leadT1ad

১ জুলাই প্রথমবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামটি আসে

২০২৪ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে পরিচয় দিতে শুরু করেন। সেদিন বেলা ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন তারা।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ২০: ৩০
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫৪
জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। স্ট্রিম গ্রাফিক

২০২৪ সালের ৫ জুন এক রায় দেন হাইকোর্ট। সেই রায়ে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সেইসাথে, পূর্বের মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে জুন মাসজুড়ে বিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে আন্দোলন, সমাবেশ ও মানববন্ধন।

কোটা সংস্কারের দাবি মানতে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। ঘোষণা দেওয়া হয়, দাবি না মানলে ১ জুলাই থেকে ঢাকাসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

প্ল্যাটফর্মের নাম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’

২০২৪ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে পরিচয় দিতে শুরু করেন। সেদিন বেলা ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন তারা। তাদের হাতে থাকা ব্যানারে তখন লেখা, ‘২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ।’ আর আন্দোলনের আয়োজনকারী প্ল্যাটফর্মের নাম লেখা- ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।

সে সময় আন্দোলনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যুক্ত থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম গঠনের ব্যাপারে বেশ কয়েক দিন থেকেই আলোচনা চলছিল।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানান, ২৯ জুন একটি বৈঠকে প্ল্যাটফর্মের নামের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রস্তাব আসে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী সমাজ’। পরে সেদিন রাতেই কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এই প্ল্যাটফর্মের নাম হবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। ছবি : আশরাফুল আলম
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। ছবি : আশরাফুল আলম

আরিফুজ্জামান জানান, ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই নামটি ঘোষিত হলেও তার একদিন আগে, অর্থাৎ ৩০ জুনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নাম ব্যবহার করেন আন্দোলনকারীরা।

সমাবেশ থেকে যে ঘোষণা এসেছিল

১ জুলাইয়ের সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, জুলাইয়ের ৪ তারিখের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের দাবির সুরাহা করতে হবে। ওই সমাবেশ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহাল করা, অনগ্রসর গোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটা-সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা ইত্যাদি।

দিনভর যা ঘটেছিল

২০২৪ সালের ১ জুলাই দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা। অনেক স্থানেই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানার ব্যবহৃত হয়। এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন।

গত বছরের এই দিন উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা ছিল। ছাত্রনেতারা আশ্বাস দেন যে আন্দোলনের কারণে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

সেদিনই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের নতুন ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। তখন একই সময়ে একদিকে ছাত্র আন্দোলন ও অন্যদিকে শিক্ষকদের ধর্মঘট চলছিল।

১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও সেদিন খুব জমকালোভাবে দিনটি উদযাপন করা হয়নি। এদিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপিও।

জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। ছবি : আশরাফুল আলম
জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। ছবি : আশরাফুল আলম

কতটা মনে রেখেছে মানুষ

বছর ঘুরে ফের এসেছে জুলাই। গত এক বছরে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, সংস্কার কার্যক্রম চালু হয়েছে ও নির্বাচনের সম্ভব্য সময়ও ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, জনতার এক জাগরণ।

জুলাইয়ের বর্ষপূর্তিতে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বিএনপি ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি জ্বালিয়ে জুলাই-শহীদদের স্মরণ করা হয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে।

জুলাই স্মরণে ‘জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি’র ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাইয়ের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে তারা এই কর্মসূচি শুরু করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রোফাইল ছবি বদলেছেন এবং হ্যাশট্যাগ #JulyRevolution ব্যবহার করে তাদের ত্যাগের কথা লিখেছেন।

Ad 300x250

এ মূহুর্তে বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা কতটা উপযোগী

শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে: খালেদা জিয়া

নির্মাণের ত্রুটি আমলে নেয়নি ঠিকাদার, ২ প্রকৌশলীসহ নিহত ৩

১ জুলাই প্রথমবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামটি আসে

ফাঁস হওয়া ফোনালাপ কেন্দ্র করে বরখাস্ত হলেন থাই প্রধানমন্ত্রী

সম্পর্কিত