বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
স্ট্রিম ডেস্ক
কলকাতা সংলগ্ন উপ-শহরের ব্যস্ত এক বাণিজ্যিক এলাকায় ‘দলীয় দফতর’ খুলেছে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। সেখানে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে গত কয়েক মাস ধরে নতুন খোলা ওই অফিসে এখন যারা যাতায়াত করছেন তাদের বেশিরভাগই ওই এলাকায় নবাগত। তাঁরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ এবং মধ্যম স্তরের নেতা।
এর আগে, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যাঁরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দফতরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। বড় বৈঠকগুলো অবশ্য করতে হতো কোনো রেস্তোরাঁ বা হলরুম ভাড়া করে। সেকারণেই একটা নির্দিষ্ট 'পার্টি অফিসে’র দরকার ছিল বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
পার্টি অফিসের অন্দর-বাহির
বাণিজ্যিক ওই এলাকার পেছনের দিকের ভবনটির আট তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁদিকে গেলেই সারি সারি ব্যবসায়িক সংস্থার দফতর। করিডোরের দুদিকে হাল্কা বাদামী রঙের একের পর এক দরজা। তারমধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। শুধু বাইরে কেন, ৫০০ বা ৬০০ স্কয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি মারলেও কেউ বুঝতে পারবেন না যে এই ঘরটির সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে। ঘরটির বাইরে বা ভেতরের কোথাও নেই কোনো সাইনবোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।
‘বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতনভাবে। আমরা চাইনি এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দফতরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করতো এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার-টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি," বলছিলেন একজন আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনিই জানালেন, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই দফতরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনও হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতা-কর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো বড় হলরুম বা কোনো রেস্তোরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।
'পার্টি অফিসে' কারা আসেন?
গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রীই কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।
এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে। মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছিল যে অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়রসহ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় দুশো জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন।
এদের কেউ সপরিবারে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারও পরিবার মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যান।
"এখন যে সংখ্যাটা খুব বেশি বেড়েছে তা নয়। বর্তমানে দ্বাদশ সংসদের ৮০ জনের মতো সংসদ সদস্য এবং তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ১০-১২ জন নেতা আছেন এখানে। আবার এমনও কয়েকজন এসেছেন যারা কলকাতায় এসে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন," বলছিলেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।
সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশেপাশেই।
কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাদের প্রায় সবাই 'পার্টি অফিসে' যাতায়াত করে থাকেন।
"তবে অফিস খোলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যেরকম প্রয়োজন, সেরকমই আসেন নেতারা। আবার রোজই যে সবাই আসেন, তাও নয়। আসলে প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গা গড়ে তোলা, সে জন্যই এই পার্টি অফিস," জানাচ্ছিলেন ওই নেতা।
আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি দফতরের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ যে কিছু জানবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।
দলেরও কোন স্তরের নেতাকর্মীরা এই দফতরের ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায়নি।
কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এই দফতরের ব্যাপারে জানেন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় দফতর থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারতো না।
'কর্মীরা দেশে মার খাচ্ছেন, নেতারা কেন ভারতে?'
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মাঝে মাঝেই এই প্রশ্ন ওঠে যে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যখন দেশে মার খাচ্ছেন, গ্রেফতার হয়ে জেলে যাচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ কেন ভারতে পালিয়ে আছেন।
"এই প্রশ্ন ওঠা যে খুব অযৌক্তিক তা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৯৭১-এ যদি তখনকার নেতৃত্ব ভারতে চলে এসে প্রবাসী সরকার গঠন না করতেন, তাহলে কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হতো? আমি ৭১-এর সঙ্গে তুলনা করছি না বর্তমান সময়ের, কিন্তু এরকম উদাহরণ আমাদের দেশেও রয়েছে, অন্যান্য দেশেও আছে যে বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করে, শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেছেন নেতারা। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো বলুন বা আমাদের দেশের তারেক রহমান। সবাই তো বিদেশ থেকেই দল পরিচালনা করেছেন বা এখনও করছেন," বলছিলেন প্রাক্তন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।
তার প্রশ্ন, "দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হতো, মেরেও ফেলতে পারতো। কিন্তু তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক কাজকর্ম–বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, দলকে আবারও সংগঠিত করা – সেগুলো কি আমরা করতে পারতাম?"
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতিও ভারতে
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভারতে অবস্থান করছেন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। তিনি বলছিলেন, ‘দেশে থাকলেও যে গত এক বছরে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম তা নয়।‘
"হাজার হাজার ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থক তারা তো দেশে থেকেও ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না একবছর ধরে। তাদের ক্লাস করতে দেওয়া হয় না, তারা পরীক্ষা দিতে পারেন না, পাস করলেও সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে না। এদের সবার শিক্ষাক্রমটাই শেষ করে দেওয়া হয়েছে," বলছিলেন সাদ্দাম হোসেন।
"এটা যে শুধু ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে করা হচ্ছে তা নয়। আওয়ামী লীগ করেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও এই একই ঘটনা হচ্ছে। শুধু যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে, তাও নয়। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি বহু ছাত্রছাত্রী–শুধুমাত্র তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সন্তান বলে," বলছিলেন সাদ্দাম হোসেন।
নেতাকর্মীদের জীবনযাত্রা
যেসব নেতাকর্মীরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ব্যক্তিগত খরচের বিষয়টি এখন চলে আসছে। কীভাবে সেসবের জন্য অর্থের সংস্থান হচ্ছে? আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিবিসিকে বলেছেন, দেশে, বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্খীরাই তাদের খরচ চালাচ্ছেন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের কথায়, "যেসব নেতা-কর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তারাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ সাহায্য করছেন। কর্মীরা এখানে কষ্ট করেই আছেন, তবে মনোবলই আমাদের সম্বল।"
আরেক নেতা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলছিলেন, দেশ থেকে তার পরিবার-পরিজন এবং সহকর্মীরা প্রয়োজন মতো অর্থ পাঠিয়ে দেন।
"তবে এই একবছরে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে," বলছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। তার কথায়, "আমরা যে এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি, বা ৭১-এর যুদ্ধের সময়ের মতো শরণার্থী শিবিরে থাকছি তা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা ছিল, সে সবই পরিবর্তন করতে হয়েছে। যারা ঢাকায় হয়তো গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাদের এখন কলকাতার গণ-পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।
"যেমন আমি একটি ফ্ল্যাটে আরও তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাসে, ট্রেনে বা মেট্রো রেলে যাতায়াত করি। আবার সহকর্মীদের মোটরসাইকেল বা বাইকেও চেপে ঘোরাঘুরি করি। যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কোথাও যেতে হয়, তখন হয়তো ট্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে নিলে গায়ে লাগে না। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়," বলছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ।
কিন্তু কতদিন থাকবেন তারা দেশ ছেড়ে? ওবায়েদুল কাদের বলছেন, "দিনক্ষণ ঠিক করে ওভাবে তো রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।"
কলকাতা সংলগ্ন উপ-শহরের ব্যস্ত এক বাণিজ্যিক এলাকায় ‘দলীয় দফতর’ খুলেছে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। সেখানে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে গত কয়েক মাস ধরে নতুন খোলা ওই অফিসে এখন যারা যাতায়াত করছেন তাদের বেশিরভাগই ওই এলাকায় নবাগত। তাঁরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ এবং মধ্যম স্তরের নেতা।
এর আগে, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যাঁরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দফতরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। বড় বৈঠকগুলো অবশ্য করতে হতো কোনো রেস্তোরাঁ বা হলরুম ভাড়া করে। সেকারণেই একটা নির্দিষ্ট 'পার্টি অফিসে’র দরকার ছিল বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
পার্টি অফিসের অন্দর-বাহির
বাণিজ্যিক ওই এলাকার পেছনের দিকের ভবনটির আট তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁদিকে গেলেই সারি সারি ব্যবসায়িক সংস্থার দফতর। করিডোরের দুদিকে হাল্কা বাদামী রঙের একের পর এক দরজা। তারমধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। শুধু বাইরে কেন, ৫০০ বা ৬০০ স্কয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি মারলেও কেউ বুঝতে পারবেন না যে এই ঘরটির সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে। ঘরটির বাইরে বা ভেতরের কোথাও নেই কোনো সাইনবোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।
‘বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতনভাবে। আমরা চাইনি এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দফতরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করতো এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার-টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি," বলছিলেন একজন আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনিই জানালেন, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই দফতরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনও হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতা-কর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো বড় হলরুম বা কোনো রেস্তোরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।
'পার্টি অফিসে' কারা আসেন?
গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রীই কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।
এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে। মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছিল যে অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়রসহ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় দুশো জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন।
এদের কেউ সপরিবারে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারও পরিবার মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যান।
"এখন যে সংখ্যাটা খুব বেশি বেড়েছে তা নয়। বর্তমানে দ্বাদশ সংসদের ৮০ জনের মতো সংসদ সদস্য এবং তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ১০-১২ জন নেতা আছেন এখানে। আবার এমনও কয়েকজন এসেছেন যারা কলকাতায় এসে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন," বলছিলেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।
সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশেপাশেই।
কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাদের প্রায় সবাই 'পার্টি অফিসে' যাতায়াত করে থাকেন।
"তবে অফিস খোলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যেরকম প্রয়োজন, সেরকমই আসেন নেতারা। আবার রোজই যে সবাই আসেন, তাও নয়। আসলে প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গা গড়ে তোলা, সে জন্যই এই পার্টি অফিস," জানাচ্ছিলেন ওই নেতা।
আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি দফতরের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ যে কিছু জানবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।
দলেরও কোন স্তরের নেতাকর্মীরা এই দফতরের ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায়নি।
কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এই দফতরের ব্যাপারে জানেন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় দফতর থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারতো না।
'কর্মীরা দেশে মার খাচ্ছেন, নেতারা কেন ভারতে?'
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মাঝে মাঝেই এই প্রশ্ন ওঠে যে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যখন দেশে মার খাচ্ছেন, গ্রেফতার হয়ে জেলে যাচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ কেন ভারতে পালিয়ে আছেন।
"এই প্রশ্ন ওঠা যে খুব অযৌক্তিক তা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৯৭১-এ যদি তখনকার নেতৃত্ব ভারতে চলে এসে প্রবাসী সরকার গঠন না করতেন, তাহলে কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হতো? আমি ৭১-এর সঙ্গে তুলনা করছি না বর্তমান সময়ের, কিন্তু এরকম উদাহরণ আমাদের দেশেও রয়েছে, অন্যান্য দেশেও আছে যে বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করে, শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেছেন নেতারা। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো বলুন বা আমাদের দেশের তারেক রহমান। সবাই তো বিদেশ থেকেই দল পরিচালনা করেছেন বা এখনও করছেন," বলছিলেন প্রাক্তন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।
তার প্রশ্ন, "দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হতো, মেরেও ফেলতে পারতো। কিন্তু তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক কাজকর্ম–বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, দলকে আবারও সংগঠিত করা – সেগুলো কি আমরা করতে পারতাম?"
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতিও ভারতে
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভারতে অবস্থান করছেন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। তিনি বলছিলেন, ‘দেশে থাকলেও যে গত এক বছরে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম তা নয়।‘
"হাজার হাজার ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থক তারা তো দেশে থেকেও ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না একবছর ধরে। তাদের ক্লাস করতে দেওয়া হয় না, তারা পরীক্ষা দিতে পারেন না, পাস করলেও সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে না। এদের সবার শিক্ষাক্রমটাই শেষ করে দেওয়া হয়েছে," বলছিলেন সাদ্দাম হোসেন।
"এটা যে শুধু ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে করা হচ্ছে তা নয়। আওয়ামী লীগ করেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও এই একই ঘটনা হচ্ছে। শুধু যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে, তাও নয়। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি বহু ছাত্রছাত্রী–শুধুমাত্র তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সন্তান বলে," বলছিলেন সাদ্দাম হোসেন।
নেতাকর্মীদের জীবনযাত্রা
যেসব নেতাকর্মীরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ব্যক্তিগত খরচের বিষয়টি এখন চলে আসছে। কীভাবে সেসবের জন্য অর্থের সংস্থান হচ্ছে? আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিবিসিকে বলেছেন, দেশে, বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্খীরাই তাদের খরচ চালাচ্ছেন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের কথায়, "যেসব নেতা-কর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তারাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ সাহায্য করছেন। কর্মীরা এখানে কষ্ট করেই আছেন, তবে মনোবলই আমাদের সম্বল।"
আরেক নেতা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলছিলেন, দেশ থেকে তার পরিবার-পরিজন এবং সহকর্মীরা প্রয়োজন মতো অর্থ পাঠিয়ে দেন।
"তবে এই একবছরে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে," বলছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। তার কথায়, "আমরা যে এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি, বা ৭১-এর যুদ্ধের সময়ের মতো শরণার্থী শিবিরে থাকছি তা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা ছিল, সে সবই পরিবর্তন করতে হয়েছে। যারা ঢাকায় হয়তো গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাদের এখন কলকাতার গণ-পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।
"যেমন আমি একটি ফ্ল্যাটে আরও তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাসে, ট্রেনে বা মেট্রো রেলে যাতায়াত করি। আবার সহকর্মীদের মোটরসাইকেল বা বাইকেও চেপে ঘোরাঘুরি করি। যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কোথাও যেতে হয়, তখন হয়তো ট্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে নিলে গায়ে লাগে না। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়," বলছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ।
কিন্তু কতদিন থাকবেন তারা দেশ ছেড়ে? ওবায়েদুল কাদের বলছেন, "দিনক্ষণ ঠিক করে ওভাবে তো রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১৮টি হলে নতুন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
২ ঘণ্টা আগেগত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে।
৮ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে ছাত্রশিবির ও বামপন্থী সংগঠনগুলো। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি ‘একাত্তর প্রশ্ন’ সমাধান না করে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করার বৈধতা নেই। অন্যদিকে শিবির বলছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ জনতাকে ‘পাকিস্তানি’, ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিয়ে বিভক্ত করতে চাচ্ছে বামপন্থীরা।
১৮ ঘণ্টা আগেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বছরই দেশে আসবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ূন কবির
১৮ ঘণ্টা আগে