leadT1ad

সিন্ডিকেটের কবলে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ, আরও ৫ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ১৪
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) লোগো। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অর্থ আত্মসাত ও পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে আরও পাঁচটি রিক্রুটিং এজেন্সির ২৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিষ্ঠানগুলো ১৮ হাজার ৭৬৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ৩১৪ কোটি ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাত ও পাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে নির্ধারিত জনপ্রতি ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ আদায় করেছে। এই অতিরিক্ত অর্থ কেবল আত্মসাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা বিদেশে পাচারও করা হয়েছে। এটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ভঙ্গের শামিল।

মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুদকের অনুমোদনকৃত পাঁচটি এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জিএমজি ট্রেডিং (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৮৩০ কর্মীর কাছ থেকে ৪৭ কোটি ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। দি জিএমজি ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েট-এর চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ২৩৯ কর্মীর কাছ থেকে ৫৪ কোটি ২৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায়ের মামলা হচ্ছে।

আরও আছে কিউকে কুইক এক্সপ্রেস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির এমডি, চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের নামে ৪ হাজার ২৭৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৭১ কোটি ৬০ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এমইএফ গ্লোবাল বাংলাদেশ। তাদের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রথমটিতে এমডি, চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৫৬৬ কর্মীর কাছ থেকে ৭৬ কোটি ৪৮ লাখ ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় একই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৮৫৭ কর্মীর কাছ থেকে ৬৪ কোটি ৬০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের এই পদক্ষেপ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চলমান ধারাবাহিক অভিযান। এর আগে ১১ নভেম্বর আরও ৪টি এজেন্সির ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৯৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলা দায়ের করা হয়।

গত ৬ নভেম্বরও দুদক ৬টি এজেন্সির ১১ জন মালিক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৫২৫ কোটি ২২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আরও আগে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ১৩টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকার মানবপাচার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছিল।

বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি বরাবরই অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে বিতর্কিত। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণ করে, যাতে কর্মীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারসাজি সেই প্রচেষ্টা কার্যত অকার্যকর করেছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত