leadT1ad

ঢাকায় আজ সাতটি রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ: তীব্র যানজটের শঙ্কা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
রাজধানীতে যানজটের সম্ভাব্য চিত্র। স্ট্রিম গ্রাফিক

বৃহস্পতিবারকে সপ্তাহের সবচেয়ে ব্যস্ততম দিন ধরা হয়। সপ্তাহান্তে অনেকেই ঢাকার বাইরে যান, আবার অনেকেই ফেরেনও। এদিন প্রায় অভিন্ন দাবিতে রাজধানীতে আন্দোলনে নামছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। এদিকে, আগামীকাল শুক্রবার রয়েছে বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এদিন ৪ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী রাজধানীসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ঢাকার পরীক্ষার্থীরা আজই জড়ো হবেন রাজধানীতে। সবমিলিয়ে আজ রাজধানী শহরে তীব্র যানজটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ড. আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) তিন দিনের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ দলগুলো রাজধানীতে প্রথম দিনের কর্মসূচি পালন করবে।

দলগুলোর ঘোষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, প্রেস ক্লাব, বিজয় নগর, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল ও শাহবাগ এলাকায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল করবে দলগুলো।

বৃহস্পতিবার বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে গেট থেকে জোহরের নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সমাবেশপরবর্তী মিছিল নিয়ে দলটি প্রেসক্লাব হয়ে পল্টন মোড়ে এসে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ করবে।

বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে আসরের নামাজের পর সমাবেশ করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দলটি পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর মোড়, কাকরাইল মোড় হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির প্রচার সম্পাদক হাসান জুনাইদ।

প্রেসক্লাবের সামনে বেলা তিনটায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে পল্টন মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমে মিছিল নিয়ে যাবে খেলাফত আন্দোলন। বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় সমাবেশ শুরু করবে জাগপা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবে যাবে তারা। এরপর আবার মিছিল নিয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় ফিরে আসবে। পাঁচটায় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে নেজামে ইসলাম।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ শুরু করবে বিকেল সাড়ে চারটায়। সেখানে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তৃতা দেবেন। এরপর ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের সমবেত নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। তাঁরা মিছিলটি নিয়ে এগিয়ে যাবেন পল্টন, বিজয়নগর, কাকড়াইল মোড় হয়ে শাহবাগে। সমাপনী বক্তৃতার মাধ্যমে বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি শেষ হবে। এই কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে জামায়াত।

যৌথভাবে এই কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা করছে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন স্ট্রিমকে জানান, সমাবেশটি কতক্ষণ চলবে আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। তবে অন্তত আধা ঘণ্টা হবে বলেও জানান তিনি। বিক্ষোভ মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে আবারও সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রূপ নেবে। তবে সেটি দীর্ঘ হবে না। এক বা দুজন নেতা কথা বলে মিছিল ও সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।

চট্টগ্রাম-কুমিল্লাসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন গুলিস্তান হয়ে। দলগুলোর কর্মসূচির ফলে তাঁরা ভোগান্তিতে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অফিস-ফেরতদের মধ্যে গুলিস্তানের কাছাকাছি থাকা সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই ভোগান্তিতে পড়বেন। এ ছাড়া মতিঝিলের ব্যাংকপাড়া, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, প্রেসক্লাব, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, শান্তিনগর, মন্ত্রীপাড়ার অফিসে কর্মরতদেরও বাড়ি ফিরতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে। অন্যদিকে শাহবাগ বন্ধ হয়ে গেলে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরসহ আশপাশের অঞ্চলের লোকেরাও একই ভোগান্তিতে ভুগবেন।

এ ছাড়াও শাহবাগে যে কোনো কর্মসূচিতে ভোগান্তিতে পড়ে আশপাশের এলাকার বেশ কিছু হাসপাতাল। বিশেষ করে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক পিজি হাসপাতাল), বারডেম, ঢাকা মেডিকেল, ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতাল, সায়েন্সল্যাবের ল্যাবএইড হাসপাতালে রোগী আনা-নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই কর্মসূচিতে ভোগান্তি পোহাবেন কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরাও।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক, তেজগাঁও বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম স্ট্রিমকে জানান, ট্রাফিক পুলিশ প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এর পরে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ, দাবি আদায়সহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নেমে এলে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। এতে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। যানচলাচল অব্যাহত রাখতে বিকল্প পথে ডাইভারশন দেওয়া হয়। কিন্তু সব পথেরই একটা নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা আছে। অতিরিক্ত যানবাহনের প্রবাহ পথ ধারণ করতে পারে না। ফলে তৈরি হয় অচলাবস্থা। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হন। যানবাহনের প্রবাহ ঠিক রাখা ট্রাফিক পুলিশের জন্য অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে।

স্ট্রিমকে মো. রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আসলে ঢাকা একটা ব্যস্ত শহর। এই শহরের সব এলাকাই অত্যন্ত ব্যস্ত। যানজটের কারণে এমনিতেই মানুষের ভোগান্তিতে থাকতে হয়। পল্টন বা মতিঝিল কেন, যেখানেই রাস্তার ওপর কর্মসূচি দেওয়া হোক, মানুষের ভোগান্তি তৈরি হবেই। ভোগান্তি শুধু যাত্রীদের না, চালকদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ট্র্যাফিক পুলিশের হিমশিম খেতে হয়। সময়ের অপচয়, আর্থিক ক্ষতি, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছা নিয়ে মানসিক দুশ্চিন্তা, অনেক ইমার্জেন্সি রোগী দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারেন না—এক কথায় বহু রকমের ক্ষতি হয়।’

এ জন্য ট্র্যাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সব সময়ই রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়— এমন কর্মসূচি না দেওয়ার অনুরোধ থাকে বলেও জানান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বড় দলগুলো কর্মসূচি দিলে কোনোভাবেই সামলানো সম্ভব হয় না বলেও স্ট্রিমকে জানান তিনি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত