leadT1ad

মহাখালীর হোটেলে হামলার ভাইরাল ভিডিও থেকে রাজশাহীর ফোনালাপ, বিএনপিতে কয়েক হাজার বহিষ্কার

একটা সময় বহিষ্কার ছিল দলীয় শাস্তির শেষ ধাপ। এখন তা যেন হয়ে উঠেছে নিয়মিত প্রক্রিয়া। কখনও নারী নির্যাতনের অভিযোগ, কখনও কাউন্সিল ভণ্ডুল করার চেষ্টা, আবার কখনও ঘুষ বাণিজ্যের অডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় নেতাদের বহিষ্কার করছে বিএনপি।

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০: ১৫
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫১
ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে রাজধানীর মহাখালীর একটি হোটেলে ঘটে এক অপ্রীতিকর ঘটনা। যুবদলের স্থানীয় এক নেতার নেতৃত্বে সেখানে দুই নারীর ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

পরদিন বুধবার (২ জুলাই) রাতেই দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযুক্ত যুবদলের নেতা মনির হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অপরাধীদের সঙ্গে দলীয় সম্পর্ক নেই, কেউ অপরাধ করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

বহিষ্কার দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার একটি নিয়মিত পন্থা হলেও বিএনপির ভেতরে এখন এটি যেন একটু জোরালোভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মহাখালীর এই ঘটনায় বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে আরও একবার সামনে এল গত ১০ মাসে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বহিষ্কারের প্রসঙ্গ। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এ পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখা না গেলে কোনো সংগঠন টিকতে পারে না। যারা দলের নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি। রুহুল কবীর রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি

বিএনপি বলছে, শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ‘আতঙ্ক’ তৈরি হয়েছে বলে মত দিচ্ছেন অনেকে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, এত বহিষ্কার কি দলের গ্রহণযোগ্যতা ও ঐক্য ধরে রাখতে পারছে?

বহিষ্কারের হিড়িক

একটা সময় বহিষ্কার ছিল দলীয় শাস্তির শেষ ধাপ। এখন তা যেন হয়ে উঠেছে নিয়মিত প্রক্রিয়া।

কখনও নারী নির্যাতনের অভিযোগ, কখনও কাউন্সিল ভণ্ডুল করার চেষ্টা, আবার কখনও ঘুষ বাণিজ্যের অডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে।

দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা আপসহীন। তবে একই সঙ্গে প্রশ্নও উঠছে, এতদিন যাদের ক্ষমতায় রাখা হলো, এখন হঠাৎ করে তারা কীভাবে ‘অযোগ্য’ হয়ে গেলেন?

উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির ঘটনা। গত জানুয়ারিতে একটি নতুন কমিটি গঠনের পরপরই সেখানে অসন্তোষ তৈরি হয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, কমিটি হয়েছে ঘুষ দিয়ে। কিছু নেতা সরাসরি রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানান।

গত ১২ জানুয়ারি পাবনার দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দিন বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি শামসুর রহমান নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই বিশৃঙ্খলায়। পরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয় এবং স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে সুপারিশ পাঠানো হয়।

শামসুর রহমান অবশ্য দাবি করেন, ‘আমাকে পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

‘১৭ বছর খাইনি, এখন খাব’

রাজশাহীর রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান রুবেলের একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে বিপদ ডেকে আনে। ফোনালাপে তিনি বলেছিলেন, ‘১৭ বছর খাইনি, এখন খাব’, যা থেকে স্পষ্ট অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

প্রাথমিকভাবে স্থানীয় নেতারা নাম নিশ্চিত করতে পারেননি, তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্যোগে গত ২১ মে রুবেলকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘দলের শৃঙ্খলা রক্ষা করতেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যারা দলের আদর্শ ও নীতি ভঙ্গ করবে, তাদের জন্য কোনো ছাড় নেই।’

অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এরশাদ আলী ইশা বলেন, ‘অনেকে সুযোগ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছিল, যা দলের জন্য হুমকি। তাই এমন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’

রুবেল নিজে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি, তবে দলের ভেতরে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

এই ঘটনা বিএনপির সাম্প্রতিক বহিষ্কারের ধারাবাহিকতায় একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, যেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দলের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট।

দলকে শুদ্ধ করতে হলে কঠোর হতে হয়: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখা না গেলে কোনো সংগঠন টিকতে পারে না। যারা দলের নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

রিজভী বলেন, ‘যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙে, তাদের ছাড় দেওয়া যায় না। কারণ এর মাধ্যমে আমরা সবাইকে একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই, দল শৃঙ্খলা রক্ষায় আপস করবে না। এটা জনগণের কাছেও ভালো সংকেত পাঠায় যে আমরা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছি।’

রিজভী আরও বলেন, ‘অনেক সময় বাইরের শত্রুরা দলের ভেতর থেকে দলকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। তারা দলকে ভাগ করার জন্য লোক তৈরি করে। আমরা এসব বুঝে কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যাতে দল সুসংগঠিত থাকে এবং কোনো প্রকার বিভ্রান্তি না ছড়ায়।’

বিএনপির এই অন্যতম শীর্ষ নেতার মতে, দলের উন্নতির জন্য অনেক সময় কঠোর হতে হয়, যাতে দুর্নীতি, শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অনৈতিক কাজ করার সুযোগ না থাকে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন এবং দলকে শক্তিশালী করবে।

গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর বিএনপির ভেতরে বহিষ্কারের একটি ঢেউ শুরু হয়েছে, যা এখন চোখে পড়ার মতো। মহাখালীর সেই বিতর্কিত যুবদল নেতা মনির হোসেনের ঘটনা থেকে শুরু করে সাঁথিয়ার দলীয় কোন্দল, রাজশাহীর ফোনালাপ ফাঁস এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নানা বহিষ্কারের ঘটনার ধরন যদিও আলাদা আলাদা, কিন্তু দলের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই রকম, কঠোর বহিষ্কার।

Ad 300x250

জুলাইয়ের প্রথম অংশ ‘মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’, পরের কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার : মাহফুজ আলম

ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িতে বাসের ধাক্কা, হামলা

বিএনপির নেতা-কর্মীসহ গ্রেপ্তার চার, আসামি সহস্রাধিক

ভাইয়ের ওপর ‘প্রতিশোধ’ নিতে মুরাদনগরের ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ছড়ান আরেক ভাই: র‍্যাব

মহাখালীর হোটেলে হামলার ভাইরাল ভিডিও থেকে রাজশাহীর ফোনালাপ, বিএনপিতে কয়েক হাজার বহিষ্কার

সম্পর্কিত