leadT1ad

ব্যাঙের ব্যবচ্ছেদ কিংবা বাংলা হিউমারের কয়েকটা ইউনিক ভ্যারাইটি

হিউমার একটা সিরিয়াস বিষয়। খটকার মতো ঠেকলেও, কথাটা সত্যি। পলিটিক্সের হিউমার থাকে, হিউমারেরও থাকে পলিটিক্স। জোক হৌক কিংবা মিম, কমেডি মুভি কিংবা কমিক স্কেচ—- যেকোনো ফর্মের হিউমারে ক্ষমতা-সম্পর্কের প্রতিফলন থাকে, হিউমারে শত্রু-মিত্রের ভেদজ্ঞান থাকে। দুনিয়া, সমাজ বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতি হিউমারিস্টের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা ও বোঝাপড়ার প্রতিফলন থাকে। ফলে ফাইজলামিরও থাকে পলিটিকাল ইকোনমি।

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ২১: ২৮
ব্যাঙের ব্যবচ্ছেদ কিংবা বাংলা হিউমারের কয়েকটা ইউনিক ভ্যারাইটি। স্ট্রিম গ্রাফিক

হিউমার বিষয়ক বইপত্রে একটা কথা ঘুরেফিরে আসে। কথাটা আম্রিকান হিউমারিস্ট ই. বি. হোয়াইটের। হোয়াইট বলেন, ‘জোক বিশ্লেষণ করা আর ব্যাঙ ব্যবচ্ছেদ করা একই রকম। খুব কম লোকই কাজটায় আগ্রহী।আর ব্যাঙটাও খামাখা মারা যায়।’

গত ৮০ বছর ধইরা কথাটার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে যে মানুষ হিউমার বিষয়ক সিরিয়াস আলাপ, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুনতে খুব একটা আগ্রহী না। হিউমার বিষয়ক আলাপ হবে লঘু ও চটুল। এমন অনুচ্চারিত প্রত্যাশাই কমন। এই বিষয়ে সিরিয়াস হওয়াটা অনেকের কাছে হাস্যকর; বলা ভালো ‘হাইস্যকর’। যেন ক্লাসরুমে গোমড়ামুখের কোনো মাস্টারমশাই ডাস্টারে বাড়ি দিয়া বিরক্তিকর কিছু বলতেছেন। হিউমার বিষয়ে সিরিয়াস কথা বলা তাই একটা অফেন্সিভ অ্যাক্ট—গুরুতর গোস্তাকি; পাপ।

আমি অবশ্য কাজটায় আগ্রহী এবং এই পাপকর্মে সাগ্রহে লিপ্ত হই। জনাব হিউমার মারা গেলেও আমার কোনো সমস্যা নাই। হিউমারিস্টের ফানি হওয়ার দায় আছে; লোকেরে হাসানোর দায়িত্ব আছে। হিউমার বিষয়ে কথা বলুয়া বা আলাপকারীর সেই দায় নাই।

তো, জীবনানন্দীয় স্টাইলে, ‘চমৎকার! মারা যাক কয়েকটা ব্যাঙাচি এবার!’ বইলা শুরু করি।

তার আগে বলে নিই, বর্তমান লেখাটার উদ্দেশ্য সিম্পল। এই সময়ের বাংলাভাষী সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু হিউমার ব্র‍্যান্ডরে তুলে ধরা, কিঞ্চিৎ কমেন্টারি দেওয়া। কমেন্টারি দেওয়ার কারণ হিউমার একটা সিরিয়াস বিষয়। খটকার মতো ঠেকলেও, কথাটা সত্যি। পলিটিক্সের হিউমার থাকে, হিউমারেরও থাকে পলিটিক্স। জোক হৌক কিংবা মিম, কমেডি মুভি কিংবা কমিক স্কেচ—- যেকোনো ফর্মের হিউমারে ক্ষমতা-সম্পর্কের প্রতিফলন থাকে, হিউমারে শত্রু-মিত্রের ভেদজ্ঞান থাকে। দুনিয়া, সমাজ বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতি হিউমারিস্টের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা ও বোঝাপড়ার প্রতিফলন থাকে। ফলে ফাইজলামিরও থাকে পলিটিকাল ইকোনমি।

এই লেখার আরও একটা উদ্দেশ্য আছে। বিশেষত এই ইউনিক হিউমার ব্র‍্যান্ডগুলা বাংলা ভাষার প্রকাশভঙ্গিরে তলে তলে কিছুটা বদলায়ে ফেলতেছে কি না—তাও বাছবিচার করা। যদিও আমার তত্ত্ব ভাল্লাগে, লেখাটা যথাসম্ভব তত্ত্বের কচকচানিমুক্ত রাখতে চাইতেছি (সাদা চামড়ার হোয়াইট সাহেবও বেজার হবেন না)। তত্ত্বের কচকচানি অন্য কোনোখানে, অন্য কোনোদিনের জন্য মুলতবি রাখতেছি।

তুমি on1 সিএনজি হয়ে গেছো: মুরাদ টাকলা ভাষা

মুরাদ নামের কোনো ব্যক্তি বা টাক মাথার সাথে মুরাদ টাকলার কোনো সম্পর্ক নাই। কথাটা ‘মুরোদ থাকলে’র রোমান হরফীয় সংস্করণ।

২০১২ সালে জয়ন্ত কুমার নামে এক ভদ্রলোক এক ফেসবুক কমেন্টে বলেন, Murad takla jukti dia bal, faltu pic dicos kan! lakapara koira kata bal,।

জয়ন্ত কুমার বলতে চাইছিলেন, ‘মুরোদ থাকলে যুক্তি দিয়ে বল, ফালতু পিক দিছস কেন? লেখাপড়া কইরা কথা বল।’

রোমান হরফে লেখা এইরকম দুর্বোধ্য বাংলায় যে নানান অনিচ্ছাকৃত বিভ্রাট হয়, হাস্যরসের সৃষ্টি হয় তারই ডাকনাম হয়ে ওঠে টাকলা ভাষা বা মুরাদ টাকলা ভাষা। এই ধরণের ভাষা নিয়া কয়েকজন তরুণ খোলেন মুরাদ টাকলা নামের পেইজ।

মুরাদ টাকলা নামের সূচনাকারী সেই ঐতিহাসিক কমেন্টের স্ক্রিনশট
মুরাদ টাকলা নামের সূচনাকারী সেই ঐতিহাসিক কমেন্টের স্ক্রিনশট

আমি নিজে মুরাদ টাকলার হিউমারের ফ্যান না। এদেরকে বড় বেশি ‘বানাম বুল’ ধরা টাইপ উন্ন্যাসিক লাগে। কিন্তু আমার ভাল-মন্দ লাগায় কিছু যায়-আসে না; কারণ এই হিউমারের ভোক্তা ছিল বিশাল। তাছাড়া বাংলা নেটস্পিকে মুরাদ টাকলা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রেখে গেছে।

টাকলা ভাষার কিছু প্যাটার্ন ও প্রবণতা আছে। আমি শব্দটারে ‘ami’র বদলে ‘ame’ অথবা দেখাকে ‘dekha’র বদলে ‘daka’ লিখতে দেখা যায়। বাংলিশের a, e এবং i নিয়া কনফিউশনই টাকলা ভাষার গ্রামারের মূল। তাছাড়া o আর u বর্ণ দুইটাও টাকলাদের কাছে রহস্যময় জিনিস। v এর স্থলে b অথবা b এর জায়গায় v এর ব্যবহারও কমন। ‘জ’ এর উচ্চারণে j এর পরিবর্তে g দেখা যায় প্রচুর। টাকলাভাষীদের কাছে c -এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে প্রায়শ k ও s দুটি বর্ণকেই রিপ্লেস করে c।

জনপ্রিয়তা উদ্ভাবনারে উস্কায়। ফলে টাকলা ভাষায় ঘটছে জটিলসব উদ্ভাবন ও সাংকেতিক বিবর্তন। এতটাই জটিল যে প্রমিত ভাষায় অভ্যস্তদের কাছে এই ভাষা হিব্রুও মনে হইতে পারে। যেমন: ‘একসাথে’ কথাটার সাধারণ টাকলা ভার্শন aksata হইলেও, উদ্ভাবনী শক্তির জোরে সেইটাই হয়ে যায়, 17a!

স্মার্টফোনে বাংলা লেখা সহজ হয়ে আসায়, টাকলা ভাষার ব্যবহার কমছে। মুরাদ টাকলা পেইজও আর নাই। কিন্তু

বাংলা নেটস্পিকে মুরাদ টাকলার পষ্ট প্রভাব রয়ে গেছে। যেকোনো শব্দরে কিছুটা দুমড়ে-মুচড়ে, কিছু ধ্বনিগত বদলের মাধ্যমে একটা তীর্যক বাকভঙ্গির সৃষ্টিতে টাকলা ভাষা কাজে লাগে। ফলে তৈরি হয় প্রচুর আনইনটেন্ডেড পান।

সেদিন আমারে একজন বললো, তুমি অনেক সিএনজি হয়ে গেছো। আসলে টাকলার প্রভাবে কথ্য বাংলাই এখন কিছুটা সিএনজি হয়ে গেছে।

মাখম ও বরাপের দেশ মাতৃভূমি সুইজারল্যান্ড

ডেজাট, মাখম, বরাপ, ইউসুফ সরকারের মতো শব্দের জনপ্রিয়তার পেছনে আছে সুইজারল্যান্ড প্রবাসী (হাইপারলিংক) নামের পেইজ। হিউমার ব্র‍্যান্ড হিসেবে সুইজারল্যান্ড প্রবাসীর উত্থান ঘটছে রাতারাতি। হিউমারের এই ব্র্যান্ড এতই জনপ্রিয় যে পেইজের কয়েকটা ক্যারেক্টারের— ওসমান গনি, কামরুজ্জামান কামরুজ্জামান— নামে আলাদা পেইজও আছে।

সুইজ প্রবাসী ভাইদের এস্থেটিক ক্যাটাগরি মোটাদাগে কেমন?

আগে একটা নমুনা কন্টেন্ট দেখি।

কেউ কখনো মাখম রুটি খাইছেন কিনা জানিনা। বা জীবনে মাখম দেখছেন কিনা। জিনিসটা সিম্পেল। হয়ত বাংগালিদের জন্য জটিল। বাজারে বরফ করা পরটা থাকে। আমরা পুরা এক প্যাকেট হিসাব করে নিয়ে আসি। তাওয়া গরম দিয়ে পরোটা ভাজি। ভাজা হইলে জাস্ট একটা মাখমের টুকরা দিয়ে দেই রুটির উপর। কনসেপ একই। আপনারা পোড়া তেল ছিটান। গুড়ি ছিটান। আমরা মাখম ছিটাই। দেশটা যেমন উন্নত, খানাও তেমন উন্নত। আগামীকাল সুইজারল্যান্ড প্রবাসী সমিতির বার্ষিক নির্বাচন উপলক্ষে আমরা পার্টি করতেছি। যারা কখনো ভালো ভালো খাবার দেখেন নাই তারা নতুন নতুন খাবারের ছবি পেতে ভোট দিয়ে আমাকে সভাপতি করবেন। ঠিক কিনা?

ওসমান গণি

সুইজারল্যান্ড প্রবাসী

সুইজারল্যান্ড প্রবাসী পেইজে ‘মাখম রুটি’র ছবি
সুইজারল্যান্ড প্রবাসী পেইজে ‘মাখম রুটি’র ছবি

বিদেশে গেছে, নতুন পয়সা হইছে, ফলে দেখানদারির গরম আছে কিন্তু পুরানা পয়সাওয়ালাদের মতো খান্দান নাই; রুচির সফিস্টিকেশন নাই। স্যাটায়ারের এই ব্র‍্যান্ডরে তাই এক বাক্যে বলা যায়: ‘নতুন পয়সাওয়ালা, নিজেদেরকে কুল ভাবা, ইউরোপে অভিবাসী কিন্তু ক্ষ্যাত ‘ছোটলোক’-এর পয়সার গরম বা অতি-ম্যানার দেখানো নিয়া মকারি’।

পেইজটাতে এই ভঙ্গির ব্যতিক্রম দেখি নাই। এমনকি সুইজারল্যান্ড প্রবাসীর বিভিন্ন চরিত্রদের নামও নির্দিষ্ট একটা মেজাজ ও ক্লাসের। নিম্নমধ্যবিত্ত, মূলত মফস্বলী, পুরানা কালের, আনস্মার্ট নাম এদের। কামরুজ্জামান কামরুজ্জামান, আবুল কালাম, ওসমান গনি, হারুনুর রশীদ, গোলাপ মাহবুব। এহতেশাম বা আরিয়ান ধরণের নাম এই পেইজে নাই। ঠিক কিনা?

(**পাঠকের জন্য কুইজ: নামটা কামরুজ্জামান কামরুজ্জামান কেন?)

হু হু করে কেঁদে উঠে বললেন, ‘পুটুন এখন ভল্ডামটের নেয় ভয়ংকর’: মতিকন্ঠ

১. বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে আল্লামা আনু বললেন, এইটুক পযন্ত বলার পরই বাসদের আমীর ঐ খালকাটা খালেক আমায় ঘেটী ধরিয়া মাইকের সম্মুখ হইতে সরাইয়া আনিয়া বলল, আওলাদে মাও, তুই পুলাপানের সামনে এইসব বলিয়া খাটনি বাড়াইতেছিস কেনে? আদর্শের কথা বল নয়ত যা গিয়া। এই আচরন তার নিকট হইতে আশা করি নাই। তাই পুনরায় মাইক নিয়া বললাম, শুদু কাজের অভাবেই নহে, ভালবাসার অভাবেও পুলাপান জংগী হয়। তুমরা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নিয়মিত ভালবাসা কর ত?

২. ‘দেশের প্রভাবশালী এলাকা কারওয়ানবাজারের উপসর্দার ও আইভরী কোষ্ট ফিরত উপন্যাসিক ‘মা’র্কেজে কারওয়ানবাজার’ আল্লামা আমিষুল হক পুটুনদার বিরুদ্ধে ‘সেলফী নির্যাতনের’ অভিযোগ এনে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা বড় কৃকেটার বাংলাদেশের জান সাকিব আল হাসান বলেছেন, কুফামাষ্টার পুটুন আমায় সেলফী নির্যাতন করেছে। আমি এর বিচার চাই।’

নিউজ দুইটার প্রকাশক মতিকন্ঠ। পলিটিকাল ফেইক নিউজ সাইট মতিকন্ঠের ট্যাগলাইন ছিল, ‘সংবাদ বদলে দেয়।’ এই লিস্টের সবচে পুরনো সদস্য মতিকন্ঠের নামও জেন আলফাদের শোনার কথা না। আমার অনুমান জেনজিদের বড় একটা অংশও এই সাইটের নাম শুনে নাই।

মতিকন্ঠ করতো মূলত মকারি। মতিকন্ঠের মকারি কন্টেন্টের মোটামুটি স্থায়ী একটা রেসিপি ছিল। অতি-প্রমিত, ফর্মাল সংবাদপত্রের ভাষাভঙ্গির সাথে মেশান কয়েক চিমটি ভালগার, স্ট্রিট স্ল্যাং। সাথে নেন দুই চামচ সাধু-চলিতের খিচুড়ি। আরও মেশান পরিমিত পরিমাণে ‘মুসলমানী বাকভঙ্গি’। মতিকন্ঠে এই ভঙ্গির মানে আরবি-ফার্সি-গন্ধী সিন্ট্যাক্স বা শব্দ, যেমন: আওলাদে মাও, মার্কেজে কারওয়ানবাজার ইত্যাদি। সবগুলা একটা পাত্রে নিয়া ঘুটা দিন। ব্যাস! আপনি পেয়ে গেলেন স্যাটায়ারের মতিকন্ঠ সংস্করণ!

মতিকন্ঠের হিউমার মূলত ভাষাভিত্তিক ও ভঙ্গি-নির্ভর। লেখার সবকিছু হুবহু এক রাইখা ভাষাটা বদলায়ে দিলেই আর তেমন মজা লাগে না, কমিক ইফেক্ট থাকে না। এই লেখায় স্পেসের ঘাটতির কারণে সেই তর্জমায় গেলাম না। তাছাড়া আইডিওলজির দিক দিয়া মতিকন্ঠ ছিল আল্ট্রা সেক্যুলার ও আল্ট্রা-ন্যাশনালিস্ট। বর্তমান বাংলাদেশে মতিকন্ঠ থাকলে হয়তো ইসলামোফোব বইলা চিহ্নিত হইতো; ফতোয়া খাইলেও অবাক হইতাম না।

কয়েকদিন আগে মেঘমল্লার বসু ‘ঠিকানায় খালেদ মহিউদ্দিন’ অনুষ্ঠানে পিনাকি ভট্টাচার্যের নাম নেওয়ার সময় বলেন, আল্লামা পিনাকী। আলেম না, এমনকি সেকুলার মানুষজনের নামের আগেও আল্লামা বলার ট্রেন্ড চালু হইতে বড় ভূমিকা ছিল মতিকন্ঠের। পিনাকী যখন কোনো বড় ইনফ্লুয়েন্সার না, সেই ২০১১ সালের শুরুতে বিভিন্ন লোকরে (যেমন, আল্লামা আনু, আল্লামা মতিচুর রহমান) আল্লামা উপাধী দেওয়া পুরাদমে চালু রাখছিলো মতিকন্ঠ।

‘বাম’-এর লোকজন ‘ডান’ —এর লোকজনরে যে ভঙ্গিতে মক করে এখনও, তার একটা বড় অংশ মেজাজে মতিকণ্ঠীয়। প্রায় ১০ বছর আগে মতিকন্ঠ বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু বাংলা স্যাটায়ারে এই ভাষাভঙ্গির প্রভাব এখনও দেখা যায়।

খোকম ভাই ও মনিকাকার সাম্বাদিকতা: বানাম বুল-এর পলিটিক্স

সাংবাদিক মনিরুজ্জামান আর ছিনিয়র সাংবাদিক খোকন দুইটা সোশ্যাল মিডিয়া পার্সোনা। গদ্য-ভঙ্গি ও হিউমার একই মেজাজের হওয়ায় এদেরকে আমি একসাথে রাখতেছি। তাদের বায়োতেই তাদের কন্টেন্টের মেজাজ পষ্ট।

ছিনিয়র সাংবাদিক খোকন: ‘একমাএ পেশা ও নিশা সাংবাদিকতা’

সাংবাদিক মনিরুজ্জামান: ‘আমি সাংবাদিক মনিরুজ্জামান আর কেহ নহে’।

পাঠকের কাছে এরা যথাক্রমে খোকম ভাই ও মনিকাকা নামে পরিচিত। এদের স্যাটায়ার ভঙ্গির মূল জায়গা ভাষা ও বানানের রাজনীতি। লিখিত হিউমারে শিক্ষিত শ্রেণির বিশাল অংশের কাছে এখনও হাস্যরসের মানে ‘ছোটলোক’, খ্যাতপিপলের স্টুপিডিটি আর ‘বানাম বুল’। ফলে, ‘খোকম’ ভাই বা মনিকাকা আসলে বিশুদ্ধ রুচিরেও অস্বস্তি দেয়। খোকম আর মনিকাকার এস্থেটিক আইডিওলজি নির্ধারিত না। মাঝেমধ্যে, দুই-একটা কন্টেন্টে শিবিরের লোক মনে সন্দেহ হওয়া অস্বাভাবিক না, যেহেতু কন্টেন্টগুলা পরোক্ষে শিবিরের ন্যারেটিভরে সার্ভ করে; যদিও অধিকাংশ সময় তা নয়।

হুট কইরা মনিকাকা ও খোকম ভাইয়ের পেজে গেলে আপনি ভরকায়ে যাইতে পারেন। লেখায় চরম মাত্রার ‘বানাম বুল’। সাংবাদিক জীবন নিয়া মক, সিরিয়াস ভঙ্গিতে রসিকতা করে। কাউরে হয়তো ‘মরক পলাও’ খাওয়ায়। যাদের ‘ব্রেন্ট’ কম তাদেরকে নসিহত করে। প্রায়ই পরিচিত মুখদের দ্বিচারিতা উন্মোচন করে, ছদ্ম থ্রেট দেয়। আর বানানে থাকে না কোনো দাড়িকমা কিংবা বিরামচিহ্নের ব্যবহার।

প্রমিতের মাঝেমধ্যে টুকটাক ‘বানাম বুল’ করলে যে ইফেক্ট হয়, শব্দগুলা আলাদাভাবে চোখে লাগে; লাগাতার ভুল বানানে চলতে থাকলে এবং কোনোরকম বিরাম চিহ্ন না থাকলে তেমন হয় না। বিশেষত প্রমিতে অভ্যস্ত শিক্ষিতদের একটা বড় অংশের কাছে এই ভঙ্গি অস্বস্তিকর, হয়তো অনেকে এই ভঙ্গিতে মজাও পায় না। কিন্তু কোনো হিউমারই সকলের জন্য না। সকল হিউমার কোনো না কোনো নির্দিষ্টি অডিয়েন্সের জন্য। তবে এই অস্বস্তির মাধ্যমেই, বানান ভঙ্গি ও রুচির এক নতুন প্রবণতা ও সম্ভাবনা হাজির করে ছিনিয়র সাংবাদিক খোকম ও মনিকাকা।

সমজর বঝ, ভকচদর এই পজ থক দর থকন: সোবার

এই সাবহেড থেকে অনায়াসে অর্থ বের করতে পারলে, সে সোবারের সাথে পরিচিত, সোবারের ভাষাভঙ্গির সাথে পরিচিত। অন্যদিকে, হিব্রুর মতো ঠেকলে, অনুমান করা যায়, সে সোবারকে চেনে না।

এই লিস্টের সবচে পলিটিকালি ইনকারেক্ট পেইজ। তারুপ্রে, পলিটিকাল ইনকারেক্টনেস নিয়া তাদের কোনো চ্যাৎভ্যাৎও নাই। সোবার যদিও ঠিক চটি পেইজ না, তবে লিস্টের একমাত্র ‘গোপনে’ পড়ার পেইজ। সোশ্যাল ট্যাবু যেমন, নেশা, সেক্স, ঘুষ খাওয়া, অফিসের এইচআরকে ফাঁকি দেওয়া, সমাজে যেসব কাজ খ্রাপ বলে চিহ্নিত—সেইসব কাজই করে বেড়ায় সোবারের চরিত্রেরা, এমনকি এইগুলা যারা করে না, সোবার তাদেরকে ডাকে ‘সমাজের বোঝা’ হিসেবে। আর এইগুলা করতে গিয়া তৈরি হয় অদ্ভুত হাস্যরস। বর্তমান লেখায় যতগুলো পেইজ বা আইডির কথা বলছি, তাদের মধ্যে হিউমারের পাশাপাশি ক্যারেক্টারিজেশন, টুইস্ট ইত্যাদি অর্থাৎ স্টোরিটেলিং এবং পেইসিংয়ে সবচে ভালো সোবার।

ছদ্ম-সিরিয়াসনেসের মধ্যে আৎকা স্ট্রিট স্ল্যাংয়ের যৌথ প্রযোজনায় সোবারের ভাষা এক ধরণের মজা তৈরি করে। অনুচ্চার্য শব্দকে তারা সামান্য এদিক-সেদিক করে কিছুটা গ্রহণযোগ্য হিসেবে হাজির করে। সিগনেচার স্টাইলের কারণে খুব সিম্পল কথাবার্তাতেও সোবারের রেগুলার ফলোয়াররা মজা পায়। যেমন: ‘ব্রি সেবন করলাম। লালো ভাগছে।’ এমন সিম্পল পোস্টেও অনেক সোবারভক্ত মজা পায়। ইয়ুথের মধ্যে এদের কিছু শব্দবন্ধ ও বাক্য কাল্ট ক্লাসিকের মর্যাদা লাভ করছে। যেমন: ‘পুরুষের সবচে বড় শত্রু তার নানু।’ এইখানে আমি শেষ শব্দটা সামান্য বাদলায়ে দিছি। ব্রি, সুন্দ্রি, লালো ভাগছে, চাদারর্মোদ-এর মতো অনেক শব্দরে সোবার নিয়মিত প্যাটার্নে টুইস্ট করে, দুমড়ে-মুচড়ে ইঙ্গিতময় করে তোলে।

ট্যাবু টপিকের কন্টেন্ট হওয়ায় সোবারে ইউনিক একটা ইশারা ভাষা, ইরোটিক ইঙ্গিতময়তা দাঁড়াইছে। নানু, দাদুর মতো নৈমিত্তিক ও মামুলি শব্দও সোবারে ভিন্ন অর্থে হাজির হয়। আবার পেইজের জনপ্রিয়তার কারণেই মানুষের মুখে মুখে, সোশাল মিডিয়ার পাবলিক পোস্টে সেইসব মামুলি শব্দও ইরোটিক ইঙ্গিতময়তা নিয়া ঝুলে থাকে। এভাবে একটা গোপনে পড়ার পেইজ থেকে পাবলিক পরিসরে বাংলা শব্দ ও বাক্যে নতুন অর্থ ও ব্যঞ্জনা যুক্ত হয়।

লেখা শেষ করার আগে আরও দুই-একটা নোক্তা দেওয়া দরকার। আমি এই তালিকায় টেক্সট বেজড ব্র‍্যান্ড হিসেবে পেইজগুলা রাখছি, আর যাদের স্বতন্ত্র ভাষিক স্টাইল আছে এমন ব্র‍্যান্ডকে হাইলাইট করছি। ফলে মিম পেইজ বা অন্যান্য ফর্মের হিউমার ব্র্যান্ডরে রাখি নাই।

এই লিস্টে ইয়ার্কি বা বেঙ্গল বিটসের মতো প্ল্যাটফর্মকে রাখি নাই। যদিও এরা— বিশেষত ইয়ার্কি—লম্বা সময় ধরে বাংলা হিউমার কন্টেন্টের সবচে বড় প্রডিউসার ও কিউরেটর। রাখি নাই কারণ eআরকি লিখিত হিউমারের ভাষা, স্টাইল ও এস্থেটিক্স মূলত আলপিন- রস+আলো বা প্রথম আলো হিউমারেরই একটা ভ্যারাইটি; আলাদা কোনো ভাষিক এস্থেটিকস eআরর্কির নাই। এর বাইরে মিডিওকার বাংলাদেশি ডিজিটাল এজেন্সি, তানভীর এমবিইয়ে, BSPN কিংবা এখন বিলুপ্ত CNB Batas টাইপের পেইজের কথাও মেনশন করা দরকার। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মগুলা কন্টেন্ট মূলত নির্দিষ্ট নিশ সাবকালচারকে ঘিরে কন্টেন্ট প্রোডিউস করে। চ্যানেল ঢাকা চমৎকার হিউমার পেইজ কিন্তু তার সুইজারল্যান্ড প্রবাসীরই আরেকটা স্পিন-অফ; তাই এই লিস্টে রাখি নাই।

ডিয়ার রিডার, অনলাইনে এত লম্বা সময় ধরে কি আমাদের সঙ্গে আছেন? থাকলে আপনাকে প্রাণঢালা অভিননন্দন।

আপনার মতে, ইউনিক ভাষাভঙ্গির ও জনপ্রিয় কোন পেইজ বা হিউমার আইডি আমি মিস করছি? কমেন্টে জানান।

অথবা টাকলা ভাষায় বলা ভালো, কমান্ড কোরা পাসায় থাকুন।

Ad 300x250

জুলাই হত্যার বিচারে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’-এর পুনরাবৃত্তি হবে না: প্রেস সচিব

শিবির উপস্থিত থাকায় উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক থেকে ওয়াক আউট বামপন্থীদের একাংশের

এনসিপিসহ নতুন ১৬ দল নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক যাচাইয়ে উত্তীর্ণ

ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মী, পদে আছেন হত্যা মামলার আসামিও

উৎসবের ছোঁয়া লাগলেও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় বাংলাদেশের জন্য এখনো কঠিন

সম্পর্কিত