leadT1ad

যে কারণে গ্রেপ্তার হলেন অধ্যাপক আবুল বারকাত

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১৪: ২৬
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ১৬: ১২
আবুল বারকাত। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকার ধানমন্ডি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যাপক আবুল বারকাতসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করা হয়।

দুদকের অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও আবুল বারকাত মিলে জালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ অনুমোদন করেন। পরে নানা অনৈতিক কৌশলে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এজাহারে ঘটনার সময়কাল হিসেবে দেখানো হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর আগে ২০২২ সালে অ্যাননট্যাক্সের ঋণ অনিয়ম অনুসন্ধান করে দুদক। তবে দুদক তখন তাদের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পায়নি।

কী আছে মামলার এজাহারে

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বন্ধক রাখা জমির মালিক না হয়েও ঋণ গ্রহীতা নিজেকে মালিক দেখিয়ে জমি বন্ধক দেন। জমিতে কোনো স্থাপনা না থাকা সত্ত্বেও কারখানা আছে বলে উল্লেখ করে উচ্চমূল্য দেখানো হয়, যেখানে ৩ কোটি টাকার জমির দাম দেখানো হয় ১৬৪ কোটি টাকা। এরপর জনতা ব্যাংক থেকে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

এই মামলায় প্রধান আসামী করা হয় সুপ্রভ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনকে। এ প্রসঙ্গে এজাহারে আরও বলা হয়, জমির বেশি দাম দেখাতে তাঁকে সহায়তা করেন আরও ২০ জন আসামি। অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল সুপ্রভ স্পিনিংয়ের নামে পাওয়া ১৮০ কোটি টাকার ঋণ থেকে ৫০ কোটির বেশি টাকা নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর করে তা আত্মসাৎ করেন।

এজাহারে জানানো হয়, ঋণ অনুমোদন ও অর্থ আত্মসাতে সহায়তা করেন জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ ও নিতাই চন্দ্র নাথ।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান এবং গভর্নর আতিউর রহমান একজন অখ্যাত নতুন ব্যবসায়ীর অনুকূলে এই ঋণ অনুমোদনে সহযোগিতা করেন বলে মামলায় উল্লেখ আছে।

অধ্যাপক আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে আরও যত অভিযোগ

এর আগে বিভিন্ন সময়ে অধ্যাপক আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া এক প্রশ্নোত্তরে আবুল বারকাতের ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘বারকাতই জনতা ব্যাংককে শেষ করেছে। অথচ এটি ছিল দেশে সেরা ব্যাংক।’ প্রথম আলোর করা ওই প্রতিবেদনে এননটেক্স গ্রুপকে বিভিন্ন ছল-চাতুরির মাধ্যমে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। যেখানে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করে দেখানো হলেও সবই ছিল এননটেক্স গ্রুপের অধীনে। গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল একাই এই ঋণের সুবিধা ভোগ করেছিলেন। এভাবেই সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের সময়ে কেলেঙ্কারির অধ্যায়ে পা রাখে জনতা ব্যাংক।

অধ্যাপক আবুল বারকাত আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সালে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। দুই মেয়াদে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করে তিনি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিদায় নেন। এ ছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত