leadT1ad

এসএসসিতে পাসের হার কমল কেন

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১৩: ১৪
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ১৫: ০৭
স্ট্রিম ছবি

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গত ১৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার দেখা গেছে। পাশাপাশি কমেছে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। গতকালের ফলাফলে দেখা যায়, পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। এবারের ফলাফলে পাসের হার বিগত বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমেছে।

পাসের হার কমে যাওয়ার কারণ নিয়ে গতকাল থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকেরাও এ নিয়ে কথা বলছেন।

গণিতে ফেলের পরিমাণ বেশি

এ বছর গণিতে খারাপ করার প্রভাব পড়েছে সার্বিক পাশের হারে। দেশের ১১ শিক্ষা বোর্ডে প্রায় ২৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী গণিতে ফেল করেছে। এ ছাড়া মানবিক বিভাগে ৪৬ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষায় প্রায় ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনেকবারই পাবলিক পরীক্ষার ফল ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, দীর্ঘদিন ধরে চলা পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া বা পাশের হার বাড়ানো থেকে বেরিয়ে এসেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ফলাফল পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কর্তৃপক্ষ কী বলছে

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান স্ট্রিমকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও শিখন দক্ষতা অনুযায়ী সঠিকভাবে মূল্যায়িত হবার ফল পেয়েছে। তারা বুঝতে পারবে তাদের মান কেমন। জাতিও এবার আমাদের শিক্ষার মানের একটা বটমলাইন চিহ্নিত করতে পারবে। এ থেকে আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়নের যাত্রা শুরু করা সম্ভব হবে।’

এবার গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়নি, এই কথার মাধ্যমে তারা স্বীকার করেছেন যে আগে গ্রেস মার্ক দেওয়া হতো। ‘গ্রেস মার্ক ইজ আ ডিসগ্রেস’।সলিমুল্লাহ খান, শিক্ষাবিদ

গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেছেন, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে কাউকে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়নি। মেধার প্রকৃত মূল্যায়নের শতভাগ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। পরীক্ষকদেরও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এহসানুল কবির আরও বলেন, ‘উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়নের পর যা এসেছে, সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। বিগত সময়ে কী হয়েছে, কীভাবে ফল তৈরি করা হয়েছে, তা আমরা বলব না। এখন যে ফল আমরা দিয়েছি সেটিই প্রকৃত।’

ক্লাস কম হয়েছে

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও অন্যান্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক দিন ক্লাস হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের সময় হামলা, মামলা, দমন-নিপীড়নের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েছেন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা মনে করছেন, এসবের সরাসরি প্রভাব পড়েছে পড়ালেখা ও পরীক্ষার ফলাফলে।

এবারের ফলাফল বিপর্যয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শিক্ষাবিদ সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এবার গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়নি, এই কথার মাধ্যমে তারা স্বীকার করেছেন যে আগে গ্রেস মার্ক দেওয়া হতো। “গ্রেস মার্ক ইজ আ ডিসগ্রেস”। এই বিপর্যয়ের জন্য সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করতে হবে। একজন ছেলে-মেয়ের ফেল করার দায়ভারও শিক্ষাব্যবস্থাকেই নিতে হবে। ক্লাসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষকের মান এবং সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার যে শ্রেণিবিভাজন রয়েছে, তা উপেক্ষা করে এই খারাপ ফলাফল ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত