শিক্ষা ও গবেষণায় সুনাম থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের প্রথম এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ জন শিক্ষকের বিপরীতে একজন করে শিক্ষক রয়েছেন।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত ধরা হয় ১:২০। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কাঙ্ক্ষিত নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গেল মাসে ইউজিসির ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা।
বলা হয়েছে, ওই বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ছিল ১:২১, যেটি সন্তোষজনক। তবে নর্থ সাউথসহ আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০-এর ঊর্ধ্বে। বাকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স (১:৩৫) এবং এন পি আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (১:৩৭)।
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে বর্তমানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার স্থায়ী ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৩ হাজার ১১৩ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৬৪১ জন। এর মধ্যে ১৭৪ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক। চারটি অনুষদ ও চারটি ইনস্টিটিউটের অধীনে ৩৩টি প্রোগ্রামে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
ইউজিসির তথ্য বলছে, দেশের সবকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে সর্বমোট শিক্ষক সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৭৯ জন। যা ২০২২ সালের তুলনায় ৯৭১ জন বেশি। এর মধ্যে পূর্ণকালীন শিক্ষক ১৩ হাজার ১৬৯ জন এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক ৪ হাজার ৩১০ জন।
ইউজিসি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫ (৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। তবে এ আইনও বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানছে না।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার গুণগত মানের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের ওপর ২০ নম্বর দেওয়া হয়।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ সুপারিশ ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০-এর মধ্যে রাখা। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চশিক্ষা আরও ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী হওয়ায় এ অনুপাত আরও কম হওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বেশি হওয়া উচিত না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইনডিভিজুয়্যালি কাজ করতে হয়। ল্যাব থাকে, সে জন্য শিক্ষকের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় রিসোর্সও দরকার। বেশি শিক্ষার্থী থাকলে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য উন্নত বিশ্বে উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল ধরা হয়।
জানতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. আহমেদ তাজমীন স্ট্রিমকে বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৬ তো গ্রহণযোগ্য। কিন্তু ইউজিসি কেন সন্তোষজনক মনে করছে না, জানি না। তবে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা আমাদের আছে, প্রতি বছরই যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী রিপোর্টে ইম্প্রুভ দেখতে পাবেন।’