মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটার রেশ কাটতে না কাটতেই ইলন মাস্ক ঘোষণা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা। তবে প্রশ্ন উঠছে, দুই শ বছরেরও বেশি সময় ধরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সত্যিই কি তৃতীয় পক্ষের উত্থান সম্ভব? ইতিহাস বলছে—কঠিন।
রাতুল আল আহমেদ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটার পর সম্প্রতি ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনা থেকে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল গঠনের পদ্ধতি কী? এছাড়াও, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা যেখানে টানা দুই শ বছরের বেশি সময় মার্কিন রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রেখেছে, সেখানে সত্যিই কি কোনো তৃতীয় পক্ষ এই দুই দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে পারবে?
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা খুব কঠিন কিছু নয়। তবে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান ছাড়া অন্য কোনো দলের পক্ষে জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারা খুবই কঠিন।
প্রথমত, একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে হলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন করতে হয়। সাধারণত প্রক্রিয়াটি শুরু হয় কোনো অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী নিবন্ধনের মাধ্যমে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র একটি ফেডারেল ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজস্ব আইন অনুসারে চলে।
এরপর দলকে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংস্থা বা আইআরএস থেকে একটি এমপ্লয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সংগ্রহ করতে হয়। দলটির কর ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতার জন্য এটি জরুরি। এরপর দলের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। রাষ্ট্রের আইন মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে হিসাব পরিচালনার জন্য এই বন্দোবস্ত।
সংগঠনের মধ্যে একজন কোষাধ্যক্ষসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হয় যারা দলের তহবিল পরিচালনা ও হিসাব রাখবেন।
মজার কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কেন্দ্রীয় আইন নেই যা সরাসরি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। বরং প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী দল গড়ে ওঠে।
তবে কোনো দল যদি ফেডারেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বা প্রেসিডেন্ট, সিনেট কিংবা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস নির্বাচনে অর্থ ব্যয় করে, তাহলে দলটির ওপর ফেডারেল আইন কার্যকর হয়।
কোনো দল যদি ফেডারেল নির্বাচনে এক হাজার ডলার বা তার বেশি অর্থ সংগ্রহ বা ব্যয় করে তাহলে তাদের ফেডারেল ইলেকশন কমিশনে নিবন্ধন করতে হয়।
সহজ করে বললে, যদি আপনার রাজনৈতিক দল স্থানীয় পর্যায়ে, যেমন কোনো অঙ্গরাজ্যে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন করলেই চলবে। তবে আপনার রাজনৈতিক দল যদি জাতীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা অর্থ ব্যয় করতে চায়, তাহলে দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই কর্তৃপক্ষের নাম ফেডারেল ইলেকশন কমিশন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দুটি বড় দলের পক্ষে। এর সবচেয়ে বড় কারণ দেশটির নির্বাচনী পদ্ধতি। যুক্তরাষ্ট্রে বিজয়ী প্রার্থী একটি অঞ্চলের পুরো আসন লাভ করে। এ পদ্ধতির নাম ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে যে প্রার্থী হারেন তিনি ওই অঞ্চলের কোনো আসনই পান না। এই পদ্ধতি ভোটারদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করে যে ছোট বা তৃতীয় দলের পক্ষে ভোট দেওয়া মানে ভোট ‘নষ্ট’করা।
এর বিপরীতে অনেক গণতান্ত্রিক দেশে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’পদ্ধতি রয়েছে যেখানে ছোট দলগুলোর পক্ষেও সংসদে আসন পাওয়ার সুযোগ থাকে।
আরও কিছু কারণ রয়েছে যা এ দুই দলের আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। যেমন কঠোর ব্যালট আইন। অনেক রাজ্যে তৃতীয় পক্ষের দলগুলোর জন্য নির্বাচনী ব্যালটে ঠাঁই পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের কথা। এখানে নতুন দলকে নির্বাচনের ব্যালটে জায়গা করে নেওয়ার জন্য সর্বশেষ গভর্নর নির্বাচনের মোট ভোটের অন্তত তিন শতাংশ স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হয়। নতুন দলের পক্ষে অনেক সময়েই এই ভোটারদের স্বাক্ষর জোগাড় করা মুশকিল হয়ে ওঠে, কারণ দেশটিতে ভোটারদের ভোটদানের প্রবণতা এমনিতেই বেশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, এই দুই দল বহুদিন ধরেই রাজনীতিতে আধিপত্য করে আসছে। এর পেছনে রয়েছে দেশটির নির্বাচনব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো ও আইনি জটিলতা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘উইনার টেকস অল’ পদ্ধতিতে নির্বাচনের কারণে তৃতীয় কোনো দলের টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন। কারণ দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থান লাভের ফলে কেউ কোনো আসন পায় না দেশটির সংসদে। পাশাপাশি দুই বড় দল সময়ের সঙ্গে নিজেদের নীতি ও অবস্থান পরিবর্তন করে জনমত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভারত বা পাকিস্তানের মতো নতুন দল গড়ে ওঠার পরিবেশ সেখানে নেই, বরং একই দলের মধ্যে নানা মত ও নেতৃত্বের উত্থান ঘটাই মার্কিন রীতি। এছাড়া রাজনৈতিক প্রচারণা, অর্থের জোগান এবং সাংগঠনিক শক্তিতেও নতুন দলগুলো পিছিয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পুরোনো দুই দলের বাইরে নতুন বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারালিস্ট, ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান, ন্যাশনাল রিপাবলিকান, হুইগ পার্টির মতো দলের থেকেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে ১৮৬০ সালে আব্রাহাম লিঙ্কনের নির্বাচনের পর থেকে কেবল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থীরাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
যদিও তৃতীয় কোনো দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঝেমধ্যে প্রভাব রেখেছেন। যেমন থিওডোর রুজভেল্টের প্রগ্রেসিভ পার্টি বা রস পেরোটের স্বতন্ত্র প্রচারণার কথা বলা যেতে পারে। তবে তাঁদের কেউই প্রেসিডেন্ট পদ জয় করতে পারেননি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দলের পক্ষে জয়লাভ করা কঠিন কেন—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয়। এই রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরিতে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বড় ভূমিকা রয়েছে। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল অব্দি চলা আমেরিকার গৃহযুদ্ধে আব্রাহাম লিঙ্কনের নেতৃত্বাধীন সদ্য গড়ে ওঠা রিপাবলিকান পার্টি দাসপ্রথার বিরোধিতা করে। অন্যদিকে দক্ষিণের ডেমোক্র্যাটরা ছিল দাসপ্রথার পক্ষে।
ফলে এ যুদ্ধ কেবল দেশটির মতাদর্শেরই বদল ঘটায়নি বরং দুই দলের পরিচয়ও গড়ে তুলেছিল। একই সঙ্গে, দেশটির রাজনীতির চিত্র আমূল পাল্টে দিয়েছিল। এর ফলে দুটি বড় দলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ কারণেও মার্কিন রাজনীতিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের বাইরে নতুন কোনো দলের জায়গা করে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সে সময়কার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১৮৬৩ সালের মিলিটারি ড্রাফট বা বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ। বিতর্কিত সে ড্রাফটে বলা হয়েছিল ৩০০ ডলার মাশুলের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা যুদ্ধে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ছড়ায় এবং মার্কিন সমাজের শ্রেণি বিভাজন আরও বাড়িয়ে তোলে। তবুও দুই প্রধান দলের রাজনৈতিক আধিপত্য টিকে থাকে, এবং সমাজের টিকে থাকা এই বিভাজনও নতুন দলের পক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার পথে বাধা হিসেবে কাজ করে।
এমন অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক আনুগত্যের মিশেল আজও মার্কিন রাজনীতিতে দেখা যায়।
পরে, বিশেষ করে বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নিতে শুরু করে। হ্যারি ট্রুম্যান, জন এফ কেনেডি, লিন্ডন বি জনসনের মতো নেতারা নাগরিক অধিকার আইন ও ভোটাধিকার আইন প্রণয়নে নেতৃত্ব দেন।
ফলে ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করা অনেক শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল ভোটার রিপাবলিকান পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়েন। রিপাবলিকানরা তখন রাজ্যের অধিকার, আইনশৃঙ্খলা এবং ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।
যদিও থিওডোর রুজভেল্টের প্রগ্রেসিভ পার্টি বা রস পেরোটের মতো প্রভাবশালী তৃতীয় পক্ষ দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, তবুও ১৮৬০ সালের পর তৃতীয় কোনো দল থেকে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।
ফলে, ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণায় বোঝা যায় নতুন দল গঠন করা সম্ভব। তবে নির্বাচনব্যবস্থা, ঐতিহাসিক ধারা ও প্রতিষ্ঠিত সুবিধা সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি দুই দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে হলে প্রথমে এ বাস্তবতাই বুঝতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটার পর সম্প্রতি ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনা থেকে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল গঠনের পদ্ধতি কী? এছাড়াও, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা যেখানে টানা দুই শ বছরের বেশি সময় মার্কিন রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রেখেছে, সেখানে সত্যিই কি কোনো তৃতীয় পক্ষ এই দুই দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে পারবে?
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা খুব কঠিন কিছু নয়। তবে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান ছাড়া অন্য কোনো দলের পক্ষে জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারা খুবই কঠিন।
প্রথমত, একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে হলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন করতে হয়। সাধারণত প্রক্রিয়াটি শুরু হয় কোনো অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী নিবন্ধনের মাধ্যমে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র একটি ফেডারেল ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজস্ব আইন অনুসারে চলে।
এরপর দলকে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংস্থা বা আইআরএস থেকে একটি এমপ্লয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সংগ্রহ করতে হয়। দলটির কর ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতার জন্য এটি জরুরি। এরপর দলের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। রাষ্ট্রের আইন মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে হিসাব পরিচালনার জন্য এই বন্দোবস্ত।
সংগঠনের মধ্যে একজন কোষাধ্যক্ষসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হয় যারা দলের তহবিল পরিচালনা ও হিসাব রাখবেন।
মজার কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কেন্দ্রীয় আইন নেই যা সরাসরি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। বরং প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী দল গড়ে ওঠে।
তবে কোনো দল যদি ফেডারেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বা প্রেসিডেন্ট, সিনেট কিংবা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস নির্বাচনে অর্থ ব্যয় করে, তাহলে দলটির ওপর ফেডারেল আইন কার্যকর হয়।
কোনো দল যদি ফেডারেল নির্বাচনে এক হাজার ডলার বা তার বেশি অর্থ সংগ্রহ বা ব্যয় করে তাহলে তাদের ফেডারেল ইলেকশন কমিশনে নিবন্ধন করতে হয়।
সহজ করে বললে, যদি আপনার রাজনৈতিক দল স্থানীয় পর্যায়ে, যেমন কোনো অঙ্গরাজ্যে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন করলেই চলবে। তবে আপনার রাজনৈতিক দল যদি জাতীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা অর্থ ব্যয় করতে চায়, তাহলে দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই কর্তৃপক্ষের নাম ফেডারেল ইলেকশন কমিশন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দুটি বড় দলের পক্ষে। এর সবচেয়ে বড় কারণ দেশটির নির্বাচনী পদ্ধতি। যুক্তরাষ্ট্রে বিজয়ী প্রার্থী একটি অঞ্চলের পুরো আসন লাভ করে। এ পদ্ধতির নাম ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে যে প্রার্থী হারেন তিনি ওই অঞ্চলের কোনো আসনই পান না। এই পদ্ধতি ভোটারদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করে যে ছোট বা তৃতীয় দলের পক্ষে ভোট দেওয়া মানে ভোট ‘নষ্ট’করা।
এর বিপরীতে অনেক গণতান্ত্রিক দেশে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’পদ্ধতি রয়েছে যেখানে ছোট দলগুলোর পক্ষেও সংসদে আসন পাওয়ার সুযোগ থাকে।
আরও কিছু কারণ রয়েছে যা এ দুই দলের আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। যেমন কঠোর ব্যালট আইন। অনেক রাজ্যে তৃতীয় পক্ষের দলগুলোর জন্য নির্বাচনী ব্যালটে ঠাঁই পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের কথা। এখানে নতুন দলকে নির্বাচনের ব্যালটে জায়গা করে নেওয়ার জন্য সর্বশেষ গভর্নর নির্বাচনের মোট ভোটের অন্তত তিন শতাংশ স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হয়। নতুন দলের পক্ষে অনেক সময়েই এই ভোটারদের স্বাক্ষর জোগাড় করা মুশকিল হয়ে ওঠে, কারণ দেশটিতে ভোটারদের ভোটদানের প্রবণতা এমনিতেই বেশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, এই দুই দল বহুদিন ধরেই রাজনীতিতে আধিপত্য করে আসছে। এর পেছনে রয়েছে দেশটির নির্বাচনব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো ও আইনি জটিলতা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘উইনার টেকস অল’ পদ্ধতিতে নির্বাচনের কারণে তৃতীয় কোনো দলের টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন। কারণ দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থান লাভের ফলে কেউ কোনো আসন পায় না দেশটির সংসদে। পাশাপাশি দুই বড় দল সময়ের সঙ্গে নিজেদের নীতি ও অবস্থান পরিবর্তন করে জনমত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভারত বা পাকিস্তানের মতো নতুন দল গড়ে ওঠার পরিবেশ সেখানে নেই, বরং একই দলের মধ্যে নানা মত ও নেতৃত্বের উত্থান ঘটাই মার্কিন রীতি। এছাড়া রাজনৈতিক প্রচারণা, অর্থের জোগান এবং সাংগঠনিক শক্তিতেও নতুন দলগুলো পিছিয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পুরোনো দুই দলের বাইরে নতুন বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারালিস্ট, ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান, ন্যাশনাল রিপাবলিকান, হুইগ পার্টির মতো দলের থেকেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে ১৮৬০ সালে আব্রাহাম লিঙ্কনের নির্বাচনের পর থেকে কেবল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থীরাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
যদিও তৃতীয় কোনো দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঝেমধ্যে প্রভাব রেখেছেন। যেমন থিওডোর রুজভেল্টের প্রগ্রেসিভ পার্টি বা রস পেরোটের স্বতন্ত্র প্রচারণার কথা বলা যেতে পারে। তবে তাঁদের কেউই প্রেসিডেন্ট পদ জয় করতে পারেননি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দলের পক্ষে জয়লাভ করা কঠিন কেন—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয়। এই রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরিতে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বড় ভূমিকা রয়েছে। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল অব্দি চলা আমেরিকার গৃহযুদ্ধে আব্রাহাম লিঙ্কনের নেতৃত্বাধীন সদ্য গড়ে ওঠা রিপাবলিকান পার্টি দাসপ্রথার বিরোধিতা করে। অন্যদিকে দক্ষিণের ডেমোক্র্যাটরা ছিল দাসপ্রথার পক্ষে।
ফলে এ যুদ্ধ কেবল দেশটির মতাদর্শেরই বদল ঘটায়নি বরং দুই দলের পরিচয়ও গড়ে তুলেছিল। একই সঙ্গে, দেশটির রাজনীতির চিত্র আমূল পাল্টে দিয়েছিল। এর ফলে দুটি বড় দলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ কারণেও মার্কিন রাজনীতিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের বাইরে নতুন কোনো দলের জায়গা করে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সে সময়কার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১৮৬৩ সালের মিলিটারি ড্রাফট বা বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ। বিতর্কিত সে ড্রাফটে বলা হয়েছিল ৩০০ ডলার মাশুলের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা যুদ্ধে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ছড়ায় এবং মার্কিন সমাজের শ্রেণি বিভাজন আরও বাড়িয়ে তোলে। তবুও দুই প্রধান দলের রাজনৈতিক আধিপত্য টিকে থাকে, এবং সমাজের টিকে থাকা এই বিভাজনও নতুন দলের পক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার পথে বাধা হিসেবে কাজ করে।
এমন অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক আনুগত্যের মিশেল আজও মার্কিন রাজনীতিতে দেখা যায়।
পরে, বিশেষ করে বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নিতে শুরু করে। হ্যারি ট্রুম্যান, জন এফ কেনেডি, লিন্ডন বি জনসনের মতো নেতারা নাগরিক অধিকার আইন ও ভোটাধিকার আইন প্রণয়নে নেতৃত্ব দেন।
ফলে ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করা অনেক শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল ভোটার রিপাবলিকান পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়েন। রিপাবলিকানরা তখন রাজ্যের অধিকার, আইনশৃঙ্খলা এবং ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।
যদিও থিওডোর রুজভেল্টের প্রগ্রেসিভ পার্টি বা রস পেরোটের মতো প্রভাবশালী তৃতীয় পক্ষ দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, তবুও ১৮৬০ সালের পর তৃতীয় কোনো দল থেকে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।
ফলে, ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণায় বোঝা যায় নতুন দল গঠন করা সম্ভব। তবে নির্বাচনব্যবস্থা, ঐতিহাসিক ধারা ও প্রতিষ্ঠিত সুবিধা সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি দুই দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে হলে প্রথমে এ বাস্তবতাই বুঝতে হবে।
জ্যেষ্ঠ ফেলো এমা শর্টিসের বলেন, ‘ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করা এবং হায়েনাকে কুকুরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নামানো একই ব্যাপার। এই পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের অযোগ্যতা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’
৬ ঘণ্টা আগেএকজন সাবেক আইজিপি—রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার এমন স্বীকারোক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এর ফলে এই মামলার প্রমাণপত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পুরনো তত্ত্বকেই নতুন রূপে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর আচরণ, ভাষা, টুইট ও হঠাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা—সবকিছু মিলিয়ে ট্রাম্প নিজেকে এক অনিশ্চিত ও অসংলগ্ন নেতা হিসেবে বিশ্বের সামনে হাজির করেছেন।
৪ দিন আগেতালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও পশ্চিমা প্রভাব মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে মস্কো। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এ কৌশল বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
৫ দিন আগে