গোপালগঞ্জের ঘটনায় পুলিশের প্রতিবেদন ও সেনাবাহিনীর বিবৃতি
স্ট্রিম প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতায় ঘটনায় পৃথক বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। পুলিশ প্রতিবেদনে গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। এ দিকে গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের মরদেহ উচ্ছৃঙ্খল জনতা ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল থেকে জোর করে নিয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পুলিশের প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চারজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।
এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে যৌথবাহিনী ও পুলিশ এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে ১ হাজার ৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
প্রতিবেদনে গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছে পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার জন্য বুধবার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন তৎপর ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের একটি দল গোপালগঞ্জ সদর থানার উলপুরে দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। তারা গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় একজন পুলিশ পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ সদর থানার কংশুর বাসস্ট্যান্ডে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌর শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক খান রিপনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক সড়কে গাছ ফেলে এবং কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়।
পুলিশের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাড়ে ১১টায় কোটালীপাড়ার অবদারহাট এলাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম দারিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রায় তিন হাজার নেতা-কর্মী মিছিল করে কোটালীপাড়া-পয়সারহাট সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে গোপালগঞ্জ সদর থানার কাঠি বাজার এলাকায় গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কে ছাত্রলীগ নেতা মামুনের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে।
এনসিপি নেতা-কর্মীরা গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক সভাস্থলে পৌঁছানোর আগে বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ককটেল বিস্ফোরণ করে ঢাল, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মঞ্চে আক্রমণ করে। তারা মঞ্চের ব্যানার এবং চেয়ার ভাঙচুর করে। বেলা ২টা ১ মিনিটে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন।
বেলা সোয়া ২টায় গোপালগঞ্জ সদর থানার সাতপাড় বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি উচ্ছৃঙ্খল জনগণ রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে।
বেলা ২টা ৫০ মিনিটে পদযাত্রা সভা শেষ করে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থল ছেড়ে যান উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পদযাত্রা সভায় ২০০ লোক উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তাদের গাড়িবহর পরবর্তী পদযাত্রা সভাস্থল মাদারীপুরের উদ্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাহারায় রওনা দিলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার লঞ্চ ঘাটে আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেলা তিনটার দিকে গাড়িবহর আটকে দেয়।
সেনাবাহিনী ও পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। এ ছাড়া নাশকতাকারীরা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। এ সময় সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ওই ঘটনায় প্রায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন।
নাশকতাকারীদের আক্রমণের ফলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এনসিপি নেতা-কর্মীদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপদে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে চারটা ৫৮ মিনিটে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় এনসিপি নেতারা গাড়িতে করে বাগেরহাট হয়ে খুলনার উদ্দেশে চলে যায় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারত্ব ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ কথা জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলায় সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং কারফিউ চলছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব এবং প্রশাসনের অন্যান্য সংস্থাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
এতে বলা হয়, গতকাল সকাল থেকে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলায় গোপালগঞ্জ জেলার জনসাধারণ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে নিজেদের নিবৃত্ত রেখে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছেন।
গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্য ধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছে সেনাবাহিনী। দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা রক্ষায় তারা সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণিকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।
আজ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
কমিটিতে আইন মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে আরও দুইজন অতিরিক্ত সচিব সদস্য হিসেবে থাকবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যায়বিচার ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং যে কোনো বেআইনি কাজ, সহিংসতা এবং মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
গতকাল এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার পর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ ঘটনার বিচারও চেয়েছিলেন।
বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা ছিল। সেখানেও উঠে আসে গোপালগঞ্জে সহিংসতা প্রসঙ্গ। রাত সাড়ে আটটায় গুলশানে অনুষ্ঠিত সভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন।
সভায় গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় চারজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি।
বিএনপি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে। রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে, অন্যথায় গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে বলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে।
আজ বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টিমের অবস্থান দেখা গেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টহল দিচ্ছে পুলিশের সঙ্গে র্যাব ও আনসার সদস্যরা। খুলনা থেকে আসা নৌবাহিনীর একটি টিমও যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থায়। কারফিউর মধ্যেও সকালে শহরে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক দেখা গেছে। দোকানপাট অধিকাংশ বন্ধ থাকলেও লোকজন সীমিত পরিসরে চলাফেরা করছে।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সমগ্র গোপালগঞ্জ জেলায় আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং পরে ৩ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতায় ঘটনায় পৃথক বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। পুলিশ প্রতিবেদনে গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। এ দিকে গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের মরদেহ উচ্ছৃঙ্খল জনতা ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল থেকে জোর করে নিয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পুলিশের প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চারজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।
এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে যৌথবাহিনী ও পুলিশ এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে ১ হাজার ৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
প্রতিবেদনে গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছে পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার জন্য বুধবার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন তৎপর ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের একটি দল গোপালগঞ্জ সদর থানার উলপুরে দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। তারা গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় একজন পুলিশ পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ সদর থানার কংশুর বাসস্ট্যান্ডে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌর শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক খান রিপনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক সড়কে গাছ ফেলে এবং কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়।
পুলিশের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাড়ে ১১টায় কোটালীপাড়ার অবদারহাট এলাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম দারিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রায় তিন হাজার নেতা-কর্মী মিছিল করে কোটালীপাড়া-পয়সারহাট সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে গোপালগঞ্জ সদর থানার কাঠি বাজার এলাকায় গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কে ছাত্রলীগ নেতা মামুনের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে।
এনসিপি নেতা-কর্মীরা গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক সভাস্থলে পৌঁছানোর আগে বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ককটেল বিস্ফোরণ করে ঢাল, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মঞ্চে আক্রমণ করে। তারা মঞ্চের ব্যানার এবং চেয়ার ভাঙচুর করে। বেলা ২টা ১ মিনিটে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন।
বেলা সোয়া ২টায় গোপালগঞ্জ সদর থানার সাতপাড় বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি উচ্ছৃঙ্খল জনগণ রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে।
বেলা ২টা ৫০ মিনিটে পদযাত্রা সভা শেষ করে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থল ছেড়ে যান উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পদযাত্রা সভায় ২০০ লোক উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তাদের গাড়িবহর পরবর্তী পদযাত্রা সভাস্থল মাদারীপুরের উদ্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাহারায় রওনা দিলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার লঞ্চ ঘাটে আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেলা তিনটার দিকে গাড়িবহর আটকে দেয়।
সেনাবাহিনী ও পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। এ ছাড়া নাশকতাকারীরা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। এ সময় সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ওই ঘটনায় প্রায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন।
নাশকতাকারীদের আক্রমণের ফলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এনসিপি নেতা-কর্মীদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপদে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে চারটা ৫৮ মিনিটে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় এনসিপি নেতারা গাড়িতে করে বাগেরহাট হয়ে খুলনার উদ্দেশে চলে যায় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারত্ব ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ কথা জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলায় সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং কারফিউ চলছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব এবং প্রশাসনের অন্যান্য সংস্থাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
এতে বলা হয়, গতকাল সকাল থেকে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলায় গোপালগঞ্জ জেলার জনসাধারণ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে নিজেদের নিবৃত্ত রেখে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছেন।
গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্য ধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছে সেনাবাহিনী। দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা রক্ষায় তারা সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণিকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।
আজ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
কমিটিতে আইন মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে আরও দুইজন অতিরিক্ত সচিব সদস্য হিসেবে থাকবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যায়বিচার ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং যে কোনো বেআইনি কাজ, সহিংসতা এবং মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
গতকাল এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার পর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ ঘটনার বিচারও চেয়েছিলেন।
বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা ছিল। সেখানেও উঠে আসে গোপালগঞ্জে সহিংসতা প্রসঙ্গ। রাত সাড়ে আটটায় গুলশানে অনুষ্ঠিত সভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন।
সভায় গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় চারজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি।
বিএনপি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে। রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে, অন্যথায় গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে বলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে।
আজ বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টিমের অবস্থান দেখা গেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টহল দিচ্ছে পুলিশের সঙ্গে র্যাব ও আনসার সদস্যরা। খুলনা থেকে আসা নৌবাহিনীর একটি টিমও যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থায়। কারফিউর মধ্যেও সকালে শহরে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক দেখা গেছে। দোকানপাট অধিকাংশ বন্ধ থাকলেও লোকজন সীমিত পরিসরে চলাফেরা করছে।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সমগ্র গোপালগঞ্জ জেলায় আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং পরে ৩ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
গত ৫৪ বছর ধরে দেশের ইতিহাসে যে অন্যায়, অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিয়েছে এই তরুণেরা। এ জন্য তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
১১ ঘণ্টা আগেগত দুই মাসে আট দফায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ মোট ১১৬ জনকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ।
১৩ ঘণ্টা আগেনাহিদ ইসলাম বলেছেন, হামলাকারী মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা যেন ছাড় না পায়, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে।
১৪ ঘণ্টা আগেজাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব। জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায়, প্রত্যেক গ্রামে কর্মসূচি করব।’
১৬ ঘণ্টা আগে