leadT1ad

মাইলস্টোনের অভিভাবক

উত্তরায়–বিমান–বিধ্বস্ত /‘কলেজে আসার কথা বলতেই কেঁদে ফেলে’

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ১৯
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ২০
দুর্ঘটনার পর প্রথমবার ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা। স্ট্রিম ছবি

যে ক্যাম্পাস ছিল হাসি আনন্দ আর আড্ডার জায়গা, সেখানেই আসতে চায় না শিক্ষার্থী। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। কলেজে যাওয়ার কথা বললেই কেঁদে ফেলে। এমনটাই জানাচ্ছিলেন রাজধানী উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল কলেজ অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক।

মোহাম্মদ শামীম নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে এখনো রাতে ঘুমাতে পারে না। আজ কলেজে আসতে বললে সে কেঁদে ফেলেছিল। আমরা চাই, প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষ যেন নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।’

আরেকজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে কলেজে এসেও ক্লাসরুমে ঢুকতে চায়নি। অনেকটা সময় তাঁকে বোঝাতে হয়েছে।’

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেলের কথাতে তেমনটাই ফুটে উঠে। তাঁর ভাষ্য, ‘ভবনটার পাশ দিয়ে আসতে ভয় লাগছে। এখনো চোখে ভাসে দুর্ঘটনার কথা।’

দুর্ঘটনার ১২ দিন পর খুলল মাইলস্টোন

রাজধানীর উত্তরায় স্কুল ভবনে প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ১২ দিন পর আজ রোববার সীমিত পরিসরে খুলেছে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ। যদিও এখনো শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ সেই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

সকাল ৯টায় কলেজ প্রাঙ্গণে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক শোকসভা দিয়ে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয় নিহতদের।

দুর্ঘটনায় নিহতের স্মরণে শোকসভার একটি চিত্র। স্ট্রিম ছবি
দুর্ঘটনায় নিহতের স্মরণে শোকসভার একটি চিত্র। স্ট্রিম ছবি

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনো কোনো ক্লাস কিংবা পরীক্ষা চালু হয়নি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বস্তি ও ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি হিসেবেই কলেজ সীমিত পরিসরে খোলার এই সিদ্ধান্ত।

ভোরের শহরে বিষণ্ন ক্যাম্পাস

সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে কলেজ ক্যাম্পাসে। কিন্তু আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতো ছিল না আজকের সকাল। চিরচেনা কোলাহল কিংবা আড্ডার নয়, বরং শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক, স্তব্ধতা আর গভীর শোকের ছাপ। কেউ কারও সঙ্গে বেশি কথা বলছিল না, মুখে ছিল না হাসি, ছিল কেবল চাপা কান্না।

কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা শুধুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নয়, আমরা মনে করছি, ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে জরুরি। যারা এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, তাদের মানসিকভাবে শক্ত হতে সহায়তা করতে হবে।’

তিনি জানান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং সেবা চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

অভিভাবকদের অস্থিরতা ও দাবিসমূহ

অভিভাবকেরাও সন্তানদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পাসে। অধিকাংশের চোখেমুখে ছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। অনেকেই জানান, সন্তানদের নিয়ে আসার জন্য প্রচুর সময় এবং মানসিক প্রস্তুতির দরকার হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় তড়িঘড়ি কেন

প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হচ্ছে, অন্যদিকে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শাহ বুলবুল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দীর্ঘসময় ঘরবন্দি রাখা বা আতঙ্কে রাখলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে। তাই ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে আমরা ক্লাস কার্যক্রমে ফিরবো। আজ ক্লাস না থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একটি সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহ পুরোপুরি ক্লাস চালু না করে পর্যবেক্ষণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতি, অভিভাবকদের মতামত এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত