leadT1ad

স্মরণে সুকান্ত: আগুনঝরা কবিতার অমর প্রদীপ

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫, ১৪: ০৩

আজ সুকান্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের ১৩ মে  মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এই বিপ্লবী কবি। মৃত্যুর ৭৩ বছর পরেও তরুণ প্রজন্মের কাছে দ্রোহ আর প্রেরণার  অগ্রপথিক হয়ে আছেন সুকান্ত।

তাঁর কবিতা যেমন রাজনৈতিক, তেমনি গভীরভাবে মানবিক। দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এবং বিপ্লবের দামামা তাঁর কাব্যে ফুটে উঠেছে। তাঁর জীবন যেন এক অসমাপ্ত মহাকাব্য, আর তাঁর সৃষ্টি যেন সেই কাব্যের অক্ষয় অক্ষ।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা

সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম কলকাতার কালীঘাটে। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট। তাঁর পৈতৃক ভিটা ছিল গোপালগঞ্জে। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য ও রাজনীতির প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল তাঁর। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই সুকান্ত শুরু করেন সাহিত্য ও রাজনীতির চর্চা। কিশোর বয়সেই যুক্ত হন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে।

সময়ের পটভূমি ও কবির দায়

১৯৪০-এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, বাংলার মন্বন্তর এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রত্যাশা—এই সবই সুকান্তের কাব্যে বারবার ফিরে এসেছে।

কবিতায় থেকে তিনি ছড়াতে পেরেছিলেন দ্রোহের আগুন। ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন-

এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়/পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,/এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-/এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে। 

সুকান্ত ভট্টাচার্য

শুধু কবিতায় বিদ্রোহ নয়, বাস্তব জীবনেও বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেনএই কবি। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে তিনি শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির লড়াইকে নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছিলেন। খিদে পেটে বিদ্রোহী সুকান্ত লিখেছিলেন এমন সব পঙ্‌ক্তি যা আজও ধাক্কা দেয় সব মহলের পাঠকদের:

খাবার! খাবার! খানিকটা খাবার!/অসহায় মোরগ খাবারের সন্ধানে/বার বার চেষ্টা ক'রল প্রাসাদে ঢুকতে,/প্রত্যেকবারই তাড়া খেল প্রচণ্ড।

ছোট্ট মোরগ ঘাড় উঁচু করে স্বপ্ন দেখে-/'প্রাসাদের ভেতর রাশি রাশি খাবার'!

ক্ষুধার নির্মম বাস্তবতা তাঁকে তৈরি করেছিল এক সাহসী কবি হিসেবে, যিনি ভদ্রলোকের সাহিত্যচর্চার বাইরে গিয়ে সাহিত্যে নিয়ে এসেছেন ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ।

তাঁর অকালমৃত্যু বাংলা কবিতাকে বঞ্চিত করেছে। ১৯৪৭ সালের ১৩ মে, মাত্র ২১ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অসুস্থ শরীর, ভগ্নস্বাস্থ্য, কিন্তু অদম্য মানসিকতা—এই ছিল তাঁর জীবনের অন্তিম পরিচয়।

সাহিত্যকীর্তি

সুকান্তের সাহিত্যিক জীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু অমিত তেজে পরিপূর্ণ। সমালোচকদের মতে তাঁর কবিতায় ছন্দের কাঠামো নিখুঁত না হলেও তা ছিল লক্ষ্যভেদ করা একেকটা সফল শব্দের তীর।সুকান্তের গদ্যরচনা, বিশেষ করে কমিউনিস্ট আদর্শভিত্তিক প্রবন্ধ ও রাজনৈতিক লেখাগুলো তৎকালীন সময়ের সচেতন তরুণ সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

উত্তরাধিকার ও প্রাসঙ্গিকতা

যখনই আমরা দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকার তরুণের হাহাকার, অথবা রাষ্ট্রের নিপীড়ন—তখনই সুকান্ত আমাদের স্মরণে আসেন। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, কবিতা শুধু সৌন্দর্য নয়, কবিতা হতে পারে হাতিয়ার।

সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নও তিনি দেখিয়েছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কবিতায় যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন, তা আজও নিভে যায়নি।  প্রতি প্রজন্মের মাঝেঈ জ্বলতে থাকে সুকান্তের স্ফুলিঙ্গ, সুযোগ বুঝে জুলাই অভ্যুত্থানের মতো সেই স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে দাবানাল।

Ad 300x250

সম্পর্কিত