leadT1ad

বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধরা যেন নির্বাচনে দায়িত্বে না থাকে, ইসিকে বিএনপি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। সংগৃহীত ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সবার জন্য নিরাপদ এবং অংশগ্রহণমূলক করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আর এ জন্য আওয়ামী লীগ আমলে দায়িত্ব পালন করা বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ কেউ যেন নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকে, তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এসময়ে তিনি আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশ হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে যে শঙ্কা তা কেটে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব ডক্টর মোহাম্মদ জকরিয়া উপস্থিত ছিলেন।

‘বিএনপি ইসিতে ৩৬ দফা দাবি জমা দিয়েছে’ বলে আলোচনা উঠেছিল। তবে বিষয়টি নাকচ করে দেন দলটির জ্যেষ্ঠ এই নেতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনো দাবি জমা দেয়নি। এগুলো ছিল টকিং পয়েন্ট।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে নিয়ে এখানে আলোচনা করতে আসিনি। জাতির স্বার্থে আলোচনা করতে এসেছি। আমরা একটা পরিবর্তন চাই যে পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের জনগণের নির্ভয়ে চলতে পারবে। নিরাপদে ভোট দিতে পারবে।’

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ইসির দায়িত্ব পালন গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইসির নিজস্ব জনবল সীমিত, একদিনে বিরাট কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন শুধু কমিশনের পাঁচজন মিলে করতে পারবে না। এটা করতে ইসি সরকারের কাছে থেকে মিনিমাম ১০ লাখ কর্মকর্তা ধার করে নিয়ে আসে। এই ১০ লাখ জনবল সম্পর্কে জানতে এসেছি। এর একটি বিশাল অংশ সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ থেকে আসবে।’

বিগত তিন নির্বাচন, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যাদের চরিত্রহনন হয়েছে, তারা বিগত ১৫ মাসে ঠিক হয়ে যাবে এটা আশা করা ঠিক নয়। আমরা কমিশনকে সতর্ক করেছি এদের বিষয়ে সচেতন থাকবেন। বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ কেউ নির্বাচনে যেন অংশগ্রহণ না করতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছি।’

এনসিপির ভিন্নমতকে বিএনপি ‘সম্মান করে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে যদি ভিন্নমত না থাকে তবে, তা আরেকটি বাকশাল হবে।’

এসময় নির্বাচনী জোটের ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয় বিএনপির এই নেতাকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘জোট গণতন্ত্রের একটি প্রক্রিয়া যা নির্বাচনের আগে বা পরেও হতে পারে। আমাদের অবস্থান হলো আমরা বিএনপি ওপেন রয়েছি। যেকোনো সময় হতে পারে।’

বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট চায় বলেও জানান ড. আবদুল মঈন খান।

বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে বিএনপির ‘বিকল্প প্রস্তাব’-এর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বাস্তবতায় অনেক কিছুই করা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা বাস্তবভিত্তিক বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।’

আলোচনায় সিইসি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম।

কী আছে বিএনপির আলোচ্যসূচিতে

সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেরও এখন থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা চায় বিএনপি। দলটি বলছে, বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ‘অবৈধ নির্বাচনে’ সংশ্লিষ্ট সব বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের কোনো নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের অফিসারদের পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের (ইলেকশন সার্ভিস) মধ্যে থেকে দক্ষ, সৎ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছে বিএনপি।

নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পারসোনাল তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করা যাবে না বলেও দাবি করেছে বিএনপি।

দলটি বলছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে জুলাই-’২৪ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের নামে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলাগুলো নির্বাচনী সময়সূচি (তফসিল) জারির আগেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে।

নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক জেলার জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়; প্রত্যেক উপজেলা বা থানা এবং উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার কার্যালয়ে একটি করে অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র চালু করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। যার মাধ্যমে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রাপ্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে বা যত দ্রুত সম্ভব তা নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

ভোটারদের প্রভাবিত করে এরূপ ধর্মীয় প্রলোভন বা ধর্মীয় দণ্ড প্রদানের ভীতি প্রদর্শন রোধ করারও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ আইনানুগ স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে হবে। বিভিন্ন দেশে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দানে ইচ্ছুক রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলকে যৌক্তিক সময়ের আগেই সরবরাহ করতে হবে।

একইসঙ্গে নির্বাচন কেন্দ্র থেকে সরাসরি ফল ঘোষণার দাবি করেছে বিএনপি। এছাড়াও বিএনপি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সীমান্ত দিয়ে যেনো কোন অবৈধ অস্ত্র আসতে না পারে তার ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত