.png)
এই জুলাইয়েই তো ধর্ম–বর্ণ–গোত্র–জাতিনির্বিশেষে যার যার অবস্থান থেকে জেগে উঠেছিলাম আমরা। হ্যাঁ, আমাদের মতো অনেকেরই গোটা তারুণ্য নিঃশেষ হয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী এক শাসনের তলায়। কিন্তু প্রতিবাদের যে সুর পরিপার্শ্ব আর নিজেদের হৃদয়ের মধ্যে ধূলি–ধূসরিত হয়ে পড়েছিল, তা কি নিঃশেষ হয়ে যায়!

আলতাফ শাহনেওয়াজ
আবার জুলাই এল, আমাদের রক্তস্নাত জুলাই। স্বজন হারানোর জুলাই। গৌরবের জুলাই। জনতার জুলাই। এই জুলাই আমাদের বদলে দিয়েছে, দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এমন এক মুহূর্তের সামনে, যেখানে এসে মানুষ প্রতিবাদ করে, রুখে দাঁড়ায় আধিপত্য, কর্তৃত্ববাদ আর স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে।
আমরাও রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। বুক চিতিয়ে আমরা গুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম সেদিন, এই জুলাই মাসেই।

প্রায় দেড় দশক ধরে এমন এক শাসনের যাঁতাকলে আমরা পিষ্ট হচ্ছিলাম, যেখানে অনেকেই ভাবতেন, ‘চুপ থাকাই নিরাপদ’। কারণ, সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দিনে দিনে কর্তৃত্ববাদী পাটাতন গড়ে নিদারুণ এক ভয়ের সংস্কৃতি প্রবর্তন করেছিল। অতঃপর এটিই কায়েম করেছিল হাসফাঁস করা এক স্বৈরাচারীব্যবস্থা। একের পর এক প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এবং ‘উন্নয়ন’–এর বুলি আওড়ে এই ক্ষমতা করায়ত্ব করেছিল তারা। ফলে জনগণের অবস্থান স্বভাবতই ছিল তলানিতে। জনতা যেন হয়ে উঠেছিলেন সেই গ্রাফিতির চরিত্র—‘সুবোধ’। বছর কয়েক আগে তৈরি হওয়া গ্রাফিতিতে সুবোধ চরিত্রটিকে যেমন বলা হয়েছিল, ‘সুবোধ, তুই পালিয়ে যা’, একইভাবে জনগণের বড় অংশ—যাঁরা ছিলেন দলমতহীন, কেউবা বিরোধীদল ও মতের—সবাই–ই সমাজিক পরিসর থেকে পালাচ্ছিলেন, হয়ে উঠছিলেন ‘পলায়নপর’ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
ভিন্নমত তো দূর কি বাত, সে সময় মতপ্রকাশের ক্ষেত্রেও ছিল বাধা। ফলে কথা বা বক্তব্যের বিপরীতে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন পরিসরে বিকল্প হিসেবে স্থান করে নেয় নানান রকম রাজনৈতিক মিম। একটি জনপ্রিয় মিম ছিল, ‘নাম বললে চাকরি থাকবে না’। আদতে সবাই–ই তখন বুঝতেন যে এখানে ‘নাম বললে’ অর্থে কার নাম বোঝানো হচ্ছে। যে সময়ের কথা বলছি, তখন ‘সহমত ভাই’ কথাটিও জনপ্রিয় হয়েছিল খুব। কেননা, ‘গণতন্ত্র’ আর ‘উন্নয়ন’–এর নামে চলা সরকার যখন তাদের সব কাজকর্মের সপক্ষে কেবল সম্মতিই উৎপাদন করতে চাইত, তখন ‘সহমত ভাই’ শব্দবন্ধের মধ্য দিয়ে কণ্ঠস্বরহীন জনতা প্রকারান্তরে খুঁজে নিয়েছিলেন শ্লেষাত্মক এক ভাষা।
এমনই এক ভয়ংকর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পটভূমিতেই এসেছিল জুলাই।
এই জুলাইয়েই তো ধর্ম–বর্ণ–গোত্র–জাতিনির্বিশেষে যার যার অবস্থান থেকে জেগে উঠেছিলাম আমরা। হ্যাঁ, আমাদের মতো অনেকেরই গোটা তারুণ্য নিঃশেষ হয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী এক শাসনের তলায়। কিন্তু প্রতিবাদের যে সুর পরিপার্শ্ব আর নিজেদের হৃদয়ের মধ্যে ধূলি–ধূসরিত হয়ে পড়েছিল, তা কি নিঃশেষ হয়ে যায়!
জুলাই–ই নতুন করে জানিয়েছে, আমরা জীবিত, ‘আমরা মরিনি’।

২০১৮ সালের এপ্রিলে কোটাসংস্কার আন্দোলন ও একই বছরের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কার্যত ব্যর্থ হওয়ার পর যখন শূন্যতা নেমে এল জনমনে, হতদ্যোম বাস্তবতায় যখন বেশির ভাগ মানুষই হয়ে উঠেছিলেন রাজনৈতিক আলাপে অনাগ্রহী এবং ‘অরাজনৈতিক’; সেই সময় এই আন্দোলন আমাদের জীবন্ত করে তুলল আবার। ‘চুপ’ থাকা মানুষদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বললাম, ‘কথা ক’।
আমরা কথা বলেছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের সমাজের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চেপে বসা বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম আমরা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি এদেশ। স্বাধীনতার এ সংগ্রামের প্রধান কার্যকারণও ছিল বৈষম্য। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে সে বৈষম্য দূর তো হয়ইনি, উপরন্তু প্রতিনিয়ত মানুষ হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদা ভুলণ্ঠিত হয়েছে বারবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই মানবিক মর্যাদা ফিরে পেতেই সবাই শামিল হয়েছিলাম জুলাইয়ের রক্তবৃষ্টিমুখর দিনগুলোতে।
২০২৪ সালের জুন মাসে প্রথমে আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল কোটাসংস্কারের দাবিতে। সূচনা করেছিলেন ছাত্ররা। পরে পয়লা জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে নতুনভাবে শুরু হওয়া এ আন্দোলনের সঙ্গে একে একে একাত্ম হলেন অনেকেই। এরপর ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নির্মম মৃত্যু যেন একবিন্দুতে মিলিয়ে দিল গোটা বাংলাদেশকে। যে তরুণদের আমরা এত দিন ‘অরাজনৈতিক’ হিসেবে জানতাম, তাঁরা জেগে উঠলেন।
কর্তৃত্বপরায়ণ আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছর শাসনকালে দেশে বেড়েছিল বেকারত্ব। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি। অগণন তরুণ ছিলেন চাকরির অনিশ্চয়তায়। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষজনেরও দিনগুজরান করতে উঠছিল নাভিশ্বাস। এ সময় প্রমিথিউস হয়ে এলেন তরুণেরাই, জাগরণের মশাল হাতে কীভাবে যেন সবাইকে জাগিয়ে দিলেন! জেগে উঠল জনতা।

আদতে কাঠামোঘেরা ব্যাবস্থার ঘেরাটোপে অদৃশ্য এক নিয়ন্ত্রণরেখার মধ্যেই তখন কাটত আমাদের—আমাদের মতো অনেকের দিনরাত্রি। তবে জুলাইয়ের উত্তাল আন্দোলনের হাওয়া আর অজস্র শহিদি রক্ত সবকিছু বদলে দিল, বদলে দিল আমাদেরও। আমাদের আত্মাটা তখনো জীবিত ছিল বলেই বোধহয় আবার নিজেদের বলিষ্ঠ প্রতিবাদী রূপ নিয়ে জেগে উঠতে পেরেছিলাম। কোনো পিছুটানের তোয়াক্কা না করে বলতে পেরেছিলাম, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘একদফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’।
অবশেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হলো। এতকাল ধরে যে জুলাই মাসের সীমানা ছিল ৩১ তারিখ অব্দি, ছাত্র–জনতা তাকে প্রসারিত করল ৩৬ জুলাই পর্যন্ত। তাই ৫ আগস্টের নাম হয়ে গেল ‘৩৬ জুলাই’। ফলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে জুলাই মাসের সীমানা যেমন বদলে গেল, জুলাই তেমনি বদলে দিল আমাদেরও। এখন যে যার নিজস্ব বিবেচনা থেকে তীব্রভাবে রাজনৈতিক হয়ে উঠেছি বরাবরই ‘অরাজনৈতিক’ নামে পরিচিত এই আমরা—জনগণ।
তবে প্রত্যাশিত বদলগুলো কি ঘটল? জুলাইয়ে মিছিলে–স্লোগানে–গ্রাফিতিতে, পোস্টারে জনতার যে আকাঙ্ক্ষামালা ফুটে উঠেছিল, প্রায় এক বছর পেরিয়ে সেসবের কতটা বাস্তবায়িত হলো?
আশাহত হয়েও আমরা আশা ছাড়িনি।
সে সময় এক অর্ন্তভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সাম্য আর মানবিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্ন এখনো অটুট।
ওই ‘লাল টুকটুকে স্বপ্ন’ বাঁচিয়ে রাখতেই আমরা জেগে থাকি। চব্বিশের জুলাইকে মনে রাখি। মনে রাখি ১৯৭১। কেননা, রক্ত ও অশ্রুপাতের মধ্য দিয়ে পাওয়া জুলাই আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের কাঁধে তুলে দিয়ে গেছে দায়িত্ব—জেগে থাকো, বাংলাদেশকে জাগিয়ে রাখো।
লেখক: স্ট্রিমের বাংলা কনটেন্ট এডিটর; কবি
আবার জুলাই এল, আমাদের রক্তস্নাত জুলাই। স্বজন হারানোর জুলাই। গৌরবের জুলাই। জনতার জুলাই। এই জুলাই আমাদের বদলে দিয়েছে, দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এমন এক মুহূর্তের সামনে, যেখানে এসে মানুষ প্রতিবাদ করে, রুখে দাঁড়ায় আধিপত্য, কর্তৃত্ববাদ আর স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে।
আমরাও রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। বুক চিতিয়ে আমরা গুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম সেদিন, এই জুলাই মাসেই।

প্রায় দেড় দশক ধরে এমন এক শাসনের যাঁতাকলে আমরা পিষ্ট হচ্ছিলাম, যেখানে অনেকেই ভাবতেন, ‘চুপ থাকাই নিরাপদ’। কারণ, সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দিনে দিনে কর্তৃত্ববাদী পাটাতন গড়ে নিদারুণ এক ভয়ের সংস্কৃতি প্রবর্তন করেছিল। অতঃপর এটিই কায়েম করেছিল হাসফাঁস করা এক স্বৈরাচারীব্যবস্থা। একের পর এক প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এবং ‘উন্নয়ন’–এর বুলি আওড়ে এই ক্ষমতা করায়ত্ব করেছিল তারা। ফলে জনগণের অবস্থান স্বভাবতই ছিল তলানিতে। জনতা যেন হয়ে উঠেছিলেন সেই গ্রাফিতির চরিত্র—‘সুবোধ’। বছর কয়েক আগে তৈরি হওয়া গ্রাফিতিতে সুবোধ চরিত্রটিকে যেমন বলা হয়েছিল, ‘সুবোধ, তুই পালিয়ে যা’, একইভাবে জনগণের বড় অংশ—যাঁরা ছিলেন দলমতহীন, কেউবা বিরোধীদল ও মতের—সবাই–ই সমাজিক পরিসর থেকে পালাচ্ছিলেন, হয়ে উঠছিলেন ‘পলায়নপর’ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
ভিন্নমত তো দূর কি বাত, সে সময় মতপ্রকাশের ক্ষেত্রেও ছিল বাধা। ফলে কথা বা বক্তব্যের বিপরীতে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন পরিসরে বিকল্প হিসেবে স্থান করে নেয় নানান রকম রাজনৈতিক মিম। একটি জনপ্রিয় মিম ছিল, ‘নাম বললে চাকরি থাকবে না’। আদতে সবাই–ই তখন বুঝতেন যে এখানে ‘নাম বললে’ অর্থে কার নাম বোঝানো হচ্ছে। যে সময়ের কথা বলছি, তখন ‘সহমত ভাই’ কথাটিও জনপ্রিয় হয়েছিল খুব। কেননা, ‘গণতন্ত্র’ আর ‘উন্নয়ন’–এর নামে চলা সরকার যখন তাদের সব কাজকর্মের সপক্ষে কেবল সম্মতিই উৎপাদন করতে চাইত, তখন ‘সহমত ভাই’ শব্দবন্ধের মধ্য দিয়ে কণ্ঠস্বরহীন জনতা প্রকারান্তরে খুঁজে নিয়েছিলেন শ্লেষাত্মক এক ভাষা।
এমনই এক ভয়ংকর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পটভূমিতেই এসেছিল জুলাই।
এই জুলাইয়েই তো ধর্ম–বর্ণ–গোত্র–জাতিনির্বিশেষে যার যার অবস্থান থেকে জেগে উঠেছিলাম আমরা। হ্যাঁ, আমাদের মতো অনেকেরই গোটা তারুণ্য নিঃশেষ হয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী এক শাসনের তলায়। কিন্তু প্রতিবাদের যে সুর পরিপার্শ্ব আর নিজেদের হৃদয়ের মধ্যে ধূলি–ধূসরিত হয়ে পড়েছিল, তা কি নিঃশেষ হয়ে যায়!
জুলাই–ই নতুন করে জানিয়েছে, আমরা জীবিত, ‘আমরা মরিনি’।

২০১৮ সালের এপ্রিলে কোটাসংস্কার আন্দোলন ও একই বছরের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কার্যত ব্যর্থ হওয়ার পর যখন শূন্যতা নেমে এল জনমনে, হতদ্যোম বাস্তবতায় যখন বেশির ভাগ মানুষই হয়ে উঠেছিলেন রাজনৈতিক আলাপে অনাগ্রহী এবং ‘অরাজনৈতিক’; সেই সময় এই আন্দোলন আমাদের জীবন্ত করে তুলল আবার। ‘চুপ’ থাকা মানুষদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বললাম, ‘কথা ক’।
আমরা কথা বলেছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের সমাজের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চেপে বসা বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম আমরা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি এদেশ। স্বাধীনতার এ সংগ্রামের প্রধান কার্যকারণও ছিল বৈষম্য। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে সে বৈষম্য দূর তো হয়ইনি, উপরন্তু প্রতিনিয়ত মানুষ হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদা ভুলণ্ঠিত হয়েছে বারবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই মানবিক মর্যাদা ফিরে পেতেই সবাই শামিল হয়েছিলাম জুলাইয়ের রক্তবৃষ্টিমুখর দিনগুলোতে।
২০২৪ সালের জুন মাসে প্রথমে আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল কোটাসংস্কারের দাবিতে। সূচনা করেছিলেন ছাত্ররা। পরে পয়লা জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে নতুনভাবে শুরু হওয়া এ আন্দোলনের সঙ্গে একে একে একাত্ম হলেন অনেকেই। এরপর ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নির্মম মৃত্যু যেন একবিন্দুতে মিলিয়ে দিল গোটা বাংলাদেশকে। যে তরুণদের আমরা এত দিন ‘অরাজনৈতিক’ হিসেবে জানতাম, তাঁরা জেগে উঠলেন।
কর্তৃত্বপরায়ণ আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছর শাসনকালে দেশে বেড়েছিল বেকারত্ব। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি। অগণন তরুণ ছিলেন চাকরির অনিশ্চয়তায়। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষজনেরও দিনগুজরান করতে উঠছিল নাভিশ্বাস। এ সময় প্রমিথিউস হয়ে এলেন তরুণেরাই, জাগরণের মশাল হাতে কীভাবে যেন সবাইকে জাগিয়ে দিলেন! জেগে উঠল জনতা।

আদতে কাঠামোঘেরা ব্যাবস্থার ঘেরাটোপে অদৃশ্য এক নিয়ন্ত্রণরেখার মধ্যেই তখন কাটত আমাদের—আমাদের মতো অনেকের দিনরাত্রি। তবে জুলাইয়ের উত্তাল আন্দোলনের হাওয়া আর অজস্র শহিদি রক্ত সবকিছু বদলে দিল, বদলে দিল আমাদেরও। আমাদের আত্মাটা তখনো জীবিত ছিল বলেই বোধহয় আবার নিজেদের বলিষ্ঠ প্রতিবাদী রূপ নিয়ে জেগে উঠতে পেরেছিলাম। কোনো পিছুটানের তোয়াক্কা না করে বলতে পেরেছিলাম, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘একদফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’।
অবশেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হলো। এতকাল ধরে যে জুলাই মাসের সীমানা ছিল ৩১ তারিখ অব্দি, ছাত্র–জনতা তাকে প্রসারিত করল ৩৬ জুলাই পর্যন্ত। তাই ৫ আগস্টের নাম হয়ে গেল ‘৩৬ জুলাই’। ফলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে জুলাই মাসের সীমানা যেমন বদলে গেল, জুলাই তেমনি বদলে দিল আমাদেরও। এখন যে যার নিজস্ব বিবেচনা থেকে তীব্রভাবে রাজনৈতিক হয়ে উঠেছি বরাবরই ‘অরাজনৈতিক’ নামে পরিচিত এই আমরা—জনগণ।
তবে প্রত্যাশিত বদলগুলো কি ঘটল? জুলাইয়ে মিছিলে–স্লোগানে–গ্রাফিতিতে, পোস্টারে জনতার যে আকাঙ্ক্ষামালা ফুটে উঠেছিল, প্রায় এক বছর পেরিয়ে সেসবের কতটা বাস্তবায়িত হলো?
আশাহত হয়েও আমরা আশা ছাড়িনি।
সে সময় এক অর্ন্তভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সাম্য আর মানবিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্ন এখনো অটুট।
ওই ‘লাল টুকটুকে স্বপ্ন’ বাঁচিয়ে রাখতেই আমরা জেগে থাকি। চব্বিশের জুলাইকে মনে রাখি। মনে রাখি ১৯৭১। কেননা, রক্ত ও অশ্রুপাতের মধ্য দিয়ে পাওয়া জুলাই আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের কাঁধে তুলে দিয়ে গেছে দায়িত্ব—জেগে থাকো, বাংলাদেশকে জাগিয়ে রাখো।
লেখক: স্ট্রিমের বাংলা কনটেন্ট এডিটর; কবি
.png)

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সামরিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ঢাকার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
গুম–নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি সেনাবাহিনীর ১৫ কর্মকর্তা। বাংলাদেশে এই প্রথম ১৯৭৩ সালের আইনের অধীনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই বিচার কি সেনা আইনের অধীনে কোর্ট মার্শালে করা যেতো কিনা। এর আইনগত বাস্তবতা নিয়ে লিখেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
১ দিন আগে
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন। জুলাই সনদ ও আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংকটের কারণ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞা
২ দিন আগে
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরপর সাক্ষাৎ এখন একটি নতুন আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গতকাল এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ, একই দিনে জামায়াতে ইসলামী ও একদিন আগে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি নতুন এক রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত
৩ দিন আগে