়া যে বন বিভাগকেও তোয়াক্কা করে না। বলতে গেলে ভয়ে বনরক্ষীরা তাদের থেকে দূরত্ব রেখে চলেন। মোহাম্মদ নূর আলম শেখ, প্রধান সমন্বয়ক, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা
মোংলার চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছালাম শেখ (ছদ্মনাম) একজন হরিণশিকারি ও জেলে। তিনি বলেন, সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় জেলে-বাওয়ালিদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে হরিণশিকারিরা। সুন্দরবনে মাছ ধরার পারমিট নিয়ে প্রবেশ করা জেলে বা বাওয়ালিরা সুযোগ পেলে হরিণ শিকার করেন। এই চক্রটিকে বলা হয় সুযোগ সন্ধানী, যাঁরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ বা মধু সংগ্রহের জন্য কিন্তু সুযোগ পেলে হরিণও শিকার করেন।
এ ছাড়া একাধিক বড় চক্র রয়েছে, যারা সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নিয়মিত হরিণ শিকার করে থাকে। তারাই প্রকৃত হরিণশিকারি। তারা হরিণ শিকার করে বিক্রি করে, এমনকি চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া ঈদ, কোরবানিসহ বিশেষ দিন উপলক্ষে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে হরিণের মাংসের চাহিদা বাড়ে, তখন স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনের লোকজনও হরিণের মাংস খায়।
মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাসিন্দা সলেমান শেখ (ছদ্মনাম) নিয়মিত হরিণশিকারি। হরিণ শিকারের জন্য বিভিন্ন সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যাঁরা নিয়মিত হরিণশিকারি, তাঁরা সব সময় পাঁচ-ছয়জনের একটি দলে যুক্ত হয়ে শিকার করে থাকি। এর মধ্যে একটি গ্রুপের কাজ থাকে বন থেকে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে পৌঁছে দেওয়া, আর অপর দলের কাজ ক্রেতাদের কাছে শিকার করা মাংস পৌঁছে দেওয়া।’
স্থানীয় প্রভাবশালী ও নেতারা কী ধরনের সহযোগিতা করে—এমন প্রশ্নের জবাবে সলেমান শেখ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আমরা হরিণ শিকার করে থাকি, এটা সম্পূর্ণ ঠিক না। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা আমাদের কাছ থেকে ফ্রি হরিণের মাংস নিয়ে যান। এর বিনিময়ে হরিণ শিকার করে এলাকায় এলে তাঁদের ভয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী আমাদের কিছু বলতে সাহস পান না, শুধু এই সুবিধাটুকু তাঁদের কাছ থেকে আমরা পেয়ে থাকি।’
হরিণের মাংসের ক্রেতা ও দাম সম্পর্কে সলেমান শেখ জানান, সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হরিণের মাংস বেশি কিনে থাকে। সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা হলে তাদের কাছ থেকে চাহিদা ভেদে ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে দাম নির্ভর করে, ক্রেতা একসঙ্গে কত কেজি মাংস নিচ্ছেন তার ওপর।
হরিণের মাংসের ক্রেতা যদি সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হন এবং একসঙ্গে ৫ কেজি মাংস নিলে তাঁর কাছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা প্রতি কেজি নেওয়া হয়। আর ক্রেতার বাড়ি অন্য এলাকায় হলে, পথের দূরত্ব বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বনসংলগ্ন এলাকা থেকে বাগেরহাট কিংবা খুলনা পৌঁছে দিলে দূরত্ব অনুযায়ী ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে শর্ত একটাই থাকে, ক্রেতাকে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচ কেজি মাংস নিতে হবে। তবে কম নিলে সেটাও দিয়ে থাকে, এ জন্য কেজিপ্রতি দাম বেশি দিতে হয়। তবে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে আসার পর ধরা পড়ার সম্ভবনা বেশি থাকলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করা হয় মাংস।
হরিণশিকারিদের সঙ্গে মাংস ক্রেতাদের যোগাযোগের কৌশল সম্পর্কে সলেমান শেখ বলেন, ‘আমরা অপরিচিত কারও কাছে মাংস বিক্রি করি না। যাঁরা কিনতে আসেন, তাঁরা আমাদের মতো কারও না কারও সঙ্গে পরিচিত হতে হয়।’
তবে হরিণের মাংসের নামে অনেক সময় শূকর বা কুকুরের মাংস বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে এটা ঘটে ঠিকই। যেমন আমরা হরিণ শিকারের জন্য সুন্দরবনের যখন ফাঁদ পাতি, তখন বেশ বড় এলাকাজুড়ে পাততে হয়। অনেক সময় ওই ফাঁদে বন্য শূকরও ধরা পরে। তখন আমাদের অনেকেই হরিণের সঙ্গে শূকরও জবাই করে মাংস মিশিয়ে বেচে। এ ছাড়া অনেক নতুন ক্রেতা আছেন, যারা বনসংলগ্ন এলাকায় প্রতারকদের খপ্পরে পড়েন, তাঁরা কম দামের প্রলোভনে পড়ে কুকুরের মাংস কিনে থাকেন। তবে হরিণের মাংসের ক্রেতারাও সচেতন হয়ে গেছেন, তাঁরা এখন হরিণের চামড়ার একটি অংশসহ মাংস কিনতে চান।’
সুন্দরবনে পর্যটন স্পটসহ অনেক স্থানেই হরহামেশাই দেখা মেলে হরিণের। মানুষের শব্দ পেলেই ঘন বনে লুকিয়ে পরে লাজুক প্রকৃতির প্রাণীটি। পূর্ব সুন্দরবনে সব থেকে বেশি হরিণ শিকার করা হয় দুবলার চর, বঙ্গবন্ধুর চর, কবরখালী, মানিকখালী, কালামিয়ার ভারানী, মক্তোর ট্যাগ, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, তালপট্টি, কচিখালি, দুবলা চান্দেরশ্বর, বগি, চরখালি এলাকায়।
এসব এলাকায় হরিণের চলাচলের পথে নাইলনের সুতা ফাঁদ, স্প্রিং বসানো ফাঁদ, কলার সঙ্গে বড়শি ঝুলিয়ে, চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে ও গুলি করে হরিণ শিকার করা হয়। এর মধ্যে শিকারিদের বেশি পছন্দ নাইলনের সুতার ফাঁদ ও স্প্রিং বসানো ফাঁদ। ওই সব এলাকায় শিকারিরা এক রাতে ফাঁদ পেতে আসেন, পরের রাতে গিয়ে আবার ফাঁদ দেখে আসেন।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে হরিণশিকারিরাও সুন্দরবনে তৎপরতা বাড়িয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। হরিণশিকারিদের ধরতে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তাসহ বনরক্ষীরা তৎপর রয়েছেন। রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ
সুন্দরবনসংলগ্ন প্রায় সব এলাকায় কম-বেশি হরিণের মাংস পাওয়া যায়। অনেক গ্রামে গরু-ছাগলের মাংসের তুলনায় হরিণের মাংস কম দামে পাওয়া যায়। গ্রামগুলোর মধ্যে আছে মোংলা উপজেলার চিলা, জয়মনি, বৈদ্যমারী, কাটাখাল কুল, বাঁশতলা, কাটাখালী; মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা, গুলিশাখালী ও সন্ন্যাসী; শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর, তাফালবাড়ী, সোনাতলা, পানিরঘাট, রাজাপুর, রসুলপুর, চালিতাবুনিয়া এবং রামপাল উপজেলার বেশকিছু গ্রামে গোপনে হরিণের মাংস বিক্রি হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০২৩ সালে সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা নিয়ে একটি জরিপ প্রকাশ করে। এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজারটি। সেই হিসেবে ১৯ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৬০৪টি।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর বনভূমির জন্য মাত্র একজন বনকর্মী রয়েছেন। তবে পূর্ব বন বিভাগের পদ শূন্য রয়েছে ১০০টি। এ ছাড়া বিভাগের আউটসোর্স কর্মীদের দেওয়া যায় না অস্ত্র। এই বাস্তবতায়ও ঈদে ছুটি না নিয়ে অভিযান চালিয়েছেন বন-কর্মীরা। এ ছাড়া পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বনরক্ষীরা ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’ পদ্ধতিতে বনের ভেতরে হেঁটে টহল দিচ্ছেন, এতে গোপনে পাতা ফাঁদ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া ড্রোন ব্যবহার করে অবৈধ নৌযান শনাক্ত ও জব্দের নজরদারিও চলছে।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে হরিণশিকারিরাও সুন্দরবনে তৎপরতা বাড়িয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। হরিণশিকারিদের ধরতে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তাসহ বনরক্ষীরা তৎপর রয়েছেন। এরই মধ্যে সুন্দরবনে হরিণ শিকারের ফাঁদ পেলে জেলে ও মৌয়ালদের তা উদ্ধার করে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ সব ফাঁদ জমা দিলে প্রতি কেজি ফাঁদের জন্য দুই হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধারে সহযোগিতা করায় ৮ জনকে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সুন্দরবনসংলগ্ন চরদুয়ানি ও জ্ঞানপাড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ১০ সদস্যের দুটি কমিটি গঠন করা হবে। তাঁরা বন বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন, কোথায় হরিণশিকারিরা অবস্থান করছেন, তা চিহ্নিত করাসহ সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপতৎপরতা রোধে কাজ করবেন। কমিটির সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। সেই সঙ্গে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে-বাওয়ালিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট বিতারণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম তো রয়েছে।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘শুধু শিকারি নয়, যারা হরিণের মাংস খান, এমন ভোক্তাদেরও চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। শিকার বন্ধ করা গেলে হরিণ বাড়বে, আর হরিণ বাড়লে বাঘও টিকবে।’
‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলা সভাপতি মোহাম্মদ নূর আলম শেখ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, হরিণ শিকারে বন বিভাগের অসাধু ব্যক্তিদের হাত রয়েছে। তা না হলে হরিণ শিকার এত বাড়তে পারে না। এ ছাড়া বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন শিকারি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা এতটা বেপরোয়া যে বন বিভাগকেও তোয়াক্কা করে না। বলতে গেলে ভয়ে বনরক্ষীরা তাদের থেকে দূরত্ব রেখে চলেন।’
হরিণ শিকার প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ-কর্মী নূর আলম শেখ বলেন, ‘শিকারিরা সবাই সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা। এদের প্রতিরোধ করতে হলে বনসংলগ্ন গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। অসাধু বনরক্ষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় হরিণ নিধন চলতেই থাকবে।’
শেখ হাসিনার সমর্থকেরা নিজেদের এ স্থানকে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনাই শুধু করেনি, প্রতিপক্ষ দলের কার্যক্রমকে তাদের প্রভাবের ওপর হুমকি হিসেবেও দেখেছেন। এমন মনোভাব আদতে শেখ পরিবারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতার নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
১৭ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের শাসনামলে গোপন বন্দিশালায় দায়িত্বরতদের কেউ কেউ বন্দীদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্দীদের ওপর যে ধরনের অত্যাচার চালানোর নির্দেশ দিতেন, বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই তা পুরোপুরি পালন করতেন না।
৫ দিন আগেঢাকার স্বাধীন গণমাধ্যম দৃক পিকচার লাইব্রেরি ও যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেনসিক আর্কিটেকচারের যৌথ অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানটির প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ স্ট্রিমের হাতে এসেছে।
৬ দিন আগেতিন বছরে দেশে করোনার চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর শনাক্ত সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেশি।
১০ দিন আগে