সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই সম্পর্ককে সামনে রেখে তিনি তিন দিক থেকে ভারত নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন বলেও মন্তব্য করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের উদ্বেগের কারণ বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি হিন্দি। রজনীশ কুমারের প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে বিবিসি উর্দু। পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি অনূদিত হলো।
স্ট্রিম ডেস্ক
ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বার্থ পরস্পর জড়িত, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ফরেন পলিসি সার্ভে ২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জেনারেল অনিল চৌহান এ কথা বলেন।
চৌহান ভারত মহাসাগরে ভারতের জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের দিকেও ইঙ্গিত করেন। চীনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঋণ দিয়ে তারা এ অঞ্চলে প্রভাব বৃদ্ধি করছে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সরকার ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। এর পাশাপাশি আদর্শিক স্তরেও বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। একইভাবে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আন্তঃসংযুক্ত স্বার্থও নিরাপত্তা উদ্বেগ বৃদ্ধি করছে।
অনিল চৌহান আরও বলেন, ‘ভারতকে তার সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং বিদেশে নির্ভরযোগ্য অংশীদার তৈরি করতে হবে। স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী দক্ষতার সঙ্গে ভারতকে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি প্রচারের মাধ্যমেই আমরা জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারে সক্ষম হব।’
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিবর্তিত আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য জটিলতা বাড়ছে।
সবচেয়ে বড় হুমকি হলো বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে একটি বিমানবন্দর নিয়ে কাজ করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগকারী চিকেন নেকের হুমকি বেড়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের ৩০ বছর পর পর্যন্ত পূর্ব সীমান্তকে বান্দিয়ার জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হতো, কিন্তু এখন আর তা নেই। রাহুল বেদী, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদী বলেছেন, ‘সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহানের উদ্বেগ একেবারেই ন্যায্য এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক চার দিনের সংঘর্ষের পর অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
রাহুল বেদীর মতে, ‘জেনারেল চৌহান চীন ও পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন।’ গত সপ্তাহেই উপ-সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং বলেছিলেন, চীন ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে। আগে একে দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ বলা হতো। কিন্তু এখন একে ‘এক ফ্রন্টে শক্তিশালী যুদ্ধ’ বলা হচ্ছে।
রাহুল বেদী আরও বলছেন, ‘পাকিস্তান চীন থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, উপগ্রহ চিত্র আর গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছে। ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশও পাকিস্তান ও চীনের ভারতবিরোধী জোটে যোগ দিয়েছে। এখন ভারত তিন দিক থেকে হুমকির সম্মুখীন। পশ্চিম সীমান্ত থেকে, উত্তর সীমান্ত থেকে এবং বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার পর পূর্ব সীমান্তেও ভারত হুমকির সম্মুখীন।’
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদীর মতে,‘সবচেয়ে বড় হুমকি হলো বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে একটি বিমানবন্দর নিয়ে কাজ করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগকারী চিকেন নেকের হুমকি বেড়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের ৩০ বছর পর পর্যন্ত পূর্ব সীমান্তকে বান্দিয়ার জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হতো, কিন্তু এখন আর তা নেই।’
শিলিগুড়ি করিডোর ‘চিকেন নেক’ নামেও পরিচিত। মাত্র ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই করিডোর উত্তর-পূর্ব ভারতকে স্থলপথে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করার একমাত্র পথ।
বাংলাদেশ ও নেপালের সীমান্তও এই করিডোরের সাথে মিলিত হয়েছে। ভুটান এবং চীনও এই করিডোর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছিল, বাংলাদেশ লালমনিরহাটে চীনের সহায়তায় নির্মিত একটি পুরনো বিমান ঘাঁটি পুনরায় সক্রিয় করছে।
রাহুল বেদী এই ঘাঁটি সম্পর্কে বলেন, এটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ি করিডোর থেকে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার দূরে।
বাংলাদেশকে ‘ভারত-লকড’ (ভারত দিয়ে ঘেরা) দেশ বলা হয়। বাংলাদেশের ৯৪ শতাংশ ভূখণ্ড ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪ হাজার ৩ শ ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৯৪ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করে আসছিল। বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে সস্তা ও সহজ সংযোগ স্থাপনে দিল্লিকে সহায়তা করে এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নয়াদিল্লি ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) সিনিয়র ফেলো মনোজ জোশি বলেন, ‘এত দীর্ঘ সীমান্ত যদি ভারতের বিরুদ্ধে হয়, তাহলে আমরা হুমকি মূল্যায়ন করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘গত মাসেই চীনের কুনমিংয়ে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে একটি নতুন আঞ্চলিক গোষ্ঠী তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ কারণেই জেনারেল চৌহান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
মনোজ জোশি বলেন, ‘আপনি যদি সামরিক শক্তি বা অর্থনৈতিক শক্তি হন, তাহলে প্রতিবেশী দেশের বৈদেশিক নীতি আপনার ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি ঘটতে পারত, কিন্তু ভারত কোনো সামরিক শক্তি নয়, অর্থনৈতিক শক্তিও না। দুটির কোনো একটি ক্ষেত্রেও আমরা শক্তিশালী হলে প্রতিবেশীরা আমাদের কথা শুনত।’
মনোজ জোশির মতে, অপারেশন সিন্দুরের পর আমেরিকা পাকিস্তানকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। জোশি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের মাইকেল কারেলা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে অভিহিত করেছেন। আমেরিকার ঝোঁক অবশ্যই পাকিস্তানের দিকে। পাকিস্তানের প্রতি রাশিয়ার আগ্রহও বাড়ছে।’
মনোজ জোশি বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘মোদী সরকারের উচিত পররাষ্ট্রনীতিকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে আলাদা রাখা। যেমন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যেন অন্য কিছু অর্জন করা হয়ে গেছে। আমাদের দেখানোপনা কম করতে হবে। বাস্তবতায় আরও দৃঢ় হতে হবে। ভুটানও অপারেশন সিন্দুরকে সমর্থন করেনি।’
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক উদয় ভাস্কর মনে করেন, ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান ভারতের জটিল প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন। উদয় ভাস্কর বলেন, ‘ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলবিদরা এত দিন দুটি ফ্রন্টে যে চ্যালেঞ্জ দেখছিলেন, তা এখন তিনটি ফ্রন্টে পরিণত হতে পারে। চীন এখন পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও তাদের শিবিরে আনতে সফল বলে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার আগে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করা হয়নি।’
অন্যদিকে রাহুল বেদী বলেন, ‘ট্রাম্পের অবস্থান পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে। আমেরিকা পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শালকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দশ দিন পরে পাকিস্তান বিমানবাহিনী প্রধানও আমেরিকা সফর করেছেন। এটাও বলা হচ্ছে যে আমেরিকা পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বহাল করতে পারে।’
রাহুল বেদী বলেন, ‘পাকিস্তানের যে ভৌগোলিক অবস্থান তাকে অত্যন্ত কৌশলগত বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানের সীমানা রয়েছে চীন, আফগানিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। তা ছাড়া বেলুচিস্তানে দুর্লভ খনিজ সম্পদ রয়েছে। সবারই এগুলোর প্রয়োজন। অপারেশন সিঁদুরের পর এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ইসরাইল ছাড়া আর কেউ ভারতকে সমর্থন করেনি। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করলেও পাকিস্তানের নিন্দা করেনি।’
এই পুরো বিষয়ে ভারতের কোনো অবহেলা আছে কি? রাহুল বেদী বলেন, ‘একজন শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কূটনীতিক আমাকে বলেছিলেন, ভারত বলে অনেক কথা কিন্তু বাস্তবে খুব কম করে।’
‘ভারতের শক্তিশালী সেনা ও নৌবাহিনী আছে, কিন্তু যখন জাপান এবং আমেরিকার লোকেরা এসে খনিজ সম্পদ দেখে, তখন পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যায়।’
ওপি জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা অধ্যয়নের অধ্যাপক শ্রীপর্ণা পাঠকও বিশ্বাস করেন, চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের শামিল হওয়ার ফলে ভারতের জন্য হুমকি বেড়েছে।
অধ্যাপক পাঠক বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি আবার চালু করার চেষ্টা করছে। এটি ভারতের নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপজ্জনক হবে। স্পষ্টতই ভারত এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। চীন ভারতকে তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যেন চীনকে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হতে হয়।’
তবে অধ্যাপক পাঠক বিশ্বাস করেন না যে পাকিস্তানের বিশ্বব্যাপী মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অধ্যাপক পাঠক বলেন, ‘আমরা আমেরিকার কাছে খুব বেশি কিছু আশা করতে পারি না। সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান আগেও একই ছিল। ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যারা বলেছিল, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্রিকস প্রস্তাবের অংশ ছিলাম।’
ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বার্থ পরস্পর জড়িত, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ফরেন পলিসি সার্ভে ২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জেনারেল অনিল চৌহান এ কথা বলেন।
চৌহান ভারত মহাসাগরে ভারতের জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের দিকেও ইঙ্গিত করেন। চীনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঋণ দিয়ে তারা এ অঞ্চলে প্রভাব বৃদ্ধি করছে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সরকার ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। এর পাশাপাশি আদর্শিক স্তরেও বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। একইভাবে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আন্তঃসংযুক্ত স্বার্থও নিরাপত্তা উদ্বেগ বৃদ্ধি করছে।
অনিল চৌহান আরও বলেন, ‘ভারতকে তার সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং বিদেশে নির্ভরযোগ্য অংশীদার তৈরি করতে হবে। স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী দক্ষতার সঙ্গে ভারতকে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি প্রচারের মাধ্যমেই আমরা জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারে সক্ষম হব।’
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিবর্তিত আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য জটিলতা বাড়ছে।
সবচেয়ে বড় হুমকি হলো বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে একটি বিমানবন্দর নিয়ে কাজ করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগকারী চিকেন নেকের হুমকি বেড়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের ৩০ বছর পর পর্যন্ত পূর্ব সীমান্তকে বান্দিয়ার জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হতো, কিন্তু এখন আর তা নেই। রাহুল বেদী, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদী বলেছেন, ‘সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহানের উদ্বেগ একেবারেই ন্যায্য এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক চার দিনের সংঘর্ষের পর অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
রাহুল বেদীর মতে, ‘জেনারেল চৌহান চীন ও পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন।’ গত সপ্তাহেই উপ-সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং বলেছিলেন, চীন ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে। আগে একে দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ বলা হতো। কিন্তু এখন একে ‘এক ফ্রন্টে শক্তিশালী যুদ্ধ’ বলা হচ্ছে।
রাহুল বেদী আরও বলছেন, ‘পাকিস্তান চীন থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, উপগ্রহ চিত্র আর গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছে। ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশও পাকিস্তান ও চীনের ভারতবিরোধী জোটে যোগ দিয়েছে। এখন ভারত তিন দিক থেকে হুমকির সম্মুখীন। পশ্চিম সীমান্ত থেকে, উত্তর সীমান্ত থেকে এবং বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার পর পূর্ব সীমান্তেও ভারত হুমকির সম্মুখীন।’
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদীর মতে,‘সবচেয়ে বড় হুমকি হলো বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে একটি বিমানবন্দর নিয়ে কাজ করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগকারী চিকেন নেকের হুমকি বেড়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের ৩০ বছর পর পর্যন্ত পূর্ব সীমান্তকে বান্দিয়ার জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হতো, কিন্তু এখন আর তা নেই।’
শিলিগুড়ি করিডোর ‘চিকেন নেক’ নামেও পরিচিত। মাত্র ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই করিডোর উত্তর-পূর্ব ভারতকে স্থলপথে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করার একমাত্র পথ।
বাংলাদেশ ও নেপালের সীমান্তও এই করিডোরের সাথে মিলিত হয়েছে। ভুটান এবং চীনও এই করিডোর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছিল, বাংলাদেশ লালমনিরহাটে চীনের সহায়তায় নির্মিত একটি পুরনো বিমান ঘাঁটি পুনরায় সক্রিয় করছে।
রাহুল বেদী এই ঘাঁটি সম্পর্কে বলেন, এটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ি করিডোর থেকে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার দূরে।
বাংলাদেশকে ‘ভারত-লকড’ (ভারত দিয়ে ঘেরা) দেশ বলা হয়। বাংলাদেশের ৯৪ শতাংশ ভূখণ্ড ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪ হাজার ৩ শ ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৯৪ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করে আসছিল। বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে সস্তা ও সহজ সংযোগ স্থাপনে দিল্লিকে সহায়তা করে এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নয়াদিল্লি ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) সিনিয়র ফেলো মনোজ জোশি বলেন, ‘এত দীর্ঘ সীমান্ত যদি ভারতের বিরুদ্ধে হয়, তাহলে আমরা হুমকি মূল্যায়ন করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘গত মাসেই চীনের কুনমিংয়ে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে একটি নতুন আঞ্চলিক গোষ্ঠী তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ কারণেই জেনারেল চৌহান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
মনোজ জোশি বলেন, ‘আপনি যদি সামরিক শক্তি বা অর্থনৈতিক শক্তি হন, তাহলে প্রতিবেশী দেশের বৈদেশিক নীতি আপনার ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি ঘটতে পারত, কিন্তু ভারত কোনো সামরিক শক্তি নয়, অর্থনৈতিক শক্তিও না। দুটির কোনো একটি ক্ষেত্রেও আমরা শক্তিশালী হলে প্রতিবেশীরা আমাদের কথা শুনত।’
মনোজ জোশির মতে, অপারেশন সিন্দুরের পর আমেরিকা পাকিস্তানকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। জোশি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের মাইকেল কারেলা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে অভিহিত করেছেন। আমেরিকার ঝোঁক অবশ্যই পাকিস্তানের দিকে। পাকিস্তানের প্রতি রাশিয়ার আগ্রহও বাড়ছে।’
মনোজ জোশি বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘মোদী সরকারের উচিত পররাষ্ট্রনীতিকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে আলাদা রাখা। যেমন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যেন অন্য কিছু অর্জন করা হয়ে গেছে। আমাদের দেখানোপনা কম করতে হবে। বাস্তবতায় আরও দৃঢ় হতে হবে। ভুটানও অপারেশন সিন্দুরকে সমর্থন করেনি।’
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক উদয় ভাস্কর মনে করেন, ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান ভারতের জটিল প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন। উদয় ভাস্কর বলেন, ‘ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলবিদরা এত দিন দুটি ফ্রন্টে যে চ্যালেঞ্জ দেখছিলেন, তা এখন তিনটি ফ্রন্টে পরিণত হতে পারে। চীন এখন পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও তাদের শিবিরে আনতে সফল বলে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার আগে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করা হয়নি।’
অন্যদিকে রাহুল বেদী বলেন, ‘ট্রাম্পের অবস্থান পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে। আমেরিকা পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শালকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দশ দিন পরে পাকিস্তান বিমানবাহিনী প্রধানও আমেরিকা সফর করেছেন। এটাও বলা হচ্ছে যে আমেরিকা পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বহাল করতে পারে।’
রাহুল বেদী বলেন, ‘পাকিস্তানের যে ভৌগোলিক অবস্থান তাকে অত্যন্ত কৌশলগত বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানের সীমানা রয়েছে চীন, আফগানিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। তা ছাড়া বেলুচিস্তানে দুর্লভ খনিজ সম্পদ রয়েছে। সবারই এগুলোর প্রয়োজন। অপারেশন সিঁদুরের পর এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ইসরাইল ছাড়া আর কেউ ভারতকে সমর্থন করেনি। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করলেও পাকিস্তানের নিন্দা করেনি।’
এই পুরো বিষয়ে ভারতের কোনো অবহেলা আছে কি? রাহুল বেদী বলেন, ‘একজন শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কূটনীতিক আমাকে বলেছিলেন, ভারত বলে অনেক কথা কিন্তু বাস্তবে খুব কম করে।’
‘ভারতের শক্তিশালী সেনা ও নৌবাহিনী আছে, কিন্তু যখন জাপান এবং আমেরিকার লোকেরা এসে খনিজ সম্পদ দেখে, তখন পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যায়।’
ওপি জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা অধ্যয়নের অধ্যাপক শ্রীপর্ণা পাঠকও বিশ্বাস করেন, চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের শামিল হওয়ার ফলে ভারতের জন্য হুমকি বেড়েছে।
অধ্যাপক পাঠক বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি আবার চালু করার চেষ্টা করছে। এটি ভারতের নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপজ্জনক হবে। স্পষ্টতই ভারত এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। চীন ভারতকে তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যেন চীনকে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হতে হয়।’
তবে অধ্যাপক পাঠক বিশ্বাস করেন না যে পাকিস্তানের বিশ্বব্যাপী মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অধ্যাপক পাঠক বলেন, ‘আমরা আমেরিকার কাছে খুব বেশি কিছু আশা করতে পারি না। সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান আগেও একই ছিল। ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যারা বলেছিল, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্রিকস প্রস্তাবের অংশ ছিলাম।’
এ প্লাস যারা পেয়েছে, তাদের স্ট্যাটাস আর যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন বহু যুগ আগে, তাঁদেরও স্ট্যাটাস। এমনকি, যাদের পরীক্ষা দেয়ার বয়স হয়নি, তারাও লিখছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, জিপিএ-৫’। এই যে এক সম্মিলিত জুনুন বা গণ-উন্মাদনা—এর মনস্তত্ত্বটা কী?
১ দিন আগেআমার এখনও মনে পড়ে, আমাদের স্কুলের মাঠে লুৎফর রহমান স্যার চিৎকার করে রোল নাম্বার ডাকছিলেন, সঙ্গে লেটার সংখ্যা আর রেজাল্ট বলছিলেন। গলায় কাতর স্বর তুলে আমার বেলায় স্যার বললেন, ‘আহা, ছেলেটা স্টার পায় নাই, ধর্মে লেটার…।’
১ দিন আগেবাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে ফটোকার্ড সাংবাদিকতা জনপ্রিয় হচ্ছে। দ্রুত তথ্য দিতে ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে যাচাইহীন, চটকদার ফটোকার্ড বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিশ্বস্ততা রক্ষায় তথ্য যাচাই, নৈতিকতা ও ডিজিটাল সাক্ষরতা জরুরি।
২ দিন আগেগত এক দশক ধরে সার্ক কার্যত অচল। ২০১৬ সালে ভারতের বয়কটের পর এ প্ল্যাটফর্ম থমকে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রগতির জন্য সার্কের পুনর্জাগরণ প্রয়োজন, যেখানে সংলাপ ও সহযোগিতাই হতে পারে একমাত্র পথ।
৩ দিন আগে