মো. ইসতিয়াক
যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের নতুন বাণিজ্য চুক্তি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চুক্তির ফলে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে মাত্র ২০ শতাংশ শুল্ক দেবে, যেখানে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক হতে পারে ৩৭ শতাংশ।
এই চুক্তিটি ঘোষণার আগেই, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু দেশের রপ্তানি পণ্যে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল জুলাইয়ের শুরুর দিকে। তবে ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প জানালেন, তাদের পণ্যে এখন ২০ শতাংশ শুল্ক আর ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যে (অর্থাৎ অন্য দেশ থেকে ভিয়েতনাম হয়ে আসা পণ্য) ৪০ শতাংশ শুল্ক বসবে।
এই চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, ভিয়েতনাম তাদের বাজারে মার্কিন পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক নেবে না। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য শুল্ক ছাড়াই ভিয়েতনামের বাজারে ঢুকবে।
ট্রাম্প তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘ভিয়েতনাম এমন কিছু করতে যাচ্ছে, যা তারা আগে কখনো করেনি, তাদের বাজারে আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দিচ্ছে।’
তবে এই চুক্তি চূড়ান্ত কি না, তা পরিষ্কার নয়। ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লাম ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং এটিকে ‘কাঠামোগত চুক্তি’হিসেবে উল্লেখ করেন। তো লাম অনুরোধ করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন ভিয়েতনামকে ‘মার্কেট ইকোনমি’বা বাজারভিত্তিক অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং কিছু উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানিতে থাকা সীমাবদ্ধতা তুলে নেয়।
বাংলাদেশ ২০২৩ সালে পোশাক রপ্তানি করে ৩৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা বিশ্ব বাজারের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ভিয়েতনাম প্রায় কাছাকাছি আছে, ৩১ বিলিয়ন ডলার ও পোশাক শিল্পের মোট বাজারের ৬ শতাংশ তাদের। কিন্তু নতুন চুক্তির পর ভিয়েতনাম আরও এগিয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এখনো বেশি নির্ভর করছে সস্তা ও সাধারণ পোশাকের ওপর। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি পাওয়া যায়, এমন পোশাকেই ভবিষ্যৎ। ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই ম্যান-মেইড ফাইবারের (এমএমএফ) উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনে অনেক এগিয়ে গেছে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলছেন, ‘এটা শুধু শুল্ক না, এই মুহূর্তে এটা আমাদের প্রস্তুতির প্রশ্ন যে আমরা ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য তৈরিতে কতটা প্রস্তুত।’
ভিয়েতনাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নাইকি, অ্যাপল, গ্যাপ ও লুলুলেমনের মতো বড় ব্র্যান্ডের পণ্য সরবরাহ করছে। চীনের ওপর আগের শুল্ক আরোপের পর অনেক কোম্পানি তাদের উৎপাদন কারখানা ভিয়েতনামে সরিয়ে নিয়েছে। এই নতুন চুক্তির ফলে সেখানে উৎপাদিত পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আরও সহজ ও সস্তা হয়ে যাবে।
চুক্তির ঘোষণার পরই নাইকি, কলাম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার, লুলুলেমন এবং ভিএফ করপোরেশনের শেয়ারের মূল্য বেড়ে যায়। নাইকির শেয়ার বাড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং কলাম্বিয়ার ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। আলোচনা চলছে, তবে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ হয়নি। ৯ জুলাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক কার্যকর করতে পারে। ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, যা রপ্তানির ৮৪ শতাংশ–বড় চাপে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে রুবানা হক বলেন, ‘এখন আমরা একটা টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছি। যেখান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, আবার পিছিয়ে পড়ারও ঝুঁকি রয়েছে। এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কী চ্যালেঞ্জ নেব, না হাত গুটিয়ে বসে থাকব।’
২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। তখন ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে যেসব শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশ পায়, তার বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে যাবে। ইউরোপ ও ব্রিটেন বলেছে, তারা কিছু সুবিধা চালু রাখবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিছু বলেনি। তাই সময় থাকতেই বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে, যাতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের মতোই চলতে পারে।
এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল-আলম বলেন, ‘আমাদের এখনই রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে কথা বলা উচিত। একইসঙ্গে এলডিসি-পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে গত কয়েক বছরে ভিয়েতনামে চীন থেকে এসেছে ৬১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ। এর ফলে দেশটি দ্রুত উন্নত প্রযুক্তি, মানসম্পন্ন পোশাক উৎপাদন এবং উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এই দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিনিয়োগ হারানোর পেছনে বড় কারণ হলো দেশের জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, ধীরগতির অনুমোদনব্যবস্থা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন দেখেন, বাংলাদেশে একটি কারখানা করতে বছরের পর বছর লাগতে পারে, তখন তারা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো সহজতর জায়গা বেছে নিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে গবেষক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা যদি ম্যান-মেইড ফাইবার-ভিত্তিক পোশাক তৈরিতে দক্ষতা না বাড়াই, তাহলে চীনের শূন্য হওয়া বাজার আমরা ধরতে পারব না। কারণ, পশ্চিমা ক্রেতারা এখন প্রাকৃতিক তুলা ছাড়াও কৃত্রিম ফাইবারের পোশাকে ঝুঁকছেন।’
এই জায়গায় ভিয়েতনাম আগেই নিজেদের সক্ষমতা গড়ে ফেলেছে। বাংলাদেশে এখনো এমএমএফএর অবকাঠামো দুর্বল, কারিগরি দক্ষতা কম এবং কাঁচামালের উৎস সংকুচিত।
এখানেই থেমে থাকলে হবে না, এমনটাই মত জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসানের। তিনি বলেন, ‘শুধু বর্তমান মার্কেট টিকিয়ে রাখলেই চলবে না। আমাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে, নতুন ধরনের পোশাক বানাতে হবে। প্রযুক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো বন্দর ও কাস্টমস-ব্যবস্থায় সময় ও খরচ কমাতে হবে।’
ফারুক হাসান মনে করেন, ‘শুধু পোশাক তৈরি নয়, পুরো সাপ্লাই চেইনের গতি ও মান বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে আমাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে।’
সবকিছুর মধ্যেও কেউ কেউ এখনো আশাবাদী। প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘অনেকে বলছে, ভিয়েতনাম আমাদের ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু এই কথা তো বহু বছর ধরে বলা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, আমরা এখনো বাজারে বড় অবস্থান ধরে রেখেছি। আমাদের কারখানার মান, শ্রমিকের দক্ষতা এবং উৎপাদন সক্ষমতা এখনো বিশ্বের চোখে ভরসার জায়গা।’
মো. ফজলুল হক আরও বলেন, ‘যদি আমরা সময়মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করি এবং সরকারি নীতিসহায়তা পাই, তাহলে আমরা শুধু টিকে থাকব না এবং আগামী দিনেও নেতৃত্ব দিতে পারব।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘ভিয়েতনাম যখন দ্রুত চুক্তি করে মার্কেটে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ কূটনৈতিক গতি ও প্রস্তুতির ঘাটতিতে পিছিয়ে পড়ছে। যদি আমরা এখনই কার্যকর সিদ্ধান্ত না নিই। ভবিষ্যতে আমাদের বাজার অন্যদের হাতে চলে যেতে পারে, নিঃশব্দেই।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের নতুন বাণিজ্য চুক্তি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চুক্তির ফলে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে মাত্র ২০ শতাংশ শুল্ক দেবে, যেখানে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক হতে পারে ৩৭ শতাংশ।
এই চুক্তিটি ঘোষণার আগেই, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু দেশের রপ্তানি পণ্যে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল জুলাইয়ের শুরুর দিকে। তবে ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প জানালেন, তাদের পণ্যে এখন ২০ শতাংশ শুল্ক আর ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যে (অর্থাৎ অন্য দেশ থেকে ভিয়েতনাম হয়ে আসা পণ্য) ৪০ শতাংশ শুল্ক বসবে।
এই চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, ভিয়েতনাম তাদের বাজারে মার্কিন পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক নেবে না। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য শুল্ক ছাড়াই ভিয়েতনামের বাজারে ঢুকবে।
ট্রাম্প তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘ভিয়েতনাম এমন কিছু করতে যাচ্ছে, যা তারা আগে কখনো করেনি, তাদের বাজারে আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দিচ্ছে।’
তবে এই চুক্তি চূড়ান্ত কি না, তা পরিষ্কার নয়। ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লাম ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং এটিকে ‘কাঠামোগত চুক্তি’হিসেবে উল্লেখ করেন। তো লাম অনুরোধ করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন ভিয়েতনামকে ‘মার্কেট ইকোনমি’বা বাজারভিত্তিক অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং কিছু উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানিতে থাকা সীমাবদ্ধতা তুলে নেয়।
বাংলাদেশ ২০২৩ সালে পোশাক রপ্তানি করে ৩৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা বিশ্ব বাজারের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ভিয়েতনাম প্রায় কাছাকাছি আছে, ৩১ বিলিয়ন ডলার ও পোশাক শিল্পের মোট বাজারের ৬ শতাংশ তাদের। কিন্তু নতুন চুক্তির পর ভিয়েতনাম আরও এগিয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এখনো বেশি নির্ভর করছে সস্তা ও সাধারণ পোশাকের ওপর। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি পাওয়া যায়, এমন পোশাকেই ভবিষ্যৎ। ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই ম্যান-মেইড ফাইবারের (এমএমএফ) উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনে অনেক এগিয়ে গেছে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলছেন, ‘এটা শুধু শুল্ক না, এই মুহূর্তে এটা আমাদের প্রস্তুতির প্রশ্ন যে আমরা ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য তৈরিতে কতটা প্রস্তুত।’
ভিয়েতনাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নাইকি, অ্যাপল, গ্যাপ ও লুলুলেমনের মতো বড় ব্র্যান্ডের পণ্য সরবরাহ করছে। চীনের ওপর আগের শুল্ক আরোপের পর অনেক কোম্পানি তাদের উৎপাদন কারখানা ভিয়েতনামে সরিয়ে নিয়েছে। এই নতুন চুক্তির ফলে সেখানে উৎপাদিত পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আরও সহজ ও সস্তা হয়ে যাবে।
চুক্তির ঘোষণার পরই নাইকি, কলাম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার, লুলুলেমন এবং ভিএফ করপোরেশনের শেয়ারের মূল্য বেড়ে যায়। নাইকির শেয়ার বাড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং কলাম্বিয়ার ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। আলোচনা চলছে, তবে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ হয়নি। ৯ জুলাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক কার্যকর করতে পারে। ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, যা রপ্তানির ৮৪ শতাংশ–বড় চাপে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে রুবানা হক বলেন, ‘এখন আমরা একটা টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছি। যেখান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, আবার পিছিয়ে পড়ারও ঝুঁকি রয়েছে। এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কী চ্যালেঞ্জ নেব, না হাত গুটিয়ে বসে থাকব।’
২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। তখন ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে যেসব শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশ পায়, তার বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে যাবে। ইউরোপ ও ব্রিটেন বলেছে, তারা কিছু সুবিধা চালু রাখবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিছু বলেনি। তাই সময় থাকতেই বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে, যাতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের মতোই চলতে পারে।
এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল-আলম বলেন, ‘আমাদের এখনই রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে কথা বলা উচিত। একইসঙ্গে এলডিসি-পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে গত কয়েক বছরে ভিয়েতনামে চীন থেকে এসেছে ৬১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ। এর ফলে দেশটি দ্রুত উন্নত প্রযুক্তি, মানসম্পন্ন পোশাক উৎপাদন এবং উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এই দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিনিয়োগ হারানোর পেছনে বড় কারণ হলো দেশের জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, ধীরগতির অনুমোদনব্যবস্থা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন দেখেন, বাংলাদেশে একটি কারখানা করতে বছরের পর বছর লাগতে পারে, তখন তারা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো সহজতর জায়গা বেছে নিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে গবেষক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা যদি ম্যান-মেইড ফাইবার-ভিত্তিক পোশাক তৈরিতে দক্ষতা না বাড়াই, তাহলে চীনের শূন্য হওয়া বাজার আমরা ধরতে পারব না। কারণ, পশ্চিমা ক্রেতারা এখন প্রাকৃতিক তুলা ছাড়াও কৃত্রিম ফাইবারের পোশাকে ঝুঁকছেন।’
এই জায়গায় ভিয়েতনাম আগেই নিজেদের সক্ষমতা গড়ে ফেলেছে। বাংলাদেশে এখনো এমএমএফএর অবকাঠামো দুর্বল, কারিগরি দক্ষতা কম এবং কাঁচামালের উৎস সংকুচিত।
এখানেই থেমে থাকলে হবে না, এমনটাই মত জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসানের। তিনি বলেন, ‘শুধু বর্তমান মার্কেট টিকিয়ে রাখলেই চলবে না। আমাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে, নতুন ধরনের পোশাক বানাতে হবে। প্রযুক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো বন্দর ও কাস্টমস-ব্যবস্থায় সময় ও খরচ কমাতে হবে।’
ফারুক হাসান মনে করেন, ‘শুধু পোশাক তৈরি নয়, পুরো সাপ্লাই চেইনের গতি ও মান বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে আমাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে।’
সবকিছুর মধ্যেও কেউ কেউ এখনো আশাবাদী। প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘অনেকে বলছে, ভিয়েতনাম আমাদের ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু এই কথা তো বহু বছর ধরে বলা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, আমরা এখনো বাজারে বড় অবস্থান ধরে রেখেছি। আমাদের কারখানার মান, শ্রমিকের দক্ষতা এবং উৎপাদন সক্ষমতা এখনো বিশ্বের চোখে ভরসার জায়গা।’
মো. ফজলুল হক আরও বলেন, ‘যদি আমরা সময়মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করি এবং সরকারি নীতিসহায়তা পাই, তাহলে আমরা শুধু টিকে থাকব না এবং আগামী দিনেও নেতৃত্ব দিতে পারব।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘ভিয়েতনাম যখন দ্রুত চুক্তি করে মার্কেটে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ কূটনৈতিক গতি ও প্রস্তুতির ঘাটতিতে পিছিয়ে পড়ছে। যদি আমরা এখনই কার্যকর সিদ্ধান্ত না নিই। ভবিষ্যতে আমাদের বাজার অন্যদের হাতে চলে যেতে পারে, নিঃশব্দেই।’
বিইআরসির সচিব মো. নজরুল ইসলাম সরকার জানান, ‘আমাদের দেশে গ্যাসের দাম ওঠানামা করার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। সৌদিতে দামের পরিবর্তন এবং ডলারের দাম ওঠানামা।’
১২ ঘণ্টা আগেবিশ্লেষকেরা বলছেন, আগ্রাসী শুল্কনীতি ও ‘একঘরে’ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশ্বব্যবস্থা পুনর্গঠনের চেষ্টা, ডলারের মানের ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে ‘ভূমিকম্পের মতো ঘটনা’।
২ দিন আগেএকদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির শঙ্কা, অন্যদিকে স্বৈরাচার পতনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে দেশের পোশাক খাত ও সামগ্রিক অর্থনীতি পড়েছে গভীর উদ্বেগের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত থাকলেও, সেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক।
০৮ জুন ২০২৫