২২ শ্রাবণ স্মরণে
২২ শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুদিন। বাংলাদেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক বিবেচনার মাত্রাগত বৈচিত্র্য আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কখনো কখনো এখানে সম্পর্ক বিচারে কাজ করে নানা সমীকরণ। কিন্তু এ দেশের সঙ্গে এ কবির সম্পর্কটি কোথায়? রবীন্দ্র-প্রায়াণবার্ষিকীতে তার তত্ত্বতালাশ।
রাফাত আলম

বাংলাদেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক বিবেচনার মাত্রাগত বৈচিত্র্য আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কখনো কখনো এখানে সম্পর্ক বিচারে কাজ করে নানা সমীকরণ। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সংযোগ মর্মগত। এর দৃষ্টান্ত মিলবে তাঁর একাধিক সৃষ্টিকর্মে। বাংলাদেশ কেবল উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রসৃজনে জায়গা করে নেয়নি, বরং রবীন্দ্রনাথের বিশ্বকবি হয়ে ওঠার দার্শনিক ভিত্তিটিও তৈরি হয় বাংলাদেশের মাটি-পানি-হাওয়ায়। এই রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে বাংলাদেশে কীভাবে গৃহীত হয়েছেন এবং কীভাবে গৃহীত হতে পারেন, এখনকার আলাপ সে বিষয়ে।
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাহিত্যিক ও নন্দনতাত্ত্বিক তাৎপর্যের চেয়েও কখনো কখনো রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা ঘটে মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চেতনার দ্রুত ও ক্রমরূপান্তরশীল বৈশিষ্ট্যের কারণে।
বাংলাদেশের জনভূমিতে রবীন্দ্রচর্চা সবসময়ই ছিল। রাজনৈতিক দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষভাবে দৃশ্যমান হন ১৯৬১ সালে; রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে। তবে দেশভাগ-পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রবিতর্কের সূত্রপাত ঘটে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে, ১৯৪৮ সালে। তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথ বিবেচিত হন ‘বুর্জোয়া লেখক’ হিসেবে। একই সময়ে ঢাকার ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘ’-এর বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথকে ‘প্রগতিবিরোধী’ বলে অভিহিত করেন। এঁদের মধ্যে মুনীর চৌধুরীও ছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে মুনীর চৌধুরীর রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রবীন্দ্রবিবেচনার অবস্থনটিও পরিবর্তিত হয়।
অন্যদিকে ‘পাকিস্তানি আদর্শ’-এর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে রবীন্দ্রনাথকে দূরে সরানোর চেষ্টা হতে থাকে। নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো কোনো কবি ও সাহিত্যিকও নতুন বিবেচনার কথা বলেছেন—যেমন গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ আলী আহসান। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
ষাটের দশকে রাজনৈতিকভাবে রবীন্দ্রনাথকে সজীব, সক্রিয় ও কার্যকর করার পথ তৈরি করে দিয়েছিল তৎকালীন আইয়ুব খানের সামরিক স্বৈরশাসন। তাঁর শাসনামলের শুরুতে ১৯৫৯ সালে রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী পালন করা যায়নি। কিন্তু ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে সরকারি প্রতিবন্ধকতাকে পূর্ববাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি কেবল একজন কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের বাধা হিসেবে দেখেনি; একে দেখেছে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব-বাংলার জনমানুষের ওপর সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আগ্রাসন হিসেবে। তাই দেখা যায়, স্বাভাবিক উদ্যাপনের চেয়েও বাড়তি মনোযোগ ও তাৎপর্য নিয়ে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে টানা তিন দিন ধরে উদ্যাপিত হয় রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান।
রাজনৈতিক কার্যক্রমে আইয়ুব খানের শাসন যে অর্গল তৈরি করেছিল রবীন্দ্র-উদ্যাপন সেই অর্গলেও করল শক্ত আঘাত। এরই ধারাবাহিকতায় ছায়ানট প্রতিষ্ঠা (১৯৬১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ আয়োজিত ‘ভাষা ও সাহিত্য সপ্তাহ’ (১৯৬৩), পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন (১৯৬৪), রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনে (১৯৬৭) রবীন্দ্রনাথ আবশ্যিক অনুষঙ্গ হিসেবে গৃহীত হতে থাকেন।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের রেডিও ও টেলিভিশন থেকে নির্বাসিত হয় রবীন্দ্রসংগীত। রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের পক্ষে-বিপক্ষে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি ওই সময়ে (১৯৬৭) বহুল আলোচিত এক ঘটনা। ষাটের দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও উত্তুঙ্গক্ষণে, অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এভাবেই রবীন্দ্রনাথ এই জনাঞ্চলে গুরুত্বের সঙ্গে গৃহীত ও আদৃত হয়েছেন।
১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান থেকে ১৯৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে রবীন্দ্রসংগীত কার্যকর উৎসাহ-অনুষঙ্গ হিসেবে বিদ্যমান থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয় রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকেই বুদ্ধিজীবী মহলে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। ওই সময়ে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক লেখকের লেখায় রবীন্দ্রবিতর্ক দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। কারও কারও কাছে রবীন্দ্রসাহিত্য ‘লালিত্যসর্বস্ব’, ‘পানসে’, ‘অবিপ্লবী’ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। ওই সময় (১৯৭৩) বিখ্যাত শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী আহমদ শরীফও রবীন্দ্রনাথকে কেবল অতীত-ঐতিহ্যের মধ্যে রেখে বিবেচনা করতে চেয়েছেন, বর্তমানের অনুপ্রেরণার উৎস বলে মনে করেননি।
এই তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও রাজনীতির মাঠে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গ্রহণ-বর্জনের বিস্তর খেলা চলেছে। ধর্ম-পরিচয়গত বিবেচনা তো ছিলই। ছিল মুখরোচক অনেক গালগল্পও। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের চেষ্টাও কখনো কখনো হয়েছে; কিন্তু সফলতা পায়নি। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চর্চায় ‘ধর্মীয় অনুভূতি’র সহজ ব্যবহারও এই বিতর্ককে জীবিত রেখেছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে অতিক্রম করেছে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়। বাংলাদেশের জনমানুষের উদারতার কারণেই রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য গৃহীত হয়েছে সহজ ছন্দে। রবীন্দ্রচর্চাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পরিচালিত হয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা, লেখা হয়েছে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ। প্রতিবছর রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সরকারিভাবেও গ্রহণ করা হচ্ছে দৃশ্যমান উদ্যোগ।
আমরা এখন যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছি, প্রত্যাশা করছি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেখানে রবীন্দ্রনাথকে থাকতে হবে, রাখতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় সংহতির অপরাপর অনুষঙ্গের মতো রবীন্দ্রনাথও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হতে পারেন। রবীন্দ্রনাথের এই থাকাটা কেবল ‘রাবীন্দ্রিকতা’ অর্থে থাকা নয়, কেবল গান-কবিতা-গল্প-উপন্যাসের মতো সাহিত্য-আঙ্গিকের মধ্যে থাকা নয়; সামূহিকভাবে থাকা, কার্যকরভাবে থাকা, জনসংস্কৃতির কল্যাণকামিতার মধ্যে থাকা।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক

বাংলাদেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক বিবেচনার মাত্রাগত বৈচিত্র্য আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কখনো কখনো এখানে সম্পর্ক বিচারে কাজ করে নানা সমীকরণ। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সংযোগ মর্মগত। এর দৃষ্টান্ত মিলবে তাঁর একাধিক সৃষ্টিকর্মে। বাংলাদেশ কেবল উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রসৃজনে জায়গা করে নেয়নি, বরং রবীন্দ্রনাথের বিশ্বকবি হয়ে ওঠার দার্শনিক ভিত্তিটিও তৈরি হয় বাংলাদেশের মাটি-পানি-হাওয়ায়। এই রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে বাংলাদেশে কীভাবে গৃহীত হয়েছেন এবং কীভাবে গৃহীত হতে পারেন, এখনকার আলাপ সে বিষয়ে।
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাহিত্যিক ও নন্দনতাত্ত্বিক তাৎপর্যের চেয়েও কখনো কখনো রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা ঘটে মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চেতনার দ্রুত ও ক্রমরূপান্তরশীল বৈশিষ্ট্যের কারণে।
বাংলাদেশের জনভূমিতে রবীন্দ্রচর্চা সবসময়ই ছিল। রাজনৈতিক দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষভাবে দৃশ্যমান হন ১৯৬১ সালে; রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে। তবে দেশভাগ-পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রবিতর্কের সূত্রপাত ঘটে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে, ১৯৪৮ সালে। তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথ বিবেচিত হন ‘বুর্জোয়া লেখক’ হিসেবে। একই সময়ে ঢাকার ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘ’-এর বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথকে ‘প্রগতিবিরোধী’ বলে অভিহিত করেন। এঁদের মধ্যে মুনীর চৌধুরীও ছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে মুনীর চৌধুরীর রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রবীন্দ্রবিবেচনার অবস্থনটিও পরিবর্তিত হয়।
অন্যদিকে ‘পাকিস্তানি আদর্শ’-এর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে রবীন্দ্রনাথকে দূরে সরানোর চেষ্টা হতে থাকে। নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো কোনো কবি ও সাহিত্যিকও নতুন বিবেচনার কথা বলেছেন—যেমন গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ আলী আহসান। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
ষাটের দশকে রাজনৈতিকভাবে রবীন্দ্রনাথকে সজীব, সক্রিয় ও কার্যকর করার পথ তৈরি করে দিয়েছিল তৎকালীন আইয়ুব খানের সামরিক স্বৈরশাসন। তাঁর শাসনামলের শুরুতে ১৯৫৯ সালে রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী পালন করা যায়নি। কিন্তু ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে সরকারি প্রতিবন্ধকতাকে পূর্ববাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি কেবল একজন কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের বাধা হিসেবে দেখেনি; একে দেখেছে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব-বাংলার জনমানুষের ওপর সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আগ্রাসন হিসেবে। তাই দেখা যায়, স্বাভাবিক উদ্যাপনের চেয়েও বাড়তি মনোযোগ ও তাৎপর্য নিয়ে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে টানা তিন দিন ধরে উদ্যাপিত হয় রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান।
রাজনৈতিক কার্যক্রমে আইয়ুব খানের শাসন যে অর্গল তৈরি করেছিল রবীন্দ্র-উদ্যাপন সেই অর্গলেও করল শক্ত আঘাত। এরই ধারাবাহিকতায় ছায়ানট প্রতিষ্ঠা (১৯৬১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ আয়োজিত ‘ভাষা ও সাহিত্য সপ্তাহ’ (১৯৬৩), পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন (১৯৬৪), রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনে (১৯৬৭) রবীন্দ্রনাথ আবশ্যিক অনুষঙ্গ হিসেবে গৃহীত হতে থাকেন।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের রেডিও ও টেলিভিশন থেকে নির্বাসিত হয় রবীন্দ্রসংগীত। রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের পক্ষে-বিপক্ষে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি ওই সময়ে (১৯৬৭) বহুল আলোচিত এক ঘটনা। ষাটের দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও উত্তুঙ্গক্ষণে, অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এভাবেই রবীন্দ্রনাথ এই জনাঞ্চলে গুরুত্বের সঙ্গে গৃহীত ও আদৃত হয়েছেন।
১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান থেকে ১৯৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে রবীন্দ্রসংগীত কার্যকর উৎসাহ-অনুষঙ্গ হিসেবে বিদ্যমান থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয় রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকেই বুদ্ধিজীবী মহলে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। ওই সময়ে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক লেখকের লেখায় রবীন্দ্রবিতর্ক দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। কারও কারও কাছে রবীন্দ্রসাহিত্য ‘লালিত্যসর্বস্ব’, ‘পানসে’, ‘অবিপ্লবী’ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। ওই সময় (১৯৭৩) বিখ্যাত শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী আহমদ শরীফও রবীন্দ্রনাথকে কেবল অতীত-ঐতিহ্যের মধ্যে রেখে বিবেচনা করতে চেয়েছেন, বর্তমানের অনুপ্রেরণার উৎস বলে মনে করেননি।
এই তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও রাজনীতির মাঠে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গ্রহণ-বর্জনের বিস্তর খেলা চলেছে। ধর্ম-পরিচয়গত বিবেচনা তো ছিলই। ছিল মুখরোচক অনেক গালগল্পও। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের চেষ্টাও কখনো কখনো হয়েছে; কিন্তু সফলতা পায়নি। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চর্চায় ‘ধর্মীয় অনুভূতি’র সহজ ব্যবহারও এই বিতর্ককে জীবিত রেখেছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে অতিক্রম করেছে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়। বাংলাদেশের জনমানুষের উদারতার কারণেই রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য গৃহীত হয়েছে সহজ ছন্দে। রবীন্দ্রচর্চাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পরিচালিত হয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা, লেখা হয়েছে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ। প্রতিবছর রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সরকারিভাবেও গ্রহণ করা হচ্ছে দৃশ্যমান উদ্যোগ।
আমরা এখন যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছি, প্রত্যাশা করছি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেখানে রবীন্দ্রনাথকে থাকতে হবে, রাখতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় সংহতির অপরাপর অনুষঙ্গের মতো রবীন্দ্রনাথও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হতে পারেন। রবীন্দ্রনাথের এই থাকাটা কেবল ‘রাবীন্দ্রিকতা’ অর্থে থাকা নয়, কেবল গান-কবিতা-গল্প-উপন্যাসের মতো সাহিত্য-আঙ্গিকের মধ্যে থাকা নয়; সামূহিকভাবে থাকা, কার্যকরভাবে থাকা, জনসংস্কৃতির কল্যাণকামিতার মধ্যে থাকা।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক

আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে কথার ফুলঝুরি থাকলেও প্রকৃত ‘কাজের মানুষ’-এর অভাব প্রকট। অথচ সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়তে হলে বাগাড়ম্বর নয়, প্রয়োজন দক্ষতা, সততা ও কঠোর পরিশ্রম। এই নিবন্ধে কথার বৃত্ত ভেঙে দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগে
ঢাকার মানচিত্রে কড়াইল অদ্ভুত এক জনপদ। গুলশান লেকের ওপারে তাকালে ঘিঞ্জি ও ব্যস্ত যে বসতি, সেটিই কড়াইল। দূর থেকে প্রথম দেখলে একে দারিদ্র্যের একঘেয়ে মানচিত্র মনে হবে। পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গুলশান-বনানীর জৌলুসপূর্ণ অট্টালিকা দেখলে কড়াইল নিয়ে যে কারও মনে জাগবে বাড়তি কৌতূহল।
১ দিন আগে
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও ভোট গ্রহণের দিন-তারিখ নিয়ে জনমনে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও সংস্কার ও প্রস্তুতির ঘাটতি ভাবাচ্ছে অনেককে।
২ দিন আগে
গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রায় শেষের দিকে। এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা এই সরকারের কার্যক্রম, সাফল্য, ব্যর্থতা এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঢাকা স্ট্রিম–এর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ।
৩ দিন আগে