বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) উপস্থিতি থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিজয় দিবসের আলোচনা সভা বয়কট করেছে শাখা ছাত্রদল। একই কারণে সভা বয়কট করেছে চাকসুর এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিকসহ বিভিন্ন হল সংসদে ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় ‘২৫-এর শামীম খান, ৭১-এর টিকা খান’, ‘রাজাকারের ঠিকানা, ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘জাকাত লাগলে জাকাত নে, তবুও দায়িত্ব ছাইড়া দে’, ‘দালাল দালাল, ভুয়া ভুয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরালে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে একটি বিজয় মিছিল অগ্রণী ব্যাংক, প্রশাসনিক ভবন ও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ (পুরাতন) প্রদক্ষিণ করে জারুলতলায় আলোচনা সভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়।
সভা বর্জনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ১৯৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চাননি, পদত্যাগও করেননি। আজ আবার বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়েছেন। আমরা তাই সভা বয়কট করলাম।’
চাকসুর এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক স্ট্রিমকে বলেন, ‘আজ সব জায়গায় বিজয় দিবসের আনন্দ উদ্যাপিত হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয়ের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। কারণ আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা নিয়ে উপ-উপাচার্য যে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন, তার জন্য তিনি ক্ষমা চাননি, অনুতপ্তও হননি। তিনি এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চলে এসেছেন। তাই আমি ও বিভিন্ন হল সংসদে নির্বাচিত জাতীয়তাবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রতিনিধিরা আলোচনা সভা বর্জন করেছি।’
এজিএস তৌফিক বলেন, ‘আমরা যখন চাকসুর শপথ নিয়েছি তখন মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার শপথ করেছি। কিন্তু উপ-উপাচার্যের বক্তব্য মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়েছে। তাঁর এই পদে থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই।’
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দীন খান। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে বিশাল প্রশ্ন, যে সময় আমি (পাকিস্তানি বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি (নিজ) মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’
শামীম উদ্দীন খান ওই বক্তব্যের পর বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন বাম সংগঠন। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরদিন উপাচার্যের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও পদত্যাগ দাবিতে দিনভর প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে রাখে ছাত্রদলসহ ৬টি সংগঠন।