সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার ইস্যুটি। ট্রাম্প কি আদৌ নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবেন? নোবেল শান্তি পুরস্কার আসলে কীসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়?
তুফায়েল আহমদ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সোমবার (৭ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে নোবেল কমিটির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে নেতানিয়াহু লিখেছেন, বিশ্বব্যাপী শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃঢ় ও ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর এই মনোনয়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, নেতানিয়াহু মূলত ট্রাম্পকে তোষামোদ করছেন।
এর আগে চলতি বছরের জুনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিতে সুপারিশ করে পাকিস্তান সরকার। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সংকটে ‘কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেওয়ার’ স্বীকৃতি হিসেবে ট্রাম্পের জন্য এ আনুষ্ঠানিক সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
ট্রাম্প যদি এই পুরস্কার জেতেন, তবে থিওডোর রুজভেল্ট, উড্রো উইলসন, জিমি কার্টার ও বারাক ওবামার পর পঞ্চম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই সম্মান অর্জন করবেন তিনি।
নোবেল শান্তি পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মাননা বলে বিবেচনা করা হয়। ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। শান্তিসহ আরও ছয়টি বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
ডিনামাইটের আবিষ্কারক সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, বিশ্বে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
সব জীবিত ব্যক্তি বা সক্রিয় প্রতিষ্ঠানই এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন। নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ইয়র্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেসের ভাষ্যমতে, যে কেউ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন। এই পুরস্কারের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রতি বছর জানুয়ারিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয় এবং অক্টোবরে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ নেতানিয়াহুর বা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেওয়া ট্রাম্পের এই মনোনয়ন এ বছর বিবেচনায় আসবে না।
সরকার ও সংসদের সদস্য, বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, আইন ও দর্শনের অধ্যাপক, আগের শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রমুখ যে কাউকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিতে পারেন। তবে নিয়মানুসারে, নিজেকে মনোনয়ন দেওয়া যায় না। মনোনীতদের তালিকা ৫০ বছর গোপন রাখা হয়। তবে মনোনয়নদাতারা চাইলে তা প্রকাশ করতে পারেন।
নরওয়ের সংসদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড মনোনয়ন যাচাই-বাচাই করে বিজয়ী নির্ধারণ করেন। সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে এই বোর্ড গঠন করা হয়। তবে রাজনীতি থেকে এখনো অবসর নেননি—এমন ব্যক্তিরাও মাঝেমধ্যে এই কমিটির সদস্য হন। বর্তমানে এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা পেন ইন্টারন্যাশনালের নরওয়েজিয়ান শাখার প্রধান বুরহান সনমেজ।
প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ধারাবাহিক বেশ কয়েকটি বৈঠকে মনোনীতদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।
২০২৪ সালে ২৮৬ জন মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০২৫ সালের জন্য ২৪৪ জন ব্যক্তি ও ৯৪টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৩৩৮ জন মনোনয়ন পেয়েছেন।
এরপর প্রতিটি প্রার্থীর মনোনয়ন মূল্যায়ন করে কমিটি একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে। সাধারণত কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেষ্টা করে। তা সম্ভব না হলে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজয়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া অনেক সময় পুরস্কার ঘোষণার কয়েক দিন আগেই শেষ হয়।
নোবেল শান্তি পুরস্কারকে অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করা হয়। ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলে আলোচনা-সমালোচনায় বিদ্ধ হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি। পরবর্তী সময়ে কমিটির এক সদস্য এই মনোনয়ের জন্য নিজের অনুতাপের কথা প্রকাশ করেন।
১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে পুরস্কার দেওয়ার পর নোবেল কমিটির দুই সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত যখন যৌথভাবে ইসরায়েলের শিমন পেরেস ও ইৎজহাক রবিনের সঙ্গে এই পুরস্কার পান, তখনও এক সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন।
বিতর্কিত পুরস্কারের তালিকা নেহাত ছোট নয়। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি, ২০০৪ সালে কেনিয়ার রাজনীতিবিদ ও পরিবেশকর্মী ওয়াংগারি মাথাই, ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট আবি আহমেদসহ আরও অনেকের শান্তি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
পুরস্কার না পাওয়া নিয়েও বিতর্ক আছে। বিশ্ব শান্তির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম মহাত্মা গান্ধীকে এই পুরস্কার না দেওয়ায় অনেকবারই সমালোচনার শিকার হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীকে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১৪ কোটি ৪১ লাখ ১১ হাজার টাকা) পুরস্কারের সঙ্গে পদক ও সনদ দেওয়া হয়।
এ বছরের অক্টোবরে নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউটে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর ডিসেম্বরে আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে (১০ ডিসেম্বর) অসলো সিটি হলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
রয়েল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জ্যেষ্ঠ ফেলো এমা শর্টিসের বলেন, ‘ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করা এবং হায়েনাকে কুকুরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নামানো একই ব্যাপার। এই পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের অযোগ্যতা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক ইয়ান পারমিটার জানান, নেতানিয়াহু স্পষ্টতই ট্রাম্পকে তোষামোদ করতে চেয়েছেন। তবে ট্রাম্প নিজেও যে এই স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন, তা এখন পরিষ্কার।
অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজ ফোরামের (এমইএসএফ) পরিচালক শাহরাম আকবরজাদে বলেন, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আমাদের বিশ্বাস করাতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন শান্তির দূত। অথচ এর সঙ্গে সত্যের দূরবর্তী কোনও সম্পর্ক নেই। ট্রাম্প রক্ত ও ধ্বংসে পরিপূর্ণ এক ব্যক্তি। ট্রাম্প নিজেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য মনে করায় এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কতটা বিভ্রম ও নিজের মহিমার মিথ্যা কল্পনায় ভাসছেন তিনি।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লেখক ও কলামিস্ট বেলেন ফারনান্দেজ কিছুটা কটাক্ষ করে বলেন, ‘কেউ যদি শত-সহস্র বেসামরিক মানুষকে পারমাণবিক বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায়, তাকে শাস্তি দেওয়াটা সভ্য দুনিয়ার কাজ। কিন্তু আমরা তো আর এমন দুনিয়ায় নেই। আমাদের দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ শুরু করা হয়। এই দুনিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পই শান্তি পুরস্কারের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি!’
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য কনভার্সেশন, আল জাজিরা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সোমবার (৭ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে নোবেল কমিটির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে নেতানিয়াহু লিখেছেন, বিশ্বব্যাপী শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃঢ় ও ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর এই মনোনয়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, নেতানিয়াহু মূলত ট্রাম্পকে তোষামোদ করছেন।
এর আগে চলতি বছরের জুনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিতে সুপারিশ করে পাকিস্তান সরকার। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সংকটে ‘কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেওয়ার’ স্বীকৃতি হিসেবে ট্রাম্পের জন্য এ আনুষ্ঠানিক সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
ট্রাম্প যদি এই পুরস্কার জেতেন, তবে থিওডোর রুজভেল্ট, উড্রো উইলসন, জিমি কার্টার ও বারাক ওবামার পর পঞ্চম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই সম্মান অর্জন করবেন তিনি।
নোবেল শান্তি পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মাননা বলে বিবেচনা করা হয়। ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। শান্তিসহ আরও ছয়টি বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
ডিনামাইটের আবিষ্কারক সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, বিশ্বে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
সব জীবিত ব্যক্তি বা সক্রিয় প্রতিষ্ঠানই এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন। নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ইয়র্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেসের ভাষ্যমতে, যে কেউ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন। এই পুরস্কারের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রতি বছর জানুয়ারিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয় এবং অক্টোবরে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ নেতানিয়াহুর বা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেওয়া ট্রাম্পের এই মনোনয়ন এ বছর বিবেচনায় আসবে না।
সরকার ও সংসদের সদস্য, বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, আইন ও দর্শনের অধ্যাপক, আগের শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রমুখ যে কাউকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিতে পারেন। তবে নিয়মানুসারে, নিজেকে মনোনয়ন দেওয়া যায় না। মনোনীতদের তালিকা ৫০ বছর গোপন রাখা হয়। তবে মনোনয়নদাতারা চাইলে তা প্রকাশ করতে পারেন।
নরওয়ের সংসদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড মনোনয়ন যাচাই-বাচাই করে বিজয়ী নির্ধারণ করেন। সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে এই বোর্ড গঠন করা হয়। তবে রাজনীতি থেকে এখনো অবসর নেননি—এমন ব্যক্তিরাও মাঝেমধ্যে এই কমিটির সদস্য হন। বর্তমানে এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা পেন ইন্টারন্যাশনালের নরওয়েজিয়ান শাখার প্রধান বুরহান সনমেজ।
প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ধারাবাহিক বেশ কয়েকটি বৈঠকে মনোনীতদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।
২০২৪ সালে ২৮৬ জন মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০২৫ সালের জন্য ২৪৪ জন ব্যক্তি ও ৯৪টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৩৩৮ জন মনোনয়ন পেয়েছেন।
এরপর প্রতিটি প্রার্থীর মনোনয়ন মূল্যায়ন করে কমিটি একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে। সাধারণত কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেষ্টা করে। তা সম্ভব না হলে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজয়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া অনেক সময় পুরস্কার ঘোষণার কয়েক দিন আগেই শেষ হয়।
নোবেল শান্তি পুরস্কারকে অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করা হয়। ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলে আলোচনা-সমালোচনায় বিদ্ধ হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি। পরবর্তী সময়ে কমিটির এক সদস্য এই মনোনয়ের জন্য নিজের অনুতাপের কথা প্রকাশ করেন।
১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে পুরস্কার দেওয়ার পর নোবেল কমিটির দুই সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত যখন যৌথভাবে ইসরায়েলের শিমন পেরেস ও ইৎজহাক রবিনের সঙ্গে এই পুরস্কার পান, তখনও এক সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন।
বিতর্কিত পুরস্কারের তালিকা নেহাত ছোট নয়। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি, ২০০৪ সালে কেনিয়ার রাজনীতিবিদ ও পরিবেশকর্মী ওয়াংগারি মাথাই, ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট আবি আহমেদসহ আরও অনেকের শান্তি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
পুরস্কার না পাওয়া নিয়েও বিতর্ক আছে। বিশ্ব শান্তির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম মহাত্মা গান্ধীকে এই পুরস্কার না দেওয়ায় অনেকবারই সমালোচনার শিকার হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীকে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১৪ কোটি ৪১ লাখ ১১ হাজার টাকা) পুরস্কারের সঙ্গে পদক ও সনদ দেওয়া হয়।
এ বছরের অক্টোবরে নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউটে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর ডিসেম্বরে আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে (১০ ডিসেম্বর) অসলো সিটি হলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
রয়েল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জ্যেষ্ঠ ফেলো এমা শর্টিসের বলেন, ‘ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করা এবং হায়েনাকে কুকুরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নামানো একই ব্যাপার। এই পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের অযোগ্যতা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক ইয়ান পারমিটার জানান, নেতানিয়াহু স্পষ্টতই ট্রাম্পকে তোষামোদ করতে চেয়েছেন। তবে ট্রাম্প নিজেও যে এই স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন, তা এখন পরিষ্কার।
অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজ ফোরামের (এমইএসএফ) পরিচালক শাহরাম আকবরজাদে বলেন, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আমাদের বিশ্বাস করাতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন শান্তির দূত। অথচ এর সঙ্গে সত্যের দূরবর্তী কোনও সম্পর্ক নেই। ট্রাম্প রক্ত ও ধ্বংসে পরিপূর্ণ এক ব্যক্তি। ট্রাম্প নিজেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য মনে করায় এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কতটা বিভ্রম ও নিজের মহিমার মিথ্যা কল্পনায় ভাসছেন তিনি।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লেখক ও কলামিস্ট বেলেন ফারনান্দেজ কিছুটা কটাক্ষ করে বলেন, ‘কেউ যদি শত-সহস্র বেসামরিক মানুষকে পারমাণবিক বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায়, তাকে শাস্তি দেওয়াটা সভ্য দুনিয়ার কাজ। কিন্তু আমরা তো আর এমন দুনিয়ায় নেই। আমাদের দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ শুরু করা হয়। এই দুনিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পই শান্তি পুরস্কারের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি!’
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য কনভার্সেশন, আল জাজিরা
একজন সাবেক আইজিপি—রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার এমন স্বীকারোক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এর ফলে এই মামলার প্রমাণপত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা আবারও সামনে আনছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা ও ইতিহাস। দুই শ বছরের বেশি সময় ধরে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের আধিপত্যের মধ্যে তৃতীয় পক্ষের উত্থান কি আদৌ সম্ভব?
২ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পুরনো তত্ত্বকেই নতুন রূপে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর আচরণ, ভাষা, টুইট ও হঠাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা—সবকিছু মিলিয়ে ট্রাম্প নিজেকে এক অনিশ্চিত ও অসংলগ্ন নেতা হিসেবে বিশ্বের সামনে হাজির করেছেন।
৪ দিন আগেতালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও পশ্চিমা প্রভাব মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে মস্কো। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এ কৌশল বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
৫ দিন আগে