আদনান আজাদ

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবনায় পানিতে ডুবিয়ে আটটি কুকুরছানা হত্যা, সাতক্ষীরায় বিষ প্রয়োগে ১০৮টি কবুতর নিধন এবং এর আগে রাজধানীতে বিড়ালের চোখ উপড়ে ধানমন্ডি লেকে নিক্ষেপ ও বগুড়ায় বিড়াল জবাই করার মতো ঘটনাগুলো সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার যে চিত্র ফুটে উঠছে, তা এক কথায় ভয়াবহ এবং বিবেকবর্জিত। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমরা একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি। পাবনায় পানিতে ডুবিয়ে আটটি কুকুরছানা হত্যা, সাতক্ষীরায় বিষ প্রয়োগে ১০৮টি কবুতর মেরে ফেলা, কিংবা রাজধানীতে বিড়ালের চোখ উপড়ে ধানমন্ডি লেকে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বগুড়ায় একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যার মতো পাশবিকতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে সমাজে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার প্রবণতা কতটা চরম আকার ধারণ করেছে। এই নিষ্ঠুরতা কেবল প্রাণীর বিপন্নতা নয়, বরং আমাদের সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয়েরও এক ভয়াবহ ইঙ্গিত।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, দেশে এত থানা, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরেও কেন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী বা হত্যাকারীরা তো তাদের কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছে। এর উত্তর হলো, কেবল আইন দিয়ে মানুষের ভেতরের পশুত্ব দমন করা সব সময় সম্ভব হয় না, যদি না গোড়ায় গলদ থাকে। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা যাঁরা দেখায়, তাঁরা হঠাৎ করে এমন হয়ে ওঠেনি। এই নিষ্ঠুরতার বীজ রোপিত হয় একদম ছোটবেলায়।
শৈশবে যারা দুর্বল প্রাণী, যেমন কুকুর বা বিড়ালের ওপর অত্যাচার করে আনন্দ পায়, বড় হয়ে তাদের মধ্যেই মানবহত্যাকারী বা বড় অপরাধী হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এখান থেকেই তারা একটি জীবন্ত সত্তার প্রাণ কেড়ে নেওয়ার সাহস সঞ্চয় করে এবং পরবর্তীতে তা মানুষের ওপর প্রয়োগ করতে দ্বিধা করে না। তাই প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই; এটি বৃহত্তর সামাজিক অস্থিরতারই পূর্বাভাস।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আমরা এই ঘটনাগুলো জানতে পারছি। তবে এর বাইরেও অসংখ্য ঘটনা অগোচরেই থেকে যায়। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি নিজস্ব জরিপ চালিয়েছি। সেই জরিপে উঠে এসেছে এক বেদনাদায়ক তথ্য। দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে আহত হওয়া কুকুরগুলোর একটি বড় অংশই স্থানীয় চায়ের দোকানদারদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। দোকানের আশেপাশে কুকুর ঘুরঘুর করলে বা খাবারের আশায় কাছে এলে, অনেক দোকানদার কেটলিতে থাকা ফুটন্ত গরম পানি তাদের গায়ে ছুড়ে মারে। এতে কুকুরগুলোর শরীর ঝলসে যায় এবং তারা ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। এই ধরনের অমানবিকতা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।
আমরা যারা প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করছি, তারা প্রতিনিয়ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেবল সচেতনতা দিয়ে এই অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ। আমাদের দেশের বিদ্যমান প্রাণী কল্যাণ আইনটি অত্যন্ত দুর্বল এবং ফাঁকফোকরে ভরা।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। বগুড়ায় যখন বিড়াল হত্যার ঘটনায় আমরা জিডি করতে গেলাম, তখন পুলিশ আমাদের জানায় যে এই অপরাধে কাউকে সরাসরি গ্রেপ্তার করার মতো বিধান বা ক্ষমতা তাদের নেই। কারণ, আইনটি দুর্বল। আইন যদি দুর্বল হয়, তবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা জানে যে, একটি কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে তাদের বড় কোনো শাস্তি হবে না।
আইন যদি শক্তিশালী হতো, তবে মানুষ সংযত হতো। ভয়ের সংস্কৃতি অপরাধ দমনে বড় ভূমিকা রাখে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা আশাবাদী যে ভবিষ্যতে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে তিনি প্রাণী অধিকার রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন করবেন। এমন একটি আইন, যার ভয়ে মানুষ কোনো প্রাণীর প্রতি সহিংস আচরণ করার আগে দুবার ভাববে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি এবং ততদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি ও আন্দোলন চালিয়ে যাব।
আইনি ও সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে আমরা মাঠপর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি এশিয়া মহাদেশের প্রথম ব্যক্তি, যে বুনো হাতি রক্ষায় আদালতে রিট দায়ের করেছি এবং আদালত সেটির ওপর রুল জারি করেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরের এই ঘটনাটি বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং এশিয়ার ইতিহাসে প্রথম। এটি আমাদের প্রাণী অধিকার আন্দোলনের একটি বড় বিজয়।
আমাদের সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকার রাস্তার কুকুরগুলোকে র্যাবিস বা জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন প্রদান, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে, যখন পর্যটক থাকে না, তখন সেখানকার অভুক্ত কুকুরদের এক সপ্তাহব্যাপী খাবার সরবরাহ করা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত ঘোড়াগুলোর মধ্যে অসুস্থ ও আহত শতাধিক ঘোড়াকে চার দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত রান্না করা সুষম খাবার পথকুকুরদের মধ্যে বিতরণ করা।
সামনে শীতকাল আসছে। এই সময়ে আমাদের দেশে প্রচুর পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি আসে। দুঃখজনকভাবে একশ্রেণির মানুষ এই পাখি শিকার করে। এই শীতে অতিথি পাখি রক্ষায় আমরা ব্যাপক ক্যাম্পেইন বা প্রচারণামূলক কার্যক্রম হাতে নেব।
আমাদের সংগঠনটি তথাকথিত ‘ফেসবুক-সর্বস্ব’ কোনো সংগঠন নয়। আমরা কেবল ফেসবুকে দু-চারটি পোস্ট দিয়ে দায়িত্ব শেষ করি না। আমরা মাঠে থেকে কাজ করি। যখনই কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটে, আমরা প্রতিবাদ করি। সম্প্রতি চারটি বিড়ালের চোখ উপড়ে ফেলার ঘটনার প্রতিবাদে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন রবীন্দ্র সরোবরে মানববন্ধন করেছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আমাদের কোনো না কোনো কর্মসূচি থাকে।
সবচেয়ে বড় কথা, আমরা উদ্ধারকাজেও সমানভাবে সক্রিয়। গত চার মাসে আমরা কেবল ঢাকা জেলা থেকেই ৩৫৪টি সাপ উদ্ধার করেছি, যার মধ্যে ৩৫১টিই ছিল বিষধর সাপ। এটি প্রমাণ করে যে মানুষের জীবন রক্ষা এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণে আমরা কতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি মানবিকতার অংশ। আমরা চাই এমন একটি সমাজ, যেখানে মানুষ ও প্রাণী সহাবস্থানে থাকবে। আমাদের প্রচার-প্রচারণা, উদ্ধারকাজ এবং আইনি লড়াই অব্যাহত থাকবে। তবে এই লড়াইয়ে জয়ী হতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে কঠোর আইন নিয়ে। সমাজ থেকে নিষ্ঠুরতা দূর করতে হলে প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আসুন, আমরা সবাই মিলে প্রাণীর জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
লেখক: প্রাণী অধিকারকর্মী এবং আহ্বায়ক, বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবনায় পানিতে ডুবিয়ে আটটি কুকুরছানা হত্যা, সাতক্ষীরায় বিষ প্রয়োগে ১০৮টি কবুতর নিধন এবং এর আগে রাজধানীতে বিড়ালের চোখ উপড়ে ধানমন্ডি লেকে নিক্ষেপ ও বগুড়ায় বিড়াল জবাই করার মতো ঘটনাগুলো সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার যে চিত্র ফুটে উঠছে, তা এক কথায় ভয়াবহ এবং বিবেকবর্জিত। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমরা একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি। পাবনায় পানিতে ডুবিয়ে আটটি কুকুরছানা হত্যা, সাতক্ষীরায় বিষ প্রয়োগে ১০৮টি কবুতর মেরে ফেলা, কিংবা রাজধানীতে বিড়ালের চোখ উপড়ে ধানমন্ডি লেকে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বগুড়ায় একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যার মতো পাশবিকতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে সমাজে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার প্রবণতা কতটা চরম আকার ধারণ করেছে। এই নিষ্ঠুরতা কেবল প্রাণীর বিপন্নতা নয়, বরং আমাদের সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয়েরও এক ভয়াবহ ইঙ্গিত।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, দেশে এত থানা, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরেও কেন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী বা হত্যাকারীরা তো তাদের কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছে। এর উত্তর হলো, কেবল আইন দিয়ে মানুষের ভেতরের পশুত্ব দমন করা সব সময় সম্ভব হয় না, যদি না গোড়ায় গলদ থাকে। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা যাঁরা দেখায়, তাঁরা হঠাৎ করে এমন হয়ে ওঠেনি। এই নিষ্ঠুরতার বীজ রোপিত হয় একদম ছোটবেলায়।
শৈশবে যারা দুর্বল প্রাণী, যেমন কুকুর বা বিড়ালের ওপর অত্যাচার করে আনন্দ পায়, বড় হয়ে তাদের মধ্যেই মানবহত্যাকারী বা বড় অপরাধী হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এখান থেকেই তারা একটি জীবন্ত সত্তার প্রাণ কেড়ে নেওয়ার সাহস সঞ্চয় করে এবং পরবর্তীতে তা মানুষের ওপর প্রয়োগ করতে দ্বিধা করে না। তাই প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই; এটি বৃহত্তর সামাজিক অস্থিরতারই পূর্বাভাস।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আমরা এই ঘটনাগুলো জানতে পারছি। তবে এর বাইরেও অসংখ্য ঘটনা অগোচরেই থেকে যায়। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি নিজস্ব জরিপ চালিয়েছি। সেই জরিপে উঠে এসেছে এক বেদনাদায়ক তথ্য। দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে আহত হওয়া কুকুরগুলোর একটি বড় অংশই স্থানীয় চায়ের দোকানদারদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। দোকানের আশেপাশে কুকুর ঘুরঘুর করলে বা খাবারের আশায় কাছে এলে, অনেক দোকানদার কেটলিতে থাকা ফুটন্ত গরম পানি তাদের গায়ে ছুড়ে মারে। এতে কুকুরগুলোর শরীর ঝলসে যায় এবং তারা ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। এই ধরনের অমানবিকতা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।
আমরা যারা প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করছি, তারা প্রতিনিয়ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেবল সচেতনতা দিয়ে এই অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ। আমাদের দেশের বিদ্যমান প্রাণী কল্যাণ আইনটি অত্যন্ত দুর্বল এবং ফাঁকফোকরে ভরা।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। বগুড়ায় যখন বিড়াল হত্যার ঘটনায় আমরা জিডি করতে গেলাম, তখন পুলিশ আমাদের জানায় যে এই অপরাধে কাউকে সরাসরি গ্রেপ্তার করার মতো বিধান বা ক্ষমতা তাদের নেই। কারণ, আইনটি দুর্বল। আইন যদি দুর্বল হয়, তবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা জানে যে, একটি কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে তাদের বড় কোনো শাস্তি হবে না।
আইন যদি শক্তিশালী হতো, তবে মানুষ সংযত হতো। ভয়ের সংস্কৃতি অপরাধ দমনে বড় ভূমিকা রাখে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা আশাবাদী যে ভবিষ্যতে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে তিনি প্রাণী অধিকার রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন করবেন। এমন একটি আইন, যার ভয়ে মানুষ কোনো প্রাণীর প্রতি সহিংস আচরণ করার আগে দুবার ভাববে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি এবং ততদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি ও আন্দোলন চালিয়ে যাব।
আইনি ও সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে আমরা মাঠপর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি এশিয়া মহাদেশের প্রথম ব্যক্তি, যে বুনো হাতি রক্ষায় আদালতে রিট দায়ের করেছি এবং আদালত সেটির ওপর রুল জারি করেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরের এই ঘটনাটি বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং এশিয়ার ইতিহাসে প্রথম। এটি আমাদের প্রাণী অধিকার আন্দোলনের একটি বড় বিজয়।
আমাদের সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকার রাস্তার কুকুরগুলোকে র্যাবিস বা জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন প্রদান, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে, যখন পর্যটক থাকে না, তখন সেখানকার অভুক্ত কুকুরদের এক সপ্তাহব্যাপী খাবার সরবরাহ করা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত ঘোড়াগুলোর মধ্যে অসুস্থ ও আহত শতাধিক ঘোড়াকে চার দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত রান্না করা সুষম খাবার পথকুকুরদের মধ্যে বিতরণ করা।
সামনে শীতকাল আসছে। এই সময়ে আমাদের দেশে প্রচুর পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি আসে। দুঃখজনকভাবে একশ্রেণির মানুষ এই পাখি শিকার করে। এই শীতে অতিথি পাখি রক্ষায় আমরা ব্যাপক ক্যাম্পেইন বা প্রচারণামূলক কার্যক্রম হাতে নেব।
আমাদের সংগঠনটি তথাকথিত ‘ফেসবুক-সর্বস্ব’ কোনো সংগঠন নয়। আমরা কেবল ফেসবুকে দু-চারটি পোস্ট দিয়ে দায়িত্ব শেষ করি না। আমরা মাঠে থেকে কাজ করি। যখনই কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটে, আমরা প্রতিবাদ করি। সম্প্রতি চারটি বিড়ালের চোখ উপড়ে ফেলার ঘটনার প্রতিবাদে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন রবীন্দ্র সরোবরে মানববন্ধন করেছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আমাদের কোনো না কোনো কর্মসূচি থাকে।
সবচেয়ে বড় কথা, আমরা উদ্ধারকাজেও সমানভাবে সক্রিয়। গত চার মাসে আমরা কেবল ঢাকা জেলা থেকেই ৩৫৪টি সাপ উদ্ধার করেছি, যার মধ্যে ৩৫১টিই ছিল বিষধর সাপ। এটি প্রমাণ করে যে মানুষের জীবন রক্ষা এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণে আমরা কতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি মানবিকতার অংশ। আমরা চাই এমন একটি সমাজ, যেখানে মানুষ ও প্রাণী সহাবস্থানে থাকবে। আমাদের প্রচার-প্রচারণা, উদ্ধারকাজ এবং আইনি লড়াই অব্যাহত থাকবে। তবে এই লড়াইয়ে জয়ী হতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে কঠোর আইন নিয়ে। সমাজ থেকে নিষ্ঠুরতা দূর করতে হলে প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আসুন, আমরা সবাই মিলে প্রাণীর জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
লেখক: প্রাণী অধিকারকর্মী এবং আহ্বায়ক, বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন

এআই কোম্পানির প্রকৃত আয়ের তুলনায় বর্তমান দাম অনেক বেশি। নোবেল অর্থনীতিবিদ রবার্ট শিলার’-এর মূল্য-আয় অনুপাত (কোম্পানির বর্তমান মূল্যকে বিগত ১০ বছরে মুদ্রাস্ফীতি-সমন্বিত আয়ের গড় দিয়ে ভাগ করে) ইতিমধ্যে ৪০ গুণিতক অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ এআই কোম্পানির বর্তমান বাজার তার গত ১০ বছরের গড় আয়ের ৪০ গুণ।
১ ঘণ্টা আগে
প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে আমরা রুমে ঢুকলাম। দেখলাম তিনি গেস্ট হাউজের সাধারণ একটি সিঙ্গেল সোফায় বসে আছেন। কিন্তু আমার শিশুমনে মনে হলো, পুরো ব্যাপারটার মধ্যে এক রাজকীয় আবহ রয়েছে। তিনি যখন আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন, সেই মুহূর্তটিকে আমার কাছে কোনো সাধারণ ঘটনা মনে হয়নি।
২ ঘণ্টা আগে
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই—এই বহুল প্রচলিত ধারণাকে তিনি ভুল প্রমাণ করেছেন। তাঁর কাছে রাজনীতিতে শেষ কথা ছিল দেশের পক্ষে, মানুষের পক্ষে এবং রাষ্ট্রের পক্ষে অবিচল থাকা। এই আদর্শের প্রতি তার অবিচলতাই তাকে পরিণত করেছিল এক অনন্য নেতৃত্বে।
২১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আজ এক অভূতপূর্ব রূপান্তরের পথে। প্রযুক্তির ঝড়ো স্রোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই হয়ে উঠেছে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। সংসদে ২০২৪ সালে পাস হওয়া পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইন ব্যাংকিং খাতকে নতুন কাঠামোয় বেঁধে দিয়েছে।
২ দিন আগে