আনা হয়নি ভ্যাকসিন, প্রতিরোধে নেই সমন্বয়
চলতি বছরের (২০২৫) ২৯ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের, যেখানে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪২ জন। অর্থাৎ নতুন বছরের শুরুতেই ডেঙ্গুর থাবা করোনার চেয়ে দ্বিগুণ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। চলতি মৌসুমে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সৈকত আমীন
করোনা নিয়ে সচেতনতা, আলোচনা, গবেষণা আর টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে সারা দেশেই তৎপরতা দেখা যায়। অথচ প্রতিবছর ডেঙ্গু আরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করলেও তা নিয়ে তেমন কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যায় না।
২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথমবার করোনা বা কোডিড-১৯ শনাক্ত হয়। এরপর টানা দুই বছরে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। মৃত্যু হয় ২৮ হাজার মানুষের। তবে ভ্যাকসিন, সুরক্ষাব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে করোনা ভাইরাসের হুমকি অনেকটাই প্রতিরোধ করা গেছে।
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ক্রমে নিয়ন্ত্রিত হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল লাইব্রেরি ফর মেডিসিনে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের শুরু থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত তিন বছরে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর চেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেশি। মৃত্যুসংখ্যাতেও ডেঙ্গু করোনাকে ছাড়িয়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ হারে।
২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ জন। এই তিন বছরে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪২৭ জন মানুষের। এর ভিত্তিতে করোনা ভাইরাসের গড় মৃত্যুহার দাঁড়ায় প্রায় ০ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে, একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৫২৬ জনের, যেখানে মৃত্যুহার ০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ করোনার চেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ, মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ।
সারা দেশকে যুক্ত করে, সারা দেশের জন্য কোনো মশক নিধন কর্মপরিকল্পনা কিংবা ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করিনি। ফলে সেটি বাস্তবায়নেরও প্রশ্ন আসে না। দেখা গিয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, রাজশাহী বা খুলনা ওইভাবে কাজ করছে না। অথবা দাউদকান্দি বা চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেভাবে কাজ হচ্ছে না। ডা. লেলিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
২০২২ সালে দেশে করোনা ভাইরাসে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। মারা যায় ১ হাজার ৩৬৮ জন। ওই বছরে গড় মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০.৯ শতাংশ। অন্যদিকে, একই বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় প্রায় ৬২ হাজার ৩৮২ জন, মারা যায় ২৮১ জন।
২০২৩ সালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমে আসে প্রায় ৫ হাজার জনে। মৃত্যু হয় ৩৭ জনের। মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০ দশমিক ৭ শতাংশ। এর বিপরীতে, ডেঙ্গুতে ওই বছরই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে পৌঁছে যায় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জনে। যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের, মৃত্যুহার প্রায় ০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিশ্লেষকেরা এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি বলছেন।
২০২৪ সালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। মৃত্যুহার প্রায় ০ দশমিক ৮ শতাংশ। একই বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৪৪ জন, মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
উদ্বেগের বিষয় হলো চলতি বছরের (২০২৫) ২৯ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের, যেখানে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪২ জন। অর্থাৎ নতুন বছরের শুরুতেই ডেঙ্গুর থাবা করোনার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। চলতি মৌসুমে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিন, সুরক্ষাব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে করোনা ভাইরাসের হুমকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু নগরায়ণ, অপরিকল্পিত পানি জমে থাকা ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ১৯৬৫ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এর নাম তখন ছিল ‘ঢাকা জ্বর’। পরে ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জ্বরের খবর পাওয়া যায়। ১৯৯৬-৯৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২৫৫ জন রোগীর জ্বর পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩.৭ শতাংশ রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে।
দেশের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু বাড়ছে। কারণ সমন্বিত পরিকল্পনা নেই। ডেঙ্গুর বাহক যে এডিস মশা সেটাকে নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করার একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশব্যাপী কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।
লেলিন চৌধুরীর মতে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু ছিল শহরের রোগ। কিন্তু ২০১৯ সালে ডেঙ্গু সারা দেশে বিস্তৃত হয়। রাজধানী বা মহানগর থেকে শুরু করে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সারা দেশে রয়েছে। আমরা প্রধানত সিটি করপোরেশন, বড় শহরগুলো এবং কখনো কখনো এক-দুইটা ছোট শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ ছিটানোর কাজ করি। কিন্তু কাজটা একেবারেই বিচ্ছিন্নভাবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা দেশকে যুক্ত করে কোনো মশক নিধন কর্মপরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করিনি। ফলে সেটি বাস্তবায়নেরও প্রশ্ন আসে না। দেখা গিয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, রাজশাহী বা খুলনা ওইভাবে কাজ করছে। অথবা দাউদকান্দি বা চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেভাবে কাজ হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ যেটি, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ, সেটি আমরা ঠিকমতো করতে পারছি না।
ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য কমবয়সীদের ক্ষেত্রে ‘কিউডেঙ্গা’ নামে একটি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশে আমদানি বা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সেটি তৈরি করারও কোনো উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কারের যে প্রয়াসগুলো চলছে, তাতেও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা নেই।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদের সঙ্গে কথা হয় স্ট্রিমের। তিনি বলেন, কোভিডের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। কারণ ডেঙ্গুর টেস্ট বেশি হচ্ছে। যেসব খালি জায়গায় পানি জমা থাকবে সেখানেই মশার লার্ভা হবে। সেগুলো না সরালে তো ডেঙ্গুর কেস কমবে না।’
ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতার অভাবকে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ বাড়ির ভেতরে যদি ফুলের টবে পানি রাখে বা কোনো জায়গায় পানি জমিয়ে রাখে, সেটা তো সমস্যা।’
ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হালিমুর রশিদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। ওরাও কাজ করছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিপরীতে ডেঙ্গু এখন দেশের সবচেয়ে বড় মৌসুমি স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই প্রয়োজন স্থায়ী প্রতিরোধব্যবস্থা, নিয়মিত নজরদারি এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো প্রস্তুতি। তা না হলে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের সাফল্য ডেঙ্গুর কাছে হার মানতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনা নিয়ে সচেতনতা, আলোচনা, গবেষণা আর টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে সারা দেশেই তৎপরতা দেখা যায়। অথচ প্রতিবছর ডেঙ্গু আরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করলেও তা নিয়ে তেমন কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যায় না।
২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথমবার করোনা বা কোডিড-১৯ শনাক্ত হয়। এরপর টানা দুই বছরে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। মৃত্যু হয় ২৮ হাজার মানুষের। তবে ভ্যাকসিন, সুরক্ষাব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে করোনা ভাইরাসের হুমকি অনেকটাই প্রতিরোধ করা গেছে।
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ক্রমে নিয়ন্ত্রিত হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল লাইব্রেরি ফর মেডিসিনে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের শুরু থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত তিন বছরে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর চেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেশি। মৃত্যুসংখ্যাতেও ডেঙ্গু করোনাকে ছাড়িয়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ হারে।
২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ জন। এই তিন বছরে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪২৭ জন মানুষের। এর ভিত্তিতে করোনা ভাইরাসের গড় মৃত্যুহার দাঁড়ায় প্রায় ০ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে, একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৫২৬ জনের, যেখানে মৃত্যুহার ০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ করোনার চেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ, মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ।
সারা দেশকে যুক্ত করে, সারা দেশের জন্য কোনো মশক নিধন কর্মপরিকল্পনা কিংবা ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করিনি। ফলে সেটি বাস্তবায়নেরও প্রশ্ন আসে না। দেখা গিয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, রাজশাহী বা খুলনা ওইভাবে কাজ করছে না। অথবা দাউদকান্দি বা চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেভাবে কাজ হচ্ছে না। ডা. লেলিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
২০২২ সালে দেশে করোনা ভাইরাসে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। মারা যায় ১ হাজার ৩৬৮ জন। ওই বছরে গড় মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০.৯ শতাংশ। অন্যদিকে, একই বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় প্রায় ৬২ হাজার ৩৮২ জন, মারা যায় ২৮১ জন।
২০২৩ সালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমে আসে প্রায় ৫ হাজার জনে। মৃত্যু হয় ৩৭ জনের। মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০ দশমিক ৭ শতাংশ। এর বিপরীতে, ডেঙ্গুতে ওই বছরই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে পৌঁছে যায় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জনে। যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের, মৃত্যুহার প্রায় ০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিশ্লেষকেরা এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি বলছেন।
২০২৪ সালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। মৃত্যুহার প্রায় ০ দশমিক ৮ শতাংশ। একই বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৪৪ জন, মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
উদ্বেগের বিষয় হলো চলতি বছরের (২০২৫) ২৯ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের, যেখানে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪২ জন। অর্থাৎ নতুন বছরের শুরুতেই ডেঙ্গুর থাবা করোনার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। চলতি মৌসুমে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিন, সুরক্ষাব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে করোনা ভাইরাসের হুমকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু নগরায়ণ, অপরিকল্পিত পানি জমে থাকা ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ১৯৬৫ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এর নাম তখন ছিল ‘ঢাকা জ্বর’। পরে ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জ্বরের খবর পাওয়া যায়। ১৯৯৬-৯৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২৫৫ জন রোগীর জ্বর পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩.৭ শতাংশ রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে।
দেশের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু বাড়ছে। কারণ সমন্বিত পরিকল্পনা নেই। ডেঙ্গুর বাহক যে এডিস মশা সেটাকে নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করার একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশব্যাপী কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।
লেলিন চৌধুরীর মতে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু ছিল শহরের রোগ। কিন্তু ২০১৯ সালে ডেঙ্গু সারা দেশে বিস্তৃত হয়। রাজধানী বা মহানগর থেকে শুরু করে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সারা দেশে রয়েছে। আমরা প্রধানত সিটি করপোরেশন, বড় শহরগুলো এবং কখনো কখনো এক-দুইটা ছোট শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ ছিটানোর কাজ করি। কিন্তু কাজটা একেবারেই বিচ্ছিন্নভাবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা দেশকে যুক্ত করে কোনো মশক নিধন কর্মপরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করিনি। ফলে সেটি বাস্তবায়নেরও প্রশ্ন আসে না। দেখা গিয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, রাজশাহী বা খুলনা ওইভাবে কাজ করছে। অথবা দাউদকান্দি বা চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেভাবে কাজ হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ যেটি, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ, সেটি আমরা ঠিকমতো করতে পারছি না।
ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য কমবয়সীদের ক্ষেত্রে ‘কিউডেঙ্গা’ নামে একটি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশে আমদানি বা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সেটি তৈরি করারও কোনো উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কারের যে প্রয়াসগুলো চলছে, তাতেও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা নেই।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদের সঙ্গে কথা হয় স্ট্রিমের। তিনি বলেন, কোভিডের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। কারণ ডেঙ্গুর টেস্ট বেশি হচ্ছে। যেসব খালি জায়গায় পানি জমা থাকবে সেখানেই মশার লার্ভা হবে। সেগুলো না সরালে তো ডেঙ্গুর কেস কমবে না।’
ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতার অভাবকে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ বাড়ির ভেতরে যদি ফুলের টবে পানি রাখে বা কোনো জায়গায় পানি জমিয়ে রাখে, সেটা তো সমস্যা।’
ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হালিমুর রশিদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। ওরাও কাজ করছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিপরীতে ডেঙ্গু এখন দেশের সবচেয়ে বড় মৌসুমি স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই প্রয়োজন স্থায়ী প্রতিরোধব্যবস্থা, নিয়মিত নজরদারি এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো প্রস্তুতি। তা না হলে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের সাফল্য ডেঙ্গুর কাছে হার মানতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রার্থীরা বলছেন, ডাকসুর যে সব প্যানেলের প্রার্থীদের অর্থের যোগান ভালো তাঁরা ভোটের বিনিময়ে এই খাবার খাওয়াচ্ছে। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পায়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
১৮ ঘণ্টা আগেগোয়ালন্দের নুরাল পাগলাই কি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বিচিত্রার প্রচ্ছদের সেই নূরা পাগলা? কেমন ছিলেন হাইকোর্টের মাজারের সেই নূরা পাগলা? আজম খান কেন ১৯৭৩ সালে তাঁকে নিয়ে গান বানিয়েছিলেন? নূরা পাগলা কেন বলেছিলেন, ‘আমি জেহাদ করব তখন, যখন ইন্ডিয়া এদেশে আসবে, যখন পাকিস্তান এদেশে আসবে।’
২ দিন আগেআজ ১২ রবিউল আউয়াল। হিজরি সনের এ মাসেই নবীজির জন্ম। এ মাসেই তাঁর ওফাত। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আজকের দিনটি তাই বড় পবিত্র। আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। কীভাবে দুনিয়া পাল্টে দিয়েছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)? বিশ্বসেরা কবি-লেখক ও দার্শনিকেরা কীভবে দেখেছেন তাঁকে—এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে সেই বিত্তান্ত।
৩ দিন আগেসম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন আল-জাজিরার মিডিয়া ইনিশিয়েটিভস-এর ব্যবস্থাপক মুনতাসির মারাই। জর্ডানের বাসিন্দা ফিলিস্তিন বংশদ্ভূত এই সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা ২০০২ সালে আল-জাজিরায় যোগ দেন। ২০১১ সালে তিনি মিশরের তাহরির স্কয়ার থেকে যে ‘আরব বসন্ত’ হয়েছিল, সেখানে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সাংবাদিক হিসেবে কাজ...
৭ দিন আগে