নারী বিশ্বকাপ ২০২৫-এর দল ঘোষণায় নতুন মুখের প্রধান্য দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। কলম্বোতে গতকাল (২ অক্টোবর) প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ম্যাচটি তারা জিতেছে ৭ উইকেট আর ১১৩ বল হাতে রেখে।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
নারী বিশ্বকাপ ২০২৫-এর দল ঘোষণায় নতুন মুখের প্রধান্য দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। কলম্বোতে গতকাল (২ অক্টোবর) প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ম্যাচটি তারা জিতেছে ৭ উইকেট আর ১১৩ বল হাতে রেখে।
ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় পাকিস্তান । বাংলাদেশি বোলাররা শুরুতেই জয়ের ভিত গড়ে দেয়। স্বর্ণা-মারুফাদের তোপে মাত্র ১২৯ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ফলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩০ রানের। দলীয় ৭ রানের মাথায় ফারজানা হককে (২) হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। শারমিন আক্তার ফেরেন ৩০ বলে ১০ রানের ধীর ইনিংস খেলে। এরপর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক। নিগার সুলতানাকে নিয়ে ৬২ আর সোবহানা মোস্তারির সঙ্গে ৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ বের করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। নিগার করেন ২৩ রান। ১৯ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন সোবহানা। হাফসেঞ্চুরিয়ান রুবাইয়া ৭৭ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
প্রস্তুতি ঘাটতি নিয়ে যাত্রা শুরু বিশ্বকাপের
দ্বিতীয়বারের মত নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুতে জয় পাওয়া ছিল দলের জন্য চমক। কিন্তু দল ঘোষণার আগে থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি—কোন কিছুই দলটির জন্য চমকপ্রদ কিংবা সুখকর ছিলো না। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ম্যাচ অনুশীলনের অভাব, এপ্রিলের পর থেকে প্রতিযোগিতামূলক ওডিআই না খেলা এবং অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেদের দলের কাছে হার—পুরোটাই ছিল হতাশার।
বিশ্বকাপে অংশ নিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এর আগের দিন আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে অংশ নেন তারা। ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। সেখানে প্রস্তুতি ঘাটতির কথা জানিয়েছিলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক।
বিশ্বকাপের আগে নারীদের লাল ও সবুজ দলকে হারায় অনূর্ধ্ব-১৫ পুরুষ দল। পরে সিরিজও জিতে নেয় ছেলেরা। সেই সিরিজে প্রস্তুতি ভালো হয়নি, স্বীকার করে জ্যোতি। তিনি বলেছিলেন, 'প্রস্তুতি আদর্শ হয়নি হয়তো। কিন্তু বাংলাদেশের যত সু্যোগ-সুবিধা ছিল সেটা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেটা হয়নি সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে জাতীয় দলের সবাই কিন্তু খেলে নাই। অনেককে বাইরে থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, আমরা আপ টু দ্য মার্ক পারফর্ম করতে পারিনি।'
প্রস্তুতিতে ঘাটতি হলেও বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন অধিনায়ক জ্যোতি। এরই ছাপ দেখা যায় বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে। এছাড়াও ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'পাকিস্তানে আমরা এক ম্যাচ ছাড়া সবগুলোতেই ২০০'র বেশি রান তুলেছিলাম, যদিও সাধারণত আমাদের গড় স্কোর ১৮০। এর মানে ব্যাটাররা ভালো উইকেটে বড় রান করতে সক্ষম। আমাদের বোলিং ইউনিটও খুব ভালো। সামনে চ্যালেঞ্জ আছে। তবে আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো উইকেটে খেলার সুযোগই আমাদের শক্তি।'
২০২২ বিশ্বকাপ: প্রাপ্তির অভিজ্ঞতা, অপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের জন্য ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ছিল প্রথম অভিষেক। প্রথমবারের মতো এমন বড় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়াটাই দলের কাছে বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। দল শুধু অংশ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেনি; নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে তারা নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছিল। এই জয় ছিল দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটি বড় প্রাপ্তি।
যদিও কাগজে-কলমে একাধিক জয়ের সুযোগ ছিল, ব্যাটিং পারফরম্যান্সের সীমাবদ্ধতার কারণে সংখ্যা দুই-তিন থেকে বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। অধিনায়ক জ্যোতি তখন মনে করতেন, ব্যাটিং আরও ভালো হলে আরও দুটি ম্যাচ জিততে পারতো দল। তিনি বলেছিলেন, ‘অ্যাজ এ টিম, আমরা ব্যাটিংটায় আরও ভালো করতে পারতাম, হয়তো আরও দুটি ম্যাচ জিততে পারতাম। তবে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কাপ হিসেবে এক্সপেরিয়েন্স অনেক হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে।’
দল তখন শিখেছিল— শুধু বড় দলগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেললে কেবল স্কিল উন্নয়ন হবে না, মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়াও সম্ভব। জ্যোতি তখন মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা তখন যে অবস্থানে ছিলাম, তাতে পেছনে তাকানোর আর অপশন ছিল না। ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে আমরা আমাদের কম্পিটিটিভ নেচার দেখিয়েছিলাম। আইসিসির এফটিপি-তে ঢুকে আমরা হোম এবং অ্যাওয়েতে আরও অনেক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলব। এতে আমরা আরও স্কিলফুল হতে পারব এবং ভালো আউটপুট দিতে পারব।’
অন্যদিকে, প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে অপ্রাপ্তিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়ে হলেও জয় হাতছাড়া হওয়া, এবং প্রত্যাশিত ব্যাটিং পারফরম্যান্সে পৌঁছাতে না পারা ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ।
২০২২ সালের পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই জয় এবং বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা এখন ২০২৫ সালে দলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। তার স্পষ্ট ছাপ পাওয়া গেছে এই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্থানের বিপক্ষে।
নিগার সুলতানা জ্যোতি (অধিনায়ক, উইকেটকিপার-ব্যাটার)
রাজশাহীর মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে পথপ্রদর্শক এক নাম। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকের পর দ্রুতই দলের অন্যতম ভরসায় পরিণত হন। ২০২১ সালে সব ফরম্যাটে অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিক বিশ্বমঞ্চে। ১০৯ টি-টোয়েন্টি ও ৫৯ ওয়ানডেতে খেলেছেন তিনি; টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ২১৬২ রান ও ওয়ানডেতে ১৩৪০ রান। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০০০+ টি-টোয়েন্টি রান ও ১০০ ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব তাঁর। দলের ব্যাটিং অর্ডারে স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের জন্য তিনি অনন্য।
নাহিদা আক্তার (সহ-অধিনায়ক, বাঁ-হাতি স্পিনার)
২৫ বছর বয়সী নাহিদা আক্তার বাংলাদেশের প্রধান স্পিন শক্তি। ধীরস্থির বোলিং অ্যাকশনে তিনি প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারদর্শী। ৯৪ টি-টোয়েন্টিতে ১০৭ উইকেট ও ৫৫ ওয়ানডেতে ৭১ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডেতে তাঁর সেরা বোলিং ৫/২১ এবং টি-টোয়েন্টিতে ৫/৮। বল হাতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য তিনি দলের সহ-অধিনায়ক ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলার।
ফারজানা হক পিঙ্কি (টপ অর্ডার ব্যাটার)
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটিং লাইনআপের স্তম্ভ ফারজানা হক পিঙ্কি। ওয়ানডেতে ৭৭ ম্যাচে করেছেন ১৮৮৩ রান, যার মধ্যে রয়েছে ২টি সেঞ্চুরি ও ১৫টি ফিফটি। তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী ব্যাটার যিনি ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছেন।
রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক (টপ অর্ডার ব্যাটার)
মাত্র কয়েকটি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেললেও অভিষেকেই নিজের সম্ভাবনার জানান দিয়েছেন রুবাইয়া ঝিলিক। ওয়ানডে অভিষেকেই অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ। বিসিবি নারী বিভাগের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ মনসুর রুবাইয়া হক নিয়ে দল ঘোষণার পর বলেন, 'রুবাইয়া তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই জায়গা অর্জন করেছেন। গত ছয় মাসে তার উন্নতি অসাধারণ। আমরা তাকে রিজার্ভ উইকেটরক্ষক এবং ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে একটি মূল্যবান বিকল্প হিসেবে দেখছি।'
শারমিন আক্তার সুপ্তা (ওপেনিং ব্যাটার)
ওপেনিংয়ে ভরসার নাম শারমিন আক্তার। ৪৭ ওয়ানডেতে করেছেন ১১৩৯ রান, যার মধ্যে রয়েছে ৮টি অর্ধশতক। লম্বা ইনিংস খেলার জন্য পরিচিত তিনি, যদিও এখনো সেঞ্চুরি পাননি। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলনামূলক কম হলেও বড় ম্যাচে ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে স্থিতিশীলতা এনে দেন।
সোবহানা মোস্তারি (মিডল অর্ডার ব্যাটার)
সোবহানা মোস্তারি ব্যাটিং মিডল অর্ডারের ভরসার জায়গা। ২৪ ওয়ানডে ও ৪৭ টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন। যদিও বড় ইনিংস এখনো নেই, তবে তাঁর আক্রমণাত্মক খেলার মানসিকতা দলের জন্য বাড়তি সুবিধা।
রিতু মনি (অলরাউন্ডার)
অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার রিতু মনি বোলিং ও ব্যাটিং দু’দিকেই দলের জন্য অবদান রাখেন। ওয়ানডেতে ৫৬০ রান ও ১৭ উইকেট, আর টি-টোয়েন্টিতে ৪৭২ রান ও ২৯ উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
স্বর্ণা আক্তার (অলরাউন্ডার)
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই দলে জায়গা করে নিয়েছেন স্বর্ণা আক্তার। ওয়ানডেতে ৭ উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে ১৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতেও ছোট ছোট ইনিংসে অবদান রাখছেন। ভবিষ্যতের লেগস্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁকে নিয়ে বড় আশা করছে বাংলাদেশ।
ফাহিমা খাতুন (লেগস্পিনার)
অভিজ্ঞ লেগস্পিনার ফাহিমা খাতুনের নাম বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশেষভাবে লেখা থাকবে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ৯২ টি-টোয়েন্টিতে ৬২ উইকেট ও ৫০ ওয়ানডেতে ৩৬ উইকেট নিয়েছেন। দলের স্পিন আক্রমণে অন্যতম ভরসা।
রাবেয়া খান (অলরাউন্ডার)
২০ বছর বয়সী রাবেয়া খান উদীয়মান লেগস্পিনার। ৩৭ টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট, গড় মাত্র ১৭। তাঁর ভ্যারিয়েশন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য ধাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাট হাতেও অবদান রাখার ক্ষমতা রাখেন।
মারুফা আক্তার (পেসার)
দলের গতি আক্রমণের নেতৃত্বে আছেন তরুণ মারুফা আক্তার। ২০ বছর বয়সেই বাংলাদেশ নারী দলের পেস আক্রমণের প্রধান ভরসা। ওয়ানডেতে ২২ ও টি-টোয়েন্টিতে ২০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। গতিময় বোলিংয়ে ম্যাচে ব্রেকথ্রু এনে দিতে সক্ষম।
ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা (পেসার)
বামহাতি পেসার তৃষ্ণা নতুন বলে দারুণ কার্যকর। যদিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ সংখ্যা কম, তবে ইতোমধ্যেই তাঁর উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য প্রমাণিত। টি-টোয়েন্টিতে ১৩ উইকেট ও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নিয়েছেন।
সানজিদা আক্তার মেঘলা (স্পিনার)
২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার সানজিদা মেঘলা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় এখনো সীমিত। তবে ২০ টি-টোয়েন্টিতে ১৮ উইকেট নিয়ে তিনি ভবিষ্যতের স্পিন আক্রমণের ভরসা হিসেবে উঠে আসছেন।
নিশিতা আক্তার নিশি (অফস্পিনার)
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন অফস্পিনার নিশিতা আক্তার। ৩ ওয়ানডেতে ৩ উইকেট নিয়ে সম্ভাবনা জাগিয়েছেন। নিশিতাকে নিয়ে সাজ্জাদ আহমেদ মনসুর বলেন, 'নিশিতা এখনও তরুণ, কিন্তু তিনি অসাধারণ পরিপক্কতার সঙ্গে বল করেন। তিনি ধারাবাহিক চাপের মুখে শান্ত থাকেন এবং বাঁ-হাতি ব্যাটারদের সামলানোর ক্ষমতা তাকে আরও ধারালো করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই অভিজ্ঞতা তার জন্য ভালো হবে এবং আমাদের স্পিন আক্রমণে গভীরতা যোগ করবে।'
সুমাইয়া আক্তার (অলরাউন্ডার)
১৯ বছর বয়সী সুমাইয়া আক্তার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক করেছেন সম্প্রতি। যদিও এখনো পরিসংখ্যান বলার মতো নয়, তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তিনি ছিলেন নিয়মিত পারফর্মার। সুমাইয়ার দলভুক্তি নিয়ে সাজ্জাদ আহমেদ মনসুর বলেছন, 'সুমাইয়া বেশ কিছুদিন ধরে দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন। তিনি ক্রিজে সময় কাটানোর এবং প্রয়োজনে ইনিংস ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা নিয়ে আসেন।'
পরবর্তী ম্যাচগুলোতে জয়ের সম্ভাবনা কতটা
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে যাত্রা শুরুর পর বাংলাদেশ নারী দল এখন গ্রুপপর্বের বাকি ছয় ম্যাচে কাকে হারাতে পারে সে প্রশ্ন নিয়েই ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ।
পরিসংখ্যান বলছে, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড একেবারেই হতাশাজনক। এ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলেছে ৫ ম্যাচ, সবকটিতেই হেরেছে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখনও জয় মেলেনি (৪ ম্যাচে হার)। তাই এই দুই দলের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। তবে সুখকর স্মৃতি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২০২২ বিশ্বকাপে লড়াই করেছিল।
একসময় ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ দিকে হারতে হয়। এই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে পারলে বড় দলের বিপক্ষে চমক দেখানোর সুযোগ রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে ৮ ওয়ানডে ম্যাচ, এর মধ্যে সবকটিতেই হেরেছে। কিন্তু ২০২২ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তারা স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত। সেই ম্যাচে ফারজানা–মুর্শিদার পার্টনারশিপ ম্যাচটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলে। তাই এবার নিরপেক্ষ ভেন্যুতে লড়াই জমে উঠতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড মোটামুটি ভালো। ১৫ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টিতে এবং বেশ কিছু ম্যাচে হাড্ডাহাডি লড়াই হয়েছে। বিশেষ করে ২০২২ বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচেই বড় চমক দিতে যাচ্ছিল, মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে হেরে যায়। সেই স্মৃতি এবারও অনুপ্রেরণা হতে পারে, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা সবসময় স্পিনে কিছুটা দুর্বল থাকে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ। দুই দল ১৩ ওয়ানডে খেলেছে, বাংলাদেশ জিতেছে ৪টিতে। সবচেয়ে বড় কথা, এবারের বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ১ রানে হারিয়েছে। তাই গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পাওয়া বাস্তবসম্মত লক্ষ্য।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে ১৪ ওয়ানডে ম্যাচ, এর মধ্যে জিতেছে মাত্র ১টিতে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সঙ্গে ম্যাচগুলো আগের মতো একপেশে থাকেনি। ২০২২ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে হেরেছিল ১১০ রানে, তবে সে ম্যাচে সালমা–নাহিদার বোলিং দারুণ লড়াই করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠে ভারতের সঙ্গে সবকটি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় বাংলাদেশের। একটি ম্যাচে সুপার ওভারে হেরে যায়। এসব অভিজ্ঞতা ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচকে এবারও বিশেষ উত্তেজনার করে তুলবে।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াইয়ে রয়েছে বড় সুযোগ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সম্ভাবনা মাঝারি। অন্যদিকে, ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হলে আপসেট ঘটাতে হবে বাংলাদেশ নারী দলকে।
নারী বিশ্বকাপ ২০২৫-এর দল ঘোষণায় নতুন মুখের প্রধান্য দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। কলম্বোতে গতকাল (২ অক্টোবর) প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ম্যাচটি তারা জিতেছে ৭ উইকেট আর ১১৩ বল হাতে রেখে।
ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় পাকিস্তান । বাংলাদেশি বোলাররা শুরুতেই জয়ের ভিত গড়ে দেয়। স্বর্ণা-মারুফাদের তোপে মাত্র ১২৯ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ফলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩০ রানের। দলীয় ৭ রানের মাথায় ফারজানা হককে (২) হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। শারমিন আক্তার ফেরেন ৩০ বলে ১০ রানের ধীর ইনিংস খেলে। এরপর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক। নিগার সুলতানাকে নিয়ে ৬২ আর সোবহানা মোস্তারির সঙ্গে ৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ বের করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। নিগার করেন ২৩ রান। ১৯ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন সোবহানা। হাফসেঞ্চুরিয়ান রুবাইয়া ৭৭ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
প্রস্তুতি ঘাটতি নিয়ে যাত্রা শুরু বিশ্বকাপের
দ্বিতীয়বারের মত নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুতে জয় পাওয়া ছিল দলের জন্য চমক। কিন্তু দল ঘোষণার আগে থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি—কোন কিছুই দলটির জন্য চমকপ্রদ কিংবা সুখকর ছিলো না। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ম্যাচ অনুশীলনের অভাব, এপ্রিলের পর থেকে প্রতিযোগিতামূলক ওডিআই না খেলা এবং অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেদের দলের কাছে হার—পুরোটাই ছিল হতাশার।
বিশ্বকাপে অংশ নিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এর আগের দিন আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে অংশ নেন তারা। ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। সেখানে প্রস্তুতি ঘাটতির কথা জানিয়েছিলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক।
বিশ্বকাপের আগে নারীদের লাল ও সবুজ দলকে হারায় অনূর্ধ্ব-১৫ পুরুষ দল। পরে সিরিজও জিতে নেয় ছেলেরা। সেই সিরিজে প্রস্তুতি ভালো হয়নি, স্বীকার করে জ্যোতি। তিনি বলেছিলেন, 'প্রস্তুতি আদর্শ হয়নি হয়তো। কিন্তু বাংলাদেশের যত সু্যোগ-সুবিধা ছিল সেটা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেটা হয়নি সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে জাতীয় দলের সবাই কিন্তু খেলে নাই। অনেককে বাইরে থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, আমরা আপ টু দ্য মার্ক পারফর্ম করতে পারিনি।'
প্রস্তুতিতে ঘাটতি হলেও বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন অধিনায়ক জ্যোতি। এরই ছাপ দেখা যায় বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে। এছাড়াও ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'পাকিস্তানে আমরা এক ম্যাচ ছাড়া সবগুলোতেই ২০০'র বেশি রান তুলেছিলাম, যদিও সাধারণত আমাদের গড় স্কোর ১৮০। এর মানে ব্যাটাররা ভালো উইকেটে বড় রান করতে সক্ষম। আমাদের বোলিং ইউনিটও খুব ভালো। সামনে চ্যালেঞ্জ আছে। তবে আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো উইকেটে খেলার সুযোগই আমাদের শক্তি।'
২০২২ বিশ্বকাপ: প্রাপ্তির অভিজ্ঞতা, অপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের জন্য ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ছিল প্রথম অভিষেক। প্রথমবারের মতো এমন বড় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়াটাই দলের কাছে বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। দল শুধু অংশ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেনি; নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে তারা নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছিল। এই জয় ছিল দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটি বড় প্রাপ্তি।
যদিও কাগজে-কলমে একাধিক জয়ের সুযোগ ছিল, ব্যাটিং পারফরম্যান্সের সীমাবদ্ধতার কারণে সংখ্যা দুই-তিন থেকে বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। অধিনায়ক জ্যোতি তখন মনে করতেন, ব্যাটিং আরও ভালো হলে আরও দুটি ম্যাচ জিততে পারতো দল। তিনি বলেছিলেন, ‘অ্যাজ এ টিম, আমরা ব্যাটিংটায় আরও ভালো করতে পারতাম, হয়তো আরও দুটি ম্যাচ জিততে পারতাম। তবে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কাপ হিসেবে এক্সপেরিয়েন্স অনেক হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে।’
দল তখন শিখেছিল— শুধু বড় দলগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেললে কেবল স্কিল উন্নয়ন হবে না, মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়াও সম্ভব। জ্যোতি তখন মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা তখন যে অবস্থানে ছিলাম, তাতে পেছনে তাকানোর আর অপশন ছিল না। ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে আমরা আমাদের কম্পিটিটিভ নেচার দেখিয়েছিলাম। আইসিসির এফটিপি-তে ঢুকে আমরা হোম এবং অ্যাওয়েতে আরও অনেক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলব। এতে আমরা আরও স্কিলফুল হতে পারব এবং ভালো আউটপুট দিতে পারব।’
অন্যদিকে, প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে অপ্রাপ্তিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়ে হলেও জয় হাতছাড়া হওয়া, এবং প্রত্যাশিত ব্যাটিং পারফরম্যান্সে পৌঁছাতে না পারা ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ।
২০২২ সালের পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই জয় এবং বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা এখন ২০২৫ সালে দলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। তার স্পষ্ট ছাপ পাওয়া গেছে এই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্থানের বিপক্ষে।
নিগার সুলতানা জ্যোতি (অধিনায়ক, উইকেটকিপার-ব্যাটার)
রাজশাহীর মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে পথপ্রদর্শক এক নাম। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকের পর দ্রুতই দলের অন্যতম ভরসায় পরিণত হন। ২০২১ সালে সব ফরম্যাটে অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিক বিশ্বমঞ্চে। ১০৯ টি-টোয়েন্টি ও ৫৯ ওয়ানডেতে খেলেছেন তিনি; টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ২১৬২ রান ও ওয়ানডেতে ১৩৪০ রান। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০০০+ টি-টোয়েন্টি রান ও ১০০ ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব তাঁর। দলের ব্যাটিং অর্ডারে স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের জন্য তিনি অনন্য।
নাহিদা আক্তার (সহ-অধিনায়ক, বাঁ-হাতি স্পিনার)
২৫ বছর বয়সী নাহিদা আক্তার বাংলাদেশের প্রধান স্পিন শক্তি। ধীরস্থির বোলিং অ্যাকশনে তিনি প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারদর্শী। ৯৪ টি-টোয়েন্টিতে ১০৭ উইকেট ও ৫৫ ওয়ানডেতে ৭১ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডেতে তাঁর সেরা বোলিং ৫/২১ এবং টি-টোয়েন্টিতে ৫/৮। বল হাতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য তিনি দলের সহ-অধিনায়ক ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলার।
ফারজানা হক পিঙ্কি (টপ অর্ডার ব্যাটার)
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটিং লাইনআপের স্তম্ভ ফারজানা হক পিঙ্কি। ওয়ানডেতে ৭৭ ম্যাচে করেছেন ১৮৮৩ রান, যার মধ্যে রয়েছে ২টি সেঞ্চুরি ও ১৫টি ফিফটি। তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী ব্যাটার যিনি ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছেন।
রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক (টপ অর্ডার ব্যাটার)
মাত্র কয়েকটি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেললেও অভিষেকেই নিজের সম্ভাবনার জানান দিয়েছেন রুবাইয়া ঝিলিক। ওয়ানডে অভিষেকেই অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ। বিসিবি নারী বিভাগের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ মনসুর রুবাইয়া হক নিয়ে দল ঘোষণার পর বলেন, 'রুবাইয়া তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই জায়গা অর্জন করেছেন। গত ছয় মাসে তার উন্নতি অসাধারণ। আমরা তাকে রিজার্ভ উইকেটরক্ষক এবং ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে একটি মূল্যবান বিকল্প হিসেবে দেখছি।'
শারমিন আক্তার সুপ্তা (ওপেনিং ব্যাটার)
ওপেনিংয়ে ভরসার নাম শারমিন আক্তার। ৪৭ ওয়ানডেতে করেছেন ১১৩৯ রান, যার মধ্যে রয়েছে ৮টি অর্ধশতক। লম্বা ইনিংস খেলার জন্য পরিচিত তিনি, যদিও এখনো সেঞ্চুরি পাননি। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলনামূলক কম হলেও বড় ম্যাচে ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে স্থিতিশীলতা এনে দেন।
সোবহানা মোস্তারি (মিডল অর্ডার ব্যাটার)
সোবহানা মোস্তারি ব্যাটিং মিডল অর্ডারের ভরসার জায়গা। ২৪ ওয়ানডে ও ৪৭ টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন। যদিও বড় ইনিংস এখনো নেই, তবে তাঁর আক্রমণাত্মক খেলার মানসিকতা দলের জন্য বাড়তি সুবিধা।
রিতু মনি (অলরাউন্ডার)
অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার রিতু মনি বোলিং ও ব্যাটিং দু’দিকেই দলের জন্য অবদান রাখেন। ওয়ানডেতে ৫৬০ রান ও ১৭ উইকেট, আর টি-টোয়েন্টিতে ৪৭২ রান ও ২৯ উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
স্বর্ণা আক্তার (অলরাউন্ডার)
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই দলে জায়গা করে নিয়েছেন স্বর্ণা আক্তার। ওয়ানডেতে ৭ উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে ১৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতেও ছোট ছোট ইনিংসে অবদান রাখছেন। ভবিষ্যতের লেগস্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁকে নিয়ে বড় আশা করছে বাংলাদেশ।
ফাহিমা খাতুন (লেগস্পিনার)
অভিজ্ঞ লেগস্পিনার ফাহিমা খাতুনের নাম বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশেষভাবে লেখা থাকবে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ৯২ টি-টোয়েন্টিতে ৬২ উইকেট ও ৫০ ওয়ানডেতে ৩৬ উইকেট নিয়েছেন। দলের স্পিন আক্রমণে অন্যতম ভরসা।
রাবেয়া খান (অলরাউন্ডার)
২০ বছর বয়সী রাবেয়া খান উদীয়মান লেগস্পিনার। ৩৭ টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট, গড় মাত্র ১৭। তাঁর ভ্যারিয়েশন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য ধাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাট হাতেও অবদান রাখার ক্ষমতা রাখেন।
মারুফা আক্তার (পেসার)
দলের গতি আক্রমণের নেতৃত্বে আছেন তরুণ মারুফা আক্তার। ২০ বছর বয়সেই বাংলাদেশ নারী দলের পেস আক্রমণের প্রধান ভরসা। ওয়ানডেতে ২২ ও টি-টোয়েন্টিতে ২০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। গতিময় বোলিংয়ে ম্যাচে ব্রেকথ্রু এনে দিতে সক্ষম।
ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা (পেসার)
বামহাতি পেসার তৃষ্ণা নতুন বলে দারুণ কার্যকর। যদিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ সংখ্যা কম, তবে ইতোমধ্যেই তাঁর উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য প্রমাণিত। টি-টোয়েন্টিতে ১৩ উইকেট ও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নিয়েছেন।
সানজিদা আক্তার মেঘলা (স্পিনার)
২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার সানজিদা মেঘলা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় এখনো সীমিত। তবে ২০ টি-টোয়েন্টিতে ১৮ উইকেট নিয়ে তিনি ভবিষ্যতের স্পিন আক্রমণের ভরসা হিসেবে উঠে আসছেন।
নিশিতা আক্তার নিশি (অফস্পিনার)
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন অফস্পিনার নিশিতা আক্তার। ৩ ওয়ানডেতে ৩ উইকেট নিয়ে সম্ভাবনা জাগিয়েছেন। নিশিতাকে নিয়ে সাজ্জাদ আহমেদ মনসুর বলেন, 'নিশিতা এখনও তরুণ, কিন্তু তিনি অসাধারণ পরিপক্কতার সঙ্গে বল করেন। তিনি ধারাবাহিক চাপের মুখে শান্ত থাকেন এবং বাঁ-হাতি ব্যাটারদের সামলানোর ক্ষমতা তাকে আরও ধারালো করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই অভিজ্ঞতা তার জন্য ভালো হবে এবং আমাদের স্পিন আক্রমণে গভীরতা যোগ করবে।'
সুমাইয়া আক্তার (অলরাউন্ডার)
১৯ বছর বয়সী সুমাইয়া আক্তার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক করেছেন সম্প্রতি। যদিও এখনো পরিসংখ্যান বলার মতো নয়, তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তিনি ছিলেন নিয়মিত পারফর্মার। সুমাইয়ার দলভুক্তি নিয়ে সাজ্জাদ আহমেদ মনসুর বলেছন, 'সুমাইয়া বেশ কিছুদিন ধরে দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন। তিনি ক্রিজে সময় কাটানোর এবং প্রয়োজনে ইনিংস ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা নিয়ে আসেন।'
পরবর্তী ম্যাচগুলোতে জয়ের সম্ভাবনা কতটা
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে যাত্রা শুরুর পর বাংলাদেশ নারী দল এখন গ্রুপপর্বের বাকি ছয় ম্যাচে কাকে হারাতে পারে সে প্রশ্ন নিয়েই ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ।
পরিসংখ্যান বলছে, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড একেবারেই হতাশাজনক। এ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলেছে ৫ ম্যাচ, সবকটিতেই হেরেছে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখনও জয় মেলেনি (৪ ম্যাচে হার)। তাই এই দুই দলের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। তবে সুখকর স্মৃতি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২০২২ বিশ্বকাপে লড়াই করেছিল।
একসময় ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ দিকে হারতে হয়। এই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে পারলে বড় দলের বিপক্ষে চমক দেখানোর সুযোগ রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে ৮ ওয়ানডে ম্যাচ, এর মধ্যে সবকটিতেই হেরেছে। কিন্তু ২০২২ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তারা স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত। সেই ম্যাচে ফারজানা–মুর্শিদার পার্টনারশিপ ম্যাচটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলে। তাই এবার নিরপেক্ষ ভেন্যুতে লড়াই জমে উঠতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড মোটামুটি ভালো। ১৫ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টিতে এবং বেশ কিছু ম্যাচে হাড্ডাহাডি লড়াই হয়েছে। বিশেষ করে ২০২২ বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচেই বড় চমক দিতে যাচ্ছিল, মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে হেরে যায়। সেই স্মৃতি এবারও অনুপ্রেরণা হতে পারে, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা সবসময় স্পিনে কিছুটা দুর্বল থাকে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ। দুই দল ১৩ ওয়ানডে খেলেছে, বাংলাদেশ জিতেছে ৪টিতে। সবচেয়ে বড় কথা, এবারের বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ১ রানে হারিয়েছে। তাই গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পাওয়া বাস্তবসম্মত লক্ষ্য।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে ১৪ ওয়ানডে ম্যাচ, এর মধ্যে জিতেছে মাত্র ১টিতে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সঙ্গে ম্যাচগুলো আগের মতো একপেশে থাকেনি। ২০২২ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে হেরেছিল ১১০ রানে, তবে সে ম্যাচে সালমা–নাহিদার বোলিং দারুণ লড়াই করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠে ভারতের সঙ্গে সবকটি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় বাংলাদেশের। একটি ম্যাচে সুপার ওভারে হেরে যায়। এসব অভিজ্ঞতা ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচকে এবারও বিশেষ উত্তেজনার করে তুলবে।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াইয়ে রয়েছে বড় সুযোগ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সম্ভাবনা মাঝারি। অন্যদিকে, ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হলে আপসেট ঘটাতে হবে বাংলাদেশ নারী দলকে।
আইসিসি নারী বিশ্বকাপে দূর্দান্ত সূচনা করেছে বাংলাদেশ। আজ কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগ্রেসরা।
১ দিন আগেবিসিবিতে মোট পরিচালকের পদ ২৫টি। তাদের মধ্যে ২৩ জন নির্বাচিত হন তিনটি ক্যাটাগরি থেকে। এ ছাড়াও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে সরাসরি পরিচালক হন দুইজন। ২৫ পরিচালক নির্বাচিত হয়ে গেলে বিসিবি সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে পরিচালক নির্বাচনের পর স
১ দিন আগেবাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন থেকে সরে গেলেন ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আজ বুধবার (১ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে এসে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তামিম।
২ দিন আগেটানা দুই দিন ধরে দেশের ক্রিকেট এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে সাকিব আল হাসানকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক। গতকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাকিবের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন।
৪ দিন আগে