জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠ (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, গতকাল নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আমাদের নাকি শাপলা প্রতীক দেবে না। আপনারা জেনে থাকবেন, তারা মিটিং করেছে আজকে। কিন্তু ফলাফল গতকালই জানিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ভোটের আগে ফলাফলের মতো আমাদের নির্বাচন কমিশন মিটিংয়ের আগে ফলাফল জানিয়ে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নড়াইল শহরের পুরোনো বাস টার্মিনাল এলাকায় আয়োজিত পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। এ দিন সকালে ঝিনাইদহ থেকে যাত্রা করে এনসিপির গাড়িবহর দুপুরে মাগুরা পৌঁছায়। মাগুরার ভায়না মোড়ে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন তাঁরা। পদযাত্রা শহরের বিভিন্ন পথ ঘুরে আবার ভায়না মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পথসভা শেষে নড়াইলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় এনসিপির গাড়িবহর।

নড়াইলের পথসভায় হাসনাত আরও বলেন, আগেও নির্বাচন কমিশন ছিলো। হুদা নির্চান কমিশন, লতিফ নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনাররা দিনের ভোট রাতে করে দিয়েছেন। তাঁরা পুলিশকে সাক্ষী রেখে, সেনাবাহিনীকে সাক্ষী রেখে দিনের ভোট রাতে কেটে দিয়েছেন। এমনও শুনেছি, কবর থেকে উঠে মরা মানুষ ভোট দিয়েছে। বিশ বছর আগে মারা যাওয়া দাদা-দাদিরাও নাকি লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। এসব ছিলো হুদা কমিশনের কাজ।

হাসনাত বলেন, ‘প্রিয় নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে কিন্তু খবর আছে আপনাদের রিমোট কন্ট্রোলটা কোথায়। আগে নির্বাচনের সময় এরশাদকে যেভাবে গলফ খেলতে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যেত, এখন নির্বাচন কমিশনের অনেককে ধরে ধরে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। গলফ খেলিয়ে, হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে যারা রাজনীতি করতে চাচ্ছেন, আপনারা ফাউল করছেন। খুব দ্রুত আপনারা রেডকার্ড দেখবেন।’

নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, যারা লন্ডন থেকে বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে বার্তা প্রবাহিত করছে। আমরা তাদের নয় ছয় কোনো গেমে থাকবো না৷ ওরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বার্তা দেয়, আমরা কোনো ক্যান্টনমেন্টের বার্তা মানবো না৷

তারেক জিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে করে নাসির বলেন, বাংলাদেশে যিনি আসার সাহস পান না, তিনি লন্ডনে বসে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে ষড়যন্ত্র করছে৷ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ষডযন্ত্র করছে৷ অথচ আমরা দেখেছিলাম, নব্বইয়ের দশকে বেগম খালেদা জিয়া মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। জিয়াউর রহমন ঘুরে ঘুরে দেশে খাল কেটেছিলেন৷ আর আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লন্ডনে৷ আরো দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের রক্তের উপর দিয়ে যে সরকার গঠন হলো, সে সরকারও লন্ডনে বসে যৌথ বিবৃতি দিচ্ছে৷

এর আগে মাগুরার ভায়না মোড়ের পথসভায় এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে৷ এর আগে যদি সরকার বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ দিতে না চায়, তাহলে আমরা ছাত্র জনতা নিয়ে ৩ আগস্ট আবার পথে নামবো৷ জাতীয় শহীদ মিনারে আপনাদের জামায়েত হওয়ার আমন্ত্রণ রইলো৷ মাগুরার সকল সমস্যা সমাধানে এনসিপি সব সময় প্রস্তুত থাকবে৷

সমাবেশে সামান্তা শারমিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশি কথা বলছে। এ সরকার মনে হয় ভুলে যাচ্ছে তারা একটি গণঅভ্যুত্থানের সরকার। তারা নিজেদেরকে যদি তত্ত্ববধায়ক সরকার হিসেবে দেখতে চায় তাহলে তারা সেটা ঘোষণা করে দিলেই পারে।

পথসভাগুলোতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, খুলনাঞ্চলের অঞ্চল পরিচালক, মোল্যা রহমতউল্লাহ, অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার শেলী, মাহবুবা সুলতানা রিমি। এ সময় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জাতীয় নাগরিক পার্টি নড়াইল জেলার প্রধান সমন্বয়ক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পদযাত্রা ও পথসভা শেষে যশোরের উদ্দেশে যাত্রা করেন এনসিপির নেতারা।