leadT1ad

তাপপ্রবাহে ইউরোপে এত মানুষ মরছে কেন

গত ১০ দিনে ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অন্তত ২৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ১৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায়।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৭: ১০
গত ১০ দিনে ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে মারা গেছেন ২৩০০ মানুষ। ছবি: রয়টার্স

গতকাল বুধবার (৯ জুলাই) যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পরিচালনায় একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, গত ২৩ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত সময় পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ইউরোপের বারোটি শহরের প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন গবেষকেরা।

এদিকে গত ১০ দিনে ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অন্তত ২৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ১৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায়।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষক ড. বেন ক্লার্ক বলেন, ‘তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।’

তাপপ্রবাহে মৃত্যুর রেকর্ড নেই

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকদল বলছে, বেশির ভাগ গরমজনিত মৃত্যুর তথ্য সরকারি রেকর্ডে ছিল না। এমনকি কিছু দেশে এই তথ্য আগে কখনো প্রকাশ হয়নি। এজন্য বিজ্ঞানীরা মহামারি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠিত মডেল ও অতীতের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন প্রাথমিকভাবে।

তাঁরা পিয়ার-রিভিউড (অন্য বিশেষজ্ঞের অনুমোদিত) পদ্ধতি ব্যবহার করে গরমের কারণে মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা রেকর্ড করেছেন। এছাড়াও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেসব অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যু, যাদের শারীরিক অসুস্থতার অবনতি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া গরমের কারণে হয়েছিল।

ইউরোপের যে শহরগুলোতে প্রাণঘাতী তাপপ্রবাহ

ইউরোপের যে বারোটি শহরে তাপপ্রবাহে মৃত্যুর কারণকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেসব হলো স্পেনের বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ইতালির মিলান, রোম ও সাসারি, ফ্রান্সের প্যারিস, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট, ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব, গ্রিসের এথেন্স এবং পর্তুগালের লিসবন। এসব শহরে তাপপ্রবাহে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গবেষণাকালীন (২৩ জুন থেকে ২ জুলাই) পশ্চিম ইউরোপের কোনো কোনো অংশে তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। স্পেনে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাবানল শুরু হয়েছিল ফ্রান্সে।

জুনে রেকর্ড ছাড়িয়েছে গরম, নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস গতকাল তাদের মাসিক বুলেটিনে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জুন ও ২০২৪ সালের জুনের পর এবার চলতি বছরের জুন পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ গরম মাস। পশ্চিম ইউরোপের ইতিহাসেও সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে এ বছরের জুনে। এবার অঞ্চলটিতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থেকেছে। এ কারণে তাপপ্রবাহ হয়েছে প্রাণঘাতী। কপার্নিকাসের জলবায়ুবিষয়ক কৌশল তৈরির শীর্ষ কর্মকর্তা সামান্থা বার্গেস সতর্ক করে বলেন, ‘পৃথিবী ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে চলছে। তাপপ্রবাহ আরও বেশি বেশি হতে পারে।’

এর আগে ২০২২ সালের তীব্র তাপপ্রবাহে ইউরোপজুড়ে প্রায় ৬১ হাজার মানুষ মারা গেছেন বলে দাবি করেছে ইউরোপীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো। এসব সংস্থার তথ্যমতে, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ মোকাবিলার প্রস্তুতি ইউরোপের খুবই অপর্যাপ্ত ছিল।

গ্রিনহাউস গ্যাস প্রধানত তেল, কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্টি হয়। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটিকে বেসলাইন (ভিত্তিমূল) তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। এই বেসলাইন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে তাপপ্রবাহের সময় তাপমাত্রা আগের চেয়ে অনেক বেশি বাড়তে পারে। বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোর বায়ুমণ্ডলে বেড়েছে তাপমাত্রা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত