leadT1ad

গতি ফিরছে অর্থনীতিতে, আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ১০.৮২ শতাংশ

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রায় এক বছর পর দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রবণতার ইঙ্গিত মিলছে। স্ট্রিম গ্রাফিক

প্রায় এক বছর পর দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রবণতার ইঙ্গিত মিলছে। টানা স্থবিরতার পর পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা বেড়েছে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতেও ঋণপত্র খোলা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণপত্র খোলায় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.১৮ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৮২ শতাংশে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তারা বলছেন, ‘অর্থনীতির গতি বাড়াতে হলে আমদানি বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়লে কলকারখানার চাকা ঘুরবে, কর্মসংস্থান বাড়বে, তাতে সামগ্রিক অর্থনীতি চাঙা হবে।’

তবে ঋণপত্র খোলা বাড়লেও বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত আগস্ট শেষে প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনৈতিক স্থবিরতার একটি বড় কারণ হিসেবে ব্যাংক খাতের অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকেরা। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী বিদেশে চলে যান। কেউ কেউ মামলায় কারাগারে আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার।

গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। মূলধনী যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ সময় শিল্পের কাঁচামাল, পেট্রোলিয়াম ও মধ্যবর্তী পণ্যসহ সব ধরনের আমদানি বেড়েছে।

এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শেখ হাসিনার পরিবারসহ ১১টি বড় শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবসায়িক লেনদেন তদন্ত করছে। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাবিল, সামিট, ওরিয়ন, প্রিমিয়ার, নাসা, বসুন্ধরা, সিকদার ও আরামিট গ্রুপ।

তদন্ত ও পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের পর ১৫টি ব্যাংক ঋণ কার্যক্রমে গতি কমিয়ে দিয়েছে। এতে অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ার পাশাপাশি অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

তবে সরকার পরিবর্তনের পর গত জুলাই থেকে আবারও ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। অনেক বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু হচ্ছে। গাজী গ্রুপ তাদের পুড়ে যাওয়া কারখানা নতুন করে নির্মাণ শুরু করেছে। রপ্তানি আদেশ বাড়ায় অনেক কারখানা উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এতে নতুন করে ঋণপত্র খোলার প্রবণতা বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট আমদানি হয়েছে ৬৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। তবে একই সময়ে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ২৫ শতাংশ এবং মধ্যবর্তী পণ্যের নিষ্পত্তি ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে।

গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। মূলধনী যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ সময় শিল্পের কাঁচামাল, পেট্রোলিয়াম ও মধ্যবর্তী পণ্যসহ সব ধরনের আমদানি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে. মুজেরী বলেন, ‘অর্থনীতির গতি অনেক দিন ধরেই মন্থর। কর্মসংস্থানও কমেছে। তাই আমদানি বাড়ানো প্রয়োজন। তবে ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আমদানি বাড়ানো দেশের জন্য ভালো, কিন্তু এর আড়ালে যেন অর্থ পাচার না হয়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত