leadT1ad

রাবিতে সমাবর্তন: অতিথি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে তোপের মুখে প্রশাসন

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাবির প্রশাসন ভবন। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন আয়োজন করা হয়েছে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। ছয় বছর পর হতে যাওয়া সমাবর্তন নিয়ে ক্যাম্পাসে এখন থাকার কথা উচ্ছ্বাস। তবে হয়েছে উল্টো। সমাবর্তনে অতিথি নির্বাচন, তারিখ ও রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অ্যালামনাই ও সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছে প্রশাসন।

ক্ষোভের শুরু মূলত সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অতিথি করা নিয়ে। পদাধিকার বলে সাধারণত রাষ্ট্রপতিই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হন। তবে মোঃ সাহাবুদ্দিন গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আপত্তি জানান সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বলা হলেও শেষপর্যন্ত প্রধান অতিথি করা হয়েছে শিক্ষা উপদেষ্টাকে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি নিয়ে রাবি ৬২ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী অর্বাক আদিত্য বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে অতিথি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তনের তারিখ এর আগে দেওয়া হলো। সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সেটি স্থগিত করা হলো। পরবর্তীতে নানা মাধ্যমে জানানো হলো, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অতিথি করা হবে। এখন অতিথি করা হয়েছে শিক্ষা উপদেষ্টাকে। তাহলে এতদিন ধরে নকশা করার দরকার কী ছিল। আমরা ৬২ ব্যাচ অসন্তোষ প্রকাশ করছি, একইসঙ্গে অতিথি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। অতিথি পুনর্বিবেচনা না করলে আমরা ৬২ ব্যাচ সমাবর্তনে অংশ নিব না।’

অতিথি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন রাকসুর জিএস সালাউদ্দীন আম্মারও। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘অতিথি হিসেবে যারা আসছেন, তাদের থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার মতো কিছুই নেই। রাকসুর ভিপিকে গেস্ট স্পিকার করলে সেটা আরো গ্রহণযোগ্য হতো, কারণ তিনি সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত।’

সমাবর্তন বয়কট কথাও লিখেছেন তিনি। সালাউদ্দীন আম্মার লেখেন, ‘আপনারা চাইলে একযোগে বয়কট করতে পারেন, টাকা ফেরত চাইতে পারেন। কিংবা সমাবর্তনের দিন আলাদা ‘ছায়া সমাবর্তন’ আয়োজন করে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রিয় শিক্ষক-পরিচিতজনদের অতিথি করতে পারেন। আমি সেখানেও থাকবো। রাকসুর অবস্থান স্পষ্ট এটা কোনো সমাবর্তনের ধারেকাছেও না।’

সমালোচনা এত দূর গেছে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘নির্ধারিত তারিখে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো সংশয় নেই। চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। আগামী ১৭ তারিখেই হতে যাচ্ছে রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন।’

অতিথি নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে সভাপতিত্ব করার নিয়ম থাকলেও বর্তমান বাস্তবতায় উনাকে আমরা পাচ্ছি না। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু উনার আগ্রহ থাকলেও কিছু কৌশলগত কারণে তিনিও আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। সাথে আমরা পরিকল্পনা উপদেষ্টা মহোদয়কে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করেছি এবং উনাকে আগেরবার শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ফলে এই মুহূর্তে অতিথির বিষয়টি সেটেলড।’

সমাবর্তনের দিন নিয়ে আপত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দিনের ব্যাপারে আমাদের পছন্দ এবং চেষ্টা ছিল বৃহস্পতিবার অথবা রোববার ঠিক করা। কিন্তু সম্মানিত অতিথিদের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে আমরা সেটি পারিনি। শেষ পর্যন্ত বুধবার করতে হয়েছে। এতে আমাদের চাকরিজীবী গ্রাজুয়েটদের একটু অসুবিধা হবে। এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত।’

কারিগরি কারণে পুনঃরেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি। সবশেষে রেজিস্ট্রেশন করা সব গ্রাজুয়েটকে ক্যাম্পাসের মতিহার সবুজ চত্বরে সমাবর্তনে অংশ নিতে আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রাবিতে সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই সমাবর্তনে ৩ হাজার ৪৩২ জন স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন করে। এ ছাড়া এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রির জন্য যথাক্রমে ৫১১ ও ১২৩ জন নিবন্ধিত হন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত