.png)

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আইন উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়িফাত টোমার-ইয়েরুশালমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক ফাঁস হওয়া ভিডিওকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা গভীর হওয়ায় এই ঘটনা নতুন মোড় নেয়। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করছে।

গাজায় ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ২৪ ঘণ্টা পার করেছে। মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন শিশু।

৩০০-র বেশি লেখক, শিক্ষাবিদ ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতামত বিভাগে লেখা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা একত্রে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন পত্রিকাটিকে গাজায় চলমান গণহত্যায় এর ভূমিকার জন্য দায়ী করতে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গঠিত গাজা শান্তি চুক্তি-র অংশ হিসেবে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে (আইএসএফ) সেনা পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। দেশটির সরকার ও সামরিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে এবং শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

হামাস আরও এক মৃত জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলকে হস্তান্তর করেছে। সোমবার পর্যন্ত মোট ১৬ জন জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া হলো। এর কয়েক ঘণ্টা আগে দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত হন। গাজায় যুদ্ধবিরতি পরিস্থিতি এখনো নাজুক বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতির পরও গাজা এখনো ফিরে আসা বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এলাকা হয়ে রয়েছে। ইসরায়েলের ফেলা অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলাবারুদ জীবনহানির পাশাপাশি পুনর্গঠনকেও বাধাগ্রস্ত করছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তৈরি হয়েছিল জাতিসংঘ। একুশ শতকে যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক মহামারির সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের ব্যর্থতা কারোরই অজানা নয়।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও সেখানে খাদ্য সংকট ‘বিপর্যয়কর’ অবস্থায় রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও )। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো ইসরায়লকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে প্রশংসা করছেন। নেতানিয়াহু অশ্রুসিক্ত চোখে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের স্বাগত জানাচ্ছেন। হামাসের নেতারা কাতারের দোহা অফিস থেকে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘প্রতিরোধ জয়ী হয়েছে।’ সবাই নিজেদের বিজয়ী ভাবছে।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের তুরমুস আয়ার কাছে একদল মুখোশধারী ইহুদি বসতি স্থাপনকারী গত রবিবার ফিলিস্তিনি জলপাই চাষি ও তাঁদের সঙ্গে থাকা কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা লাঠি ও পাথর দিয়ে আক্রমণ করে, তিনটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং অন্য গাড়ির জানালা ভাঙচুর করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যে নাজুক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং ২৩০ জনকে আহত করেছে। এই সময়টিতে দুই পক্ষের মধ্যে চলেছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ।

যেকোনো যুদ্ধবিরতি সাধারণত তখনই টেকে যখন সংঘাতরত দুই পক্ষ সামরিকভাবে অচলাবস্থায় পৌঁছে যায়। অথবা যখন উভয় পক্ষের কাছে যুদ্ধ থামানো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে বেশি লাভজনক মনে হয়। কিন্তু গাজার বাস্তবতায় এর কোনোটিই প্রযোজ্য নয়। গত দুই বছরের ভয়াবহতা যুদ্ধ নয়, বরং গণহত্যা।

দশকের পর দশক ধরে চলা প্রতিদিনের সহিংসতা ও দমননীতি এখনও বন্ধ হয়নি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে দখলদার শক্তির নৃশংসতা আরও বেড়েছে। আজ পশ্চিম তীরে জীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

গাজা উপত্যকায় আবার নতুন করে ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রোববার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানিয়েছে আল জাজিরা।

ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় কারাবন্দী নেতা মারওয়ান বারঘুতির পরিবার তার জীবন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলি কারারক্ষীদের হাতে বারঘুতি নির্মম প্রহারের শিকার হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে। তাঁর ছেলে আরব বারঘুতি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সরকার বন্দীদের,

ইসরায়েল গাজা থেকে ট্যাংক সরিয়ে নিয়েছে, যুদ্ধবিমানও অনেকটা নীরব। কিন্তু এর মানে এই নয় যে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, লক্ষাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে।