leadT1ad

হরতাল-অবরোধে অচল বাগেরহাট, আদালত ও নির্বাচন কার্যালয়ে তালা

সোমবার সকাল দশটার দিকে বাগেরহাট কোর্ট চত্ত্বর এলাকায় একটি বিক্ষোভ-মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

স্ট্রিম সংবাদদাতাবাগেরহাট
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৯
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫০
বাগেরহাটে হরতালের সমর্থনে রাস্তায় বেঞ্চ রেখে অবরোধ। স্ট্রিম ছবি

বাগেরহাটে চারটি জাতীয় সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে হরতাল ও সড়ক অবরোধ পালন করেছেন বিএনপি, জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতা-কর্মীরা। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে জেলার ৯টি উপজেলার শতাধিক স্থানে সড়কে গাছ, কাঠের আসবার ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন তাঁরা। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ ১৮টি রুটসহ দূরপাল্লার সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ছাড়া আদালত চত্বর ও জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দোকানপাটও বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ ভোক্তা ও বিভিন্ন পাল্লার যাত্রীরা।

সালাম শেখ নামের ভুক্তভোগী এক যাত্রী বলেন, ‘সকালে জরুরি কাজে খুলনায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু বাস বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করেও কোনো গাড়ি পাইনি।’

সিদ্দিক শেখ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে খুলনায় চিকিৎসার জন্য নিতে হবে। কিন্তু কোনো গাড়ি নেই। রিকশা বা ভ্যানেও এত দূর যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে বাসস্ট্যান্ডে বসে আছি।’

জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি বিবেচনায় বাগেরহাটে চারটি আসন বহাল রাখা প্রয়োজন বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা। এই দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ মিছিল এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার (১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর) জেলা জুড়ে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালিত হবে। তবে অ্যাম্বুলেন্স, শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়ি ও জরুরি সেবার যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়।

বাগেরহাটে হরতালের সমর্থনে আদালাত গেটে তালা লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।  স্ট্রিম ছবি
বাগেরহাটে হরতালের সমর্থনে আদালাত গেটে তালা লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। স্ট্রিম ছবি

সোমবার সকাল দশটার দিকে বাগেরহাট কোর্ট চত্ত্বর এলাকায় একটি বিক্ষোভ-মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, সদস্যসচিব মুজাফফর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম, সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মদ ইউনুস, বিএনপি নেতা ফকির তারিকুল ইসলামসহ অন্যরা।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতারা। বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘জনগণের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন অন্যায়ভাবে বাগেরহাটের আসন কমিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মানা হবে না।’

জেলা জামায়াতে ইসলামী আমীর মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, ‘বাগেরহাটের মানুষকে অবমূল্যায়ন করে আসন কমানোর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের ৩০ জুলাই বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি রাখার খসড়া প্রস্তাব দেয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিশেষ কারিগরি কমিটি। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে শুরু থেকে আন্দোলন করছে জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। পরে ইসির শুনানিতেও অংশগ্রহণ করেন জেলা নেতারা। তবে তাঁদের দাবিকে উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে ইসি, এতে বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন রাখা হয়।

ইসির গেজেড অনুযায়ী, ১৯৬৯ সাল থেকে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছে বাগেরহাটে। এতে বাগেরহাট ১ আসনের অধীনে ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা; বাগেরহাট ২ আসনে সদর ও কচুয়া, বাগেরহাট ৩ আসনে রামপাল ও মোংলা এবং বাগেরহাট ৪ আসনের অধীনে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা ছিল।

এবার ইসির চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী প্রতিটি আসনের অধীনে তিনটি করে উপজেলাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়ছে। এতে বাগেরহাট ১ আসনে সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট; বাগেরহাট ২ আসনে ফকিরহাট রামপাল ও মোংলা এবং বাগেরহাট ৩ আসনে কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা ‍উপজেলাকে অন্তর্ভূক্ত করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় লোকজন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত