leadT1ad

ফেনীর বন্যা পরিস্থিত

বৃষ্টি ও নদীর পানি কমলেও প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ঢুকে নতুন করে কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত করছে। শুক্রবার দুপুরের ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত পানির প্রবাহিত হয়।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১৮: ২৭
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট এলাকায় শুক্রবার দুপুরে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ছবি: শফি উল্লাহ রিপন

বৃষ্টি ও নদীর পানি কমায় ফেনীর পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তবে আগের মতোই রয়েছে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার অবস্থা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ঢুকে নতুন করে প্লাবিত করেছে আরও কয়েকটি ইউনিয়ন। এ দিকে বন্যা দুর্গত উপজেলাগুলোর পুকুর ডুবে ভেসে গেছে চাষের মাছ। বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। বিদ্যুৎ-সংযোগ ও নেটওয়ার্ক না থাকায় বিপাকে পড়েছে এ সব এলাকার বাসিন্দারা।

শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কমে আসায় ফেনীর বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ দিন দুপুরে এই প্রতিবেদন লেখার সময় ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

নদীর উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পানি বাঁধ ভেঙে জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী ওপর দিয়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বন্যা কবলিত গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, সোমবার (৭ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে শুক্রবার পর্যন্ত জেলার ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়ায় নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে যায়। তবে বুধবার থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করায় পরশুরামের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। তবে বন্যার পানি ফুলগাজী গড়িয়ে জেলার নিম্নাঞ্চল ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলায় ঢুকতে শুরু করে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়কের রেজুমিয়া থেকে পৌরসভা পর্যন্ত অংশে ১ থেকে ২ ফুট ওপরে দিয়ে পানি বয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে নতুনভাবে ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর, রাধানগর, ছাগলনাইয়া পৌরসভার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে পর্যন্ত বাঁধভাঙা পানি সদর উপজেলার কাজিরবাগ, মোটবী, ছনুয়া, ফাজিলপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম নতুনভাবে প্লাবিত হয়েছে।

ফুলগাজীর দৌলতপুর এলাকার বয়োবৃদ্ধা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর জুলাই-আগস্ট মাসে এ অঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। গতবারের বন্যার পর বছর না ঘুরতেই আবারও পানিতে ডুবতে হয়েছে। সব জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।’

উত্তর শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা আলী আজ্জম বলেন, ‘রাজনৈতিক দল, ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও আমাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না।’

গাইনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পুষ্পিতা রানী বলেন, ‘ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে। নিরাপদ পানির সংকটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আরও বেশি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের জন্য প্রতিবছর বাঁধ ভাঙা এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।’

উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: শফি উল্লাহ রিপন
উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: শফি উল্লাহ রিপন

ফেনী সদরের মোটবী ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার রাত থেকে আমাদের ইজ্জতপুর গ্রামে পানি বাড়তে থাকে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সড়কের কোথাও কোথাও তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত ডুবে গেছে। এলাকার সব পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।’

কী বলছেন প্রশাসন

ফেনীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ৫৮ দশমিক ৫ মিলিমিটার। তবে ক্রমে বৃষ্টি কমছে। তাই শুক্রবার (আজ) থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘মুহুরী নদীর পানি ১ দশমিক ৯৩ মিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফুলগাজী এলাকার বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে পানির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। পানির চাপ কমে যাওয়ায় নতুন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। পানি কমে গেলেই ভাঙা স্থানগুলো মেরামত করা হবে।’

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেনীর বন্যাকবলিত চার উপজেলার মধ্যে পরশুরামে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ফুলগাজীতেও কিছুটা ভালোর দিকে রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বন্যার পানি ছাগলনাইয়ার প্রধান সড়ক গড়িয়ে বিভিন্ন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আশা করি, শুক্রবার পর্যন্ত জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হবে।’

জেলার ৪ উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ। বন্যাকবলিত ২০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে খাবার সরবরাহের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত