leadT1ad

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পথ সৌদি আরব হয়েই আসতে হবে

সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ১১টি ইইউ দেশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো, এই পদক্ষেপও কি ইউরোপের অসহায়ত্ব ও অপ্রাসঙ্গিকতার আরেকটি উদাহরণ হয়ে থাকবে?

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ২০: ০৩
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ২০: ২৫
জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পতাকা উড়ছে।

যুদ্ধ মানুষকে অসহায় বোধ করায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে নতুন করে ফিলিস্তিনের ওপর শুরু হয় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ ও অপহরণ। ইউরোপীয়রা দীর্ঘ ২২ মাস ধরে অসহায়ভাবে তাকিয়ে দেখেছে সেসব ঘটনা।

এর আংশিক কারণ ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব। ইউরোপীয়ানদের কথাবার্তা সাহসী হোক বা না হোক সেসব অপ্রাসঙ্গিক প্রমাণিত হয়েছে।

সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ১১টি ইইউ দেশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো, এই পদক্ষেপও কি ইউরোপের অসহায়ত্ব ও অপ্রাসঙ্গিকতার আরেকটি উদাহরণ হয়ে থাকবে?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগ ভিন্ন কিছু প্রমাণ করতে পারে। তবে সেই সম্ভাবনা ইউরোপের ঐক্য বা বিভক্তির ওপর তেমন নির্ভর করছে না। বরং নির্ভর করছে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের শক্তিশালী ও দৃঢ় জোট গড়ে তোলার ওপর।

বিশেষত সৌদি আরবের নেতৃত্বে এই জোট করতে পারলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতি পরিবর্তনে বাধ্য হতে পারে। সম্ভাবনা এখনো খুবই ক্ষীণ, কিন্তু চেষ্টা করা অযৌক্তিক নয়।

প্রেসিডেন্ট মাখোঁর এই উদ্যোগের ঘোষণা এমন সময়ে এলো যখন ২৮ থেকে ২৯ জুলাই নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথভাবে ফিলিস্তিন প্রশ্নে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করবে। এরপর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলন করার পরিকল্পনাও আছে।

ফ্রান্সের এই উদ্যোগ ব্যর্থও হতে পারে। কিন্তু সফলতার সামান্য যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা নির্ভর করছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর। ফ্রান্সসহ অন্য ইউরোপীয় দেশগুলো যদি আরব নেতাদের এই বিষয়ে রাজি করাতে পারে এবং একসঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হয় সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে বাধ্য হবে।

আর একই সঙ্গে নির্ভর করছে সৌদি যুবরাজের ওপর। তিনি কি যথেষ্ট সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে গুরুত্ব সহকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভাবাতে এবং রাজি করাতে পারবেন?

গত ২২ মাসের সংঘর্ষের ভয়াবহ সত্য হলো, না হামাস, না ইসরায়েল, না ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র—কেউই গাজায় বসবাসরত প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির ভাগ্য নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। সংঘাতে নিহত ৬০ হাজার ফিলিস্তিনিকে সবাই কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে দেখছে।

গত সপ্তাহে কাতারে অনুষ্ঠিত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ইসরায়েলি ও মার্কিন আলোচকেরা আর অংশ নিচ্ছেন না। কেন আলোচনা ভেস্তে গেল তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অবশিষ্ট ৫০ জন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির শর্তে হামাস ইসরায়েলের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির দাবি জানিয়েছিল। এ কারণে কেবল সংখ্যার হিসাব নিয়ে সবাই যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করছে। আর তা প্রমাণ করে যে কেউই লড়াই থামানোর ব্যাপারে আন্তরিক নয়।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ ধারণাটি বহু দশকের পুরোনো। নব্বইয়ের দশক শুরু থেকে দীর্ঘ সময় ধরে এই ধারণা সম্মিলিত সমর্থনও পেয়ে আসছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ ধারণাটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলো মুখেমুখে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করলেও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি। আর এখন ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো কথাই বলছে না।

এই আন্তরিকতার অভাবের মধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা নিয়ে বিভাজন আরও বেড়েছে।

একপক্ষ মনে করে গাজা ও পশ্চিম তীরে একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই শান্তির একমাত্র পথ। এতে ফিলিস্তিনিরা অবশেষে নিজেদের শাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালাতে পারবে এবং ঔপনিবেশিক অবস্থার অবসান ঘটবে।

আর অন্যপক্ষের দাবি, গাজার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মানেই চিরস্থায়ী যুদ্ধের রেসিপি। ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হলে হামাসের মতো মিলিশিয়ারা ইসরায়েল ধ্বংসের চেষ্টা চালাবে।

তৃতীয় আরেকটি পক্ষ মনে করে, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বর্তমান অবস্থা নিজেই নড়বড়ে।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনিরা প্রায় অবিরাম যুদ্ধ করে আসছে। ভবিষ্যতে শান্তি নির্ভর করবে উভয় রাষ্ট্রের শাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর।

এখানেই সমৃদ্ধ আরব রাষ্ট্রগুলো, বিশেষত সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত তারা কেউই এ ভূমিকা নেয়নি। গাজা পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে কার্যকর করতে আরব অর্থ ও হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। কিন্তু অতীতে আরবরা ইউরোপীয়দের মতোই অসহায় দর্শক ছিল, যারা শুধু কথা বলেছে, কাজ করেনি।

যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্র আবার স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ব্যাপারে আগ্রহী হয় এবং ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, ততক্ষণ এ ধরনের রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা নেই। ফ্রান্সের কূটনৈতিক স্বীকৃতি কিংবা আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও অন্যদের স্বীকৃতি এই বাস্তবতা বদলাাতে পারবেনা।

এখন একমাত্র যে বিষয় বাস্তবতাকে বদলাতে পারে তা হলো, সৌদি আরব যদি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে জোরালো চেষ্টা করে। আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ট্রাম্পের অন্য যেকোনো চুক্তির শর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে গ্রহণ করতে হবে। সৌদির পুরনো শত্রু ইরান এখন মারাত্মকভাবে দুর্বল হওয়ায়, কূটনৈতিক ঝুঁকি নেওয়ার এটাই সঠিক সময়।

এই কারণেই প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজস্ব উদ্যোগে সৌদির সাহস বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। অন্য ইউরোপীয়রা, বিশেষত ব্রিটেনের কিয়ার স্টারমার ও ইতালির জর্জিয়া মেলোনির উচিত মাখোঁকে সমর্থন দেওয়া।

(এশিয়ান টাইমসে প্রকাশিত দ্য ইকনোমিস্টের সাবেক সম্পাদক ও লেখক বিল এমেটের মতামত অবলম্বনে।)

Ad 300x250

পীর শাহ মুহাম্মদ আহসানুজ্জামানের মৃত্যুতে তথ্য উপদেষ্টার শোক

রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ: গুলি, গাড়ি ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধপরিকর: ড. ইউনূস

মওলানা ভাসানী না থাকলে কখনো শেখ মুজিব তৈরি হতে পারতেন না: নাহিদ ইসলাম

৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন, ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে

সম্পর্কিত