রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল শনিবার (১৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন’। এই সমাবেশে কয়েকটি দেশের শীর্ষ আলেম ও রাজনীতিবিদরা বক্তব্য রাখেন। তবে বক্তব্য দিতে গিয়ে দৃশ্যত বাধার মুখে পড়েন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
এ ঘটনায় সমাবেশ শেষ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। জামায়াতের কর্মী ও সমর্থক ও অন্য পক্ষ তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ ঘটনায় কার দায় তা নিয়েও চলছে নানামুখী আলাপ ও বিশ্লেষণ আর দোষারোপ। এর ভেতর আজ রোববার সকালে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, যারা সত্যিই জামায়াতে ইসলামীকে ভালোবাসেন, তারা যেন আলেম-ওলামাকে নিয়ে কোনো অশোভন মন্তব্য না করেন।
বক্তব্যে ‘বাধা’ দিয়ে ঘটনার শুরু
শনিবার ভোর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হতে থাকেন। আনুষ্ঠানিক সম্মেলন শুরু হয় সকাল নয়টায়। এরপর একে একে মঞ্চে অবস্থান নেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা। রফিকুল ইসলাম খানের বক্তব্যের সময় মঞ্চে পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল গফুর হায়দরির বাঁ পাশে চেয়ারে বসেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর আরেক পাশে ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তাঁর বাঁ পাশে ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। আর তাঁর পাশে ছিলেন সম্মেলনের আয়োজক মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ।
জামায়াতের রফিকুল ইসলাম খানের নাম ঘোষণার পরেই হেফাজতের আমিরকে উত্তেজিত ভঙ্গীতে কিছু বলতে দেখা যায়। এসময় আসন ছেড়ে রফিকুল ইসলাম খানের কাছে ছুটে যান মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ। তাঁকে এসময় উত্তেজিত হয়ে বলতে শোনা যায়, ‘না এই কথা বলতে হবে, না হয় পসিবলই না…।’ এরপর উপস্থিত অন্য আলেম ও নেতারা রফিকুল ইসলাম খানকে বক্তব্য দিতে মাইকের দিকে এগিয়ে দেন। কয়েকজন মধুপুরের পীরকে তাঁর আসনে নিয়ে যান।
অন্যদিকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘জনগণ যদি আমাদের নির্বাচিত করে, এই বাংলাদেশে কাদিয়ানিরা অমুসলিম ঘোষিত হবে ইনশাআল্লাহ। কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।’ তাঁর এ বক্তব্যের সময়ও হেফাজতের আমিরকে বেশ উত্তেজিত ভঙ্গীতে কিছু বলতে দেখা যায়। রফিকুল ইসলাম খানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে তাঁকে পাশ কাটিয়ে মাইকের কাছে ছুটে যেতে উদ্যত হন জমিয়তের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। অন্যরা এসময় তাঁকে ফিরিয়ে আনেন। অন্যদিকে হেফাজত আমিরকে শান্ত করতে এগিয়ে যেতে দেখা যায় হেফাজতের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও জমিয়ত নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব।
আদর্শিক দ্বন্দ্ব
প্রসঙ্গত, দেওবন্দি ধারার আলেমদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের আদর্শিক বিরোধ বেশ পুরনো। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদির ইসলামের ব্যাখ্যাকে বিতর্কিত মনে করেন দেওবন্দি ধারার আলেমরা। এ কারণে স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে দেওবন্দি ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজও জামায়াতের স্বতন্ত্র কোনো জোট হয়নি। তবে বিভিন্ন সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসলামপন্থী দলগুলোর নির্বাচনী জোট হয়েছে। সেখানে জামায়াতও ছিল। গত বছরের পাঁচ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে হেফাজত-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দলকে জামায়াত প্রায় অভিন্ন দাবির যুগপৎ আন্দোলনে টানতে পারলেও হেফাজতের শীর্ষ নেতারা এখনও দলটির প্রতি অনমনীয় রয়েছেন। অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম জামায়াতবিরোধী মনোভাব ধরে রেখে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার চেষ্টা করছে।
ফেসবুকে তীব্র সমালোচনা ও দায়
শনিবার দিনের ঘটনার পরে রাতে ও আজ রোববার সারা দিন ফেসবুকে জামায়াতের সমর্থক ও বিরোধী অনেকে মধুপুরের পীর, হেফাজত আমির এবং জমিয়তের সভাপতির তীব্র সমালোচনা করছেন। জামায়াত নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মেলনের মঞ্চে অসৌজন্য আচরণের দায় এই তিনজনকে দিচ্ছেন অনেকে। যদিও মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, জমিয়তের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক অসৌজন্য আচরণে তাঁদের দায় নেই বলে স্ট্রিমকে জানিয়েছেন। হেফাজত আমিরেরও কোনো দায় নেই বলে স্ট্রিমকে জানিয়েছেন মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব।
জামায়াতের সমর্থকদের তীব্র সমালোচনার বিষয়টি দলের ভেতর আলোচনা হয়। এর পর আজ রোববার পৌনে এগারোটায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দেন।
মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করে আজ সকালেই দেশে ফিরেছেন জামায়াতের আমির। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘যারা সত্যিই জামায়াতে ইসলামীকে ভালোবাসেন, তাদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা—কোনো বিজ্ঞ আলেম-ওলামাকে নিয়ে দয়া করে কোনো অশোভন মন্তব্য করবেন না।’
মঞ্চে থাকা জামায়াত নেতারা যা বলছেন
ওইদিন কী হয়েছিল জানার জন্য স্ট্রিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় রফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে। জানা যায়, সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জে চলে যান। রবিবার বিকেলেও তিনি বিভিন্ন নির্বাচনী অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছিলেন। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী বুলবুল আহমদ স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, ওই দিন তিনিও রফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে ছিলেন। ভাষণের আগে মধুপুরের পীর রফিকুল ইসলাম খানকে থামিয়ে ক্ষমতায় গেলে তাঁদের দাবি মানা হবে এই ঘোষণার নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।
ওই দিন মঞ্চের বাইরে থাকা বুলবুল আহমদ জানান, কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ তিনি লক্ষ্য করেননি।
সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলাম খান ছাড়াও অংশ নিয়েছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় উলামা বিভাগীয় কমিটির সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। মঞ্চে রফিকুল ইসলাম খানের পাশেই ছিলেন।
স্ট্রিমকে খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ‘আয়োজনটা ছিল সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের। রফিকুল ইসলাম খানের নাম ঘোষণার পরে হঠাৎ করে জমিয়তের উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব চট করে এসে প্রশ্ন তুলে উনাকে বক্তৃতা দিতে দেবে কেন। আমি যতটুকু আঁচ করতে পারলাম, মধুপুরের পীর সাহেব উনাকে থামানোর জন্য লাফ দিয়া আসছেন।’
‘খতমে নবুওয়তের প্রোগ্রামে তো জমিয়তের কারো মাতব্বরি দেখাতে আসা ঠিক না। খতমে নবুওয়তের আটজনের একটা টিম তাদের মহাসচিবসহ দাওয়াত দিলো চিঠি দিয়ে আমিরে জামায়াতকে।’ জামায়াতের আমির সেদিন বিদেশে থাকায় তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে রফিকুল ইসলাম খান মহাসম্মেলনে যান। খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ‘সেই হিসেবে সবাই তাঁকে রিসিভও করেছে। বসাইছেও সামনে। এখন উবায়দুল্লাহ ফারুকের টার্গেট কী, আল্লাহই ভালো জানেন কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।’
খলিলুর রহমান মাদানী জানান, মধুপুরের পীর এক দিকে উবায়দুল্লাহ ফারুককে থামিয়েছেন আরেকদিকে রফিকুল ইসলাম খানকে বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে খতমে নবুওয়তের দাবি বাস্তবায়ন করবেন এমন ঘোষণা দিতে হবে। রফিকুল ইসলাম খান তাঁর ভাষণে সেই ঘোষণাও দেন। খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ‘কিন্তু উবায়দুল্লাহ ফারুকের এটি পছন্দ হয়নি। হয়তো এতে উনাদের কোনো পার্টনার নাখোশ হবে। এ কারণে উনি আবার উঠছেন, তখন আবার পাবলিক তাঁকে টেনে ধরে বসিয়ে দিয়েছে।’
মধুপুরের পীর ও তাঁর ছেলেও দোষ চাপালেন জমিয়ত সভাপতির ওপর
খতমে নবুওয়ত সম্মেলন শেষে শনিবার রাতে মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ স্ট্রিমকে ফোনে বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম খানকে আমি বলতেছিলাম, আপনারা ক্ষমতায় এলে কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণা দেবেন কিনা এখানে আপনারা এটা জানাবেন। উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব উনাকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়াতে, কোন ভাষায় বলবো… ওই যে একটু ক্ষিপ্ত হয়েছেন।’
মধুপুরের পীর আরো জানান, সম্মেলনে তাঁরা জামায়াতকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, আয়োজনের সঙ্গে জমিয়তের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি বলেন, ‘জমিয়তের নেতারাও সম্মেলনে মেহমান হয়ে এসেছিলেন।’ উবায়দুল্লাহ ফারুকের ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মধুপুরের পীর বলেন, ‘এটা আমরা কেমনে বলবো, এটা উনারা জানে।’
উবায়দুল্লাহ ফারুকের সমালোচনা করে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন খোদ মধুপুরের পীরের ছেলে আবু আম্মার আবদুল্লাহও। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন সম্মেলনের দিন তিনি মঞ্চেই ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব জমিয়তের আমির হতে পারেন কিন্ত এই প্রোগ্রামের উনি একজন দাওয়াতি মেহমান। উনি সম্পূর্ণ সুন্দর একটি আয়োজনের মাঝে একটু হলেও দাগ দিয়ে দিলেন। পীরসাহেব হুজুর ওনাদের কারণেই জামায়াত সেক্রেটারিকে [সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল] চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে বলেন, আপনাকে আপনার বক্তব্যে বলতে হবে আপনারা ক্ষমতায় গেলে কাদিয়ানিকে কাফের ঘোষণা করবেন। এখানেই শেষ হয়ে যায় সব।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিন্ত উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব থামতে রাজি না। উনি কেনো আসলেন কে আনলো, তাকে বক্তব্য দেয়া হলো কেনো?—এইসব এক সঙ্গে বলতে লাগলে পরিবেশ ঘোলাটে হতে থাকে। এক পর্যায়ে জামায়াত সেক্রেটারির বক্তব্য থামাতে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে, তখন পীরসাহেব মধুপুর দ্বিতীয় বারের মত উঠে এসে ওনাকে বারন করেন। কিন্ত উনি সামনে চলে আসেন তখন আমি আরো দুই একজন বাধা দিই। পরে উনি চেয়ারে ফিরে যান, তখন জমিয়তের অনেকের এই বিষয়ে খারাপ লাগে।’
উবায়দুল্লাহ ফারুক সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘পীরসাহেব হুজুর ও হেফাজত আমিরকে ক্ষেপিয়ে তুলেন এই জমিয়ত মুরুব্বি, মনে হচ্ছিলো এই আয়োজনটিও তারাই করেছেন।’
যা বলছেন জমিয়ত সভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুক
ছবি ও ভিডিওতে উত্তেজিত ভঙ্গীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানকে পাশ কাটিয়ে মাইকের দিকে তাঁর ছুটে যাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়। জমিয়তের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফটো যেটা আসছে এটার মধ্যেও কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। উনি যখন বক্তব্য দিয়ে শেষ করে মাইক রেখে চলে আসছেন তখন আমি চেয়ার থেকে উঠছি। তখন উঠেছি মাইকে কিছু কথা বলার জন্য। তো উনারা মনে করেছেন আমি হয়তো ভিন্ন কোনো কথা বলবো। আমাদের লোকেরাই বললেন, হুজুর আপনার নাম যখন ঘোষণা হবে তখন কথা বলবেন, এখন কিছু বলার দরকার নেই।’
তবে তিনি একথাও জানান, রফিকুল ইসলাম খানকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়ায় মঞ্চে থাকা অনেকেই তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘মাহফিলে উনি বক্তব্য দেওয়ার সময় কিছু মানুষ ওখানে বলাবলি করছিলেন যে, উনাকে কেন বক্তব্য দিতে দিলো, উনার নাম কেন ঘোষণা করা হইলো, এইগুলা হইতেছিল। আমিতো আমার জায়গায় বসাই আছি। এরপরে উনি বক্তব্য দিছেন, বক্তব্য দিয়ে উনি পেছনে চলে আসছেন, পরে আমি উঠছি বক্তব্য দেওয়ার জন্য, তখন আমাদের লোকেরাই আমাকে বলেন, হুজুর এখন আর কথা বলবেন না। তারা ভাবছিলেন, আমি হয়তো প্রতিবাদ করবো বা এই-সেই।’
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক স্ট্রিমকে জানান, নাম ঘোষণা হলে তিনি বক্তব্যের সুযোগ পাবেন বলার পরে ফিরে এসে তিনি নিজের আসনে বসে যান। তিনি এ-ও জানান, জামায়াত নেতাকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়ায় তাঁর প্রতিবাদ করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান তাঁর বক্তব্যে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করবেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন এর ওপর যেন অটল থাকেন তা নিয়ে কথা বলতে।
উবায়দুল্লাহ ফারুক স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম এটা বলতে যে, উনারা ক্ষমতায় গেলে এটা করবেন বলছেন, আমরা সবাই এর সাক্ষী, যেন এটা করেন… এইভাবে কিছু কথা বলার ইচ্ছা ছিল। অর্থাৎ তাদের ওয়াদাটা যেন স্মরণ থাকে।’
জামায়াত নেতাকে কে, কেন দাওয়াত দিয়েছেন, কেন তাঁকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে—এই প্রশ্নগুলো তিনি মঞ্চে আলাপ করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘এইগুলা সবাই বলতেছিল, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ (বাবুনগরী) সাহেবসহ সেখানে থাকা অনেকেই এই কথা বলতেছিলেন। কার নাম বলবো, সবাই বলতেছিলেন উনাকে কে দাওয়াত দিলো?’ তবে এসব মন্তব্য তিনি করেননি বলে জানান মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তাঁর মতে, দাওয়াত দেওয়া আয়োজকদের কাজ। তিনি নিজেও সেখানে অতিথি হিসেবেই গিয়েছিলেন।
শনিবার অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের মূল আয়োজক মধুপুরের পীর হিসেবে খ্যাত মাওলানা আবদুল হামিদ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক সহসভাপতি, বর্তমানে তিনি এই রাজনৈতিক দলটির উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন।
অন্যদিকে হেফাজতের আমিরের কী ভূমিকা ছিল জানতে চাওয়া হলে ওই সময় মঞ্চে থাকা হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীবের কাছে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম খান একজন রাজনৈতিক নেতা, উনি যখন বক্তৃতা দিতে যাবেন তখন মধুপুরের পীর সাহেব উনার দিকে দৌড়ায়া আসছেন কথাটা বলার জন্য যে, কাদিয়ানি কাফের আপনাকে এটা বলতে হবে। সালাহউদ্দিন সাহেবের বক্তৃতার আগে তাঁকেও এই কথাটা বলেছেন তিনি।’
উবায়দুল্লাহ ফারুক ও জুনায়েদ বাবুনগরীর ভূমিকার ব্যাপারে বলতে গিয়ে তিনি বলেন,‘ফারুক সাহেব ও আমিরে হেফাজত তো উত্তেজিত হননি। মধুপুরের পীর সাহেব যখন দৌড়ে গেলেন তখন উনারা মনে করেছেন মধুপুরের পীর সাহেব বাধা দিতে গেছেন। পরে আমি যায়া বললাম যে, না বাধা দিতে যায় নাই, উনাকে ওই কথাটা বলার জন্য গেছে।’ কাউকে ক্ষিপ্ত হতে দেখেননি বলেও জানান মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব।