ট্রাম্পের ভাষায়, চলতি বছরের ২ এপ্রিল ছিল ‘স্বাধীনতা দিবস’। ওই দিন বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক অর্থ, তারা আমাদের ওপর শুল্ক বসায়, তাই আমরাও বসাব।’
স্ট্রিম প্রতিবেদক
বাংলাদেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারিত শুল্কহার হবে এত দিন থাকা শুল্ক হারের অতিরিক্ত। অর্থাৎ এত দিন বাংলাদেশ যে হারে শুল্ক দিত, সেই শুল্কের সঙ্গে নতুন করে আরোপ করা শুল্ক যুক্ত হবে।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য বলছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়েছে। ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ।
তবে ট্রাম্প যে শুধু বাংলাদেশের ওপরই এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে তেমন নয়। বরং দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ বিশ্বের ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি নিরসন করা গেলে শুল্কহার কমতেও পারে। যার পুরোটাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন–মর্জির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। যদি আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি নিরসন করা সম্ভব না হয় তবে আগামী ১ আগস্ট থেকে বর্ধিত হারে শুল্ক দিতে হবে।
এই বাড়তি শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় বিপর্যয় বয়ে আনবে, বিশেষত তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্যের জন্য বিপদ বয়ে আনছে বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, এই শুল্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বাধার সম্মুখীন করবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘৩৫ শতাংশ শুল্কের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে পার্থক্য তৈরি হয়ে গেল। ভিয়েতনামে ২০ শতাংশ শুল্ক বসবে। তাদের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি শুল্ক বসবে বাংলাদেশের পণ্যে।’
অবশ্য বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থা্ন করা বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বিধিবিধান মেনে বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তি শুল্কের সমাধান করতে হলে সেই নীতিমালাগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেটা করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশের জন্য। আমরা সমঝোতার চেষ্টা করছি। আমাদের কোন ত্রুটি নেই।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা শুরু থেকে সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীদের এই দর-কষাকষির ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
যেভাবে এল পাল্টা শুল্ক
ট্রাম্পের ভাষায়, চলতি বছরের ২ এপ্রিল ছিল ‘স্বাধীনতা দিবস’। ওই দিন বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক অর্থ, তারা আমাদের ওপর শুল্ক বসায়, তাই আমরাও বসাব।’
এদিন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়। অন্যদিকে মার্কিন পণ্যের ওপর বাংলাদেশি শুল্ক ছিল এর দ্বিগুণ; অর্থাৎ ৭৪ শতাংশ।
নিজের নির্বাচনী প্রচারণাতে পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের তিন মাস না পেরোতেই নিজের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন তিনি।
সেদিন হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে এক সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘দশকের পর দশক বন্ধু-শত্রু নির্বিশেষে অনেক দেশ আমাদের লুট করেছে।’
এ সিদ্ধান্তে অন্য দেশের নাখোশ হওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাদের চার্জ করে। আমরা বরং আরও কম চার্জ করছি। কেউ কীভাবে রাগ করতে পারে? কিন্তু তবুও তারা রাগ করবে। কারণ, আমরা এর আগে কখনো কাউকে চার্জ করিনি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তারা আমাদের থেকে যা নিচ্ছে, আমরা তার মোটামুটি অর্ধেক শুল্ক আরোপ করছি।’
এপ্রিলের ৯ তারিখ থেকে এই শুল্ক কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়। তবে পরে এই তারিখ পিছিয়ে ৯ জুলাই করেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে আলোচনারও সুযোগ রাখেন। ৩ এপ্রিল এক ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু গতকালকের চিঠিতে ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন।
চিঠিতে যা ছিল
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্কই আরোপ করা হবে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দয়া করে বুঝুন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়—এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব—অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত পণ্যে
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির ৯০ শতাংশ তৈরি পোশাকসহ চামড়াজাত পণ্য। এতে যে শুল্ক বসবে, এর মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতা করা আমাদের পক্ষে খুবই দুষ্কর হবে। প্রতিযোগিতা মার্কিনিদের সঙ্গে হবে না, হবে অন্যান্য দেশ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। মধ্য মেয়াদে এটি অশনিসংকেত।
উল্লেখ্য, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তি হলেও এ বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি জানায়নি বাংলাদেশ।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভিয়েতনাম বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব আমদানিতে তারা শূন্য শুল্ক সুবিধা দেবে। বাংলাদেশও একই কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশ একই সঙ্গে অন্যান্য দেশকেও এই সুবিধা দিতে চেয়েছে, যেহেতু ডব্লিউটিও সদস্য। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি থাকতে পারে। এর বাইরে অন্য চাহিদা আছে কিনা, তা নীতিনির্ধারকেরা বলতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে এত পার্থক্য কেন হলো সেটি আমি জানি না। এখানে শুল্ক ছাড়াও অশুল্ক কোন চাহিদাও ছিল কিনা, সেটাও স্পষ্ট না।’
বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্কিন আমদানিতে আমরা শূন্য শুল্ক দেব বলে শুনেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এখানে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় বলে তারা জানিয়েছে। সেখানে কাজ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য। সুতরাং, এগুলোও বাংলাদেশকে বিবেচনা করতে হয়েছে। এসবের বাইরে বাংলাদেশ আর কী সুযোগ দিতে পারে, যেটাতে শুল্ক ২০ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
এ পর্যায়ে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১ আগস্ট পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা হতে পারে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের পরও সুযোগ আছে। আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী তিন সপ্তাহের সময়টাও কাজে লাগানো দরকার। একটি দল গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কও বিবেচনা রাখতে হবে। কোনো জায়গায় আর কিছু ছাড় দেওয়া যায় কিনা, সেটাও চিন্তা করা যেতে পারে। অন্তত ভিয়েতনামের পর্যায়ে শুল্ক নামিয়ে আনা উচিত। এতে রপ্তানি অব্যাহত রাখা যাবে।
বাংলাদেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারিত শুল্কহার হবে এত দিন থাকা শুল্ক হারের অতিরিক্ত। অর্থাৎ এত দিন বাংলাদেশ যে হারে শুল্ক দিত, সেই শুল্কের সঙ্গে নতুন করে আরোপ করা শুল্ক যুক্ত হবে।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য বলছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়েছে। ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ।
তবে ট্রাম্প যে শুধু বাংলাদেশের ওপরই এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে তেমন নয়। বরং দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ বিশ্বের ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি নিরসন করা গেলে শুল্কহার কমতেও পারে। যার পুরোটাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন–মর্জির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। যদি আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি নিরসন করা সম্ভব না হয় তবে আগামী ১ আগস্ট থেকে বর্ধিত হারে শুল্ক দিতে হবে।
এই বাড়তি শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় বিপর্যয় বয়ে আনবে, বিশেষত তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্যের জন্য বিপদ বয়ে আনছে বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, এই শুল্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বাধার সম্মুখীন করবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘৩৫ শতাংশ শুল্কের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে পার্থক্য তৈরি হয়ে গেল। ভিয়েতনামে ২০ শতাংশ শুল্ক বসবে। তাদের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি শুল্ক বসবে বাংলাদেশের পণ্যে।’
অবশ্য বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থা্ন করা বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বিধিবিধান মেনে বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তি শুল্কের সমাধান করতে হলে সেই নীতিমালাগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেটা করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশের জন্য। আমরা সমঝোতার চেষ্টা করছি। আমাদের কোন ত্রুটি নেই।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা শুরু থেকে সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীদের এই দর-কষাকষির ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
যেভাবে এল পাল্টা শুল্ক
ট্রাম্পের ভাষায়, চলতি বছরের ২ এপ্রিল ছিল ‘স্বাধীনতা দিবস’। ওই দিন বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক অর্থ, তারা আমাদের ওপর শুল্ক বসায়, তাই আমরাও বসাব।’
এদিন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়। অন্যদিকে মার্কিন পণ্যের ওপর বাংলাদেশি শুল্ক ছিল এর দ্বিগুণ; অর্থাৎ ৭৪ শতাংশ।
নিজের নির্বাচনী প্রচারণাতে পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের তিন মাস না পেরোতেই নিজের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন তিনি।
সেদিন হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে এক সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘দশকের পর দশক বন্ধু-শত্রু নির্বিশেষে অনেক দেশ আমাদের লুট করেছে।’
এ সিদ্ধান্তে অন্য দেশের নাখোশ হওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাদের চার্জ করে। আমরা বরং আরও কম চার্জ করছি। কেউ কীভাবে রাগ করতে পারে? কিন্তু তবুও তারা রাগ করবে। কারণ, আমরা এর আগে কখনো কাউকে চার্জ করিনি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তারা আমাদের থেকে যা নিচ্ছে, আমরা তার মোটামুটি অর্ধেক শুল্ক আরোপ করছি।’
এপ্রিলের ৯ তারিখ থেকে এই শুল্ক কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়। তবে পরে এই তারিখ পিছিয়ে ৯ জুলাই করেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে আলোচনারও সুযোগ রাখেন। ৩ এপ্রিল এক ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু গতকালকের চিঠিতে ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন।
চিঠিতে যা ছিল
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্কই আরোপ করা হবে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দয়া করে বুঝুন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়—এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব—অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত পণ্যে
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির ৯০ শতাংশ তৈরি পোশাকসহ চামড়াজাত পণ্য। এতে যে শুল্ক বসবে, এর মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতা করা আমাদের পক্ষে খুবই দুষ্কর হবে। প্রতিযোগিতা মার্কিনিদের সঙ্গে হবে না, হবে অন্যান্য দেশ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। মধ্য মেয়াদে এটি অশনিসংকেত।
উল্লেখ্য, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তি হলেও এ বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি জানায়নি বাংলাদেশ।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভিয়েতনাম বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব আমদানিতে তারা শূন্য শুল্ক সুবিধা দেবে। বাংলাদেশও একই কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশ একই সঙ্গে অন্যান্য দেশকেও এই সুবিধা দিতে চেয়েছে, যেহেতু ডব্লিউটিও সদস্য। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি থাকতে পারে। এর বাইরে অন্য চাহিদা আছে কিনা, তা নীতিনির্ধারকেরা বলতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে এত পার্থক্য কেন হলো সেটি আমি জানি না। এখানে শুল্ক ছাড়াও অশুল্ক কোন চাহিদাও ছিল কিনা, সেটাও স্পষ্ট না।’
বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্কিন আমদানিতে আমরা শূন্য শুল্ক দেব বলে শুনেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এখানে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় বলে তারা জানিয়েছে। সেখানে কাজ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য। সুতরাং, এগুলোও বাংলাদেশকে বিবেচনা করতে হয়েছে। এসবের বাইরে বাংলাদেশ আর কী সুযোগ দিতে পারে, যেটাতে শুল্ক ২০ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
এ পর্যায়ে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১ আগস্ট পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা হতে পারে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের পরও সুযোগ আছে। আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী তিন সপ্তাহের সময়টাও কাজে লাগানো দরকার। একটি দল গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কও বিবেচনা রাখতে হবে। কোনো জায়গায় আর কিছু ছাড় দেওয়া যায় কিনা, সেটাও চিন্তা করা যেতে পারে। অন্তত ভিয়েতনামের পর্যায়ে শুল্ক নামিয়ে আনা উচিত। এতে রপ্তানি অব্যাহত রাখা যাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্কের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।
২ দিন আগেশুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতি নয়, কমেছে সাধারণ মূল্যস্ফীতিও। গত বছরের জুন মাসে সাধারণ মুল্যস্ফীতি যেখানে ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, চলতি বছরের জুনে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে।
৩ দিন আগেবাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভিয়েতনাম-যুক্তরাষ্ট্র নতুন বাণিজ্য চুক্তি ভিয়েতনামের জন্য সুবিধা নিয়ে এলেও বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে।
৬ দিন আগেবিইআরসির সচিব মো. নজরুল ইসলাম সরকার জানান, ‘আমাদের দেশে গ্যাসের দাম ওঠানামা করার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। সৌদিতে দামের পরিবর্তন এবং ডলারের দাম ওঠানামা।’
৬ দিন আগে