leadT1ad

গণভোট ছাড়া কোনোভাবেই নির্বাচন নয়

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪২
পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে বড় সমাবেশ করেছে জামায়াতসহ সমমনা আট দল। সংগৃহীত ছবি

পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে বড় সমাবেশ করেছে জামায়াতসহ সমমনা আট দল। পল্টন মোড়ে ডাক দেওয়া এই সমাবেশে দুপুর থেকেই ব্যাপক জনসমাগম হয়। সমাবেশ থেকে আট দলের শীর্ষ নেতারা আগে গণভোট ছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই জাতীয় আইনি ভিত্তি ছাড়া ছাব্বিশ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই। আট দল তাদের দাবির ব্যাপারে ‘হিমালয়ের মতো’ অনড় থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে তাঁরা আর কিছুই বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। আগামী ১৩ নভেম্বর গণভোটকে কেন্দ্র করে সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাঁরা তাকিয়ে আছেন। একই দিনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ডাক দেওয়া লকডাউন প্রতিহত করা হবে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন না দিলে সেই নির্বাচনই অবৈধ হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

সমাবেশের শুরুতে আট দলের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, তাঁরা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান চেয়েছিলেন, কিন্তু বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে জনতার আকাঙ্ক্ষাকে সরকার উপেক্ষা করছে। এ কারণে জুলাই সনদের বাস্তয়ানে আদেশ জারি ও নির্বাচনের আগে গণভোট চেয়ে আন্দোলন করছে আট দল।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে, নির্বাচনের আগে গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়।’ এসময় সাবধান করে দিয়ে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সরকারকে বলতে চাই, অনেক দেরি করে ফেলেছেন, আমরা চাই না এখান থেকে যমুনা ঘেরাও করতে হোক, অনতিবিলম্বে আদেশ জারি করেন, গণভোটের তফসিল দেন।’

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সংগৃহীত ছবি

আট দলের এই সমন্বয়ক বলেছেন তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আগামীতে আন্দোলনকে আরও জোরদার করা হবে।

মঙ্গলবার পল্টন মোড় থেকে শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, নাইটেঙ্গেল, নয়া পল্টন, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, মৎসভবন এলাকায় সমাবেশ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর থেকেই রাজনৈতিক কর্মীরা সমাবেশের দিকে মিছিল সহকারে এগিয়ে যেতে থাকেন।

বিপ্লব না মানলে ছাব্বিশ সালে নির্বাচন নাই

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দাবি খুব বেশি নয়, দাবি কম, খুবই সুস্পষ্ট। ১ নম্বর দাবি হচ্ছে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে, যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ছাব্বিশ সালে কোনো নির্বাচন নাই। ছব্বিশের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘এদেশের মুক্তিকামী মানুষের কথা একটাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে। গণভোটের ব্যাপারে সব দল একমত, তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন? একমত হয়ে যখন স্বাক্ষর করেছি সবাই, তখন গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়ে আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশা আল্লাহ। এবং এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে তখন আর কোনো সংশয়-সন্দেহ থাকবে না। আমরা চাই, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দাবির ব্যাপারে আমরা হিমালয়ের মতো অনড় থাকব।’ যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি মানা না হবে, আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলবে বলেও জানান তিনি।

সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে নির্বাচনই অবৈধ হবে

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি জাতীয় নির্বাচনের আগেই দিতে হবে, সমস্ত রাজনৈতিক দল গণভোটের ব্যাপারে একমত হয়েছে, কিন্তু কয়েকবার দেশ পরিচালনা করা বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোটের প্রস্তাব রেখেছে—এসব উল্লেখ করে সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন না দিলে সেই নির্বাচনই অবৈধ হবে।

চরমোনাইপীর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি অনুরোধ করছি, আপনারা যখন আমেরিকায় গিয়েছিলেন তখন তিনটা দলকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি আর এনসিপি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে আপনাদের কোন প্রক্রিয়া কোন হিসাব লাগবে? অঙ্ক শেখাতে হবে? এনসিপিও চায় গণভোট আগে হবে তারপর জাতীয় নির্বাচন হবে। জামায়াতও চায় আগে গণভোট পরে জাতীয় নির্বাচন হবে। শুধু একটা দল বিএনপি গণভোট চায় জাতীয় নির্বাচনের দিন। বাংলাদেশে মানুষ বুঝে গেছে আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো না।’

পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে বড় সমাবেশ করেছে জামায়াতসহ সমমনা আট দল। সংগৃহীত ছবি১
পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে বড় সমাবেশ করেছে জামায়াতসহ সমমনা আট দল। সংগৃহীত ছবি১

নির্বাচনের আগে গণভোটের বিকল্প নেই

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, আইনি ভিত্তি ও নির্বাচনের আগে গণভোট প্রসঙ্গে সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘জুলাই সনদকে আমরা কোনো কাগুজে সনদ হিসেবে দেখতে চাই না; আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই। এ জন্য আমরা বলেছি, সরকারি আদেশের ভিত্তিতে এর প্রাথমিক আইন ভিত্তি দিতে হবে। এরপরে জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে জুলাই বিপ্লবপন্থীরা সেটা বরদাশত করবে না, মানবে না।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে আমরা আর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হতে দিবো না।’

মামুনুল হক বলেন, ‘আগামী ১৩ তারিখ জুলাই সনদের গণভোটকে কেন্দ্র করে সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। সরকার যদি জনগণের শান্তিপ্রিয় ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়, সরকার আট দলের নেতৃবৃন্দের শান্তিপ্রিয় ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হলে যে ভাষায় বললে সরকার বুঝবে, আমরা সেই ভাষাই প্রয়োগ করব, কর্মসূচি ঘোষণা করবো ইনশা আল্লাহ। যুদ্ধ করে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করেছি, যুদ্ধ করেই বাংলার মানুষের অধিকার আদায় করে ছাড়বো ইনশা আল্লাহ।’

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, নির্বাচনের আগে গণভোট দিতেই হবে।’ ইসলামপন্থী দলগুলোর ঐক্যের কারণে পাড়ায় পাড়ায় গণভোটের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজি বলেন, গণভোটের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের দাফন সম্পন্ন করেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, প্রতীক নির্ভর জাতীয় নির্বাচনের দিনে প্রশ্ন নির্ভর গণভোটের আয়োজন করে জুলাই অভ্যুত্থানকে আমরা অপমানিত হতে দেবো না।

১৩ নভেম্বরের লকডাউন প্রতিহতের ঘোষণা

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত, এক ভাগ বাহাত্তরের বাকশালপন্থী আর আরেকভাগ জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থী। সবাই যার যার অবস্থান পরিষ্কার করুন, হয় আপনি জুলাই বিপ্লবের পক্ষপাতী আর নয় বাকশালপন্থী। পরাজিত বাকশালপন্থীরা আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লকডাউনের নামে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমি ঘোষণা করতে চাই, ১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থীকে বাংলার রাজপথে আমরা নামতে দেবো না। যদি কেউ নামবার অপচেষ্টা চালায় আমরা তাদেরকে রাজপথে মোকাবিলা করব ইনশা আল্লাহ।’

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দিল্লির ষড়যন্ত্রে আগামী ১৩ তারিখে শাটডাউনের নামে নতুন নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে দেশে। তিনি আরো বলেন, জুলাই সনদে জাতীর আকাঙ্ক্ষার যত সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে একমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব। তা নাহলে জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা ও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা কখনো পূরণ হবে না।

এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা শুনেছি, ঢাকার হোটেলে হোটেলে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নিয়েছে, আপনারা অভিযান চালিয়ে ফ্যাসিস্টদের গ্রেফতার করুন এবং অবিলম্বে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য নির্বাচনের আগেই গণভোট দিন।’

ঐক্যবদ্ধ থাকবে আট দল

আটটি দলের শীর্ষ নেতারা এবারই প্রথম কোনো সমাবেশে এক মঞ্চে বক্তব্য রেখেছেন। দলগুলোর নেতারা তাঁদের বক্তৃতায় বলেছেন তাঁদের এই ঐক্য অটুট থাকবে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ বলেন, ‘আমরা যারা কুরআনি শাসন চাই তারা সবাই আজ এক মঞ্চে বসে আছি, আগামীতে ইনশা আল্লাহ কুরআনি শাসন ব্যতিত আর কোনো শাসন মেনে নেওয়া যাবে না।’

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সারোয়ার কামাল আজিজি বলেন, ‘খেলাফত কায়েম করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ইনশা আল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কুরআনি শাসন কায়েম করবো।’

কেউ ফ্যাসিবাদী শক্তিকে দেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে আট দল রুখে দাঁড়াবে বলে সমাবেশে জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, ‘আলেমরা এক হয়েছে, জালিমদের দিন শেষ।’

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হাক্কানি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোরুল ইসলাম চান ও মহাসচিব নিজামুল হক নাইম।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত