ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে একই সময়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপির দুই গ্রুপ। এতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে এলাকায়।
একদিকে ফরিদপুর–১ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলাম নাসিরের অনুসারীরা নবগঠিত উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটিকে সংবর্ধনা ও আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে একই আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর নেতৃত্বাধীন গ্রুপ কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সংগঠনের ভেতরে বিভাজন স্পষ্ট হয়। এরপর থেকে ঝুনু মিয়া গ্রুপ একাধিক বিক্ষোভ, মশাল মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। তাঁদের অভিযোগ, নতুন কমিটিতে আওয়ামী লীগপন্থী ও অচেনা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অথচ ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন।
অন্যদিকে নাসির গ্রুপের দাবি, নতুন কমিটি দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে অনুমোদিত। যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যস্ত। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিজেদের ‘দলের বৈধ নেতৃত্ব’ প্রমাণে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে আলফাডাঙ্গা জুড়ে। প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘নেতারা এখন শুধু নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে ব্যস্ত। হরতাল–সংবর্ধনার রাজনীতিতে ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষেরই।’
‘যে দলে এখন নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে মিছিল করে, তারা কীভাবে এই আসনে জয়লাভ করবে?’, বলছিলেন স্থানীয় এক তরুণ রাজনৈতিক কর্মী।
স্থানীয় এক শিক্ষকও নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আলফাডাঙ্গার বিএনপি এখন জনগণের নয়, ব্যক্তির দলে পরিণত হয়েছে। দল নয়, মনোনয়নই এখন তাদের রাজনীতির মূল কেন্দ্র।’
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান আব্বাস বলেন, ‘নবগঠিত কমিটিকে বিএনপি কর্মী-সমর্থকেরা সংবর্ধনা ও আনন্দ মিছিল দেবে। আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন বলেন, ‘বর্তমান নবগঠিত কমিটি সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আদর্শের কেউ এখানে স্থান পায়নি। তাই আমরা আগামীকাল বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বলেন, ‘বিষয়টি এখনো জানি না। তবে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঠিক নয়। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে, ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, ‘বিএনপির দুই গ্রুপই কর্মসূচি দিয়েছে। এটা তাদের দলীয় বিষয়। জানামতে এক গ্রুপ সকালে, আরেক গ্রুপ বিকেলে কর্মসূচি পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সতর্ক থাকবে। কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’